সুতরাং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেই খুন খারাবির মতো মারাত্মক অপরাধের মাত্রার হ্রাস ঘটে বা ঘটবে তার স্বপক্ষে এখনো কোনো অকাট্য প্রমান কেহই প্রদান করতে সক্ষম হয় নি। বরং এটা অনেকটা মাথা ব্যাথা হলে মূল উপসর্গ দূর না করে মাথা কেটে ফেলার মতোই ব্যবস্থা বলা চলে। ঠিক একই কথা প্রযোজ্য হবে কেহ যদি আশা করেন মৃত্যুদণ্ডের মতো ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট প্রদান করলেই বাংলাদেশ থেকে ধর্ষণের মতো অপরাধের মাত্রা হ্রাস পাবে বলে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকেই আমরা দৃষ্টিপাত করি না কেন ? দিল্লির গণধর্ষণ' মামলায় ২০১২ সালে সেই দেশে চার জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পরবর্তী বৎসরেই (২০১৩)ভারতে ধর্ষণের হার ৩৯% বৃদ্ধির পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। মৃত্যুদণ্ড প্রচলিত থাকা সত্বেও সেখানে ধর্ষণের মাত্রা মোটেই কমে নি, ঠিক যেভাবে কমে নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
একটি কঠোর আইনও কোনো কাজে আসে না যদি সেই আইন যথাসময়ে প্রয়োগ বা কার্যকর করার জন্য কাঠামোটিই দুর্বল হয়। ধর্ষণকারী জানে যে সে একটি মারাত্মক অপরাধ করছে, কিন্তু তা সত্বেও সে অপরাধ করার সাহস পায় এই কারণে যে সে মনে করে এই অপরাধ করেও সে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি ও আইনের ফাকফোকরে পার পেয়ে যাবে। এবং এটাই পরিবর্তনের প্রয়োজন।
আইনে শাস্তির মাত্রার বৃদ্ধি অনেক সময়ে আইনপ্রয়োগকরি সংস্থার সীমাহীন ক্ষমতা বৃদ্ধিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় অভিযুক্তদের আইনের কঠোর প্রয়োগের ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যোমে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজির সুযোগও সৃষ্টি করে। বিশেষত যে সকল দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্ষমতাসীন দলগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে, সেই সকল দেশে এই ধরণের সুযোগ সৃষ্টি নিরীহ জনগণের দুর্ভোগ ও নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কঠিন শাস্তি একজন অপরাধীকে নির্মূল করতে পারে কিন্তু অপরাধকে নয়। আসলে অপরাধ হ্রাস বা দমনে আইনে শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধির চাইতেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অপরাধের যথাযথ তদন্ত এবং বিচার বিভাগ কর্তৃক ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান যে কোনো অপরাধ দমনে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও দায়িত্ব অনেক বেশি। রাষ্ট্রকেই আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে ধর্ষণ, খুন/হত্যা সহ অপরাধসমূহের মূল উৎস সন্ধানে এবং তার প্রতিকারে।
ছবি: অন্তর্জাল
তথ্য সূত্র:
কয়েকটি রাষ্ট্রে হত্যার পরিসংখ্যান
নির্ভয়া মামলা ও ভারতে ধর্ষণের হার