somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

তোমরা রাত-দিন এতো ইসলাম-ইসলাম কর কেন? তোমাদের লজ্জা করে না?

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তোমরা রাত-দিন এতো ইসলাম-ইসলাম কর কেন? তোমাদের লজ্জা করে না?
সাইয়িদ রফিকুল হক

লোকটা গ্রামের কাঁচা-সড়কের উপর দিয়ে সমানে দৌড়াচ্ছিলো আর এদিকওদিক তাকিয়ে তারস্বরে শুধু চেঁচাচ্ছিলো: “ইসলাম গেল! ইসলাম গেল! ইসলাম গেল! ওরে তোরা কে কোথায় আছিস? তাড়াতাড়ি ছুইটে আয়! ইসলাম ডুবে গেল! ইসলাম একেবারে শেষ হয়ে গেল!”
লোকটার কথা শুনে একদল ইসলামপাগল-আত্মস্বীকৃত সৈনিক ঢাল-তলোয়ার-বল্লম-বর্শা আর লাঠিসোঁটা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পাগলের মতো ছুটে আসতে লাগলো। আর তারা কোনোকিছু বাছবিচার না করে ভয়ানক উত্তেজিত-ভঙ্গিতে চিৎকাররত লোকটার কাছে এসে হাঁপাতে-হাঁপাতে বলতে লাগলো: “কই? কই? কই? কে ইসলাম ডোবাবে? কার এতোবড় সাহস! কে ইসলাম ধ্বংস করবে? এখনই মাথা ফাটায়ে দেবো সেই শয়তানের। সব কাফেরকে কোপায়ে-কোপায়ে ফানা-ফানা করে ফেলবো? কোথায় ওরা? কোথায় ওরা? এবার দেখাও সব শয়তানকে?”

লোকটি তখন হাতের ইশারায় বড়পুকুরটার দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “ওই যে ওই দিকে দেখো। সাঁতার জানে না বলে আমাদের গ্রামের ‘নুরুল ইসলাম’ পানিতে ডুবে যাচ্ছে! তাড়াতাড়ি তারে বাঁচাও!”

নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন সম্মানিত পাঠকসমাজ, এই হচ্ছে ইসলামের সৈনিকদের ইসলামপ্রেম! সাঁতার জানে না বলে নিজের ভুলে ডুবে মরছে একজন অর্বাচীন নুরুল ইসলাম! আর তাকেই কিনা সরাসরি ইসলাম বলে অভিহিত করেছে এই পাষণ্ডের দল। এভাবেই এরা সবকিছুকে ইসলাম-ইসলাম করে থাকে। আর তাদের মনগড়া সবকিছুকে নির্দ্বিধায় ইসলাম বলে প্রচার করতে থাকে। এরা নিজেরা একেকজন ইসলামের গার্জিয়ান সাজে! অথচ, এরা সবাই ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ আর ‘কচুবনের কালাচাঁদ’! আর কে এদের ইসলামের অভিভাবক নিযুক্ত করেছে? কিয়ামত পর্যন্ত এদের জবাব শোনার জন্য বসে থাকলেও এদের জবাব দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নাই। এরা একেকজন এখন ইসলামধর্মের আত্মস্বীকৃত-অভিভাবক!

ইসলামপ্রচার করেছিলেন আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম—বিপথগামীপাপীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য। তাই, সেই সময় যারা ইসলামগ্রহণ করেছিলেন—তারা নিজেদের দীর্ঘদিনের পাপবিসর্জন দিয়ে পুণ্যপথে ধাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন যারা রেডিমেট ইসলামগ্রহণ করে ইসলামের নামে যাবতীয় খুন-ধর্ষণ-বোমাবাজি-জঙ্গীবাদী অপকর্মসাধন করছে, এরা মুসলমান হয় কীভাবে? আর এদের কে মুসলমান বলে? আসলে, এরা কারা? এরা ইসলামের নামে নিজেদের মুসলমানপরিচয় দিয়ে মানবতাবিরোধী-নাশকতায় লিপ্ত হয়ে আজ পৃথিবীটাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে! এরা কারা? আর এই পাপীগুলো দিন-রাত অকাম-কুকামে ডুবেও সারাক্ষণ মুখে-মুখে শুধু ইসলাম-ইসলাম করছে! এদের জন্যই আজ ইসলামের এই দুরাবস্থা। আর সত্যিকারের মুসলমানসমাজ এই পাপীদের জন্যই সর্বত্র নানাভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে।

এরা একেকজন পাকা-লম্পট, অভিজ্ঞ-ধর্ষক, একাধিক মানুষখুনী, হত্যাকারী, গণহত্যাকারী, পারজায়িক, গণধর্ষক, বোমাবাজ, প্রথম শ্রেণীর মিথ্যাবাদী, দেশবিরোধী, দেশের শত্রু, মানবতার দুশমন, কালোটাকার মালিক, সুদখোর-ঘুষখোর, ভূমিদস্যু, সরকারি-খাল-বিল-জলাশয়-দখলকারী—আর এরাই কিনা ইসলামের সৈনিক! এদের হাতে সবসময় থাকে আগ্নেয়াস্ত্র! এরা ধর্মের কথা বলে শুধু স্বার্থের কারণে, আর মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য—আর এরাই কিনা মুসলমান?
পরনারীতে, মদে, ব্যভিচারে, ধর্ষণে দিন-রাত ডুবে আছে যে শয়তান—এখন সেও কৌশলগত কারণে আর স্বার্থের ধান্দায় শুধু ইসলাম-ইসলাম করছে! তোমাদের এতো ইসলাম-ইসলাম করতে হবে কেন? তোমরা ইসলামের কে?
নাপাক, নাজায়েজ, নাজাসাতে গালীজারাও শুধু দুনিয়ার লোভে একেবারে পাগল হয়ে নিজের স্বার্থে মানুষখুন করে পবিত্র ইসলামের দোহাই দিচ্ছে! এরা ইসলামের কে? আর এরা ইসলামের কী বোঝে? ইসলামধর্মগ্রহণের জন্য তো আগে মানুষ হওয়া শর্ত। আগে মানুষ হতে হবে। তারপর ইসলামধর্মগ্রহণ করতে হবে। পবিত্র ইসলামধর্মে পশুদের প্রবেশাধিকার চিরতরে নিষিদ্ধ।

পশুগুলো আজ মানুষখুনকে ধর্মজ্ঞান করছে! ইসলামধর্ম কি এতোই সহজ? এর কি অভিভাবক নেই? নিশ্চয়ই আছে। পবিত্র ইসলামের আইনানুগ অভিভাবক মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এবং তাঁদের মনোনীত প্রতিনিধিগণ। তাহলে, মানুষহত্যাকারী এই পশুগুলো ইসলামে কী চায়?

তোমরা কারা? আর তোমরা দিন-রাত কেন এতো ইসলাম-ইসলাম করছো? আর ইসলামের নামে মানুষখুন করছো? আর কেন তোমরা লোকদেখানোর জন্য এতো ইসলাম-ইসলাম করছো? মানুষহত্যা করে মুসলমান না হয়ে শুধু স্বার্থের জন্য মুসলমান-সেজে মুখে-মুখে এভাবে ইসলাম-ইসলাম করতে তোমাদের লজ্জা করে না?


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২১/০৭/২০১৬

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:০৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×