somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

মা সমাবেশ

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছোটবোন শহরের অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত। সারাক্ষণ ব্যস্ত এই সভা ঐ মিটিং নিয়ে। বেচারা সকালে ঘুমাতে চায় কিন্তু ডিসির অফিস থেকে ফোন আসে মিটিং এ যোগ দেয়ার জন্য। অথবা এ সংগঠন ও সংস্থা ডাকতে থাক। সব কিছুই ভলায়ান্টারি কাজ। এক সময় সে একটা স্কুলে শিক্ষিকা ছিল। কিন্তু ক্লাস নেয়ার বাইরে স্কুলের সব ধরনের প্রতিযোগিতা ছাত্র ছাত্রির বিশেষ প্রতিযোগিতা বা বিশেষ দিবসের অংশ গ্রহণ,এ জাতিও কাজের সব দ্বায়িত্ব ওর উপর অর্পণ করা হতো; কারণ সব কিছুতেই সে সমান পারদর্শি। স্কুল ছাড়া ওর নিজের কিছু শিক্ষার্থি আছে যাদের ও শিখায় ছবি আঁকাও কবিতা আবৃত্তি।
এতো কিছু সামলাতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবন হয়ে উঠেছিল নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নাই অবস্থা। অনেক বেশী চাপ প্রয়োগ করছিল নিজের উপর, যার ফলে অসুস্থতা। এক সময় স্কুলের কাজটি ছেড়ে দিয়ে, নিজের ছাত্র ছাত্রী এবং নিজের কাব্য লেখা আঁকায় মনো নিবেশ করতে চাইলেও ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেল না। এর অনুষ্ঠান ওর প্রতিযোগিতা। সব কিছুতেই তার হাতের ছোঁয়া দিয়ে যেতেই হয় শেষ পর্যন্ত। কিছু ভলান্টিয়ারি কাজ, সংঘটনের সাথে জড়িয়েই আছে।
প্রতিদিন বলে, কাল তোমার সাথে কাটাব। অথচ ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় নেই বেরিয়ে বেড়ানোর অথবা আড্ডা দেয়ার। একদিন বলল, আমাদের মা সমাবেশের মিটিং । মা সমাবেশ বেশ নাম। এর কার্যকরন কি? চলো দেখবে। সকাল সকাল দু তিন রিকসা নিয়ে আমরা এক জায়গায় হাজির হলাম সেখান থেকে সিএনজি করে বেশ দূরে এক ছায়া সুনিবিড় পল্লী গ্রামে গিয়ে হাজির হলাম। সোনা ঝরা রোদের মায়ায় খোলা মাঠের হাওয়ায় আর নদীর বয়ে যাওয়া স্নিগ্ধতায় ছোটখাটো পাকা দালানের স্কুল। মাঠে সামিয়ানা টানিয়ে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে।
আমরা পৌঁছানোর বেশ কিছু পরে মা, এবং বাচ্চারা ধীরে ধীরে আসতে লাগল। সময় টুকু স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথাবার্তা বলে চারপাশের গ্রামীণ সৌন্দর্যের সাথে বেশ কাটালাম। ঘন্টাখানেকের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হলো।
আমার কোন ধারনা ছিল না মা সমাবেশে সম্পের্কে কিন্তু অনুষ্ঠানটি দেখতে দেখতে যা বুঝলাম। স্কুল কতৃপক্ষ, শিক্ষক এবং অভিবাবকের মধ্যে মত বিনিময়ের কার্যক্রম। মূলত এনজিও পরিচালিত অনুষ্ঠানে সাধারন গ্রামের অভিভাবক মূলত মায়েদের সচেতন করে তোলার কার্যক্রম, মা সমাবেশ। বেশ ভালোলাগল বিষয়টা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)) র কাজ স্বচ্ছতা নিয়ে মা সমাবেশ ছাড়াও আরো অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করে এই সংস্থা সারা দেশ জুড়ে। গত বছর আমার বোনের িটিআইবি দল সারা বাংলাদেশে শ্রেষ্ট হয়েছিল।
