somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সিষ্টেমের ভেতর দিয়ে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে শিশুরা , হাস মুরগীর বাচ্চারাও আমাদের বাচ্চাদের চেয়ে ভাল অবস্থায় আছে

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার মেয়ে সাবারিয়া হোসেন মালিয়া । বয়স সাত ছুঁই ছুঁই করেছে । ১ম শ্রেণীতে পড়ে । ওর ১ম সাময়িক পরীক্ষা চলছে । তাই দিন রাত ব্যস্ত । ওর মা মেয়েকে পড়াশুনা নিয়ে কঠিন চাপে রেখেছে । কিছু দিন আগেও মেয়ে আমার বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাইতো । এখন বলছে পুলিশ অফিসার হবে । আমার তাতে কোন আপত্তি নেই । দোয়া করি যা ইচ্ছে করে সেটাই হ মা । শুধু মানুষের মতো মানুষ হ আগে । সেটাই আমি চাই । কিন্তু চাইলেই তো হবে না । মানুষ হবার রাস্তাটা তো আমাদেরই করে দিতে হবে । সেই রাস্তাটা যতো সুন্দর হবে । যতো আনন্দময় হবে ওরাও ততোই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে । ইদানীং অফিস করে বাসায় ফিরে আমার আর কিছু করার থাকে না । কিছুদিন আগেও নিজেরও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম । সেই চাপটা এখন একটু কম । তাই টিভি দেখে সময় কাটাই । টুকটাক লেখালেখি করি । মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ের ঘরে উকি দেই । ভেতরে যাই না । ভেতরে ওদের মা মানুষ তৈরির মেশিন চালছে তাই প্রবেশ নিষেধ ।

ছেলে আমার সামনের জানুয়ারিতে "ও লেভেল" দেবে ওরও এখন পরীক্ষা চলছে । ও বিষম ব্যস্ত । তবে ছেলে নিজের পড়াটা নিজেই বুঝে নেয় । ক্লাসের পরে কোচিং করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে । খেয়ে দেয়ে । আবার পড়তে বসে । বড় বড় টপিক্স নিয়ে খুব ব্যস্ত ও । কোন পড়া না বুঝলে আমার বা ওর মার অনুমতি নিয়ে নেট থেকে সমাধান বের করে নেয় । কিংবা ওর স্যারদের সাথে ভাইবারে যোগাযোগ করে । ছেলে,মেয়ে উভয়েই পড়াশুনার ফাকে ফাকে পাঁচ মিনিট কিংবা দশ মিনিটের ব্রেক নিয়ে আমার সাথে গল্প করতে আসে । মেয়ের মা আমাকে আগেই বলে রেখেছে, যেহেতু ওদের পরীক্ষা চলছে তাই, আগামী একমাস আমি তোমাকে চিনি না । আমি তাই নিজ গৃহে পরবাসে আছি ।

যা বলার জন্য এতো দীর্ঘ একটা ভূমিকা টানলাম । সেটাতেই চলে আসি । সকল বাবা, মা ই চায় তার সন্তান বড় হোক । সু শিক্ষায় শিক্ষিত হোক । ভাল চাকরী বাকরী করুক । সম্মান বয়ে আনুক । আমিও তা চাই ।
কিন্তু কিছুতেই আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মেনে নিতে পারি না । আমি আমার ছোট বেলা থেকে নানাবিধ প্রশ্ন বুকের ভেতর লালন করে করে বড় হয়েছি । কোন উত্তর পাইনি । আমি জানি আমার মতো শত শত মানুষের মনেও ঐ একই প্রশ্নে ঘুরে ফিরে চলে আসে । ছোট বেলায়, আমাদের শেখানো হয়েছে, বানর কি করে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠা নামা করে । সেটা গুনে গুনে অংক করা । কি কাজে এসেছে সেটা ? কেউ কি বলতে পারবেন ? এসএসসি,এইচএসসিতে তে দশ বারোটা সাবজেক্ট করে পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে এক একটা দাপ পার করেছেন , বলতে পারবেন কি কাজে এসেছে সেগুলো । অনার্স,মাস্টার্স তো একটা সাবজেক্ট নিয়েই পাশ করেছেন । তা হলে কেন এতো যন্ত্রণা দিয়ে মূর্খ তৈরি করা হয়েছে আমাদের ?

