আমি আমার গ্রামের তিন বছর বয়সী এক ছোট্ট ভাইকে বললাম, ভাইয়া একটা কবিতা শুনাও। সে শুরু করলো, “আম পাতা জোড়া জোড়া, মারব চাবুক চরব ঘোড়া.....”। সে কবিতা শেষ করতেই তার মা বললো, বাবা এবার ব্যাঙ এর কবিতাটা তোমার ভাইকে শুনাও। ছেলেটাও আবার শুরু করলো, “ব্যাঙ পাতা জোড়া জোড়া, মারব চাবুক চরব ঘোড়া.....”।
বর্তমান সময়ে ইসলাম বিদ্বেষী চক্রের অবস্থাও আমার এই ছোট্ট ভাইটির কবিতার মতোই। কবিতায় যেমন, বেঙ ও ঘোরা কে জরিয়ে দেয়া হয়েছে? সে জানেনা ঘোড়ার পিঠে চরা যায়। বলে বেঙের নই।
কোন কিছুতে ইসলামের সংশ্লিষ্টতা থাক বা না থাক শুরুতে ইসলাম লাগিয়ে তাদের সারা জীবনের বক্তব্য হলো ইসলামের বিষেদাগার। সন্ত্রাস যেকোনো ধর্মের মানুষ করতে পারে।
হিটলার তো মুসলমান ছিল না? তাই বলে সন্ত্রাসকে প্রাধান্য না দিয়ে ধর্মকে প্রাধান্য দিলে তো হবে না। কথা হলো ইসলাম ধর্মে এই সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে উৎসাহিত করা হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা?
যদি ইসলাম সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত না করে তাহলে ইসলাম নিয়ে আর কোন নেতিবাচক কথা বলা যাবে না।
কথায় কথায় যারা ইসলামকে দোষারোপ করেন তারা বলুন তো, প্রত্যেকদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কয়জন মুসলমান পড়ে থাকে? ইসলামের অনুশাসন কয়জনে মানে? শুধুমাত্র একজন মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলো বলেই মুসলিম হয়ে গেলো না। ইসলামের অনেক অনুশাসন আছে যেগুলো না মুসলমান কাফের সমতুল্য হয়ে যায়। সুতরাং কেউ ইসলামের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেই সেই দায়ভার ইসলাম.বা কেন নিবে
বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনা ঘটছে আর একেকটি ঘটনা একেটির উপরে চাপা পরে যাচ্ছে.। সবকোটি ঘটনায় জঙ্গীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জরিত প্রমাণিত হচ্ছে।
এর মধ্যে বেশিরভাগ নাম আইএসআই জরিত। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আই এস নিজেই এর দায় শিকার করছে। কিন্তু বাংলদেশের কেউ এটি শিকার করতে রাজি না। যে আই এস বাংলাদেশে আছে। আমার মেনে নিলাম আই এস বাংলাদেশে নাই। তবে এটি শিকার করছে দেশে জঙ্গী আছে। আর তারাই এই সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আর এদের দমন করতে সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও করছে। তবু নেই কোন প্রতিকার। দিন দিন বেরেই চলছে।
বিভিন্ন সুএে যানা যায় তারা ইসলামকে পুজি করেই এই সব কাজ করছে।
আমরা যতই বলি আই এস ইহুদীদের-নাসারাদের সৃষ্টি কিন্তু এর শিকার তো হচ্ছি আমরাই, আমাদের যুবক সম্প্রদায়। আমাদের যুবকরাই অস্ত্র হাতে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে আমাদের উপর। এটা স্পষ্ট তারা আদর্শের জন্যই জীবন দিচ্ছে, সন্ত্রাস করছে। এবং এটাও স্পষ্ট আই এস নামের ভয়ংকর মানুষ যাদের মোকাবিলা আমাদের করতে হবে।
দুটি বিষয় ভেবে দেখুনতো?
১- ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের. তাদের আছে নাকি?
