somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

অভিশাপের পাহাড় ডিঙানো যায় না

২৫ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজপথ স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়েছে। ধুলো উড়াতে উড়াতে ছুটে চলছে বিভিন্ন রুটের বাস; তাতে গিজগিজ করছে মানুষ। ফুটপাত, রেস্তোরাঁ, টংদোকান, অফিস-আদালত প্রতিটি জায়গায় কর্মচঞ্চল মানুষের পদচারণা। সহপাঠী হারানোর ব্যথা বুকে চাপা দিয়ে স্কুল-কলেজ, ভার্সিটি মুখি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। চায়ের কাপে চুমুক, সিগারেট ফুঁকে কিংবা একগাল পান চিবিয়ে ঝিকঝিক করে চলছে নানা রঙের কথার রেলগাড়ি। হাসি-ঠাট্টায় জমে উঠছে এক একটি বগি। অথচ দুদিন আগের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। সারা দেশ সাক্ষী হয়েছে চরম বর্বরতার। আলো-আঁধারিতে চলেছে যে নির্মমতা, নৃশংসতা, তা যে হায়েনাকেও হার মানায়, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

একটু গভীর শ্বাস নিলেই বাতাসে গোলাবারুদ আর তাজা রক্তের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দের সাথে ভেসে আসা মানুষের বাঁচাও! বাঁচাও! আর্তচিৎকার। চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে গুলিখাওয়া নিরপরাধ ছেলেদের ছটফটানি, মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়া নিথর শরীর। বাতাস ভারী করা মায়ের করুণ চিৎকার, ‘আমার তো আর কেউ নাই, আমি কী নিয়ে থাকব?’ ভাইহারা বোনের আহাজারি, ‘সরকার কেন গুলি করার অনুমতি দিল? এক হাত-পা ভেঙে কেন দিল না? তাহলেও তো আমার ভাই বেঁচে থাকত।’ রক্তাক্ত ছাত্রের অসহায় কণ্ঠে জানতে চাওয়া, ‘ভাই, আমি কি মারা যাব?’ আহা, কী হৃদয়বিদারক! এসব দেখে পাষাণ হৃদয়ও কেঁপে ওঠার কথা, কিন্তু...

গলির মুখে কালাম চাচা পান-সিগারেট বিক্রি করতেন। হেসে কথা বলতেন, সারল্যের ঘ্রাণ আসত কথা থেকে। মানুষটি আমাদের মাঝে নেই। শান্তিরক্ষা বাহিনীর এলোপাথাড়ি ছোড়া বুলেটে জীবন প্রদীপ নিভে গেছে তাঁর। আর কোনোদিন তাঁকে গলির মুখে দেখা যাবে না। সামনের দুই গলি পেরিয়ে অটোচালক জামাল ভাড়া বাসায় থাকতেন পরিবার নিয়ে। পেটের দায়ে অটো নিয়ে বের হয়েছিলেন। পরিবার অপেক্ষায় ছিল বাড়ি ফিরবেন আহার্য নিয়ে, কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। ফুড পান্ডার ডেলিভারি বয় সুমন প্রতিদিনের মতো খাবার ডেলিভারি করতে বের হয়েছিলেন। বেচারা ভুল করে কিছু হায়েনার সামনে পড়ে যায়, এরপর হয়ে যায় লাশ। আলতাব হোসেন এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাচ্ছিলেন; মসজিদে প্রবেশের আগেই প্রাণপাখি উড়ে গেল। মসজিদের সামনের ফুটপাথে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে ছিল তাঁর জমাট বাঁধা রক্তের দাগ। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিল চশমার টুকরো টুকরো কাঁচ। সেদিন বৃষ্টির কান্নায় ধুয়ে গেছে রক্তের দাগ। কিন্তু সবখানে কলঙ্কের যে দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তা মুছবে কিসে? এরকম নাম না জানা অনেক কালাম, জামাল, সুমন ও আলতাব হোসেন রয়েছে, যারা আর কোনোদিন বাড়ি ফিরবে না।

গোলাবারুদের গন্ধ উবে যাবে, গাড়ির চাকা আর পথচারীদের জুতার ঘষায় মুছে যাবে রাজপথের রক্ত। আমরা এসব বীভৎস স্মৃতি ভুলে নতুন ইস্যুতে গা এলিয়ে দেব। কিন্তু মৃত্যুর মিছিলে শামিল হওয়াদের পরিবার এই ক্ষত আমৃত্যু পুষে রাখবে।

বৃদ্ধ বাবা মনের অজান্তেই মৃত ছেলের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকবে, মাসের শেষে যার পাঠানো অর্থে জোটত পুরো পরিবারের আহার। সন্তানহারা মা খাবার বেড়ে অপেক্ষা করবে, ছেলে ফিরবে কলেজ থেকে। ভাইহারা বোন আকুলি-বিকুলি করবে আপা ডাক শোনার জন্য। বাবাহারা সন্তান অপেক্ষায় থেকে থেকে অভিমানে মুখ ভার করে রাখবে। মনে মনে ভাববে, বাবা বাড়ি ফিরলে আচ্ছা করে বকে দেবে। কিন্তু তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হবে না। এ অপেক্ষা অনন্তকালের। অপেক্ষায় আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিশাপের পাহাড় গড়বে তাঁরা। একদিন সেই পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসবে দ্রোহের আগ্নেয়গিরি; উত্তপ্ত লাভায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেবে সব অন্যায়-অশুচি।

ছবিঃ ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:৫৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×