অনুষ্ঠান শুরু হলো আয়োজকরা তাদের বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। প্রধান বক্তারা বক্তব্য দিয়ে সমবেত মায়েদের কাছে জানতে চাইলেন তাদের কোন প্রশ্ন আছে কিনা।
আমার ধারনা ছিল কোন মহিলাই কিছু বলবে না। কিন্তু আমার ধারনা মিথ্যা প্রামাণ করে একে একে মহিলারা তাদের বক্তব্য দিল। তাদের চাওয়া এবং যে সব বিষয়ে তারা আরো খোলাসা ভাবে জানতে চায় এবং শিক্ষক ছাত্রছাত্রী অভিবাবকের মধ্যে গ্যাপের বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে মহিলার ব্যক্ত করল। যদিও এই অনুষ্ঠানটাই তাদের জন্য প্রথম ছিল
প্রথম যে মহিলাটি উঠে দাঁড়াল এবং তার বিষয়টি ব্যক্ত করে প্রশ্ন রাখল প্রধান শিক্ষকের কাছে তা শুনে আমি রীতিমতন চমকৃত হলাম।
তিনি বললেন, আমরা অনেক কষ্টে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাই। বাচ্চারা শিক্ষা পেয়ে শিক্ষিত হবে এই আশাতে। যেন তাদের জীবনটা আমাদের মতন কষ্টে কাটাতে না হয়। তাদের দিয়ে কাজ করালে এই সময়ে আমরা কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারি। কিন্তু তা না করে বাচ্চা স্কুলে পাঠাই শিক্ষার জন্য। তাদের স্কুলে পাঠানোর পোষাক, কলম, পেন্সিল, খাতার জন্য সংসারে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। সরকার থেকে বই দেয়া হয় কিন্তু স্কুলের টিচাররা নোট বই কিনতে বলেন। এই নোট বই কিনার ক্ষমতা তাদের নাই। এবং প্রধান শিক্ষক যদি এই বিষয়টির প্রতি নজর দিয়ে নোট বই কেনা বন্ধ করে দেন তবে তারা বড়ই উপকৃত হন। বইয়ে তো সব লেখা থাকে শিক্ষকরা সেখান থেকে পড়াবেন তবে নোট বই কেনার দরকার কি?
অসম্ভব সুন্দর একটি প্রশ্ন একজন অতি সাধারন গ্রামের মহিলার কাছ থেকে এসেছে। যে প্রশ্নে তিনি প্রতিদিনের নিজস্ব অভিজ্ঞতায় তুলে ধরেছেন, অপ্রয়োজনীয় নোট বইয়ের বিষয়। সন্তানের শিক্ষার প্রতি যে তিনি যথেষ্ট মনোযোগী বেশ বোঝা গেল। এবং উপস্থিত সূধী জনেরা প্রত্যেকে আমার মতন তাজ্জব পেলেন উনার প্রশ্ন শুনে।
কিন্তু সবচেয়ে হাস্যকর মনে হলো প্রধান শিক্ষকের উত্তর যিনি এই স্কুলটি গড়ে তোলার জন্য নিজের সারা জীবনের কাজের বর্ণনা রাজনীতিবীদদের মতন জ্বালাময়ি বক্তৃতায় অনেকক্ষণ ধরে বর্ণনা করলেন। এবং আসল প্রশ্নের উত্তরে বললেন, নোট বই আমারাও পড়েছি। এবং নোট বই অনেক সাহায্যকারী। আমরা শিক্ষকরা যখন কিছু পারি না তখন নোট বই থেকে সমাধান নেই।
এই যখন আমাদের স্কুলের শিক্ষকদের অবস্থা যারা নোট বই ছাড়া নিজেরা চলতে পারেন না। এবং বাচ্চাদের জানার ইচ্ছা আগ্রহ সব কিছু কোন এক নোট বই লেখকের কাছে জিম্মি করে দেন তখন সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা সংকটে অনুমান করে অসহায় বোধ করি।
