শচিন রমেশ টেন্ডুলকার ব্যাপকভাবে তার প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ।
জন্ম: এপ্রিল ২৪, ১৯৭৩ (বয়স ৪০), মুম্বাই, ভারত ।
উচ্চতা: ১.৬৫ মিটার,
পত্নী: ডা. অঞ্জলী মোহতা (বিবাহ ১৯৯৫)
শিশু: অর্জুন টেন্ডুলকার(ছেলে), সারা টেন্ডুলকার(মেয়ে)
বাবা: রমেশ টেন্ডুলকার
মা: রজনি টেন্ডুলকার।
ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০তম টেস্ট খেলছেন শচীন টেন্ডুলকার। যেটি একই সঙ্গে তাঁর বিদায়ী টেস্টও। তাঁর এই ২০০তম টেস্টে আসুন, জেনে নিই টেন্ডুলকার সম্পর্কে ১০০টি কৌতূহল জাগানিয়া তথ্য।
১. প্রাভীন আমরে টেন্ডুলকারকে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার উপযোগী এক জোড়া জুতো এনে দিয়েছিলেন।
২. রামেশ পারধে ছিলেন টেন্ডুলকারের বাল্যবন্ধু। পারধে রাবার বল পানিতে চুবিয়ে টেন্ডুলকারের দিকে সজোরে মারার কাজটি করতেন। বলটি মারার পর ব্যাটে ছাপ পড়ে যেত, টেন্ডুলকার বুঝতে পেতেন বল তাঁর ব্যাটের মাঝখানেই লাগছে কি না! সেই বাল্যবন্ধু পারধে এখন টেন্ডুলকারের ব্যক্তিগত সহকারী।
৩. স্কুলজীবনে টেন্ডুলকার টেনিস তারকা জন ম্যাকেনরোকে অনুকরণ করতেন। ঠিক তাঁর মতো লম্বা চুল রাখতেন এবং চুলে ব্যান্ড ব্যবহার করতেন।
৪. টেন্ডুলকারের বাবা ছেলের নামটি রেখেছিলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শচীন দেব বর্মণের নামের সঙ্গে মিলিয়ে।
৫. টেন্ডুলকারের বয়স যখন ১৪, সুনীল গাভাস্কার তাঁকে বিশেষ ধরনের হালকা প্যাড উপহার দিয়েছিলেন। ইন্দোরে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে ক্যাম্পে থাকাকালীন সেই প্যাড চুরি গিয়েছিল।
৬. মুম্বাই অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর দীলিপ ভেংসরকার টেন্ডুলকারকে বিখ্যাত ‘গান এন্ড মুরে’ (জি.এম) কোম্পানির তৈরি দামি একটি ব্যাট উপহার দিয়েছিলেন।
৭. টেন্ডুলকারের ক্রিকেট গুরু রমাকান্ত আচারকার নেট প্র্যাকটিস করার সময় টেন্ডুলকারকে আউট করতে পারলে বোলারকে একটা কয়েন দিতেন। আর নট আউট থাকতে পারলে কয়েনটি হয়ে যেত টেন্ডুলকারের। এমন ১৩টি কয়েন আজও আছে টেন্ডুলকারের কাছে।
৮. ব্যাটসম্যান নয়, ক্রিকেট জীবনের শুরুতে টেন্ডুলকার ফাস্ট বোলারই হতে চেয়েছিলেন! ভর্তি হতে গিয়েছিলেন ভারতের এমআরএফ পেস একাডেমিতে। কিন্তু একাডেমির কোচ কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি তাঁকে বাতিল করে দেন।
৯. ১৯৮৭ বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যখন ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল ম্যাচ চলছিল, টেন্ডুলকার স্টেডিয়ামে ছিলেন ‘বলবয়’ হিসেবে।
১০. ১৯৮৯-১৯৯০ ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুমে টেন্ডুলকার ‘ইরানি কাপে’ দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়, অন্যপ্রান্তে সঙ্গী গুরুশরণ সিংয়ের আঙুল ভেঙে গিয়েছিল, সেই ম্যাচে গুরুশরণ ভাঙা আঙুল নিয়েই টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরিতে সঙ্গ দিয়েছিলেন।
১১. টেন্ডুলকারই একমাত্র ক্রিকেটার যার রঞ্জি ট্রফি, ইরানি কাপ ও দুলীপ ট্রফির মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরির কীর্তি আছে।
১২. ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড সফর শেষে ভারতে ফেরার সময় বিমানবন্দরে প্রথম পরিচয় অঞ্জলির সঙ্গে। বয়সে ছয় বছরের বড় অঞ্জলিকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
১৩. টেন্ডুলকারের শ্বশুর আনন্দ মেহতা ব্রিজ (এ ধরনের তাস খেলা) খেলায় রেকর্ড সাতবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
১৪. এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য ৭৯টি ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয়েছিল টেন্ডুলকারকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ওই সময়ের মধ্যে নয়টি টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন টেন্ডুলকার!
