একটি রাষ্ট্রের জনগণকে ভেড়ার পালে পরিণত করলে কি হয় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমান প্রতিবেশী ভারতে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এক ধর্মান্ধ ও খুনি বিষের বাঁশি বাজিয়ে গোটা জাতিকে ইঁদুরের পালের মতো সর্বনাশের কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, কতো লক্ষ অসহায় মানুষের কষ্টদায়ক মৃত্যু হয়েছে ভেবে দেখেছেন কি? কি মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক চিত্র আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের।
চরম পুঁজিবাদ সৃষ্ট এই পাপেট গোটা জাতির অবচেতন মনের অর্থলিপ্সা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে উস্কে দিয়ে অপসৃত করতে সক্ষম হয়েছে মানুষের প্রতি, জীবনের প্রতি অপরের মায়া, মমতা ও সকল মানবিকতার। এই ইদুর অথবা ভেড়ার পাল এতই বেপরোয়া হয়ে গেছে যে, নির্বাচনী প্রচারণায় সামাজিক দুরুত্ব নিয়ে কেয়ার করে নি, কুম্ভ মেলাটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। আইপিএলটাও বন্ধ করি নি চরম অর্থলোভের কারণে। কি আফসোস ! গোটা ভারতবাসীর জন্য প্রার্থনা করি তারা যেন এই অতিমারীর এক্সপনেসিয়াল সংক্রমণের দুষ্টচক্র থেকে অচিরেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ কি হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার প্রভাবমুক্ত ? এখানে কি কেউ সময়ে সময়ে বিষের বাঁশি বাজিয়ে জনগণকে ইঁদুরের পালের মতো ভ্রান্ত ও আত্মধ্বংসী কার্যকলাপে প্ররোচিত ও পরিচালিত করছে না ? আসুন গুটি কয়েক বাঁশিওয়ালা ও তাদের কর্মকান্ডের প্রভাব নিয়ে পিছনে ফিরে তাকাই।
বাঁশিওয়ালা জুয়াড়ি দরবেশ বাবা"
সন্যাসীরা থাকার কথা পর্বতের গুহায় বা বনবাদাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এক সন্যাসী যিনি সফেদ দরবেশ বা দরবেশ বাবা বলেই সমধিক পরিচিত তাকে সর্বক্ষণ আমরা নগরীতেই দেখতে পাই। এই সন্যাসী শেয়ার বাজারে জুয়ার বোর্ডের বাঁশি বাজিয়ে লক্ষ লক্ষ ভেড়ার বা ইঁদুরের পালকে আকৃষ্ট করে নিঃশেষ করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন - তার মরণ বাঁশির ডাকে পতঙ্গের মতো আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছিলো সেই ভেড়ার পাল। তবে তার খেলা সেখানেই থেমে থাকে নাই। তিনি তার বাঁশির জাদু দিয়ে বর্তমানে আকৃষ্ট করেছেন কিছু বেকুব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রথীমহারথিদের। এদের চরম অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে সরকার সব ডিম্ এক ঝুড়িতে রাখার মতো মাত্র একটি উৎস থেকে করোনার ভেকসিন সংগ্রহের মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে - জনগণের জীবন ও জীবিকাকে এক মারাত্মক সন্ধিক্ষণে নিয়ে যাওয়ার পেছনে এই দরবেশ বাবার বাঁশির প্রভাব অপরিসীম।
বাঁশিওয়ালা 'মৌ' লোভী বাবা:
