আগে গ্রাম বাংলায় একটা কথা প্রচলিত ছিল, “আদার বেপারী হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি?” - সেই যুগে হয়ত বিষয়টা ঠিকই ছিল; ছিল কার্যকরী এক মতবাদ। কিন্তু বর্তমানে দিন পাল্টেছে তাই আদার বেপারীকে এখন শুধু জাহাজের খবরই শুধু নয়, খোঁজখবর রাখতে হয় কনটেইনার লাইনেরও; রাখতে জাহাজের Estimated Time of Departure (ETD) ও Estimated Time of Arrival (ETA). কারণ এখন আদা যে বিদেশ থেকে আসে? দেশের উৎপাদন দিয়ে আর আমাদের পেট ভরে না।
আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা হয়েছে ঠিক তার উল্টো। কর্মসূত্রে আমি যে পেশায় আছি- তার সাথে মধ্যপ্রাচ্যের খবরাখবর রাখাটা আমার জন্য একটা অপরিহার্য বিষয়। এই যেমন- গত তিন বছর ধরে আমরা যতটুকু পণ্য বিদেশে রফতানি করেছি তার ৭০% হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং এর একটা বড় অংশ হয়েছিল ইয়েমেনে। অফিসিয়ালি এই ভাগটা আমার পকেটে গেছে যেহেতু এই ক্রেতাগুলোকে আমি ডেভেলপ ও পরিচালনা করেছি। তাই এদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পেরে আমি অফিসে কাটিয়েছি অনেকটা ফুরফুরে সময়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো; বলতে পারেন, আমি ভীষণ বিপাকে আছি; সেলস টার্গেটের ধারে কাছেও যেতে পারছি না। আর এর কারণটা সবারই জানা, অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধ; যা আমাকে বড় প্যাঁচে ফেলেছে।
গতকাল যখন সেই ইয়েমেনের রাজধানীতে বোমা হামলায় শতাধিক মানুষ প্রার্থনারত অবস্থায় মারা গেল, আহত হল আরও অনেক বেশী; তখন আমি প্রমাদ না গুণে পারলাম না। নিজের প্রেশার বেড়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম হোথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী দখল করলেও যেহেতু তেমন কোন রক্তপাতের খবর পাচ্ছি না; তাই বোধহয় এদেশ আর যাই হোক সিরিয়ার মত হবে না। এর মধ্যেও কিছু পণ্য অবশ্যই রফতানি করতে পারবো কারণ এডেন বন্দরটা এখনো চালু আছে, শিপিং লাইন সূত্রে জেনেছিলাম জাহাজও যাবে। যদিও আমি জানতাম ইয়েমেন নিয়ে সৌদিআরব ও ইরানের মধ্যে আরও একটা প্রক্সি যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে; যা প্রকারান্তরে ‘সরাসরি’কেও টেনে আনতে পারে।
আপনারা যারা মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সময়ের খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের চারটা রাজধানী শিয়াদের দখলে? আপাতদৃষ্টিতে দামেস্ক আর বাগদাদের দখলটা সৌদিরাজ মেনে নিলেও ঘরের কাছে সানা দখলটা তারা কিছুতেই মেনে নেবে না। কারণ এতে করে তারা শিয়া বলয় দ্বারা ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়বে। পড়বে নিজদেশে সঙ্কটে কারণ সৌদি আরবেও আছে প্রচুর শিয়া মতবাদের মানুষ এবং ইতিমধ্যেই তারা কয়েকবার বিদ্রোহের চেষ্টাও করেছে।
আর এই সুযোগে আমাদের সবার বড় ভাই আমেরিকা আছে মহাসুখে, কমদামে তেল কিনে আর বেশী দামে বেশী বেশী অস্ত্র বেঁচে সৌদিআরবকে ইতিমধ্যেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানীকারক দেশ বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। যার ফলে তার নিজ দেশের অর্থনৈতিক দুর্গতি অনেকটাই কাঁটিয়ে উঠেতে পেরেছেন। দিন দিন সেখানে বাড়ছে কর্মসংস্থান, বাড়ছে অস্ত্র উৎপাদন ও তাদের গুণমানের ক্রমোন্নয়ন; যা তাকে ক্রমেই প্রতিযোগী রাশিয়া, চীন থেকে এগিয়ে দিচ্ছে। অপরদিকে, তিনি যদি এবার ইরানের সাথে একটা মিলতাল করতে পারেন? তাহলেই কেল্লাফতে! কারণ সেখান থেকেও মিলবে অস্ত্র কেনার একটা বড় অর্ডার। তাই বড় ভাইয়ের পুড়াই লাভ! লাভের উপ্রে লাভ! চারদিকে লাভ!
আর এদিকে এই আদার বেপারী চাকুরী নিয়ে প্রতিদিনই সংকটে থাকবে।
তা হোক! জয়তু আমেরিকা!
আমরা না হয়- নাই খেলাম; বড় ভাই আপনিই খান পেট পুড়ে >>>
২১/০৩/২০১৫ বিকালঃ ২.৪৩
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৪