ব্লগার মরুভূমির জলদস্যু এর লেখা গুলো মন দিয়ে পড়ি। তার জাম কাহিনী কয়েকবার পড়লাম। জাম গুলোর দিকে চোখ আটকে গেলো। আমাদের আগে ৬ টা জাম গাছ ছিল এখন আছে দুইটা। পুকুরের ধারে যেই গাছটা থেকে আমরা পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম সেটাও ঝড়ে পড়ে গেছে। গাছটা ছায়া দিতো। আমরা ওই ছায়াতে বসতাম। বসে মাছ ধরতাম।
জামের সিজনে প্রচুর জাম ধরতো ছয়টা গাছে। পাখির আনাগোনা , কিচিরমিচির । কাঠবিড়ালীর জাম খেয়ে লেজ নাড়াতো , পাড়ার বাচ্চা ছেলেপেলে গাছের নিচে ঘুরঘুর করতো , টুপ টাপ জাম পড়তো , সবাই দৌড়ে জাম কুড়াতো , টুপ করে মুখে পুড়ে দিতো ! সবার মুখ থাকতো রঙিন !
দুদিন পর পর জাম পাড়া হতো। গামলা গামলা জাম, ব্যাগ ব্যাগ জাম। ঝুড়ি ভর্তি জাম। সেই জাম বিতরণ করা হতো। আমাদের জাম গাছের জাম সারা পাড়া খেতো। কখনো বিক্রি করা হতো না। কেউ জাম কিনতে আসলে এমনিতেই দিয়ে দেয়া হতো। জামের ব্যাপারী জামের দাম করতে এলে ফিরে যেতো। সবাইকে দিয়ে খাওয়ার মূল্য অনেক , শান্তি অনেক । যেটা টাকা দিয়ে কেনা যায়না , বিক্রিও করা যায় না।
জামের সময় আমাদের উৎসব ! স্কুল থেকে ফিরে ছুটে জাম গাছ তলায় ভীড় জমাতাম। পাড়ার বাঁকিরা আগেই এসে জুটে যেতো। নতুন জামা কাপড় পড়ে জামতলায় যেতাম না। গাছ থেকে জাম পড়ে পোশাকে দাগ লেগে যেত। এক গামলাতে জাম মাখিয়ে চলতো খাওয়ার প্রতিযোগিতা ! কার মুখ কত রঙিন হয়েছে আমার মুখ হা করে দেখতাম।
দাদা বলতেন ,
কুটিইইই ভাই !
জ্বি দাদা।
জাম খাইছো ?
জ্বি দাদা খাইছি।
মুখ লাল হয়ছে ?
হয়ছে দাদা।
রঙিন মুখের দিন গুলো আর নেই। বাড়ির জাম ছাড়া অন্য জাম মুখে পুরিনি। ইচ্ছা হয় না। ঢাকার বাজারে জাম দেখি। তাকিয়ে থাকি। মন খারাপ হয়ে যায়। কিনিনি না। খাই না।
জাম বিক্রেতা বলে, স্যার জাম নিবেন ?
আমি বলি , না।
স্যার ,কম দাম। খুব ভালো।
আমি মাথা নাড়ায়।
দোকানি তো আর জানে না আমি কেন তাকিয়ে আছি।
-----------------------------------------------
ছবি: পুকুরপাড়ের জাম গাছ। এখন আর নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১:৩২