ইসমাইল হাঁপাতে হাঁপাতে এসে লঞ্চে উঠলো । ঈদের সময় লঞ্চ কোন সময় সূচী মানে না ।
হয়ত ভীর বেশী হলে সাড়ে পাঁচটার আগেই ছেড়ে দেবে । একে ত পুরান ঢাকার ঘুলিঘুপচি রাস্তা তার উপরে উপচেপড়া ঈদের ঘরমুখো মানুষ । মালটানা ভ্যান , ক্যাভারড ভ্যান , রিকশা , প্রাইভেট কার , পুরানো ট্রাঙ্কের মত লক্কর ঝক্কর মিনিবাস আর সেগুলোর জানালা , পা-দানি ছাদেও ঝুলে আছে মানুষ । যেমনি করে ছোট বাটিতে তরকারি রাখলে ছলাৎ করে উপচে পড়ে তেমনি ।
ইসমাইল অবশ্য ঘোড়ার গাড়িতে এসেছে । ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার সখ ছিল তার বহুদিনের । এমনকি স্বপ্নেও সে বারকয়েক পঙ্খিরাজ ঘোড়া দেখেছে । আজ সেই সাধটা পূর্ণ হল ।
তবে বাস্তবের এই ঘোড়ার গায়ে বিশ্রী গন্ধ । শ্রীহীন ঘোড়াগুলোর জীন লাগানোর জায়গায় ঘা আর আঘাত এর দাগ মানুষের লোভের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল ।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ যানজট আরও বেড়ে গেল । সিগন্যাল ছাড়লেই হুটোপুটি । সবাই আগে যাবে , সবার তাড়া , ঠেলাওয়ালা থেকে শুরু করে মিনিবাসের ড্রাইভার অলিখিত এক রেসে নিজের সবটুকু সামর্থ দিয়ে জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে ।
এতসব রেস আর যুদ্ধের ময়দান পেরিয়ে যখন লঞ্চটাতে এসে সে পৌঁছাল একটা প্রশান্তির বাতাস তখন তার ফুসফুসে তৃপ্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দিল ।
সব শেষে সে যখন তার বাড়ি নুরীর চর পৌঁছাবে তখন নুরীর চরের খোলা বাতাসের এক দমে সব কষ্ট হাওয়াই মিঠাইয়ের মত একটা মিষ্টি স্বাদ রেখে বাতাসে মিলিয়ে যাবে ।
ক্ষুধা , তৃষ্ণা যেমন শরীরের টান , বাড়ির টান , নাড়ির টান তেমনি মনের । আর মনকে সময়মত সেটা না দিলে বাকি সব কিছু অসাড় হয়ে পড়ে ।
পায়ে পায়ে মানুষ , ভীরে গায়ে গা লেগে যায় এমন । ভীরবাট্টা ঠেলে কোন রকম তৃতীয় তলার যাত্রী কেবিনের কাছে উঠে আসে সে । কিন্তু বসা ত দূরের কথা কোথাও এতটুকু জায়গা নেই তার সাড়ে পাচফুট শরীর নিয়ে দাড়ানোর।
অগত্যা সে চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বয়লারের কাছে চাদর বিছিয়ে বসার খানিকটা জায়গা পায় । না তার ডেকের তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের সাথে শুয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে , না প্রথম শ্রেণীতে যাওয়ার বিলাসিতার পয়সা ।
মতিঝিলের একটা অফিসের অফিস সহকারী সে । আরবি লাইনে ফাজিল পাশ । অফিসের পত্রিকাটা পড়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে । শিল্প , সাহিত্য আর শিক্ষার জ্ঞান তার মধ্যে একটা আত্মসম্মানবোধ তৈরি করেছে । আর তাই মানসিক দিক দিয়ে সে সম্পূর্ণই মধ্যবিত্ত ।