২- সামাজিক সাম্য না থাকা বা সমাজে জুলুমের রাজত্ব কায়েম থাকা।
খোঁজ নিয়ে দেখুন তার থেকে আপনি বেশি জানেন।
১ম কারণটা খুবই স্পষ্ট। ইসলাম সম্পর্কে যার ধারণা থাকে না, সীরাত সম্পর্কে যার ধারণা নেই। আল্লাহর কোন পরিস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই বিষয়গুলো জানা না থাকলে তাকে যে কোন ভাবেই ভুল পথে পরিচালিত করা সহজ।
যেমন ধরুণ কেউ যদি জামায়াত বা শিবিরের কোন কর্মীর কাছে এসে বলে তোমরা তো ইসলামী আন্দোলন কর অথচ ইসলামই মান না। হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে হযরত উসমান রাঃ কে হত্যা করা হয়েছে এরকম গুজব ছড়িয়ে দেয় কাফিররা। আল্লাহর রাসূল সঃ সেই কথা শুনে হত্যার বদলা নেয়ার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন এবং সকল সাহাবী আল্লাহর রাসূলের কাছে শপথ নেন তারা উসমান রাঃ হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। অথচ তোমাদের নেতাদের একের পর এক হত্যা করা হচ্ছে। তোমরা কেউ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছ না। তোমরা তো আল্লাহর রাসূল সঃ কে অনুসরণ কর না তোমরা কিভাবে ইসলাম কায়েম করবে। তোমরা থাকো তোমাদের গণতন্ত্র নিয়ে।
এই পরিস্থিতিতে যদি ঐ জামায়াত বা শিবিরের কর্মী যদি আল্লাহর রাসূলের সীরাত সম্পর্কে জানেন তাহলে তিনি পালটা প্রশ্ন করবেন। হযরত উসমান রাঃ এর এই গুজবের ঘটনাই কি প্রথম? এর আগে কি আর কেউ শহীদ হন নি? হযরত সুমাইয়া রাঃ কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হযরত ইয়াসির রাঃ কেও হত্যা করা হয়েছে। রাসূল সঃ সেসব হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কি প্রতিশোধ নিয়েছেন? হযরত খাব্বাব রাঃ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আল্লাহর রাসূল সঃ কে বলেছেন আপনি কি আমাদের জন্য কিছু করবেন না? জবাবে রাসূল সঃ কি বলেছেন? এই প্রশ্নগুলো যখন তার কাছে রাখবেন তখন তিনি তার ভুল বুঝতে পারবেন।
আর যদি ঐ কর্মী সীরাত না জানেন তাহলে তিনি লোকটির বিভ্রান্তযুক্ত ও ভুল উদাহরণে পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রথম কথা ইসলামের সঠিক জ্ঞান আহরণ খুব জরুরী। কুরআন হাদীস সরাসরি অধ্যয়ন এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উত্তম পথ।
২য় কারনটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় প্রতিটা সন্ত্রাসীর জীবন স্টাডি করলে পাওয়া যায় তারা জীবনের কোন না কোন স্টেজে জুলুমের শিকার। সেই থেকে ক্রোধান্বিত হয়ে জুলুমের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তার পরিণতি আজএরকম বহু ঘটনা নিয়মিত সরকার ঘটাচ্ছে। যে কোন স্বৈরাচারী সরকারের আমলেই জুলুমের ঘটনা ঘটে আর জুলুমের পালটা হিসেবে কিছু সন্ত্রাসী তৈরী হয়।
১৯৯৮ সালে JMB'র প্রতিষ্ঠা হলেও এদের রিক্রুটমেন্ট সবচেয়ে বেশী হয় জোট আমলের শুরুতে। সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকে জুলুমের রাজত্ব কায়েম না হলেও অন্য একটি পক্ষ রীতিমত জুলুম করে যাচ্ছিল উত্তরবঙ্গে। তারা হল বামপন্থি সর্বহারা গ্রুপ। তাদের নিয়মিত চাঁদাবাজী ও ডাকাতির কবলে পড়ে মানুষ অতিষ্ঠ।
পুলিশও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেই জুলুম ঠেকানোর জন্য JMB নিজেই নতুন করে জুলুম শুরু করে। তারা বামপন্থী জঙ্গী গোষ্ঠী সর্বহারাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তখন সর্বহারার আক্রমনের শিকার অসহায় মানুষরা JMB তে রিক্রুট হতে থাকে।
এখন বাংলাদেশে ঢালাওভাবে জুলুমের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বিরোধীদলের লাখ লাখ মানুষতো আছেই সাথে অনেক আওয়ামী পরিবারও জুলুমের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশে হাজার হাজার পরিবার আজ ঘরহারা। বহু মানুষ তাদের ব্যবসা বাণিজ্য এবং চাকুরী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এইসব জুলুম ধীরে ধীরে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে জঙ্গীবাদের দিকে।
তাই জঙ্গীবাদ ঠেকাতে সঠিক ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি স্বৈরাচারমুক্ত সমাজ গঠনও জরুরী। কিছু লেখা সংগ্রহিত ..
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০