গত দশ পনের বছরের বিদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কখনো নোট বইয়ের কোন প্রভাব দেখিনি। বরং একটি বিষয় জানার জন্য আরো অনেক বই পড়ার জন্য শিক্ষক দেখিয়ে দিয়েছেন। এবং শিক্ষক নিজের জানা দিয়ে সময় হিসাব না করে শিক্ষার্থিদের সাহায্য করতে দেখেছি। যাতে শিক্ষার্থিদের কখনো কোচিং ক্লাস এবং প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেতে হয়নি, স্কুলের পড়ানোর বাইরে।
আধুনা কিছু অভিভাবককে দেখি বাচ্চাদের জন্য প্রাইভেট টিচার এবং কোচিং ক্লাসের খোঁজ করতে বিদেশে। যেমনটা তারা নিজেরা পড়ে এসেছেন এ যাবত কাল। সে ভাবে শিশুদের সারাক্ষণ পড়ালেখায় ব্যস্ত রাখতে চান। কিন্তু বিদেশে স্কুলে, বাচ্চারা তাদের পড়ালেখা শিক্ষকের সাথে হোমওর্য়াক শেষ করে বাসায় এসে সারাক্ষন খেলাধূলা বা আনন্দে কাটায়। এবং এভাবেই যারা শেষ পর্যন্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায় সত্যিকারের স্টুডিয়াস স্টুডেন্ট বইয়ের পাতা থেকে চোখ উঠাবার সময় পায় না তারা আর বিশ্ববিদ্যালয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত। অভিভাবককে জোড় করতে হয় না পড়ায় বসানোর জন্য। মাঝে মাঝে অভিবাবকই বিরক্ত হন ওদের বইয়ে মুখ গুজে বসে থাকা দেখে।
যারা পড়ুয়া, পড়তে চায় তারাই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাক নোট বই এবং কোচিং ক্লাস না করে।
ঐ সমাবেশে আরো একটা বিষয় লক্ষ করেছিলাম। শিক্ষক এবং অন্যান্য আলোচকরা যখন ভারী ভারী কথা বলছিলেন, চারপাশে একটা গুণগুণ, শব্দ চলছিল কথার। বাচ্চারা আপন মনে খেলছিল বা কথা বলছিল। কিন্তু আমার বোন যখন তার বক্তব্য দেয়ার জন্য মাইকে দাঁড়িয়ে সুললিত কণ্ঠে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে একটি কবিতা আবৃত্তি দিয়ে কথা বলা শুরু করল তখন সবাই পিনপতন নিস্তব্ধতায় গল্পের ভঙ্গির সে কথা গুলো শুনছিল মনোযোগ দিয়ে। যে বাচ্চাগুলো দৌড়ে বেড়াচ্ছিল বা নিজেদের মধ্যে কথায় ব্যস্ত ছিল তারা থমকে থেমে গিয়েছিল এবং ধীরে এগিয়ে আসছিল মঞ্চর কছে।
আমাদের বেশীর ভাগ শিক্ষকের মধ্যে শিশুদের মনোজগতে আবেদন সৃষ্টি করে জানার বিষযে আকৃষ্ট করার শক্তি নেই। তাই তারা জোড় করে ধমক দিয়ে শিশুদের দাবিয়ে রাখতে চান। কিন্তু শিশুদের বেড়ে উঠা মন জগতের বিকাশ দাবিয়ে রাখার জন্য নয়। তাদের শরীরের বাড়ের সাথে মন বিকাশের সহজ প্রবণতা তাদের নিজেস্ব সত্বায়। সে ভাবেই তাদের বেড়ে উঠতে দেয়া উচিত সুন্দরের পথটি দেখিয়ে। অথচ সহজ প্রতিভা অঙ্কুরে নিভিয়ে দেয়ার মতন শিক্ষা ব্যবস্থা, নিয়ম, শৃঙ্খলা পদে পদে শিকল পরিয়ে রাখে।
সবাই সব কিছু বুঝে কিন্তু প্রচলিত নিয়মের গণ্ডি দিয়ে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা বন্ধ হওয়ার সময় এখন। তবু ভালো মা সমাবেশের মতন কিছু কাজ হচ্ছে দেশ জুড়ে।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×