চাদর বিছিয়ে বয়লারের ডান দিকের এক কোনায় বসে পড়ল ইসমাইল । তার পর তাকিয়ে দেখতে লাগলো চারপাশ ।
এই বুড়িগঙ্গা নদী বেয়েই একদিন ঢাকা এসেছিল সে । বুড়িগঙ্গা নাম না হয়ে “ “কুমারিগঙ্গা” বা “রানিগঙ্গা” হলেও বোধ হয় নদীর এত করুণ দশা হত না । পানির রং কালচে , কালি গুলে দিলে যেমন হয় । আর জলের গন্ধ যে কাউকে বৃষ্টি ভেজা ডাস্টবিনের কথা মনে করিয়ে দিবে ।
বিগত যৌবনা স্থিরস্রোতা এ নদীর বুকজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সব রকম জল যান । ঐ পাড়ে কেরানীগঞ্জ ঘাট আর তাতে কিলবিল করছে মানুষ আর নৌযান ।
চারপাশের প্রত্যেকটি লঞ্চে কান ফাটানো শব্দে হিন্দি গান বাজছে , এক চানাচুর ওয়ালা লাফিয়ে এক লঞ্চ থেকে অন্য লঞ্চে পার হয়ে গেল । সার্কাসের দলে থাকলে অনেক নাম কামাত সে ।
পুঁটি মাছের আকারের এক ছেলের সাথে পাঙ্গাস মাছের আকারের এক মেয়ে ভীর ঠেলেঠুলে ছাদের কিনারে এসে দাঁড়াল । মাথাটাকে বাদ দিলে মেয়েটাকে মাংসের এক টুকরা বলেই চালিয়ে দেওয়া যায় । সৃষ্টিকর্তা একে বানাতে বেশি সময় নষ্ট করে নি বোঝা যায় ।
মোটামুটি আশি কেজি ওজনের মেয়েটি ইসমাইলের কড়ে আঙুলের চেয়েও চিকন দুটো পেন্সিল হিলের উপর দাড়িয়ে আছে ।
_ উহ , এইখানে নিয়ে আসছ ক্যান আমায় ? বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে সে বলল ।
_ নদী দেখানোর জন্য , পুঁটিমাছের মত ছেলেটি ,মিন মিন করে বলে উঠল ।
_ এটা কি নদী না ড্রেন ? ওয়াক থু , মেয়েটি একদলা থুথু ছুড়ে দিল নদীতে , সঙ্গে হাতের চিপস এর প্যাকেট আর কোল্ড ড্রিংকসের বোতলটাও ।
তার পর কটাস কটাস শব্দে পা ফেলে চলে গেল ।
ইসমাইলের বাম পাশের রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে দু বছরের এক বাচ্চা সর সর করে নদীতে মূত্রত্যাগ করছে আর তার এই মহৎ কাজের ব্যবস্থাপনায় পাশে দাড়িয়ে বাচ্চাটির বাবা । নিচে লঞ্চের কার্নিশে হেটে যাওয়া এক ব্যক্তির মাথায় সরাসরি সে মূত্র বর্ষণ হল শুরু হয়ে গেল অভিধান- বহির্ভূত কিছু বাংলা শব্দের মহড়া ।
তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে তারস্বরে কয়েকটা কাকও চেঁচান শুরু করলো । ইসমাইলের মনটা খারাপ হয়ে গেল ।
ছোটবেলায় সে যখন তার মায়ের সাথে নদীতে গোসল করতে যেত , তখন তার মা তাকে বলত ,
নদীতে পুকুরে কখনও পিশাব করবি না বাপ , নদী ও পুকুরে পানির নবী থাকে , সে গুনাহ দেয় । ইসমাইল মনে মনে পানির নীচে এক শ্মশ্রুমণ্ডিত এক বৃদ্ধকে দেখত হাতে এক দণ্ড নেওয়া । পানিতে ঐকাজটি কখনো করে নি সে ।
