একটা গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে নীলা সাগরের জলে পা নাড়ছে। ঢেউয়ের পর ঢেউ আসছে, তাকে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আছড়ে পড়া ঢেউগুলোর কোন কোনটি শরীর মন সব কিছুকে নাড়া দেয়। ঢেউয়ের পানির ছলক গা ভিজিয়ে দিলে চমকে উঠে, মনে হয় সারা শরীরে আদর-সোহাগে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বুক-মনে শিহরণ জাগে। অজানা ভাল লাগার আমেজ, মিষ্টি স্নেহ, মায়া-মমতা জড়িয়ে ধরে। নিঃসীম সাগরের দিকে তাকিয়ে নিজের মনটা অনেক বড় হয়ে যায়। নিজেকে অনেক হালকা লাগে। মনটা উদার, উদাস, আর উদ্দীপ্ত হয়। পিছনের সব কিছু ভুলে নতুন কিছু ভাবনা মনে ডানা মেলতে শুরু করে। বাড়িতে মা আর সে থাকে। বাবা বা আর কোন ভাই-বোন নেই। মা আর নিজে মিলে অবিরত জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। আরো একটু পড়ার অনেক চেষ্টা করেছে পারেনি। মা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। হয়নি। নিজের থেকে কিছু করার কথা ভাবনায় আসে, কিন্তু সাহস হয় না। আজ মনটা খুব বেশী উশৃংখল হয়ে গেছিল। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। তাই চলে আসল সাগর পাড়ে। সাগর পাড়ে আসার সময় নিজেদের ছোট কাঠের নৌকাটি নিজে চালিয়ে এসেছে। আনচান করা মন নিয়ে পথে যখনই কোন দিকে তাকিয়েছে, দেখেছে বেজোড়। শুধু অমিল। যেমন দেখতে চায়, তেমন নয়। যেমন, একটি শালিক, একটি গরু, একটি মানুষ। একা একা মানুষটি হেঁটে যাচ্ছে - একাই জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার লক্ষণ। জোড় শালিক শুভ লক্ষণ। অথচ দেখতে পাচ্ছে, একটি শালিক।
হঠ্যাৎ মনে হল সাগরের প্রবল ঢেউ আর সেই ঢেউয়ে লবন পানির তীব্র উল্লাস প্রকাশ পাচ্ছে। বাতাসের চাপ তার মনে নতুন চেতনা তৈরী করেছে। সে ঠিক করেছে, এখন থেকে মা-কে নিয়ে সে একা থাকবে। বাড়ির সামনে একটি দোকান দিবে। আয়-রোজগার করে স্বাবলম্বি হবে। তারপর বিয়ে বা অন্য কিছু। আগে মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা, তারপর অন্য ভাবনা। ভাল লাগা, ভালবাসার হাতছানি, গল্প শোনা, গল্প বলা জীবনের একটি দিক মাত্র। কথাগুলো ভাবছে আর উত্তাল সাগরের দিকে দেখছে। মাকে নিয়ে দোকান দেয়া বা দোকান চালানোয় যেমন ভাল দিক আছে আবার ঝুঁকি আছে। পাড়ার দুষ্ট ছেলেরা দোকান চালাতে নানান বাধা তৈরী করতে পারে। আবার কখনো মনে হয়, টিকে থাকার সংগ্রামে কতকাল সে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। মা-মেয়ে দুইজন নারী প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে টিকে থাকা কত কঠিন, তা ভুক্তভোগীই বলতে পারে। মহান আল্লাহ্ কি দুনিয়ায় উদাহরণ তৈরী করার জন্যই কি তাদের দু'জনকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৪