যদি আপনি নিজেকে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী দাবী করেন, তবে তা কাজেও প্রমাণ করতে হবে। যেমন, আপনাকে মৌখিকভাবে তা স্বীকার করতে হবে, তাঁর আদেশানুরূপ কাজ করতে হবে, তাঁর নিষেধ মানতে হবে। মোটকথা, আপনার আস্তিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে আপনাকে এ কাজগুলো করতেই হবে। বিশ্বাসীর সজ্ঞায় নীলগোষ্ঠীর (ছদ্মনাম) এটাই দাবী। কিন্তু নিজেদের দেশপ্রেমের প্রশ্নে তারা মৌখিক সম্মতিতেই সীমাবদ্ধ। অনেকে আবার সম্মতির বেলায়ও লজ্জাবতীর ভূমিকা রাখেন।
নীলগোষ্ঠী বলে এখানে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের সাক্ষাত পাওয়া যায় দিবসগুলোতে, বিশেষ করে জাতীয় দিবসগুলোতে। তারা বিশ্বাসীর সজ্ঞায় যে বয়ান দিয়ে থাকেন, দেশপ্রেমিকের সজ্ঞায় সেই সাদৃশ্য বয়ান টানতে পারেন না। জাতীয় দিবসগুলোতে তাদের অবস্থায় মনে হয়, এখনো তারা স্বাধীন বাংলাকে পাকিস্তান কল্পনা করেন। স্বাধীনদেশের হাওয়া-বাতাস খেয়ে বড় হয়েও এ নীলগোষ্ঠী বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করেন না। বিশেষকরে, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ওরা সম্মানের চোখে দেখতেই পারেন না। বঙ্গবন্ধুর শেষ জীবনের কারণে পুরো স্বাধীনতাকে তারা কলুষিত জ্ঞান করেন।
এ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বৃহৎ একটি অংশ রয়েছে, যাদেরকে আমরা কাওমি গোষ্ঠী বলে জানি। এঁদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলার প্রত্যেকটা অঞ্চলেই রয়েছে। ডিপিয়াই বা জনশিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে এঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিমাণ জানতে চাইলে সঠিক কোন তথ্য পাবেন বলে মনে হয় না। কারণ, একাজে ব্যয় করার মত তাদের হাতে কোন সময় নেই। তবে ধারণাভিত্তিক একটি সংখ্যা জানতে পারবেন, যে সংখ্যার সাহায্যে আমরা বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করে থাকি। যদি সাহায্য না আসতো, তবে এই শিক্ষিত চাকরিজীবী এ কাজ থেকেও নিষ্পত্তি পেত।
ধর্মীয় দিবসগুলো পালনের ক্ষেত্রে কওমিপন্থীদের থেকে সুন্নি পন্থী দাবীদার ভাইয়েরা একটু বেশিই এগিয়ে, তবে কওমি পন্থীরা একেবারে ছেড়ে দেন না। কিন্তু জাতীয় দিবসগুলো ছেড়ে দিতে কার্পণ্য করেন না। তবে বর্তমানে জাতীয় দিবসগুলোতে কাওমিরা পূর্বের চেয়ে কিছুটা সতর্ক হয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে এখনো একগুঁয়েমি ভাব রয়েগেছে। এই হুজুররা দিবস পালনকে খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখেন না। ধর্মীয় সাধারণ দিবসগুলোর মত তারা জাতীয় দিবসগুলোকে জ্ঞান করত এড়িয়ে চলেন। অথচ নীলগোষ্ঠীর দবী 'দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ'। ঈমান শব্দের অর্থ হল দৃঢ় বিশ্বাস। নীলগোষ্ঠীর ভাষায় বিশ্বাসের সজ্ঞা উপরে দেয়া হয়েছে। 'দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ' তাদের মুখনিঃসৃত এ বাণী থেকে প্রশ্ন আসছে, তাদের দাবীকৃত দেশপ্রেম কি তারা বাস্তবে পালন করছেন; বিশ্বাসের সাথে? (নীলগোষ্ঠীভুক্ত) জামাত ছাড়া বাকীরা চেষ্টা করছেন বটে। তবে তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। তাদের মধ্যকার ব্লগার ভাইদের নিকট অনুরোধ থাকবে, আপনারা নিজেদের ইতিহাস জানুন। আপনাদের নীলগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত জামাতিরা কিন্তু যুদ্ধাপরাধী। আপনারা সেই কাতারে না থাকায় গর্ব করার কথা কিন্তু নিজেদের একগুঁয়েমিতে সেটা হারাতে বসেছেন। দেখেন, যুদ্ধাপরাধীশক্তি কী চতুরতার সাথে দেশপ্রেমের ভান ধরে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারি, যদি সুযোগ পেত, তাহলে যুদ্ধাপরাধীরা জাতীয় দিবসগুলোকে চিরতরে মুছে দিত কিন্তু বাঙালির ত্যাগকে তারা ভয় পায়। আর তাই এই অপকর্মের কথা অবচেতনে ছাড়া ভাবতে পারে না।
আপনারা সৌভাগ্যবান যে, মুক্তিযুদ্ধার সারিতে আপনাদের উপস্থিতি রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, এখনো আপনাদের অনেক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবসগুলোতে কোন কিছু পালন হয় না, অনেক জায়গায় পতাকা উত্তোলনও হয়। জাতীয় সংগীত পাঠ তো অনেক দূরে। জামাত ব্যতীত বাকি নীলগোষ্ঠীর হুজুরেরা মিলাদে বিশ্বাসী, সুন্নি পন্থী ভাইয়েরা তো কিয়ামেও বিশ্বাস করে থাকেন। আপনাদের নিকট নিকট অনুরোধ, যেহেতু আপনারা গানবাজনা এলাউ করেন না, মিলাদে বিশ্বাস করেন। দয়াকরে এ দিনগুলোতে একটু মিলাদটিলাদ পইড়েন। তেলাওয়াত ও দু'আ-দরুদ কইড়েন। আপনারা জানেন, মুক্তিযুদ্ধাদের অধিকাংশই বাঙালি মুসলিম ছিলেন, তারা মৃত্যুপরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করতেন। আপনারা অন্তত, তাদের শহিদি আত্মার জন্য দু'আটু'আ কইরেন। নিজেদের একগুঁয়েমি ত্যাগ করুন, তাহলে আগামী প্রজন্ম বুঝতে পারবে আপনাদের মধ্যে দেশপ্রেম ছিল এবং আছে।
সর্বশেষ কথা হল, যদি প্রকৃত ধার্মিকেরা বক ধার্মিকদের ভয়ে ধর্মের কাজ ছেড়ে দেয় না। যদি কোন সমাজে এর উল্টো হয়, তবে সেখানে আর ধার্মিক থাকে না। বকধার্মিকরাই সমাজে ধার্মিকের রূপ নেয়।
নীলগোষ্ঠী : লেখার স্বার্থে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলোকে একসাথে নিয়ে আসতে এ নাম ব্যবহৃত হয়েছে কেবল।
ছবি : গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৮ ভোর ৬:৪৩