somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিক্রম বধূ 'খনা'.... (চতুরভূজ)

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খনার বচন নামটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। কথায় কথায় বচনের ব্যবহারে ভাষাকে মাধুর্য্য মন্ডিত করার প্রয়াস অনেকের মাঝেই দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রাম বাংলার মানুষদের মাঝে খনার সরব উপস্থিতী ভাষাকে আরও সরস করে যেন। তখনকার দিনে কেউ একজন বচনের সাথে কোনো বাক্য বলাকে তার গুণের প্রকাশ বলে ধরে নেয়া হত।

'খনা' বাংলার লোকজীবন সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যত বাণী করেছেন যা খনার বচন নামে পরিচিত। বচন গুলোতে আবহাওয়া , জ্যোতিষ ও ভু-তত্ব ভেদে শস্যের ক্ষয়ক্ষতি ও ফলন সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয়েছে তার অনেকগুলোই বানীক সত্যের খুব কাছাকাছি। খনার উপদেশ গুলো দীর্ঘকাল বাংলার আবহাওয়া ও কৃষিকাজের দিকনির্দেশক হিসেবে আজও কাজ করছে।

খনা- নামটির সাথে যতটা পরিচিত বাংলার মানুষ ততটা অপরিচিত তার যাপিত জীবন সম্পর্কে। অনেকেই হয়ত জানেন না যে খনা ছিলেন একজন নারী। আ্যস্ট্রলজিতেও তার পারদর্শিতা ছিল কিংবদন্তিতুল্য। কিন্তু ধীরে ধীরে বচন রচয়িতা হিসেবে এক বিদুষী নারীতে পরিনত হন খনা। খনার আবির্ভাব সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা নেই তবে অনেকে বলেন ১২০০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি তাঁর আগমন ঘটেছিল। তাঁর ব্যাক্তিগত পরিচয়ও লোকসাহিত্য নির্ভর এবং সেক্ষেত্রে অনেক দ্বীমতও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে এক কিংবদন্তি অনুযায়ী তাঁর নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলি গ্রামে। শোনা যায় তাঁর পিতার নাম ছিল অনাচার্য । জীবনের অনেক খানি সময় বাস করেন সে সময়কার চন্দ্রকেতু রাজার আশ্রম চন্দ্রপুরে।

সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অপর এক কিংবদন্তি অনুসারে খনা ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। ভক্ষনে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর নাম রাখা হয় ক্ষনা বা খনা। তখন বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরের জন্ম লাভের পর গণনা করে দেখেনযে তাঁর আয়ু মাত্র এক বছর। তাই পুত্রকে তিনি একটি পাত্রে করে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌঁছায় এবং লালন পালন শেষে সিংহল রাজা যুবক মিহিরকে খনার সাথে বিয়ে দেন। সেখানে ধীরে ধীরে মিহির ও খনা জ্যোতিষ শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেন। এরপর মিহির সস্ত্রীক নিজভূমে তাঁর পিতার কাছে ফিরে আসেন এবং একসময় রাজা বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন এবং পিতার ন্যায় জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রতিপত্তি লাভ করেন। একদিন পিতা-পুত্র আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পড়েন। আমাদের বুদ্ধিমতী খনা সেই সমস্যার সমাধান করে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এতে রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে পিতার আদেশে মিহির খনার জীহ্বা কেটে দেন! এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্য ঘটে। কথিত আছে খনার জীহ্বা কেটে নেয়ার জন্য তাঁর শাশুড়ির সাথে দ্বন্দই বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

খনার বচন বাংলার লোক সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যান্ত্রীক জীবনের চরম জটিলতা আর পাশ্চাত্যের দূষিত হাওয়া আমাদের ধীরে ধীরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে । ভুলে যাচ্ছি আমাদের কিংবদন্তিতুল্য কেবলমাত্র লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসা এক বিদূষী নারী খনাকে, যিনি নিজের এক জীহ্বার বিনিময়ে নিজের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার কোটি কোটি মানুষের জীহ্বায়। যুগ যুগ ধরে মানুষেরা খনার বচন প্রকাশ করে চলেছেন নিজের জীহ্বা দ্বারা!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:০৮
৫৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×