যেকোনো অঞ্চলের ঐতিহ্যের লালন মূলত সভ্যতার লালন। কারণ ঐতিহ্যের মাঝেই নিহিত থাকে অঞ্চল ও জাতির সভ্যতার শিকড়। ঐতিহ্যে পাওয়া যায় বহুকাল ধরে চলে আসা কবিতা ও গান, পাওয়া যায় শিক্ষা ও অপরূপ প্রকৃতি এবং আরো অনেক কিছু। হরেক রকম পিঠা ও নানান উৎসবেরও সন্ধান মিলে ঐতিহ্যের খোঁজে বের হলে।
সুনামগঞ্জের নানান অঞ্চলে নানান উৎসব হতো যা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আমার গ্রাম বরইতিয়র এর কথাই যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, গত শতাব্দীর শেষ দিকেও অগ্রহায়ণ মাসে সেখানে এক ধরনের পিঠা উৎসব হতো। এই পিঠাকে স্থানীয়ভাবে রুট বলা হয়। পিঠা তৈরির জন্য আগের দিন সন্ধ্যা থেকে বাড়িতে চাল ভিজিয়ে রাখা হতো, তারপর সেই চাল ঢেঁকিতে কুটে গুঁড়ো করে কাই মাখানো হয়, পরে ওই কাইয়ের সাথে পিঁয়াজ, হলুদ, আদা ইত্যাদি মসলা সামগ্রী মিশিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট আকৃতির চ্যাপ্টা গোলাকার পিঠা বানানো হয়। একেকটি পিঠা ভাত খাওয়ার থালার আকৃতির হতো। ওই পিঠার উভয় পিঠে তেল মাখিয়ে তা কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো হয়।
সকাল থেকেই বাড়ির আঙ্গিনায় বা ধান শুকানোর খলায় প্রথমে চার কোনায় চারটি ইট বা মাটির তৈরি একধরণের একহাত উঁচু পিলার বসিয়ে চুলা তৈরি করা হয়। চুলার উপর সমান টিন বসিয়ে তার উপর এক সাথে দশ-পনেরোটি রুট পিঠা পাশাপাশি রাখা হয়। পরে ওই চুলায় খড় দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই আগুন অনেকক্ষণ ধরে জ্বলতো আর আমরা ছোটরা তখন সারা খলায় দৌড়াদৌড়ি করতাম।
তখন প্রত্যেক সামর্থ্যবানদের বাড়িতে খলায় একসাথে রুট পোড়া হতো। রুট পোড়া হয়ে গেলে তা আবার টুকরিতে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পালা। এরপর প্রতিটি রুট কেটে ছোট ছোট করে বাঁশের বেতের তৈরি ঢালায় করে মাঠে নিয়ে যাওয়া হতো। পুরো গ্রামের সবার রুট একত্রিত করে আবার গ্রামের সবার মাঝে বিতরণ করা হতো। এমন মজার ঐতিহ্যের উৎসব এখন আর হয়না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪২