আমি ভাবি আমার মা কেন সবার মার মত শিক্ষিত , স্মার্ট , চাকুরীজীবী , সেলফ ডিপেন্ডেন্ট হলো না ? কেন সে ছবি তুলতে ভীষণ লজ্জা পায় ।কখনও যদি আমাদের ধমকে ছবি তুলতেও চায় তাও মুখখানা কাচুমাচু করে করে এমন অপ্রস্তুত হয়ে যায় যা দেখে আমারা হেসে গড়াগড়ি খায় ।তার সরলতা আমার ভালো লাগে না ।আমি চাই চালাক চতুর হোক । ফেসবুকে দেখি সবার মা কত স্মার্ট ভাবে ছবি তোলে । সবার মা কত সুন্দর করে হাসে । আমি দিতে পারি না ভাব ধরতে পারি না । কারণ আমার মা ছবি তুলতে পছন্দ করে না । রেগে গিয়ে বলি ক্ষেত একটা । আমাদের সবার জন্য রান্না করা তার প্রথম পছন্দ । ভাল কোন খাবার হলে সে না খেয়ে রেখে দেয় আমাদের জন্য । জোর করে ধরে খাওয়ালে তবে খায় । কোন মার্কেটে নিয়ে গেলে তিনি শাড়ি গয়নার দোকানে না গিয়ে খুজতে থাকে কোন দোকানে হাড়িপাতিল কড়াই পাওয়া যায় , কোথায় পাও্য়া যাবে প্লাস্টিকের ঝুড়ি , ঢাকনি , রেগে গিয়ে ধমক দেই ,অশিক্ষিত । এমনকি বাড়ি যাওয়ার আগে যখন জিজ্ঞেস করি আম্মা কি নিয়া আসব, তিনি বলে কাপড় ধোওয়ার পাউডার , ভিম সাবান , পিঁপড়ার চক এইসব কাজের জিনিস। তার নিজের কোন চাহিদার জিনিস নাই । বাসায় আমার মা সবার আগে ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমাতে যায় সবার পরে । সকালের খাবার রান্না থেকে শুরু করে সারাদিনের সমস্ত কাজ একা হাতে সামলায় তারপরে ও পান থেকে চুন খসলেই সবাই কথা শুনাতে এক সেকেন্ড ও দেরি করে করে না । এমনকি আমি নিজেও । তাকে দেখে মনে হয় শুধু সবার কাজ করার জন্য ই তিনি জন্ম নিয়েছেন । সন্তান জন্ম দিয়েছেন কাজ করে খাওয়ানোর জন্য ।বাচ্চাটা বাসায় থেকে থেকে বর হয়ে যায় , ছুটির দিনে বউ বাচ্চা নিয়ে বাইরে থেকে সারাদিন ঘুরে ফিরে খেয়ে আসার পর মা বলে খাবি না বাবা - তোর পছন্দের চিংড়ি ভর্তা করেছি , না মা তুমি শুয়ে পড়ো আমরা খেয়ে এসেছি ।মার তো আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না । বয়স হয়েছে যাবে আবার কোথায় ? বুড়া বয়সে বাসা ই নিরাপদ , কি বলেন ? তারপর ও মার কোন অভিযোগ নেই , কোন ক্লান্তি নেই । আর আমরা চরম উদাসীনভাবে তিনবেলা মজার মজার গরম খাবার খেয়ে ফুলবাবু সেজে ঘুড়ে বেড়াই । বিয়ের পর বউয়ের কথায় রেখে আসি বৃদ্ধাশ্রমে । মাঝে মাঝে আমার নিজের ও মনে হয় কি দরকার মার এখানে ঝামেলা করার ? মার অসুখে পাড়ার ফার্মেসী থেকে মেডিসিন এনে দেই আর আমার বাচ্চার বেলায় , ও তোঁ খুবই সেনসেটিভ ইসু জানেন তো এপোলোর ডাক্তার ছাড়া ত ওকে কোথাও দেখাই ই না । ভুলে যাই স্বামীহারা এই মহিলাটি বছরের পর বছর আগলে রেখেছিলেন , যখন তাকে আগলে রাখার সময় এলো তখন আমার ফ্ল্যাটে তার জন্য কোন রুম নেই যে । কোনদিন কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার কথা মাথায় ই আসে না । আর ভালবাসি সেটা বলার আর কি দরকার ? মাকে আবার ভালবাসতে হয় নাকি ? ফেসবুকে সেটা বললেই যথেষ্ট ।
কখন ও মনে করতে চাই না সেই সহজ সরল আনস্মার্ট এই মা ই জন্ম দিয়ে বড় করেছেন আমার মত স্মার্ট, সুন্দর ,চলনসই শিক্ষিত অকৃতজ্ঞের !!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