১৫. উইজডেনের সর্বকালের সেরা একাদশে একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আছে কেবল টেন্ডুলকারের নাম।
১৬. স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নির্বাচিত সর্বকালের সেরা একাদশে আধুনিক ক্রিকেট যুগের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে রয়েছে কেবল টেন্ডুলকারের নাম।
১৭. ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাসে টেন্ডুলকার সব সময় সামনের সারির বাম দিকের জানালার পাশের আসনটিতে বসতে পছন্দ করেন।
১৮. ২০০৮ সালে টেন্ডুলকারকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ দেওয়া হয়।
১৯. ২০০৭ সালে লর্ডস টেস্ট শেষে হ্যারি পটারখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা ড্যানিয়েল রেডক্লিফ টেন্ডুলকারের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।
২০. ১৯৯৯ সালে টেন্ডুলকারকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
২১. ১৯৯২ সালে টেন্ডুলকার ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল ইয়র্কশায়ারে প্রথম কোনো বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে খেলেন।
২২. ‘লন্ডন টাইমস’-এর বিখ্যাত সাংবাদিক জন উডকক টেন্ডুলকার সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ‘আমার দেখা সেরা টেন্ডুলকারই। তোমরা অনেকে না দেখলেও আমি কিন্তু ব্র্যাডম্যানকেও দেখেছি।’
২৩. ১৯৮৭ সালে বম্বে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ‘সেরা জুনিয়র ক্রিকেটার পুরস্কার’-এর জন্য যোগ্য টেন্ডুলকারকে বিস্ময়করভাবে উপেক্ষা করেছিল। সুনীল গাভাস্কার তখন টেন্ডুলকারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, ‘বিসিএ তোমাকে সেরা জুনিয়র ক্রিকেটারের পুরস্কারটি দেয়নি বলে খুব বেশি মন খারাপ কোরো না। তুমি যদি এই পুরস্কার পাওয়াদের তালিকাটা দেখো, দেখবে যে একটা লোকের নাম খুঁজে পাচ্ছ না, সেই লোকটা (গাভাস্কার) কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে মন্দ করেনি!’
২৪. ১৯৮৭ সালে মুম্বাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, সেই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান দলের হয়ে বদলি ক্রিকেটার হিসেবে ফিল্ডিং করেছিলেন টেন্ডুলকার! অবশ্য সেটি ছিল প্রীতি ম্যাচ।
২৫. ১৯৮৮ সালে আজাদ ময়দানে স্কুল ক্রিকেট ম্যাচে নিজের স্কুল শারাদাশ্রমের হয়ে সেন্ট জেভিয়ার্সের বিপক্ষে বিনোদ কাম্বলিকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে তখনকার রেকর্ড ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন। সেই ম্যাচে টেন্ডুলকার অপরাজিত ছিলেন ৩২৬ রানে, কাম্বলি ৩৪৯ রানে।
২৬. ১৯৮৮ সালে ‘হ্যারিস শিল্ড টুর্নামেন্টে’র সেই ম্যাচে বিনোদ কাম্বলিকে নিয়ে রেকর্ড জুটি গড়ার পথে টেন্ডুলকার গান গাচ্ছিলেন, শিস দিচ্ছিলেন, যাতে সহকারী কোচের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় এড়ানো যায়। কারণ সহকারী কোচ ইনিংস ঘোষণার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন।
২৭. টেন্ডুলকার-কাম্বলির রেকর্ড পার্টনারশিপের পর দিল্লির তিহার জেলখানার দুটি বিভাগের নামও রাখা হয়েছিল টেন্ডুলকার ও কাম্বলির নামে।
২৮. ১৯৮৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওয়ানডে অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন টেন্ডুলকার। তাঁর দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটিতেও শূন্যতেই আউট হয়েছেন! টানা দুটো শূন্য দিয়ে শুরু ওয়ানডে ক্যারিয়ার।
২৯. ১৯৯০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে টেন্ডুলকার প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন ম্যাগনাম কোম্পানির একটি আস্ত শ্যাম্পেন বোতল। ১৮ পূর্ণ না হওয়ায় শ্যাম্পেনের বোতলটি খোলেননি। শুধু তা-ই নয়, সেই শ্যাম্পেনের বোতল তিনি খোলেন আট বছর পর, মেয়ে সারার প্রথম জন্মদিনে।