অবশেষে প্রকাণ্ড শব্দে বয়লারটা সবেগে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে লঞ্চ যাত্রা শুরু করলো এম.ভী জলরাজ ।
প্রচুর মালবাহী কার্গো , কিছু বালির কার্গো তো প্রায় ডুবেই আছে । বেশ কয়েকটি ট্রলারে গরু নিয়ে সদরঘাট অভিমুখে আসছিল । কোরবানি উপলক্ষে গরুগুলোকে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে । গায়ে গায়ে লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে গরুগুলি । মৃত্যু – পথ যাত্রী গরুগুলোকে দেখে ইসমাইলের মন খারাপ হয়ে গেল ।
নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পুরো নদীর দু’ধারেই অসংখ্য ইটের ভাটা আর কল কারখানা। আস্তে আস্তে নদী প্রশস্ত হতে শুরু করল । নদীতে ছড়িয়ে থাকা মাছধরা নৌকার আলোগুলোকে মনে হচ্ছে খসে পড়া তারা । দূরের আলো দেখার জন্য একটা পদ্ধতি শিখিয়েছিল তার বন্ধু নওশের ।
চোখ সম্পূর্ণ আধ বোঝা করে একটু করে খুলে আলো দেখতে হয় তাতে আলোর ঝিকিমিকি টা বোঝা যায় । রাত আটটা নাগাদ একবার বাথরুমে গেল সে । লঞ্চের বাথরুমে নানা ধরনের অভিধানবহির্ভূত শব্দের চর্চা । একটা ছাড়া বাকি সব গুলো পড়ার অনুপযুক্ত । সেই একটা হল ,
“ আপনি যত বড় রাজা মহারাজা হন না কেন , এখানে এলে আপনাকে উলঙ্গ হতেই হবে ’’ ।
রাত দশটার দিকে কেবিনের পাশের একটা চেয়ার খালি পেল সে । সেখানে বসে ঝিমুতে লাগলো সে । চেয়ারে , চলার প্যাসেজে সর্বত্রই মানুষ শুয়ে বসে রয়েছে । রাত বাড়ার সাথে সাথে তাদের চাঞ্চল্যও কমে আসে । মনে হয় মানুষগুলো সংখ্যায় একদম কমে গেছে । কর্ম , কথা আর উচ্ছলতায় প্রানের প্রকাশ । ঘুমন্ত মানুষরা যেন তাদের মিইয়ে যাওয়া গৌরবহীন অস্তিত্ব ।
ইসমাইলের তন্দ্রাভাব চলে এল । আধঘুমে সে দেখতে পেল সে গ্রামের পথটা ধরে বাড়ি যাচ্ছে ।
লম্বা লম্বা হোগল পাতার ঝোপের পাশে দাড়িয়ে খালে জাল ফেলছে মিরনের বাপ । ছিন্ন পাঞ্জাবী গায়ে মসজিদে যাচ্ছে মুয়াজ্জিন । মসজিদের চালাটা খড়ের । ইসমাইলের বাড়ীর চালাটাও খড়ের । বৃষ্টির সময় ফুটো ফাটা দিয়ে পানি পড়ে আর তার মাকে পাত্র নিয়ে এখানে সেখানে দৌড়াতে হয় । এইবার বোনাসের টাকায় সে টিন কিনে চাল ছাইবে ।
মাকেও দেখতে পায় সে । পুকুর ঘাটে বসে ছাই দিয়ে বাসন মাজছে । তার মা যেন আসলেই পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতিনিধিত্ব করে । পান খাওয়া মুখ , শাড়ি পড়া সরলতা মাখা চেহারা , আর মনভরা মায়া । সন্তানদের দুঃখে সে মায়ার সাগরে ঢেউ উঠে জলে ভেসে যায় ।
প্রতিবার ,ছুটি কাটিয়ে ঢাকা ফেরার সময় মায়ের সে কি কান্না , সে মায়ার জলে ইসমাইলেরও পা আটকে যায় । ইচ্ছে হয় না আর ফিরে যেতে । কিন্তু ছোট ভাই বোনদের ভবিষ্যৎ আর বুড়ো বাপ মায়ের খাবারের চিন্তা যে আরও বড় ।
