আগের পর্ব - বিচিত্র যত বিল্ডিং (পর্ব – ১)
একজন আর্কিটেক্ট হিসেবে হয়তো আর্কিটেকচারের ওপর কিছু গুরুগম্ভীর পোস্ট দেয়া আমার কর্তব্য। কিন্তু ছাত্র হিসেবে নেহায়েৎ বাজে ছিলাম বলে কটকটে কঠিন আঁতলামি ভাল লাগতোনা। তাছাড়া এসবের জন্য বহুগুণী লোক রয়েছেন। বেশ আগে (২০১১’য়) ৬টি বিচিত্র বিল্ডিংয়ের ওপর এক পোস্ট দিয়েছিলাম। কোন কোনটির আর্কিটেক্টের নাম পাওয়া গিয়েছিলো, কোনটির পাওয়া যায়নি।
এবার এলাম নতুন ছয়টি বিল্ডিংয়ের পরিচিতি নিয়ে। ইউটিউব বা নেটে অনেকেই এগুলোর ছবি দেখে থাকবেন। শুধু কিছু স্থাপত্য বিষয়ক তথ্যের জন্য এই পোস্টের অবতারণা। পোস্টটি খুব লম্বা হয়ে যাচ্ছিলো, তাই এটাকেও ছোট ছোট পর্বে ভাগ করা হয়েছে। সঠিক উচ্চারণ সম্বন্ধে ধারণা না থাকায় ইংরেজীতেই নাম দেয়া হোল।
Niterói Contemporary Art Museum
গুগল বলবে নিটেরই হলো ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূবে, Rio de Janiro রাজ্যের একটা শহর। এখানেই আছে অনেকটা ফ্লাইং সসারের মত এক অদ্ভুত স্থাপত্য। নিটেরই শহরটা গুয়ানাবারা উপসাগরের পাশে। এখানে Almirante Benjamin Sodré নামের অ্যাভেনিউয়ের ওপর Boa Viagem (শুভযাত্রা) viewpoint নামে এক দারুণ আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে। এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ Niterói Contemporary Art Museum।
নিটেরই সমকালীন চিত্রশালা
গুগল আর্থে নিটেরইয়ের অবস্থান
গুয়ানাবারা উপসাগর
Oscar Niemeyer আধুনিক স্থাপত্য জগতের এক দিকপাল। ব্রাজিলিয়ান এই আর্কিটেক্ট ১৯৬৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় ব্রাজিল ত্যাগ করেন। ব্রাসিলিয়াতে তার বেশ কিছু বিখ্যাত স্থাপত্যকর্ম রয়েছে। ১৯৮৫’তে তিনি আবার যখন ব্রাজিল ফেরেন তখন ব্রাজিলের নতুনরূপ।
স্থপতি Oscar Niemeyer এর ভাষায় এক টুকরো পাথরের ওপর একটা প্রস্ফুটিত ফুল। নিয়েমায়ার নিজেই বলেছিলেন “সাগর পরিবেষ্টিত জায়গাটা সরু, সমাধান ছিলো স্বাভাবিক। কেন্দ্রের স্তম্ভটি ছিলো অবশ্যম্ভাবী প্রথম ধাপ। তার সাথে স্বতস্ফূর্তভাবেই ফুলের আবির্ভাব।“
কনসেপ্ট
চিত্রশালাটি একটি সনাতন উপসাগরমুখী বাতিঘরের উপমা। ২৫০০০ বর্গমিটার খোলা চত্বরে রয়েছে গোলাকার, ৬০ সে. মি. গভীর আর ৮১৭ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের এক জলাধার। এর মাঝে চিত্রশালার মূল স্তম্ভ (২.৭ মি. ব্যাস)।
The Eagle Has Landed
লাল আঁকা বাঁকা ramp
মাটির নীচে কিছু অংশ আর ওপরের তিনটি স্তর নিয়ে এই চিত্রশালা। ৯৮ মি. দীর্ঘ আঁকাবাঁকা হাটা ramp দিয়ে দর্শনার্থীরা উপরে যেতে পারেন। পাঁচটি মূল গ্যালারী ছাড়াও কিছু ছোট ছোট প্রদর্শন কক্ষ রয়েছে।
নিয়েমায়ারের সরল রেখার কাজ পছন্দ ছিলোনা। তার কাছে সবসময়ই কামোদ্দীপক বক্রতা পছন্দের ছিলো। তার মানে অবশ্য এ নয় যে সেখানে কোন স্ট্রেইট লাইনই নেই।
উপসাগরের অতন্দ্র প্রহরী
সেকশান
নীচতলার প্ল্যান
সখী আর্কিটেকচার কাহারে কয়!
লেভেল – ১ এর ভিউয়িং এলাকা। পুরো উপসাগরের দৃশ্য উপভোগের জন্য।
পুরো ভবনটি ঘন্টায় দু’শো কিলোর ঝড় সহ্য করতে পারে। এর স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার হচ্ছেন সিভিল ইঞ্জিনীয়ার Bruno Contarini। ১৯৯৬ সালের এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
আধুনিক স্থাপত্যকলার দুই দিকপাল। বা’য়ে নিয়েমায়ার, ডানে Norman Foster (ইংল্যান্ড)। ২০১১ সালে
অস্কার নিয়েমায়ার ২০১২’তে ১০৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
এ প্রজেক্টের সাথে এক রাজনৈতিক কেলেংকারী জড়িত। Zeca Mocarzel, sub-mayor of the Niterói's Oceanic Region খুব কমদামে মূল মালিকদের কাছ থেকে ঐ এলাকার জমি কিনে রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, ঐ জায়গাটি এক ধরণের restricted zone বিধায় ওখানে নতুন কিছু করা যাবেনা। কিন্তু কিছুদিন পর ক্রিসমাসের আগ দিয়ে যখন Jorge Roberto Silveira প্রজেক্টটি নির্মাণ অনুমোদনের জন্য সিটি কাউন্সিলের কাছে পাঠান, তখন মাত্র দু’দিনেই তা অনুমোদিত হয়ে যায়। আর ধা ধা করে জমির দামও বেড়ে যায়। স্থানীয়দের কাছে এটা Jorge Roberto Silveira, Zeca Mocarzel and João Sampaio (long-time Niterói's politicians) এই ত্রিমূর্তির ক্রিসমাসের উপহার!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২০