৩০. ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সময় টেন্ডুলকারের ব্যাটে কোনো স্পনসর ছিল না। সেই বিশ্বকাপ টেন্ডুলকার শেষ করেছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে।
৩১. ১৯৯২ সালে কাউন্টি দল ইয়র্কশায়ারে প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে খেলার সুযোগ পান।
৩২. ১৯ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলার কীর্তি গড়েন।
৩৩. ১৪ নভেম্বর ১৯৯২, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবানের কিংসমিডে খেলছিলেন। ওই ম্যাচে টেন্ডুলকার ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে রানআউটের শিকার হন।
৩৪. ১৯৯৮ সালে টেন্ডুলকারকে ‘রাজিব গান্ধী খেলরত্ন’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়।
৩৫. ১৯৯৯ সালে চেন্নাই টেস্টে টেন্ডুলকারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরেও পাকিস্তানের কাছে হেরে যেতে হয় ভারতকে। ওই টেস্টের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হওয়া সত্ত্বেও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না টেন্ডুকারকে। ড্রেসিংরুমে কাঁদছিলেন!
৩৬. টেন্ডুলকার একটি পেপসির বিজ্ঞাপন করতে প্রথমে রাজি হননি, কারণ চিত্রনাট্যে ছিল—টেন্ডুলকার মাছি মারার হাতল দিয়ে ক্রিকেট বল মেরে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলছেন। এতে ক্রিকেটের অপমান হয় ভেবেই চিত্রনাট্য বদলাতে বলেছিলেন টেন্ডুলকার।
৩৭. সাবেক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার কার্ল ফওলারের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান টেল্ডুলকারকে নিয়ে একটি বই ছেপেছিল। বইটির নাম ছিল ‘টেন্ডুলকার অপাস’, ৮৫২ পৃষ্ঠার বইটির সবকটি পৃষ্ঠা ছিল সোনালি পাতায় মোড়ানো, প্রতিটি পাতার আয়তন ছিল ৫০ সেমি–৫০ সেমি। বইটির মোট ওজন ছিল ৩৭ কেজি।
৩৮. ২০১০ সালে টেন্ডুলকারকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সম্মানসূচক একটি পদ দেওয়া হয়। টেন্ডুলকার ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, বিমান চালনাতে কোনো ডিগ্রি না থাকার পরও ভারতীয় বিমানবাহিনী যাঁকে র্যাংক দিয়েছিল।
৩৯. ভারতীয় দলে ড্রেসিংরুমে টেন্ডুলকার সবার আগে বসার জায়গা ঠিক করেন, তারপর বাকিরা তাদের বসার জায়গা নেন। টেন্ডুলকার সব সময় ড্রেসিংরুমের কোনাকুনি জায়গাতে বসতে পছন্দ করেন।
৪০. টেন্ডুলকার টেনিস তারকা রজার ফেদেরারের বড় ভক্ত। ফর্মুলা ওয়ান রেসও নিয়মিত অনুসরণ করেন। সংগীত আর ওষুধের ব্যাপারে তার অগাধ জ্ঞান রয়েছে। সামুদ্রিক খাবার খেতে পছন্দ করেন, একই সঙ্গে বিভিন্নরকম ওয়াইনের গুণাগুণ সম্পর্কেও অনেকের চেয়ে ভালো জানেন।
৪১. ভারতীয় দলের কঠোর নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্রিকেটার সময়নিষ্ঠ না হলে অথবা পোশাক আইন অমান্য করলে তাকে জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু টেন্ডুলকারকে তার দীর্ঘ দুই যুগের ক্রিকেট জীবনে কখনোই জরিমানা দিতে হয়নি। সব সময়ই সময়নিষ্ট ছিলেন। ছিলেন দলীয় নিয়মের প্রতি আজ্ঞাবহ।
৪২. টেন্ডুলকার ডান হাতে ব্যাটিং করেন, ডান হাতে বোলিং করেন, কিন্তু লেখেন বাম হাতে! তিনি সব্যসাচী।
৪৩. ২০০২ সালে ক্রিকেটের বাইবেলখ্যাত উইজডেন টেন্ডুলকারকে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর দ্বিতীয় সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করে।
৪৪. ২০০৩ সালে উইজডেন টেন্ডুলকারকে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ঘোষণা করে।
৪৫. ২০১০ সালে আইসিসি টেন্ডুলকারকে বছরের সেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার ‘স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্স ট্রফি’ দেয়।
