আবরার হত্যার চতূর্থ দিনে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, হয়তো ভবিষ্যতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়েও একই পদক্ষেপ নেয়া হবে | এটা অবশ্যই অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ | আমাদের ছাত্রজীবনে স্বৈরাচার হটানো সহ কিছু ইতিবাচক কর্মকান্ডে ছাত্রনেতা ও কর্মীদের পাওয়া গেলেও বর্তমানে কোনো জনহিতকর কাজে এদের আর দেখা যায় না | চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কোটাবাজি করে এরা নিজের আখের গুছিয়ে নেয়ার ধান্দায় চরম ব্যস্ত | লোভ এদের রন্দ্রে রন্দ্রে এতটাই ঢুকে গেছে যে এদের রুটি রুজিতে সামান্যতম ভাগ বসানোর কোনো সম্ভাবনা দেখলে এরা বিরুদ্ধমত দমনের ছুতো খুঁজে অন্যপক্ষকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করে | এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয় | হাই কমান্ডকে বুঝ দেয়া হয় বিরুদ্ধপক্ষকে দমন করা হয়েছে বলে আর নিজের চামচাদেরকে অনুপ্রেরণা দেয়া হয় হালুয়া রুটিতে অন্যপক্ষ কোনো ভাগ পেলো না বলে | যাহোক, বুয়েট থেকে যদি শুরু হয় সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের, তবে সেটা অবশ্যই ছাত্রছাত্রীদের জন্য শুভ লক্ষণ | যে দেশে টপ টু বটম কারো কোনো নৈতিকতা নেই সেই দেশে ছাত্রছাত্রীদের আদর্শের রাজনীতি করাটা পুরোটাই হিপোক্রেসি এবং সময় নষ্ট করা |
তবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে ফেললেই হিংসা, হানাহানি বন্ধ হয়ে যাবে বলে ভাবাটা ঠিক নয় | বাংলাদেশের সর্বত্র যেভাবে হিংস্রতার বিস্তার ঘটেছে তা আফ্রিকার কিছু দেশ ছাড়া বর্তমানে আর কোথাও দেখা যাবে না | দেশের সর্বস্তরে মানুষের হিংস্রতা, সীমাহীন লোভ, দূর্নীতির মতো মানুষের চরম অধঃপতন বা স্খলনের উদাহরণ বা তালিকা কোনোদিনই শেষ হবে না | গৃহকর্মীদের খুনতি দিয়ে ছ্যাকা দেয়া, গ্যারেজ বা অন্যত্র হতোদরিদ্র স্বল্পবয়সী কর্মচারীটির পায়ুপথে কম্প্রেসরের বাতাস প্রবেশ করিয়ে দেয়া, মাদ্রাসাছাত্রীকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, কোটাবিরোধীদের হাতুড়ি পেটা করার মতো নিস্রংশতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে ভাবার কোনোই কারণ নেই | বরং এই সকল জঘন্য কর্মকান্ডের পিছনে যে সকল অনুঘটক কাজ করছে তা নিয়ে ভাবা সকলের জন্য ফরজ হয়ে গেছে | এইসব বিষয়ে নির্লিপ্ত থেকে নিজের গা বাঁচানোর প্রচেষ্টা কোনো কাজেই আসবে না, কোনো না কোনোভাবে নিজের উপরেও একদিন এরকম কিছু এসে আছড়ে পড়তে পারে | সুতরাং সবাইকে ভাবতে হবে কিভাবে নৈতিক অধঃপতিত এই জাতিটিকে স্খলনের পথ থেকে উদ্ধার করা যেতে পারে |
ছবি: অন্তর্জাল