জাতীয় এবং বিদ্রোহী কবি যে সময় এদের মৌ-লোভী বলেছিলেন তখন ওই পেশায় নিয়োজিতদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে বোঝাতে চেয়েছিলেন - সেই সময় এই পেশার অধিকাংশই ছিলেন ওই অপবাদ থেকে মুক্ত। অথচ বর্তমানে সমাজে এই মৌ-লোভী দের সংখ্যা এবং প্রভাব অতি প্রবল। এদের একজন সেলিব্রেটি মূতা বিবাহের বিপ্লবী নায়ক, প্লেবয় 'মামুনুল' ভাইয়ার মধু-চন্দ্রিমার সাম্প্রতিক ঘটনা সবারই জানা, তাই তার কর্মকান্ডের ফিরিস্তির পুনরুল্লেখ করে পোস্টের সাইজ বাড়াতে চাই না। এই বিপ্লবীর বজ্রকণ্ঠের বাঁশির সূরে মোহিত হয়ে অনুসরণকারী ইঁদুরের পালের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তবে শুধু তিনিই নন, তার কমরেডরাও যে ধোয়া তুলসীপাতা নন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কমরেড বাবুনগরী এক সংবাদ সম্বেলনে বলছিলেন 'হেফাজতের নেতাদের সম্পদের হিসাব নেয়া যাবে না"। কেন ? রমজানের পূর্বে এক সংবাদ সম্বেলনে মিনমিন করে বলছিলো 'ব্যবসায়ীরা রমজানে দ্রব্য মূল্য বাড়ালে গরিবের কষ্ট হয়, তাই তাদের মূল্য না বাড়ানোর অনুরোধ ( ! ) করছিলেন ? এই ব্যক্তি বজ্রকণ্ঠে নানান ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াজ মাহফিল কাঁপিয়ে ফেলে। অথচ একই ব্যক্তি তাগুদি ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি কি ধর্মের চোখে মারাত্মক পাপ তার পক্ষে কোনো নূন্যতম হাদিসও খুঁজে পায় না বা তথাকথিত তাগুদি (তার ভাষায়) ব্যবস্থার ধারক অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকান্ড নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। কেন ? এই দুই জনের পূর্বসূরি এক প্রয়াত শীর্ষ নেতা জমি-জমা, সম্পদের মতো ম্যাটেরিয়ালিস্টিক বিষয়বস্তু এমনই ভোগ করতেন যে তার জীবনের শেষ পর্যায়ে এই সকল কমরেডরা তাকে একধরণের জিম্মি করে অশেষ কষ্ট দিয়ে শেষ বিদায় দিয়েছেন। এই সকল 'মৌ' লোভীদের বাঁশির সূরে নদীতে (নাকি আগুনে) ঝাপ দিতে প্রস্তুত অনুসারীর ভেড়ার পাল আকারে কম নয়।
বাঁশিওয়ালা তস্কর ও প্লেবয় লম্পট বাবা:
এই চরম অসাধু প্রয়াত রাষ্ট্রনেতাটি নিজে দুর্নীতিতে ও লাম্পট্যে জড়িত থেকে সারা জাতিকে পরিচালিত করেছে চরম স্খলনের পথে - একটি জাতি কাকে অনুসরণ করবে? এর পূর্বের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে নিজে দুর্নীতি ও লাম্পট্যে জড়িত থাকার অপবাদ কেহই দিতে পারবেন না। জনগণের সম্পদ থেকে কামাইরোজগার করে সে গড়ে তুলে সম্পদের পাহাড় আর ভোগ করে প্লেবয় হিয়ু হেফনারের মতো জীবন যাপন। এই ব্যক্তিটি ধর্মীয় লেবাস পরে জনগণকে এমনই বিভ্রান্ত করে যে এখনো অনেকে তার এই সকল পাপাচারের কথা স্বীকারই করতে চায় না। এই মিথ্যাবাদী মসজিদে যেয়েও বলে যে আগের রাতে স্বপ্ন দেখে পরিদর্শনে এসেছে অথচ জানা যায় তার সিকুইরিটি অনেক দিন পূর্ব থেকেই ওই মসজিদের নিরাপত্তা নিয়ে রেকি করছিলো। তার স্ত্রীর বৃদ্ধ বয়সে তার মহান পীরসাহেব দোয়া করে তাকে অলৌকিকভাবে সন্তানও দান করে দিয়েছিলেন। এই বহুরূপী শয়তানটির বাঁশির ডাকে বিভ্রান্ত অনুসারীর সংখ্যায় দেশে কিন্তু কম ছিল না।
জাতীয় পর্যায়ের কিছু বাঁশিওয়ালার কথা উল্লেখ করলাম। দেশের জেলা, উপজেলা ও নগরগুলোতে এই ধরণের বাঁশিওয়ালাও রয়েছে অগুনিত আর তাদের লেভেলেও অনুসরণকারী ভেড়ার পালের সংখ্যা কম নয়। এদের প্রভাবে সমাজ কোথায় যাচ্ছে বা নদী বা বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাচ্ছে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
ছবি: অন্তর্জাল