৪৬. ভারতীয় ক্রীড়াজগতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘রাজিব গান্ধী খেলরত্ন’ জেতা একমাত্র ক্রিকেটার টেন্ডুলকার।
৪৭. ডন ব্র্যাডম্যানকে ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান ধরা হয়। সেই ডনও ছিলেন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংয়ের ভক্ত। টেন্ডুলকারের টেকনিক, চোখ ধাঁধানো দুর্দান্ত সব শট দেখে মুগ্ধ হয়ে একবার ডন তার স্ত্রী জেনিকে বলেছিলেন, ‘ছেলেটা যেন আমার মতোই খেলে।’
৪৮. ২০১০ সাল থেকে টেন্ডুলকার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটার ব্যবহার করছেন।
৪৯. অ্যাকাউন্ট খোলার এক বছরেই টুইটারে প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেন্ডুলকারের অনুসরণকারীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছায়।
৫০. বিখ্যাত মাদাম তুসো জাদুঘরে কেবল একজন ক্রিকেটারেরই মোমের মূর্তি আছে। বুঝতেই পারছেন সেটি কার!
৫১. শচীন টেন্ডুলকারের সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্র গাব্বার সিংয়ের ‘শোলে’।
৫২. শচীন রান্না করতে ভালোবাসেন। একবার বেগুন ভর্তা রান্না করে পুরো দলকে খাইয়েছিলেন।
৫৩. ২০০৮ সালে ক্রিকেটার টেন্ডুলকার এবং দাবাড়ু বিশ্বনাথ আনন্দ ক্রীড়াজগতের মানুষ হিসেবে প্রথমবারের মতো ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন।
৫৪. ১৯৮৮-১৯৮৯ মৌসুমে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মুম্বাইয়ের হয়ে অভিষেকেই গুজরাটের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান টেন্ডুলকার (১০০*)। এই কীর্তি টেন্ডুলকার গড়েছিলেন মাত্র ১৫ বছর ২৩২ দিন বয়সে, যা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকে সেঞ্চুরির রেকর্ড, বিশ্বরেকর্ড হিসেবে এটি দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির রেকর্ড।
৫৫. একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে রঞ্জি ট্রফি, ইরানি ট্রফি ও দুলীপ ট্রফিতে সেঞ্চুরির কীর্তি কেবল টেন্ডুলকারের আছে।
৫৬. ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল শচীনের। তাঁর আগে ছিলেন মুশতাক মোহাম্মাদ (১৫ বছর ১২৪ দিন) ও আকিব জাভেদ (১৬ বছর ১৮৯ দিন)।
৫৭. ১৯৬১ সালে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশতাক মোহাম্মাদ (১৭ বছর ৭৮ দিন)। ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেঞ্চুরি করেন টেন্ডুলকার (১৭ বছর ১০৭ দিন) পরে মোহাম্মদ আশরাফুল দুজনেরই রেকর্ড ভেঙে দেন (১৭ বছর ৬১ দিন)। ভারতীয়দের মধ্যে টেন্ডুলকারের আগে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ছিল কপিল দেবের কাছে (২০ বছর ১৮ দিন)।
৫৮. ২০০টি টেস্ট টেন্ডুলকার ছাড়া আর কারও খেলার সৌভাগ্য হয়নি।
৫৯. টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড শচীনের, ১৫৯২১ রান।
৬০. টেন্ডুলকার তার প্রিয় ব্যাটিং পজিশন ৪ নম্বরে ২৭৫টি ইনিংস খেলে ১৩ হাজার ৪৯২ রান করেছেন, আছে ৪৪টি সেঞ্চুরি, ৫৮টি হাফ সেঞ্চুরি। ক্রিকেটের ব্যাটিং অর্ডারে যেকোনো পজিশনে এটাই রানের রেকর্ড সর্বোচ্চ।
৬১. সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড (৫১টি) শচীনের। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি টেস্টে শচীন ভেঙেছিলেন সুনীল গাভাস্কারের ৩৪ সেঞ্চুরির রেকর্ড।
৬২. টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে শচীনের। স্টিভ ওয়াহ ও গ্যারি কারস্টেনের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক অর্জন করেন তিনি।
৬৩. ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে কমপক্ষে দুটি করে সেঞ্চুরি করেছেন টেন্ডুলকার।
