somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লালন মঞ্চে

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লালন মঞ্চে এক বৃদ্ধকে প্রায়ই একাকী বসে হুঁকোয় দম দিতে দেখা যায়। একদিন খুব আগ্রহ ভরে তার সাথে কথা বলতে যাই। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই আমাকে পাশে বসতে ইশারা করে সে। আমি প্রণোদিত চিত্তে বসে পড়ি। বহুক্ষণ সে কোন কথা বলে না, আমিও বহুক্ষণ তার অন্তর্মুখিতায় ব্যাঘাত ঘটাই না। একসময় বলে উঠি, এদিক দিয়ে হররোজ আসা যাওয়া করি। আপনাকে প্রায়ই দেখি, ভাল লাগে। বৃদ্ধ বলে, সব মানুষের নয়, তবে প্রায় মানুষেরই আয়না দেখতে ভাল লাগে। কেউ যত কুৎসিতই হোক না কেন, আয়নার সামনে নিজ চেহারার একটা বিশেষত্ব তার কাছে ধরা পড়বে। তখন সে তাকে ফিরে ফিরে দেখবে। মেয়েটাকে তুমি কতটা ভালোবাসো?’
হঠাৎ এ প্রশ্নে আমি বিচলিত হই। তথাপি জবাব দিই, আমার প্রাণকে যেমন।
বুড়ো বলে, দারুণ বলেছ। কোন অত্যুক্তি করনি। বলনি প্রাণের চেয়ে।
আমি মৌন থাকি। মন বলে বৃদ্ধের কথা শেষ হয়নি। আরও আছে। হুঁকোয় দুটো টান দিয়ে একরাশ নীল ধোঁয়া ছেড়ে বৃদ্ধ বলে, তোমাদের আমি লক্ষ্য করেছি আমাকে যেমন করেছ তুমি। তোমাদের প্রেম বড় প্রেম।
শুনে আমি আনন্দিত হই। কারণ মনের গভীরে আমিও তাই জানি। আমার স্বতঃস্ফূর্ত দন্তবিকাশের দিকে বুড়ো চেয়ে থাকে। বলে, যে সম্পর্ক যত বড়, তা ভাঙার কারণ তত তুচ্ছ। খুব তুচ্ছ কারণে একদিন তোমাদের সম্পর্কটা ভেঙে যাবে।
বুড়োর কথা শুনে তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় খুন চেপে যায়। ইচ্ছে হয় হুঁকোটা কেড়ে নিয়ে ধাঁ করে টেকো মাথাটার ওপর বসিয়ে দিই। মুণ্ডুটা ফাঁক হয়ে যাক। নিজেকে বহুকষ্টে নিবৃত করি। দাঁতে দাঁত চেপে বলি, আমাদের সম্পর্ক ঠিক এতখানি দৃঢ় যে আপনার বাঁজা ঘিলু কোনদিনও তার ঠাহর পাবেনা। বৃদ্ধ আমাকে ফেটে পড়তে দেখে হো হো করে হেসে ওঠে। বলে, আমিও, আমিও ঠিক এমন করেই বলেছিলাম!
আমি হনহন করে হেঁটে চলে এলাম।
এরপর দু বছর কেটে যায়। বুড়োর সঙ্গে সেই উদ্ভট কথোপকথনের এক বছরের মাথায় চঞ্চলার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভেঙে যায়। কারণটা ঠিক এতটাই তুচ্ছ যে গত সপ্তাহে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে টের পাই আমি আদৌ তা মনে করতে পারছি না। এ দু বছরের একদিনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাস মাড়াইনি। আজ কি মনে করে ঢুকে পড়ি। দূর থেকে দেখি লালন মঞ্চে সে বুড়ো সেই একই ভঙ্গিতে বসে আছে। আমি কাছে এগিয়ে যাই। বুড়ো আমাকে চিনতে পারে। তামাকসেবীদের স্মৃতিশক্তি নাকি শেষ বয়েসেও অটুট থাকে। আমি কাছে গিয়ে তার পাশে বসে পড়ি।

-নাও। তাহলে তামাক খাও।

আমি তার হাত থেকে হুঁকোটা নিই। গুড়ুক গুড়ুক দুটো টান দিয়ে বিষম খেয়ে চোখে অন্ধকার দেখি। আমার মনে একটি প্রশ্ন ফেনিয়ে ওঠে। কে লোকটি? বৃদ্ধের অন্তর্কর্ণ অতিশয় পরিষ্কার। আমার প্রশ্নটি সে শুনতে পায়। বলে, আমি হচ্ছি তুমি। সেই প্রথম দিনই তোমাকে অন্য ভাবে বলেছিলাম কথাটা। যাহোক। আমার কাজ শেষ হয়েছে। বৈশ্বিক অন্তর্মুখীভ্রান্তিচক্রের আমার অংশটি পূর্ণ হয়েছে। আজ হতে আমি মুক্ত। এবার আমি তোমাতে আরেকজনাকে পশিয়ে দিয়ে যাব। তার সাথে তোমার অর্ধশতাব্দী পর দেখা হবে যখন তোমার সায়াহ্ণ উপস্থিত। সেদিন চক্রের তোমার অংশটি পূর্ণ হবে। তুমি মুক্তি পাবে।
বুড়ো কখন ভোজবাজির মতন হাওয়া। আমার হাতে তার হুঁকো। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রই।
অর্ধশতাব্দী, দীর্ঘ সময়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

উন্মাদযাত্রা

লিখেছেন মিশু মিলন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

একটা উন্মুল ও উন্মাদ সম্প্রদায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজের শিকড় থেকে বিচ্যুত হলে যা হয় আর কী, সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো ঘুরপাক খায় আর নিন্মগামী হয়! এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×