আপনি সংখ্যালঘু (হিন্দু টার্গেট করলে সুবিধা হয়) কাউরে সাইজ করতে চান ? জমিজমা সংক্রান্ত ঘটনায় অথবা সামান্য কোনও কথা কাটাকাটি নিয়ে? তাইলে তারে জব্দ করার ‘মাস্ট সাকসেস’ একটা তরিকা শিখাইয়া দেই। বিফলে মূল্য ফেরত। প্রথমে এলাকায় রিউমার ছড়াইয়া দেন ওই লোক ‘ সংখ্যাগুরুর ধর্ম’ সম্পর্কে ‘কটু’ কথা বলেছে। ব্যাস আর পায় কে ? এরপর এমপির উপস্থিতিতে ওই সংখ্যালঘুকে ( হয়তো শ্যামল কান্তি ভক্তের মতো ৫১ বছর বয়েসী শিক্ষক, যিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কেবল শিক্ষকতাই করেছেন) কান ধরে উঠবস করানো তো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এমপি সাফাই গাইবেন- জনরোষ তাঁকে বাঁচাতে এই ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। এরপর ‘পরিস্থিতি বিবেচনায়’ ওই ‘কটুক্তিকারী সংখ্যালঘু’ কে বাঁচাতে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যান। এরপর ওই কটুক্তিকারী যখন ‘হেফাজত’ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসবে তারপরের পরিস্থিতি কি হবে ভেবে দেখেছেন কি? কি আর হবে? হাজারো গঞ্জনা আর ব্যক্তিগত আক্রমণ-নিগ্রহ সয়ে নামমাত্র মূলে ভিটামাটি বেচে রাতের আঁধারে জন্মভুমি ছেড়ে পালিয়ে চলে আসবে শিয়ালদহ স্টেশনের আশপাশের ঝুপড়ি বস্তিতে। আর যে রাতে ওই শিক্ষক চোখের পানি মুছতে মুছতে স্ত্রী-কন্যার হাতটি চেপে দেশ ছাড়বেন তার পরদিন সকালে এলাকার মানুষের কমন গালি, হালা মালাউনের বাচ্চা- খায় এই দেশে টাকা জমায় ইন্ডিয়ায়। এরপর… আর কি ? কলকাতার দক্ষিণের ঘিঞ্জি এলাকার কোনও বস্তি, অথবা ত্রিপুরা-আসামের কোথাও দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের দয়ায় জোটা এককামরার ঘরে শুয়ে বারবার মনে পড়বে জন্মভিটায় দুইটা আম গাছ ছিল। একটা কালো গাই ছিল। আর ছিল তিন রূমের একটা সুখের নীড়। স্কুল থেকে ফিরে ছাত্র পড়াতেন-এখন চারশ টাকার টিউশনির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘোরেন। স্ত্রী অসুস্থ- ভিটেবাড়ি ছেড়ে আসার দুঃখ ভুলতে না পেরে শয্যাশায়ী। মেয়েটা বাংলাদেশে থাকতে কলেজে পড়ত। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে মেয়েটি- এখন কারখানায় কাজের আশায় আছে। বিয়েটিয়ে নিয়ে যা স্বপ্ন ছিল- ওইসব এখন আর নাই। কিন্তু কেউ দেখবে না, ভাববেও না কতখানি কষ্ট বুকে নিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বেঁচে আছেন। মৃত্যুর সময়টাতে হয়তো একেবারে শেষ সময়ে স্মৃতিতে ভাসবে স্কুলের ঘন্টার আওয়াজ। যে স্কুলে চাকরি করেছেন দীর্ঘ একুশটি বছর। হয়তো ওই অপূর্ব স্বর্গীয় ঘন্টাধ্বনি শুনতে শুনতেই বিদায় নেবেন এমন হাজারো শ্যামল কান্তি। হয়তো আমিও !! (সংগৃহীত )
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২৩