৬৪. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকার প্রথম বলটি মোকাবিলা করেছেন ওয়াকার ইউনুসের বিপক্ষে। ক্রিজের অন্য প্রান্তে সতীর্থ হিসেবে ছিলেন আজহারউদ্দিন। সেটি ওয়াকারেরও অভিষেক টেস্ট ছিল।
৬৫. ২০ বছর বয়স অতিক্রম করার আগেই ৫টি সেঞ্চুরি করে ভবিষ্যতের বার্তা দিয়ে দেন টেন্ডুলকার।
৬৬. ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০ বছর ধরে সেঞ্চুরি করার কীর্তি আছে তাঁর। ডন ব্র্যাডম্যানের প্রথম ও শেষ সেঞ্চুরির মাঝখানে ছিল ১৯ বছর ৭ মাসের দূরত্ব।
৬৭. প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১০ সালে এক বর্ষপঞ্জিতেই করেছিলেন ৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি, এর মধ্যে দুটো ছিল দ্বিশতক।
৬৮. ২০১০ সালে এক বর্ষপঞ্জিতে করা ১৫৬২ রানের রেকর্ডটিও ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ।
৬৯. ৩৫ বছর বয়স অতিক্রম করার পর টেন্ডুলকারের ব্যাট থেকে এসেছে ১২টি টেস্ট সেঞ্চুরি। টেন্ডুলকারের পাশে আছেন কেবল ইংলিশ কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচ।
৭০. ভারতীয় দলনেতাদের মধ্যে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের অধীনে খেলার সময়ই টেন্ডুলকারের ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ১৫টি টেস্ট সেঞ্চুরি।
৭১. ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০+ রানের সবচেয়ে বেশি ইনিংস খেলার কীর্তিও তাঁর। ৫১টি সেঞ্চুরি এবং ৬৮টি হাফ সেঞ্চুরি। পঞ্চাশ কিংবা তার বেশি রানের মোট ১১৯টি ইনিংস খেলেছেন টেন্ডুলকার।
৭২. বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডও শচীনের (৮৭০৫ রান)।
৭৩. একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সাতটি ভিন্ন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে কমপক্ষে এক হাজার করে রান করেছেন টেন্ডুলকার। এক হাজারেরও কম রান করেছেন কেবল জিম্বাবুয়ে (৯১৮ রান) ও বাংলাদেশের বিপক্ষে (৮২০ রান)।
৭৪. দুবার আউট হওয়ার মাঝামাঝি সময়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক টেন্ডুলকার। ২০০৩-০৪ মৌসুমে তিন টেস্ট ও পাঁচ ইনিংসে দুইবার আউট হওয়ার মাঝখানে করেছিলেন ৪৯৭ রান। ইনিংসগুলো ছিল অপরাজিত ২৪১, অপরাজিত
৬০, অপরাজিত ১৯৪ ও ২ রান।
৭৫. এই সময়টাতেই টেন্ডুলকার প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্ট ম্যাচে ৩০০-এর বেশি রান করেছিলেন অপরাজিত থেকে।
৭৬. টেন্ডুলকার একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০ বার ১৫০+ রানের ইনিংস খেলেছেন।
৭৭. টেন্ডুলকার টেস্ট ক্রিকেটে ছয় মেরে সেঞ্চুরির মাইলফলক ছুঁয়েছেন ৬ বার, এটিও বিশ্ব রেকর্ড।
৭৮. টেন্ডুলকার ৫১তম সেঞ্চুরি করেছেন কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, যেটি বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরির রেকর্ড এনে দেয় তাঁকে। বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪টি করে সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার নিল হার্ভের।
৭৯. শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান টেন্ডুলকারের।
৮০. ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১২০০০, ১৩০০০, ১৪০০০ ও ১৫০০০ রান করার মাইলফলক শচীনের।
৮১. সবচেয়ে কম ইনিংসে ১০০০০, ১২০০০, ১৩০০০, ১৪০০০ ও ১৫০০০ রান করার রেকর্ডের মালিক টেন্ডুলকার।
৮২. টেস্টে ভারতের হয়ে একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা এবং হেরে যাওয়া ক্রিকেটারও তিনি। ৭০টি টেস্ট জয়ের পাশাপাশি রয়েছে ৫৬টি পরাজয়।
৮৩. পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে টেন্ডুলকার একবারই স্টাম্পড হয়েছিলেন। ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেঙ্গালুরু টেস্টে। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১০ রান দূরে থাকতে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন।
৮৪. ২০০১-০২ ক্রিকেট মৌসুমে ভারতীয় রেকর্ড টানা পাঁচ ইনিংসে এলবিডব্লুর শিকার।
৮৫. ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকার টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৩টি রানআউটের প্রত্যক্ষদর্শী। নিজে ৯ বার আউট হয়েছেন, সতীর্থদের ১৪ বার আউট হতে দেখেছেন।
৮৬. অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ তাঁর ক্যারিয়ারে টেন্ডুলকারকে করা প্রথম এবং একমাত্র বলে (এখন পর্যন্ত) আউট করতে পেরেছিলেন।
৮৭. টেন্ডুলকারের শেষ টেস্টটি পঞ্চম দিন পর্যন্ত গড়ালে টেন্ডুলকারের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বয়স হবে ২৪ বছর ৩ দিন। ক্রিকেটারদের মধ্যে ইতিহাসের পঞ্চম বৃহত্ ক্যারিয়ার। উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে খেলে যাওয়া রেকর্ড।
৮৮. টেন্ডুলকার জীবনের প্রথম ৩২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ভিন্ন ভিন্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে!
৮৯. টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ বার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হওয়ার গৌরব আছে শচীনের।
৯০. টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ বার ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ও হয়েছেন।
৯১. টেন্ডুলকার এবং রাহুল দ্রাবিড় মিলে ২০টি শতরানের জুটি গড়েছিলেন। এটাই বিশ্বক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি জুটির রেকর্ড।
৯২. দলনেতা হিসেবে টেন্ডুলকার সফল হতে পারেননি। তবে ২৫ ম্যাচে ৫১.৩৫ গড় নিয়ে দলনেতা হিসেবে টেন্ডুলকারের ব্যক্তিগত ব্যাটিং গড় যেকোনো ভারতীয় দলনেতার মধ্যে সর্বোচ্চ।
৯৩. পুরো ক্যারিয়ারে টেন্ডুলকার টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন মোট ৫৯৩ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে, ১০৮ জন সতীর্থ এবং ৪৮৫ জন প্রতিপক্ষ। এটিও বিশ্বরেকর্ড।
৯৪. দলনেতাদের মধ্যে আজহারউদ্দিনের অধীনে সবচেয়ে বেশি ৪৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন।
৯৫. টেন্ডুলকার দ্রাবিড়ের সঙ্গে ১৪৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, ১২২টি খেলেছেন অনিল কুম্বলের সঙ্গে, ১২০টি ভিভিএস লক্ষ্মণের সঙ্গে, ১০৩টি খেলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে।
৯৬. ২০১৩ সালে চেন্নাই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জেতা স্মরণীয় টেস্টটিতে প্রথম দুই বলে দুটি দুর্দান্ত ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন টেন্ডুলকার।
৯৭. মোট ১১ জন বিরল সৌভাগ্যবান বোলার আছেন, যাঁদের ক্যারিয়ারের প্রথম শিকারের নামটি ছিল ‘টেন্ডুলকার’। হানসি ক্রনিয়ে, উজেশ রানছোড় (জিম্বাবুয়ে), রুয়ান কালপেগে (শ্রীলঙ্কা), মার্ক ইলহাম (ইংল্যান্ড), নিল জনসন (জিম্বাবুয়ে),
জ্যাকব ওরাম (নিউজিল্যান্ড), মন্টি পানেসার (ইংল্যান্ড), ক্যামেরন হোয়াইট (অস্ট্রেলিয়া), পিটার সিডল (অস্ট্রেলিয়া), পিটার জর্জ (অস্ট্রেলিয়া), অ্যান্ডি ম্যাকায় (নিউজিল্যান্ড)।
৯৮. টেন্ডুলকার টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনোই ৩ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করেননি। টেস্টে একবারই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। সবচেয়ে বেশি খেলেছেন চারে।
৯৯. সম্পূর্ণ টেস্ট ম্যাচ শেষে স্কোরকার্ডে মোট ৫৩ বার টেন্ডুলকারের নাম আছে ওই ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে।
১০০. ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০১ সালের জুন পর্যন্ত টেন্ডুলকার টানা ৮৪টি টেস্ট খেলেছিলেন কোনো বিরতি ছাড়াই।