অবজেক্টিভ মোরালিটি হচ্ছে এরকম- যা ভালো, তা সর্বাবস্থায় ভালো, আর যা খারাপ, তা সর্বাবস্থায় খারাপ। অবজেক্টিভ মোরালিটির ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দের কোন স্থান নেই। আপনি পছন্দ করলেন কী করলেন না- এটা অবজেক্টিভ মোরালিটিতে ম্যাটার করে না।
যেমন- মিথ্যা বলা খারাপ। এটা আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, এটা খারাপ।
মানুষ হত্যা খারাপ। এটা আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, এটা খারাপ।
ক্ষমা একটা মহৎ গুণ। এটা আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, এটা ভালো।
সাবজেক্টিভ মোরালিটি হলো আত্মকেন্দ্রিক। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের পছন্দের ব্যাপারকে সাবজেক্টিভ মোরালিটি বলা হয়।
যেমন- আপনি বা আপনারা ঠিক করলেন যে মিথ্যা বলা মোটেও খারাপ না, এই বিশ্বাসটাকে বলা হয় সাবজেক্টিভ মোরালিটি.....
এখন, অবজেক্টিভ মোরালিটি বলে যদি কিছু পৃথিবীতে থাকে, তাহলে একজন স্রষ্টা থাকা আবশ্যক। কেননা, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের কাছ থেকে কখনোই অবজেক্টিভ মোরালিটি আসতে পারে না। কারণ, যা খারাপ, তা সর্বাবস্থায়, সর্বস্থানে, সর্বস্তরে খারাপ। যা ভালো, তা সর্বাবস্থায়, সর্বস্থানে, সর্বস্তরে ভালো। এখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রিফারেন্স বলে কিছু নেই।
ভালোকে সর্বাবস্থায় ভালো, আর খারাপকে সর্বাবস্থায় খারাপ বলে নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য একজন Supreme Law Giver দরকার। আর, এই Supreme Law Giver হলো স্রষ্টা।
এখন প্রশ্ন হলো, মোরালিটি সাবজেক্টিভ না অবজেক্টিভ?
মোরালিটি যদি সাবজেক্টিভ হয়, তাহলে একসময়ের 'দাসপ্রথা' কে আজকে বসে আপনি 'ভুল' বলতে পারেন না। বর্ণপ্রথাকে খারাপ বলা যায় না। হিটলার কর্তৃক 'ইহুদি নিধন' গণহত্যাকে আজকে বসে আপনি 'ভুল' বলতে পারেন না।
পল পট কর্তৃক কম্বোডিয়ার গণহত্যাকে আপনি কোনভাবেই 'ভুল' বলতে পারেন না।
কারণ, একসময়ের লোক দাসপ্রথাকে ভুল মনে করতো না, ভালো মনে করতো।
হিটলার তথা নাযী সম্প্রদায় ইহুদি হত্যাকে জায়েজ মনে করতো।
তাহলে, যদি মোরালিটি সাবজেক্টিভ (ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নির্ভর) হয়, তাহলে একসময়ের দাসপ্রথা, হিটলার, পলপট, মাও সে তুং- প্রত্যেকেই সঠিক ছিলো।
মোরালিটি সাবজেক্টিভ হলে তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় ঠিক।
কিন্তু, কমন সেন্স কী বলে? দাসপ্রথা কী ঠিক? মানুষ হত্যা কী ঠিক? হিটলার কী তার অবস্থানে ঠিক ছিলো?
উত্তর যদি 'না' হয়, তাহলে মোরালিটি সাবজেক্টিভ না, অবজেক্টিভ...
মোরালিটি সাবজেক্টিভ না অবজেক্টিভ- এটা একটা দারুন ফিলোসপিক্যাল প্রশ্ন।
এই প্রশ্নে নাস্তিকরা প্রায়ই 'ঢোঁক' গিলে চেপে যান।
বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো একসময়ের বাঘা বাঘা নাস্তিকও এই প্রশ্নটাকে স্কিপ করে যেতো।
ইদানীং কালের নাস্তিকরা অবশ্য কিছু আলাপ করে এটা নিয়ে।
তাদের পয়েন্ট হলো- মোরালিটি অবজেক্টিভ হলেও, এটা কোনভাবেই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করেনা। এটা স্রষ্টার কাছ থেকে আসতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
একজন নাস্তিকের সাথে আলাপ হচ্ছিলো কিছুদিন আগে। সেও বললো,- 'ঠিক আছে, মোরালিটি অবজেক্টিভ। কিন্তু এটা কী প্রমাণ করে যে মোরালিটি স্রষ্টা নির্ধারণ করে দেয়?'