হঠাৎ করেই কেউ একজন পায়ে পাড়া দিলে ধড়মড়িয়ে উঠে ইসমাইল । লুঙ্গি পড়া এক স্ফীত তলপেটের কাল লোক তার পায়ে পাড়া দিয়ে কোনরকম দুঃখ প্রকাশ না করেই বাথরুমের দিকে যাচ্ছে । কানে গলায় জ্বল জ্বল করছে স্বর্ণের চেইন ।
ইসমাইল রাগ ও বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল । যেমনি সে এসেছিল তেমনি হেলে দুলে পাশের পর্দাঘেরা কেবিনে ঢুকে গেল ।
কিছুক্ষণ পরে খুব অল্প বয়স্ক একটা মেয়ে পর্দাঘেরা কেবিন থেকে বেরিয়ে বাথরুমে গিয়ে আবার কেবিনে ঢুকে গেল ।
পর্দাঘেরা কেবিনের উদ্দেশে একটা অশ্লীল গালি ছুড়ে দিল একজন কেবিন বয় ।
_ শালা ......দলের পাতি নেতা । এলাকায় বউ , দুইডা বাচ্চাও আছে ।
_ মাইয়াডা কোথার বস ? আরেক জন কেবিন বয় জিজ্ঞেস করল ।
_ এগো আবার মাইয়ার অভাব ! গত মাসে আরেকটারে নিয়া উঠছিল ।
_ লঞ্চে তো কোন ভয় নাই , হোটেলে তো আবার পুলিশ রেইড দেয় অনেক সময় ।
পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে ভেতরের কোন “ বিশেষ দৃশ্য” দেখার জন্য উকিঝুকি মারল বয় দুটো ব্যর্থ হয়ে আবার গালি দিয়ে চলে গেল । ইসমাইলের মনটা বিষে ভরে উঠল । তার পাশেই খুব খারাপ একটা পাপ হচ্ছে কিন্তু সে বাধা দিতে পারছে না ।
ক্ষমতাশালীদের পাপগুলোও কেমন ক্ষমতাধর । পাতি নেতাদের দল ক্ষমতায় । এই লঞ্চের মালিকও তাদের এক নেতা । তাদের বিরুদ্ধে বলে এমন সাধ্যি কার !
আর ঘুম আসলো না ইসমাইলের । নদী দেখতে লাগলো সে । নদী এখন অনেক প্রশস্ত । তীর অনেক দূরে ছাই রঙা রেখার মত । অনেক দূরের তীরে কত মানুষের ঘরবাড়ি । হয়ত তারা এখন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ।
আকাশটা থমকে আছে । রাত দুটোর দিকে চারপাশটা যেন আরও থমকে গেলো । একটা ঘূর্ণি বাতাস ভয়ানক এক শক্তি নিয়ে এগিয়ে এল । নদীর ঢেঊগুলো সব দানব হয়ে আছড়ে পড়তে লাগলো ।
ঘুমন্ত মানুষগুলো জেগে হতভম্ব হয়ে কেঁদে কেটে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা শুরু কোড়ে দিল। লঞ্চটা দুলতে শুরু করলো । আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার , আছড়ে পড়া ঢেঊ , বাতাসের ঝাপটা আর লঞ্চের দুলুনি ।
বাতাসের প্রচণ্ড দমকে লঞ্চটা ডান দিকে কাত হয়ে গেল । মানুষগুলো ইটের টুকরার মত এ ওর উপর আছড়ে পড়ল । প্রচণ্ড এক শক্তিশালী বাতাস ডান দিক থেকে আঘাত করতেই লঞ্চটা ডান কাতেই অন্ধকারে বিশাল নদীর অথৈ পানিতে ডুবে গেল ।
জানালা দিয়ে সাতরে বের হওয়ার চেষ্টা করলো ইসমাইল , ইসমাইলের মত আরও শত । কেউ একজন ইসমাইলের পা টেনে ধরল , সর্বশক্তি দিয়ে ইসমাইল সেটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো । টানা হেঁচড়ায় ইসমাইলের প্যান্ট খুলে গেল । পা কিছুতে আটকে গেল । হটাৎ ডুবে যাওয়ায় ইসমাইলের নাক দিয়ে পানি মস্তিষ্কে ঢুকে গেল। কিন্তু মস্তিষ্কে একটা শব্দই কাজ করছিল “ বাচাও”
