এই মুহূর্তে ব্লগারদের করণীয় কী, সেটা আমি ঠিক করে দেওয়ার কেউ নয়। তবে আমি আমার মতামত প্রকাশ করতে পারি। আপনারাও আপনাদের মতামত প্রকাশ করুন। বিশেষত, জাতির এই দুর্দিনে একজন সচেতন ব্লগার হিসেবে আপনার করণীয় জানানোর মাধ্যমে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অন্যান্যদের মধ্যে সুচিন্তা জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারেন।
আমরা সরকারের পতন চাচ্ছি কিনা সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, নিহত শিক্ষার্থীদের মতো জীবিতদেরকে আমরা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি কিনা, সেই প্রশ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল পেজ থেকে ১৮ই জুলাই সন্ধা ৬ টার দিকে জানানো হয়, এই পর্যন্ত ৩৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। যাদেরকে তারা শহীদ বলে সম্বোধন করছেন। পাশাপাশি ২৭০০ জন আহত ও ৪৬৬ জন গুরুতর আশঙ্কা জনক অবস্থায় রয়েছেন।
বাংলাদেশে সকল প্রকার ইন্টারনেট সার্বিস সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। যা গত ক'দিন ধরে চলা বন্ধের সময়সীমা থেকেও দীর্ঘ সময় যাবত চলছে। ব্যক্তিগত ভাবে, আমি অফলাইনের মাধ্যমে SUST-এর অনেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। অনেকে কল ধরলেও তাদের কথা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। অনেকে আমার কথা বুঝতে পারছেন না। SUST-এর কাউকে না পেয়ে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা তেমুখীর এক ছোট ভাইকে কল দিলে, সে কোন কিছু না বলেই কান্না করে দু'আ চাচ্ছে। আমি শান্তনা দিলেও সে ঠিক শুনতে পারছে না। সর্বশেষ প্রিয় কাভা ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিছু কথা বলতে পেরে মনে কিছুটা শান্তি পেলেও উদ্বীগ্নতা কাটেনি।
একজন প্রবাসী হিসেবে আমি যেমন চাই না আমার দেশের একজন মানুষও অনিরাপদ থাকুক, তেমনি আপনি/আপনারাও চাইবেন না। বর্তমান পরিস্থিতি নিরাপত্তার আশা অতিক্রম করে মৃত্যুর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে অনেক পূর্বেই। এমন বর্বরতা চলছে যা লেখনির ভাষাতেও প্রকাশ করা সম্ভব না। আমরা কেউ চাইনি আমাদেরই ছোট ভাইয়েরা এভাবে অকালে চলে যাক। তার উপর সেই স্নেহের ভাইয়েরা যখন শিক্ষার্জনের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থায় রয়েছে তখন। যার প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি কদমে বড় হচ্ছিল তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন, তৈরি হচ্ছিল রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ।
মানুষের দ্বারা ভুল হওয়ার স্বাভাবিক বিষয়টি স্বীকার করার জন্য কাউকে খুব একটা জ্ঞানী হতে হয় না। কিন্তু এখানে এমন কোন ভুলই ঘটেনি, যা আমার আপনার শিক্ষার্থী ভাইদের হত্যা করার পারমিশন দেওয়ার মত সুযোগ তৈরি করে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে, এর তীব্রতর নিন্দা জানাই। পাশাপাশি আমি চাই, দ্রুত এর সমাধান হোক।
যদি দ্রুত সমাধান না হয়। পরিস্থিতি শান্ত না হয়, তবে প্রবাসীদের উচিৎ বাংলাদেশি এম্বেসিগুলোর সামনে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করা এবং বাংলাদেশের অবস্থা শান্ত না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান ধরে রাখা। প্রয়োজনে কয়েকদিন যাবত হলেও। দেশে অবস্থানরত আপনার আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে আজ বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ শান্ত হওয়া খুবই প্রয়োজন। এখন প্রায় দেশেই গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে, আপনারা চাইলেই এমন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ বন্ধের দাবী নিয়ে। ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী নিয়ে। সরকার পতন বা রক্ষার দাবী নিয়ে নয়। আশা করি, এটা আমার চেয়ে আপনারা খুব ভালোই অনুধাবন করতে পারেন।
পরিস্থিতি যদি এরকম চলে। যদি আগামীকালও তা বন্ধ না হয়, তাহলে আমরা দেশে ও দেশের বাহিরে অবস্থানকারী বাঙালিরা কী করতে পারি?
হ্যাঁ, একজন সচেতন ব্লগার হিসেবে আপনাকে এর উত্তর দিতে হবে। দেওয়া উচিৎ।
এমনকি, এপর্যন্ত যে সকল ব্লগার এ বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন, তাদেরও উচিৎ নিজেদেরকে এই প্রশ্ন করা। আপনি দেশে অবস্থান করলে, অবশ্যই আপনার নিকট এমন প্রশ্ন স্বাভাবিক কোন প্রশ্ন হয়ে থাকার কথা নয়। কারণ, আপনি আমাদের চেয়ে খুব ভালোভাবেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।
২৩:৩৩
১৮-০৭-২৪
আলেজান্দ্রিয়া, ইতালি
ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৪ ভোর ৫:৪৩