আমি বললাম,- 'চুরি করা কী খারাপ?'
সে বললো- 'হ্যাঁ।'
- 'চুরি করা খারাপ, এই সেন্সটা মানুষের মধ্যে কীভাবে এলো?'
- 'সভ্যতার সাথে সাথে।'
- 'যেমন?'
সে এক্সপ্লেইন করলো এভাবে-
'ধরুন, আপনি আমার কাছ থেকে সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেলেন। এরপর দেখলেন, পরেরদিন আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। না খেয়ে মরতে বসলাম। তখন আপনি ফিল করলেন যে আপনি ঠিক করেন নি। কাজটা ঠিক হয় নি।চুরি করা খারাপ। এভাবেই মোরালিটি আস্তে আস্তে গ্রো আপ হয়। মানুষ বুঝতে শিখে, চুরি করা অপরাধ।'
আমি বললাম,- 'এটা তো একটা এসাম্পশন মাত্র। এমনও তো হতে পারতো, ধরুন- আমি আপনার সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেলাম। এরপর দেখলাম, আরেব্বাস! কাজটা তো খারাপ না। রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়া যায়। আমি ফিল করলাম, চুরি করা তো ভালো। রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন। এরপর আমি আরো জোরেশোরে চুরিতে নামলাম।
আরো ধরুন, আপনিও ফিল করলেন, চুরি করে যদি আমি যদি ধনী হয়ে যেতে পারি, আপনি কেনো পারবেন না? এরপর, আপনিও চুরি তে নামলেন।
এমনও তো হতে পারতো। কিন্তু এরকম না হয়ে চুরিকে মানুষ অপরাধ হিসেবে দেখা শুরু করলো কেনো? এটা কীভাবে হলো?'
মজার ব্যাপার। অই নাস্তিক সেদিন বলেছিলো,- 'এমনি এমনি হয়ে গেছে....'
আসলেই, নাস্তিকতায় সবকিছু এমনি এমনিই হয়ে যায়। ম্যাজিক শো দেখতে গেলেও, ম্যাজিকের পেছনে একজন ম্যাজিশিয়ান থাকে, নাস্তিকতায় বিলিভ করতে গেলে ম্যাজিককেও ঠুনকো মনে হবে।
নাস্তিকতা মতে, পৃথিবীতে ভালো,মন্দ বলে কিছু নেই।
বিখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স বলেছিলো- “The universe we observe has precisely the properties we should expect if there is at the bottom, no design, no purpose, no evil and no good. Nothing but blind pitiless indifference. . . . DNA neither knows nor cares. DNA just is, and we dance to its music.”
রিচার্ড ডকিন্সের মতে, দুনিয়ায় ভালো-খারাপ বলে কিছু নেই।আমরা যা করি, তা কেবলমাত্র আমাদের DNA তে ক্যামিকেল মিউজিকের জন্যই করি।
ডকিন্সের লজিক অনুযায়ী, একজন ধর্ষণকারী ধর্ষণ করলে তাকে ব্লেইম করা যাবে না। কারণ, এই ধর্ষণে ধর্ষণকারীর কোন ভূমিকা নেই। সব দোষ তার DNA 'র।
একজন খুনীকে খুনের জন্য ব্লেইম করা যাবে না। কারণ, সে তার DNA'র মিউজিক সম্পন্ন করেছে, তার দোষ নেই।
এজন্য দেখবেন, নাস্তিকরা সবকিছুর পেছনে ন্যাচারাল কজ খুঁজে। এইযে, সমকামীতাকে বৈধতা, ন্যাচারাল বানানোর জন্য Gay Gene নিয়ে কী কাহিনীটাই না করলো।
নাস্তিকরা কিছুদিন আগে Crime Gene নিয়েও কাহিনী করেছে।
অর্থাৎ, মানুষ যে অপরাধ করে, মূলত তাতে মানুষের কোন হাত নেই। সে Crime Gene নিয়ে জন্মালে, Crime করবেই। এটা ন্যাচারাল প্রসেস।
এজন্য তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না, ব্লেইম করা যাবে না।
নাস্তিকদের প্রস্তাবিত পৃথিবী কেমন হবে?
যেখানে খুন, ধর্ষণ কোন অপরাধ না। যেখানে অপরাধ হবে, অথচ অপরাধের কোন শাস্তি হবে না। স্বাভাবিক আর ন্যাচারাল বলে মানুষ অপরাধকে নিতে শুরু করবে।
ভাবতেই শিউরে উঠি। গা ছমছমে।
#আরিফ আজাদ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