মালিয়া ক্লাস ওয়ানে পড়ে । অথচ ওকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে মোট সাতটি । অর্থাৎ ওর মোট সাবজেক্ট হচ্ছে সাতটি । বাংলা,ইংরেজি,অংক,সমাজ বিজ্ঞান ধর্ম, সাধারণ জ্ঞান ও ভূগোল । এর জন্য ওকে পড়তে হচ্ছে মোট দশটিরও বেশি বই ।
মানে বয়সের চেয়েও চার পাঁচটি বেশি বই ওকে পরতে হচ্ছে । এই বয়সেই ওকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে,মোট ৭০০ নম্বরের ।

প্রতিদিন ওদের জোড় করে পড়ানো হচ্ছে । পড়া মুখস্থ না হলে তোতা পাখির মতো গেলানো হচ্ছে । কখনও আদর করে খেলার ছলে । আবার কখনও চকলেট চিপস,মোবাইল বা কম্পিউটার চালাবার লোভ দেখিয়ে । তাতেও কাজ না হলে লাঠির ভয় দেখিয়ে । দিন রাত চলছে ওর উপর এই নির্যাতন । আমি কিছু করতে পারছি না । কেননা মালিয়াদের একটি সিস্টেমের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে । এ সিস্টেমে টিকে থাকতে হলে ওকে এভাবেই চলতে হবে ।

আমাকে কেউ কি বলতে পারবেন, মাত্র ছয় বছরের একটি বাচ্চার জন্য ক্লাস ওয়ানে সাত সাতটি সাবজেক্টে কোন আহাম্মক অন্তুভুক্ত করেছে ? কেন এই শিশুদের উপর শিক্ষার নামে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পাহাড় সম বোঝা ? কিসের এতো কম্পিটিশন ? কিসের জন্য এই যুদ্ধ ? কি শিখছে আমার আপনাদের বাচ্চারা এই চাপের মধ্যে থেকে ? আমাদের শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি করছে ? তারা কি একবারের জন্য ও শিশুদের এই মানুষিক যন্ত্রণার কথা চিন্তা করে দেখেছে । শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের ভূমিকা কি ? এই সিস্টেমে মাস্টার্স পাশ করেও অনেক ছাত্র ছাত্রী একটা ইংরেজি রচনা ঠিক মতো লিখতে পারে না । মামা, চাচা না থাকলে চাকরী পাচ্ছে না । তা হলে, কি লাভ হচ্ছে শিশুদের এই চাপের মধ্যে রেখে?

ক্লাস ওয়ানের জন্য এতোগুলো সাবজেক্ট না রেখে পারা যেতো না কি বাংলার বিষয়টার ভেতর, সমাজ বিজ্ঞান,ধর্ম, সাধারণ জ্ঞান ও ভূগোল বিষয়গুলো ঢুকিয়ে দিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে একটি পরীক্ষা নেওয়া ? তাহলে তো লেখাপড়ার চাপ অনেক কমে আসতো । শিশুরা রিলাক্স করতে পারতো । ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, আমাদের শিশুদের আমরা হাস মুরগীর বাচ্চাদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় বড় করছি । হাস মুরগীর বাচ্চারাও খেলার সুযোগ পায় । ঘুরে বেড়াতে পারে । আমাদের কোমল মতি শিশুরা সেটাও পারে না ।
ঢাকার বেশির ভাগে স্কুলে শিশুদের খেলার জন্য কোন মাঠ নেই । খেলা ধুলার ব্যবস্থা নেই । আছে কাড়ি কাড়ি টাকার খেলা । ভর্তি হতে টাকা লাগে । ক্লাসে পড়তে গেলে টাকা লাগে । পাশ করতে চাইলে টিউশনি পড়তে হয় । টিউশনি না পড়লে ফেল করিয়ে দেওয়া হয় । কোথায় যাবে বাচ্চারা ? কে মানুষ করবে ওদের ? বড় হয়ে তো ওরাও তাই করবে যা দেখে দেখে ওরা বড় হচ্ছে । এই শিক্ষা ব্যবস্থা অচল । এর পরিবর্তন চাই । পরিবর্তন করতে হবে । এই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা শিক্ষিত জাতি নয় পাচ্ছি কিছু সার্টিফিকেট সর্বস্ব রোবট । যাদের ব্যতিক্রম কিছু প্রশ্ন করলেই আর উত্তর পাওয়া যায় না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প বলেছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি এনার্খীতে, তারা মাইনোরিটির উপর অত্যাচার করছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



৩ দিন পরে আমেকিকার ভোট, সাড়ে ৬ কোটী মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে; ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫১ ভাগ। এই অবস্হায় সনাতনীদের দেওয়ালী উপক্ষে ট্রাম্প টুউট করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×