বর্তমান বিশ্বে প্রায় দেশেই জাতীয়তাবাদের জয়জয়কার। জাতীয়তাবাদের গন্ধ প্রায় রাষ্ট্রপ্রধানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। অবশ্য প্রত্যেক দেশে আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য তা বেশ সহায়ক। আর ভারতীয় উপমহাদেশে এখন প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে ধর্মীয় করণের রাজনীতি চলছে। যে যত এগিয়ে, সে-ই নির্বাচিত হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ভারতীয় উপমহাদেশের আপামর জনসাধারণ এ ভয়ঙ্কর মৃত্যু ফাঁদে পা দিচ্ছে কেন তা চিন্তার বিষয়।
একাত্তরে পাকিস্তান আর্মির পক্ষ থেকে যে জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ইমরান খান নিয়াজী সম্প্রতি পাকিস্তানের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। অক্সফোর্ড শিক্ষিত ক্রীড়াবিদ যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন, তখন তাঁকে নিয়ে স্বভাবতই অনেক আশা তৈরি হয়। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে নবযুগের সৃষ্টি, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান, ইন্টারনেশনালিজম ইত্যাদি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তো আমরা যথেষ্ট অবগত আছি। ইমরান খানকে হাত ধরে এগিয়ে দেয়া সেনাবাহিনী তো তাদের অবস্থান চ্যাঞ্জ করবে না। তাই সেনাবাহিনীর হাতে ইমরান অনেকটা বাঁধা। আর ইমরান খান নানা সময়ে যে সব ভারতবিরোধী বিবৃতি দিয়েছেন, কিংবা কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলাকারীদের প্রতি পর্যন্ত সমর্থন জানিয়েছেন তাতে তাকে নিয়ে বেশি আশাবাদী হওয়াটা নিরর্থক।
হাফিজ সৈয়দের একটিও আসন না পাওয়াটা কিছুটা সন্তোষের বিষয় হলেও আমাদের আটের দশকের ভারতে বিজেপির কথাও ভাবতে হবে। তৎকালীন বিজেপির অবস্থাও বর্তমান হাফিজ সৈয়দের দলের মত ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দেশে উগ্রপন্থী দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তা উপেক্ষা করার উপায় নেই। তাই অদূর ভবিষ্যতে হাফিজ সৈয়দের মত দল বর্তমান বিজেপির অবস্থায় পৌঁছাবে না, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই।
ইমরান অত সহজে জয়লাভ করার কথা না। তবু দেখিয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর হাত থাকাটা অসম্ভব না হলেও তার রাজনীতির পথচলা অনেকাংশেই দায়ী।
১৯৯৬ সালে তিনি যখন রাজনীতিতে আসেন, তখন ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ান। পাকিস্তানের প্রেক্ষিতে তা সাড়া ফেলার কথা না। ক্ষমতালিপ্সু ইমরান দেশের পরিস্থিতি, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চাওয়া অনুযায়ী মত-মতবাদ পাল্টান। নিজেরে, তেহরিক-ই-ইনসাফরে(পি টি আই) সে অনুযায়ী তৈরি করেন । অল্প সময়েই তিনি রাজনীতিতে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
ব্যক্তিগতভাবে তিনি যৌন বিকারগ্রস্থ ছিলেন। খেলোয়াড় জীবনে লেট নাইট করা, মদ্যপান করা ইমরান খানের নিয়মিত অভ্যাস ছিল। ধর্ম নিয়েও তেমন আগ্রহী ছিলেন না। সেই ইমরান ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে নিজে ধর্মীয় লেবাস পরেছেন। আর মদিনার সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবার কথা বলছেন। তাই তিনি ইমরান। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা ইমরান। ক্ষণস্থায়ী রাজনীতির জন্য তিনি আসেনি । দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতাই চাই। যেকোনো প্রকারে নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা-ই তার প্রধানতম লক্ষ। মানুষ হিসেবে তিনি যথেষ্ট ঘৃণার পাত্র হলেও রাজনীতির জন্য অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্ব, তা নিঃসন্দেহে স্বীকার যোগ্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪১