ভ্রমণ আমার অসম্ভব প্রিয়… কিন্তু একা একা ভ্রমণ করার মধ্যে কোন আনন্দ নেই, তাই মনমুগ্ধকর ভ্রমণের জন্য চাই কিছু উচ্ছাসিত ভ্রমন বিলাসী বন্ধুমহলের, স্কুল, কলেজ জীবনের বন্ধু/বান্ধবী দের পাশপাশি পেয়েছি অনেক নতুন বন্ধু/বান্ধবী….
ভ্রমন বিলাস কিছু বন্ধুমহলের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, যারা না থাকলে হয়ত ভ্রমনের পুরোপুরি আনন্দটুকু কখনোই উপভোগ করতে পারতাম না..
আব্দুল্লাহ সানি, হামিমুন তানজিন, কনক লতা রয়, ফরহাদ, তাহের, জিকু আশরাফ, মুকিত…এই বন্ধুগুলোর সাথে ১২/১২/১২ তে কাটানো সেন্টমার্টিন ভ্রমণ হয়তো কখনোই ভুলতে পারবো না, অসম্ভব রকমের মজা করেছ্রি…
আরো কিছু স্কুল বন্ধুদের কথাও উল্লেখ না করলেও নয়.. হাসান মিমু, ফখরুল ইসলাম শিমুল, গোফরান, মেজবাহ, জাফারি, সৌরভ, রাসেল, আরিফ , ইয়াছিন, ইমতিয়াজ, মেহেদী, জুই, হামিম, আনিকা, রিমা, সানি, সেলী, পুনম, নিয়াজ, সাইফুদ্দীন… যারা সবসময় খুব কাছে থেকেই উপহার দেয় কিছু মনমুগ্ধকর মুহুরর্ত…হঠাত করেই জমিয়ে দেয় বিকেলের আড্ডা… নৌকা ভ্রমণ… যারা হঠাত করেই মন খারাপের দিনটা্কে করে তোলে চানচল্যকর, ভূলিয়ে দেয় ক্ষনিকের কষ্টগুলোকে…
বেশ ভালোই তো আছি…..
“পাখি যদি ফেরে তুমি কোথা যাও
গোধূলির রঙে রঙে কি নিজেকে হারাও?
বাউলের গানে কি ভাসে উদাসীর সুর
ভবঘুরে মন নিয়ে যাবে বহুদূর ?”
কবিতার লাইনগুলো যেখানে দেখেছিলাম সেখানে রচয়িতার নাম ছিল না – নাম না জানা তাঁর প্রতি সপ্রশংস কৃতজ্ঞতা । আসলেই মন ছুটে যেতে চায় দূর বহুদূর….
সম্প্রীতি, ১৬.০৮.১৩ ইং কিছু ভ্রমনপ্রিয় বন্ধুদেরকে নিয়ে ঘুরে আসলাম বান্দরবন, সাথে ছিল সানি, হামিম, কনক লতা রয়, ফরহাদ….. এবং আড্ডাবাজদের এই আড্ডামুখর ট্যুর টাকে আরো আনন্দময় করে তুলতে যোগ দিয়েছিল আরো ৫ জন নতুন আড্ডাবাজ, তারা হলেন…. মেহেদী , আবিদা, চয়ন, মোরশেদ, তারেক।
যেহেতু বান্দরবন আমদের গ্রামের বাড়ি থেকে বেশী দূরে নয়, সেহেতু বান্দরবনের সৌন্দর্য্য্ এবং রুপের কথা অনেক শুনেছি কিন্তু, সময়ের অভাবে সেভাবে ঘুরে দেখা হয়নি...তাই ঈদের ছুটিতেই ঘুরে আসলাম…..
যদিও সকালের যাত্রা শুরু হয়েছিল (৭:৩০মিনিটে) চট্টগ্রাম থেকে বি.আর.টিসি বাসে, কিন্তু আমি গ্রামে থাকার কারনে শুরু থেকেই বন্ধুদের সাথে ছিলাম না.. মাঝ পথেই আমি এবং আমার দুই বন্ধু (মোরশেদ ও তারেক)তাদের সাথে যুক্ত হই একই বাসে…হঠাত করেই জমে যায় আড্ডা,গান,হৈ-হুল্লুর… প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে গাড়িতে চড়ার পর আমরা পৌছলাম (১০:৩০ মিনিটে) বান্দরবান ষ্টেশানে… । বাস থেকে নেমে সবাই একটু জিরিয়ে নিলাম…, আমাদের প্রোগ্রামটা যেহেতু ছিল একদিনেরই সেহেতু আমরা কোন হোটেলেই উঠলাম না… আর জায়গাটা যেহেতু আমাদের সকলের কাছে অপরিচিত, সেহেতু আমার এক চাকমা বন্ধু আশিশ এর বদৌলতে আমরা সারাদিনের জন্য একটি গাড়ি (জিপ)ভাড়া করি এবং তার কাছ থেকে আমরা কিছু জায়গা সম্পর্কে ধারনা নিয়ে নেই… ওখানে সিন্ধ্বান্ত হল আমরা ৩টা জায়গায় যাব (শৈলপ্রপাত, স্বর্ণ মন্দির,নীলাচল) তারপর গাড়িটা আসলে আমরা সবাই গাড়িতে উঠি, আমরা সংখ্যায় ১০জন ছিলাম, তাই গাড়িটা ও ছিল আমাদের জন্য পারফেক্ট..
অবশেষে আমরা (১০:৪৫ মি) রওনা দিলাম শৈলপ্রপাত এর উদ্দেশ্যে..
হুড়ছাড়া জীপতেটি উঠতেই শুরু হল জমজমাট এক হৈ-হুল্লুর,
আর মাতামাতিতে যেন আমরা আকাশ ছুতে চাইছিলাম… আর মনের সুখেই এ্লোমেলো সব গান ধরছিলাম… আর মনে হচ্ছিল,
দুঃখটাকে দিলাম ছুটি , আসবে না ফিরে…
এক পৃথিবী ভালবাসা , রয়েছে ঘিরে…
মনটা যেন আজ , পাখির ডানা…..
হারিয়ে যেতে তাই নেই তো মানা…...
চুপি চুপি স্বপ্ন ডাকে হাত বাড়িয়ে…..
মন চায় মন চায় , যেখানে চোখ যায়…..
সে...খানে যাবো হারিয়ে ………
কিছুদূর যেতে না যেতেই শুরু হল সে এক ঝুম বৃষ্টি… আকাশটা যেন মনের আনন্দেই কাদঁতে আরম্ভ করল…আর রাস্তার দৃ’পাশের দৃশ্যটা যেন আরো উপভোগ্য হয়ে উঠছিল…আমরা গাড়িতে বসেই সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য টুকু উপভোগ করছিলাম…প্রায় ১৫-২০ মিনিট পথ অতিক্রমের পর আমরা পৌছলাম শৈলপ্রপাতে, কিন্তু বৃষ্টির তীব্রতা তখনো কমেনি, তাই আমরা গাড়িতেই বসে ছিলাম প্রায় ১৫ মিনিট । গাড়ির অবস্থান স্থলেই চোথে পড়ল থাচা ভর্তি কিছু পাহাড়ি প্রজাতির প্রিয় ফল, যা্ বিক্রয় করছিল কিছু পাহাড়ী মেয়ে… ফলে সময়টুকু কাটালাম কিছু তরতাজা ফল ক্রয় করে তা সবাই মিলে আনন্দমুথর পরিবেশে ভোজনের মাধ্যমে…
তারপর আমরা গাড়ি থেকে নেমে শৈলপ্রপাত এর পুরো এলাকাটুকু অবলোকন করলাম, যেহেতৃ কনক আর আমি সদ্য কেনা আমাদের DSLR দু’টো নিয়েছিলাম সেহেতু আমরা শৈলপ্রপাতে জমকালো কিছু ফটোসেশান করলাম…আর শৈলপ্রপাত এর অপরুপ সৌন্দর্য্যটুকু আমাদের ক্যামেরাবন্দি করলাম
আবার আমরা সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম এবং রওনা দিলাম র্স্বণ মন্দিরের উদ্দেশ্যে…..
প্রায় ২০-৩০ মিনিট পথ অতিক্রমের পর আমরা পৌছলাম র্স্বণ মন্দিরে… মাঝ পথের এই সময়টুকু যে কি আনন্দে কাটিয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না, আমরা জন প্রতি ৩০ টাকা টিকেট কেটে প্রবেশ করলাম র্স্বণ মন্দিরে..
স্বর্ন মন্দিরে পৌঁছেই স্থানটির কিছু ছবি আমার ক্যামেরাবন্দি করলাম…
পুরো মন্দিরটি সোনালী রং করা। এর ভেতর বেশ কয়েকটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে একটি ড্রাগন এবং বিরাট একটি ঘন্টা। এই বিশাল ঘন্টাটি ছোটোখাটো একটি মানুষের সমান। সবুজ পাহাড়ের মধ্যে একদম সোনালী এই বৌদ্ধমন্দিরটি পুরো স্থানটিতে অপরুপ এক দৃশ্যপট তৈরী করেছে…
অবশেষে পুরো মন্দিরটি ঘুরে আমরা রওয়ানা হলাম নীলাচলের পথে… কিন্তু সময় তথন প্রায় ২:৩০ মিনিট, সবার পেট তখন ক্ষিদায় চো, চো, করছিল.. তাই মাঝ পথেই একটা পুলিশ ক্যানটিনে গিয়ে সবার হাত মুখ ধুয়ে দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম এবং প্রায় ৩:০০ টার দিকে আবার রওনা হলাম নীলাচলের পথে..সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার ফুট উঁচুতে নীলাচল এর চুড়া। রাস্তাটা একেবারে ছবির মতো। কেমন স্বপ্নের মতো আবহ। উপরের দিকে মনে হচ্ছে মেঘগুলো ধরা ছোঁয়ার মধ্যে এসে যাচ্ছে…
আমরা যখন নীলাচলের পাহাড়ের পাদদেশে উঠছিলাম তখন গুটি গুটি বৃষ্টি হচ্ছিল, এবং যতই উপরে উঠছিলাম মনে হচ্ছিল আমরা যেন মেঘের দেশে পাড়ি জমাচ্ছিলাম, আর চারদিকটা যেন মেঘে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল… আবহাওয়াটা চরম ভাল লাগছিল… এত ভাল লাগার মাঝে ও কেমন জানি মনকে শান্তনা দিতে পারছিলাম না, কারন ভাল লাগার এই মুহুর্ত গুলো আমরা ক্যামেরাবন্দি করতে পারছিলাম না, ঘন মেঘ আর গুটি গুটি বৃষ্টিতে আমরা ভেজা কাকের মত হয়ে যাচ্ছিলাম… তারপর ও এতো…. এতো…. এত্তো… ভাল লাগছিল.. ওখানে না গেলে তা বুঝানো সম্ভব না…মনে হচ্ছিল সব যেন স্বপ্নের মতো… দূর হতে দেখতে পাহাড়টি আকাশের নীলের সাথে মিশেছে মনে হওয়ায় নাকি এর নামকরন করা হয়েছে নীলাচল.. সত্যিই যেন তাই… যখন আমরা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নীচের দিকে দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিল আমরা মেঘের উপরে ভাসছি… আরো একটা বড় আনন্দের ব্যাপার হল.. ওখানকার লোকদের মুখে শুনেছি ওইদিনকার আবহাওয়াটা নাকি ছিল ওদের দেখা সব চাইতে সুন্দর এবং মনমুগ্ধকর…তাইতো পুরো বিকেলটুকুই কেটে গেল পরম শান্তিতে…কিন্তু মনে একটা দূ:খ থেখেই গেল… সৌন্দর্য্য টুকুকে ফ্রেমবন্দি করতে না পারার… এবার আসল আমাদের ফেরার পালা….
কিছুতেই এই সৌন্দর্য্যটুকুকে ফেলে আসতে মন চাইছিল না…
কিন্তু করার কিছুই ছিলনা, আমাদের টুর টাই ছিল একদিনের… সবাইকে ফিরতে হবে চট্টগ্রামের সেই ব্যস্ততম জীবনে…তাই ফেরার সময়ে নিজের মোবাইল টা বের করে কয়েকটা ছবি তুললাম…..
যা হয়তো dslr এর মতো হবে না বটে, কিন্তু হয়তো এই ছবিগুলোই নীলাচলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটুকু বারবার রিপ্লে হবে মনের মিডিয়া প্লেয়ারটিতে….
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাই গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম বান্দরবান বাস ষ্টেশান এর দিকে..ফেরার পথে ও শেষ বারের মত আবার অনেক মজা করে নিলাম এবং ষ্টেশানে পৌছলাম ৬ টার সময়ে…এবং ষ্টেশানে নেমে দেখি চট্টগ্রাম গামী কোন বাসের ই টিকেট নেই… সন্ধ্যা বেলা বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম গামী বাসের সময় হল ২টা একটা হল সন্ধ্যা ৬:০০টা এবং অপর টা রাত ৮ টা, ওইদিন সব টিকেট নাকি শেষ হয়ে গেছিল , তাই বাস না পেয়ে একটা লোকাল বাসে করে কেরানীহাট নামক স্থানে চলে আসি… সেখান থেকে আমি,মোরশেদ,তারেক ছাড়া অবশিষ্ঠ্ আড্ডাবাজদের চট্টগ্রাম গামী বাসে তুলে দেই এবং তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা তিনজন গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি….. অসংখ্য..অসংখ্য… ধন্যবাদ বন্ধু তোদেরকে, তোদের ছাড়া হয়তো এরকম একটা মনমুগ্ধকর ট্যুর কখনোই সম্ভব হতো না…….
গল্প লিখে বা বলে নয়, কবিতা লিখে নয়, ছবি দেখিয়ে নয়। কোনকিছু দিয়েই বান্দরবানের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করা যাবে না আর কাউকে বোঝানোও যাবে না। শুধু নিজে চোখে দেখে তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হবে। তাই যারা এখনও সেখানে যাননি, অনুরোধ রইলো অন্ততঃ একবার নিজে চোখে দেখে আসুন সেই রূপ…বলতে পারি, সরকার, মিডিয়া এবং অন্যান্য মাধ্যম বান্দরবানের দিকে নজর দিলে বান্দরবান পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটা হবেই হবে। বিধাতা সয়ং যেন রংতুলি দিয়ে একেঁছেন এ বান্দরবান। কাঁচারং এর ভেজা আভা যেন তার সৌন্দর্য্য বাঁকে বাঁকে ফুটিয়ে তুলেছে।এ যেন স্বপ্নে দেখা সবুজশাড়িতে মোড়ানো কোন এক রাজকণ্যা…………
------------------(M@srur)------------------