গত বছর এই সময়ে জাপান ছিলাম। যেদিন হিরোশিমা বেড়াতে গেলাম। সারাদিন ঘুরে ফিরে রাতে হোটেলে ঘুমানোর সময় জানলাম সুনামির এর্লাট আছে। জাপান ভূমিকম্পের দেশ ছোটবেলা থেকে এই জেনে বড় হয়েছি। জাপানিরা ছোট ছোট কাগজের ঘর তৈরী করে। তাদের ঘরে আসবাব পত্র বেশী থাকে না। ভূমিকম্প ধ্বসে যেন ক্ষয়ক্ষতি বেশী না হয় তার জন্য এমন ভাবেই নির্মিত হয় বাড়ি ঘর। কিন্তু স্বচক্ষে যে জাপান দেখলাম সেখানে ছোট ছোট কাগজের বাড়িঘর খুঁজে পেলাম না। বিশাল বিশাল দালান কোঠা। হাইরাইজ ঝা চকচকে রাস্তা, ফ্লায়াইওভার দেখে মনেই থাকল না জাপান ভূমিকম্পের দেশ। এত এত সাবওয়ে টোকিও জুড়ে এবং তার প্রতিটি সাবওয়ের ভিন্ন সৌন্দর্য গঠন প্রণালী এবং সব চেয়ে আকৃষ্টকারি দৃষ্টিনন্দন, পরিচ্ছন্নতা মন কেড়ে নিল।
উত্তর আমেরিকার বা লন্ডনের টিউব রেলওয়ে ম্লান হয়ে যায় জাপানের রেলওয়ের গঠন প্রনালি এবং পরিচ্ছন্নতার দিক বিচার করলে। পরিপাটি রাস্তা, পার্ক, বড় বড় দোকান পাট আলো এবং সাজ, আধুনিকাতার শেষ সীমাটি ধরে রেখেছে প্রতি ক্ষেত্রে। জাপানে প্রথম চড়লাম চালকবিহীন ট্রেনে। কম্পিউটারাইজ ট্রেন সময় মাফিক যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোন রকম ভুল না করে।
সেদিন হিরোশিমায় রাতে ঘুমানোর আগে টেলিভিষনের খবর জেনে নতুন করে মনে পরল জাপান ভূমিকম্পের দেশ। এবং এই শতকেই কি বিশাল সুনামি তান্ডব ঘটল, বলা চলে স্বচক্ষে দেখেছি। ভিডিও ফুটেজে এবং টিভিতে দেখা সুনামির ছবিগুলো কী ভয়াবহ ছিল সবারই মনে আছে। প্রকৃতির তাণ্ডব কতটা ভয়াবহ হতে পারে । সাজানো ঘরবাড়ি, গাড়ি মানুষসহ কী ভাবে টেনে নিয়ে গেলো পানি । যেন ঝরাপাতা নাচছিল জলের উপর। কারও সাধ্য হলো না প্রকৃতির ছিনিয়ে নেয়া থেকে কিছু রক্ষা করার। যতটুকু নেয়ার আপন মনে নিয়ে গেলো সুনামি। তারপর আপন মনেই থামল। মানুষ শুধুই অসহায়ের মতন দেখল।
রাতে একটু ভয় ভয় মনে ঘুমালাম হিরোশিমায়। হয়তো বা সুনামির ধাক্কা খেতে পারি। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে সব ঠিকঠাক পেলাম। প্রকৃতি নড়াচড়া করেনি তেমন। আর বাকি কদিন জাপানের বুকে র্নিবিঘ্নে ঘুরে বেড়িয়ে আমার অন্য গন্তব্যে চলে গিয়ে ছিলাম।
কিন্তু সেদিন প্রকৃতি জাপানকে নাড়া না দিলেও নাড়িয়ে দিয়েছিল চীনের কিছু অংশ থেকে নেপাল, দুলে উঠেছিল বাংলাদেশও। তবে নেপালের কাটমুণ্ডু হয়ে ছিল লণ্ডভণ্ড।
ফিরে আসার পর বাংলাদেশে একদিন হালাকা ঝাঁকুনির দেখা পেয়েছিলাম। এই সময়টা ভূমিকম্পের কিনা কে জানে। শীতের তীব্রতার পর কি প্রকৃতি একটু গা ঝাড়া দিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গে, আর তাতেই গড়িয়ে যায় মানুষের সাধের সাজানো ঘরবাড়ি? কিছুদিন আগে বয়ে গেল বাংলাদেশে মিয়ানমারের উপর দিয়ে ভূমিকম্প। তারপর জাপান এবং ইকুয়েডর। প্রতিদিন আশংকা করা হচ্ছে যে কোন সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পে বদলে যেতে পারে ভূখণ্ড। কয়েক বছর আগে বসন্তের এই সময়ে পাহার ধ্বসে ঘরবাড়ি ঢুকে গিয়েছিল মাটির নীচে। আর সিঙ্কহোলের ভিতর টপাটপ ঘর গাড়ি পরে যাওযার খবরে আতংকিত হচ্ছিলাম।
সত্যি প্রকৃতির রহস্য জানা কঠিন। ভয়াবহ কিছু না ঘটুক শান্ত থাকুক ভূমি। প্রকৃতির সৃজন শীলতায় শান্ত প্রকৃতির মায়াময় রূপের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই ভয়াবহতায় নয়। ভালোবেসে ফুলে ফলে সাজাতে চাই প্রকৃতি বসুধা যেন আমাদের তার বুকে রাখে ভালোবেসে। উড়িয়ে না নিয়ে যায় দারুণ টানে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