মেক্সিকোর ক্ষুদ্র মাছধরা বন্দর টুক্সপ্যান থেকে ৮২ জন গেরিলা যোদ্ধা নিয়ে অত্যান্ত গোপনে ছেড়ে যায় ছোট একটি জাহাজ,‘গ্রানমা’ । বিরূপ আবহাওয়ায় সবগুলো বাতি নেভানো জাহাজটি অতি সাবধানে মোহনা পার হয়ে তবেই আলো জ্বালায় । প্রায় ৬০ ফিট লম্বা এই ডিজেল চালিত বোটটি ছিল মূলত ১২ জনের উপযোগী এক ইয়েট বা প্রমোদ তরী যাতে অসম্ভব ঠাঁসাঠাসি করে চলছিল ৮২ জনের এক গেরিলা দল । দলের নেতৃত্বে ছিলেন কিউবান বিদ্রোহী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো,ভাই রাউল ক্যাস্ট্রো এবং সদ্য চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেয়া আর্জেন্টাইন চে গুয়েভারা ।
বোট ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় এক বিশ্রী ব্যপার ! যোদ্ধাদের সাগর ভ্রমনের অনভ্যস্ততার কারণে তিনজন নাবিক সহ সাত আটজন বাদে সবাই অসুস্থ হয়ে পরে । সবাই পাগলের মতো অ্যান্টি হিস্টামিন খুঁজতে থাকে কিন্তু তাদের মজুদে সেটা না থাকায় বমিতে একাকার হয়ে যায় জামাকাপড় এমনকি ছোট জাহাজটির ডেক ! চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে গিয়ে তারা সবাই মোটামুটি রেহাই পায় বিশ্রী রকম সি সিকনেস থেকে ।
অভিযানের শুরুতে ১৯৫৬ সালের অবশিষ্ট সময় ছিল এক মাস এক সপ্তাহ আর তাই ফিদেলের সুরে সুর মিলিয়ে সবার মনে তখন একটাই প্রতিজ্ঞা “১৯৫৬ সালে হয় আমরা মুক্ত হবো নয়তো শহীদ হবো !
পূর্বনির্ধারিত কেপক্রুজ লাইটহাউস খুঁজে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তারা যখন কিউবার ওরিয়েন্টি প্রদেশের লা কলোরাডা বীচে নামে তখন ২ ডিসেম্বরের শুভ্র সকাল !
কিন্তু এখানেও ভাগ্য প্রসন্ন হল না । একটা কোস্টগার্ড দল তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাতিস্তা বাহিনীকে খবর দেয় উপরন্তু বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট পার হতেও কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায় গেরিলাদের । অবশেষে মেক্সিকো থেকে রওনা দেওয়ার ১০ দিন পর ‘আলেগ্রিয়া ডি পিও’ নামক জায়গায় সবাই মিলিত হন বিশ্রামের জন্য যার অর্থ ‘ধার্মিকের আনন্দ’ । আর এই আনন্দকে মাটি করে দিয়ে সেখানেই আকস্মিকভাবে শুরু হয় অত্যাচারী বাতিস্তা বাহিনীর আক্রমণ ।
এই হামলায় ‘গ্রানমার’ ৮২ জন বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মধ্যে অধিকাংশই নিহত হয় অথবা ধরা পরে বাতিস্তা বাহিনীর কাছে ! বেঁচে থাকে শুধু ফিদেল,রাউল ও চে সহ ১৪-১৫ জনের ছোট একটা দল । মুষ্টিবদ্ধ তাদের হাত,চোখে আগুনের ফুলকি আর মনে হিরণ্ময় ইতিহাস রচনার হাতছানি ! (চলবে)
সুত্রঃ
“বিপ্লবের স্বপ্নভূমি কিউবা”
“চে গুয়েভারার ডায়েরি”
“উইকিপিডিয়া”