ইসমাইল সাতার কাটার চেষ্টা করলো । সর্বশক্তি দিয়ে নিজের পাটা ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করল । কোন একটা কিছুতে লেগে পায়ের মাংস খানিকটা উঠে গেল হয়ত । একটা ভোতা যন্ত্রণা মাথায় দপদপিয়ে উঠলো ।
পা আটকা থেকে মুক্ত হয়ে পানির গভীরে এক ঘূর্ণিতে পড়ে গেল সে । পানির এক ঘূর্ণিস্রোত তাকে যেন অতল গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । তার গায়ের উপরে চারপাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ কিলবিলিয়ে সরে যাচ্ছে ।
যে বাতাসের কারণে লঞ্চটা ডুবে গেল সেই বাতাসেই নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ফুসফুসটা হাসফাস করে উঠলো । শরীরের সমস্ত রক্ত কণিকায় শ্বাস নেওয়ার ইচ্ছা।
আবার প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা চালাল । পানির উপর উঠে এল সে । চারদিকে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না তার । শরীরের সবটুকু শক্তি খরচ করে সাঁতরাতে চেষ্টা করল সে । কিন্তু চারদিক থেকে তীর যেন কোথা হারিয়ে গেছে । তুচ্ছ খড়কুটার মত ভেসে যাচ্ছে সে । আর পারছিল না , নিজেকে সে স্রোতের মুখে ছেড়ে দিল ।
স্রোত আর বাতাস উল্টে পাল্টে তাকে ভাসিয়ে নিচ্ছিল । কিছুদূর ভেসে যাওয়ার পর কিছু একটা ভেসে যেতে দেখল সে । সাতরে সাতরে সে সেইদিকে যাওয়ার চেষ্টা করল । পানির স্রোত তার শরীর ঘুড়িয়ে দিচ্ছিল যদিও , সে জিনিসটার কাছে পৌঁছে গেল ।
একটা শাদা শোলার শীট আরও দুজন সেটাকে ধরে আছে , শিশুসহ এক মা , আর কালোমত এক পুরুষ । ইসমাইলও সেটাকে আঁকড়ে ধরল । কিছুক্ষণ ভাসার পরে বিদ্যুৎ চমকের আলোতে পুরুষটাকে চিনতে পারলো সে ।
সেই পাতি নেতা । খুব জিদ হল ইসমাইলের । নিশ্চয়ই এর পাপে লঞ্চটা ডুবেছে। শরীরের শক্তি সঞ্চয় করে পানির তল দিয়ে নেতাকে এক লাথি কষল সে । কিন্তু কিছু হল না ।
আবার দ্বিতীয় লাথি । এইবার নেতা ছেড়ে দিল শোলাটা । ভেসে গেলো স্রোতের তোড়ে ।
কিছুক্ষণ অর্ধচেতনে থাকলো সে , যখন চোখ খুলল তখন আর শিশুসহ মেয়েটিকে দেখল না , ভেসে গেছে কোথাও ।
তার হাতগুলো অবশ হয়ে গেছে । শোলাটাকে ধরে রাখার কোন শক্তিই আর নেই । হটাৎ বহুদূরে নীল আবছা রেখার তীর দেখল সে । বাচার এক অদম্য ইচ্ছে জাগল মনে । অবশ হাতগুলো নিয়ে আবার সাঁতরানোর চেষ্টা করল । তার খুব বাচার দরকার । মার মুখটা দেখতে চায় সে আবার .........।
পরদিন পত্রিকায় ব্রেকিং নিউজ:
ভোলাগামী এমভী জলরাজ ডুবে ছয়শ যাত্রীর সলিল সমাধি ।