১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রমনা মাঠে (রেসকোর্স ময়দানে) নারকেলের চারা রোপণের মাধ্যমে একটি উদ্যানের জন্ম দিয়ে তার নামকরণ করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। যা সবুজ সমারোহ গাছগাছালির ছায়াঢাকা পাখিডাকা প্রাণোচ্ছল ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান ও আগামি প্রজন্মের জন্য। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এতদিন পর্যন্ত নগরীর কোটি কোটি মানুষের ফুসফুস সচল রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করে এসেছে। কিন্তু এখন সে বড়ো অসহায়। আমাদের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো।
সম্প্রতি রেস্টুরেন্ট তৈরির নামে শত-শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই শতাধিক পুরনো গাছগুলো কেটে উজাড় করছে গণপূর্ত অধিদফতর। হাজারো সমস্যার বোঝা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকা ঢাকা শহরকে সবুজ ও সতেজতাহীন করার লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদফতর যে নিধনযজ্ঞ চালু করেছে তা আমাদের ঢাকা শহরকে মানুষের বসবাসের অবশিষ্ট উপযোগিতা হারাতে বাধ্য করবে। জাতীয় স্বাধীনতা জাদুঘরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তৈরিকালে যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা যায়, তবে এই তুচ্ছ রেস্টুরেন্টের জন্য কেন কোটি কোটি মানুষের আশ্রয়স্থলকে নষ্ট করা হবে? ভোগবাদীদের রেস্টুরেন্টের প্রয়োজনীয়তা কি বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি সবুজের মালাগাঁথা সোহরাওয়ার্দীর সৌন্দর্য্য উপেক্ষা করার মতো শক্তিধর? নিয়মানুযায়ী যেখানে আমাদের রাজধানীর জন্য প্রয়োজনীয় ২৫ ভাগ বনভূমিও নেই, সেখানে আমরা কোন যুক্তিতে বনভূমি নিধনে এত আগ্রাসী?
দ্য ইকোনমিস্টের তালিকায় থাকা বসবাসের অযোগ্য এই ঢাকা শহরের সমস্যার কোনো শেষ নেই। সমস্যার সমাধান না করে বরং সমস্যা বৃদ্ধিতেই ব্যস্ত নগর প্রতিনিধিরা। গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার প্রধান সমস্যাগুলো মধ্যে দুটি হচ্ছে, এক. সংস্কৃতি ও পরিবেশ। দুই. অবকাঠামো। এই দুটি সমস্যার ভেতর আরো যে সমস্যাগুলো লুকিয়ে রয়েছে তা হলো, জলবায়ু ও তাপমাত্রা, দুর্নীতির মাত্রা, সামাজিক বা ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা, খেলাধুলার সুযোগ, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য, ভোগ্যপণ্য ও সেবা, সড়ক-পরিবহন ব্যবস্থা, গৃহায়ন, জ্বালানী, পানি এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। এত সব সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে চলা এই নগরকে যেখানে মানুষের বসবাসের উপযোগী করার লক্ষ্যে নাগরিকদের নিয়ে যৌথভাবে কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন সেখানে সবুজ সমারোহ ধ্বংসকারী এমন কর্মকাণ্ড কখনোই সুস্থ বিবেকের মানুষ মেনে নেওয়ার নয়। তাছাড়া হরিজনদের মতো যারা এই বাংলার এলিট বাঙালিদের ব্যবহার পেয়ে তিক্ত হয়ে আছেন সেই সব মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ধীরে ধীরে সেই শীতলাশ্রয়ের জায়গাটুকুও খোওয়া যাবে নিশ্চিত।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই অপকর্মের বিরুদ্ধে আয়োজন করেছে শিল্প প্রদর্শনীর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কেবল একটি শ্রেণিই নয়। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই সবুজ সমারোহ গাছগাছালির ছায়াঢাকা পাখিডাকা পরিবেশ থেকে বঞ্চিত না হয়। সে লক্ষ্যে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আবশ্যক। জানতে পারলাম, সরকারি গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে নিধনযজ্ঞ নাকি এখন রাতের অন্ধকারে ঘটানো হচ্ছে! একটুও কি বুঝতে পারছেন, তারা ধ্বংসের জন্য কী পরিমাণ মরিয়া হয়ে উঠেছে! আমাদের এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর। না হয় আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিবেকহীনতার উপাধি নিয়ে বেঁচে থাকবো।
আসুন, আর নত না করি শির। নিজের জন্য, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু একটা করি। আমাদের এক একজনের স্বল্প চেষ্টাই যৌথভাবে বৃহদাকার লাভ করবে।
(অনুরোধ থাকবে ব্লগারদের নিকট: দয়া করে বলুন, এই সবুজ সমারোহে ঘেরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে আমাদের কোন কাজগুলো করা আবশ্যক বলে আপনি মনে করে!)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ৯:০২