সাদা আলখেল্লায় ঢাকা কিছু মানুষের ছোট্ট একটি দল অসীম সাহসিকতায় হোটেল আরটিসানের দিকে এগিয়ে আসছেন। হঠাৎ-ই এক পসলা গুলি ধেয়ে এসে সামনের মাটিতে আছড়ে পড়লো। জঙ্গীদের পক্ষ থেকে সতর্ক সংকেত। এগিয়ে আসতে মানা করছে তাঁরা। ভেতর থেকে একজন চিৎকার করে আগুন্তুকদের পরিচয় জানতে চাইলো।
নিরস্ত্র ছোট্ট দলটির সেই মানুষেরা একজন একজন করে নিজেদের পরিচয় দিতে লাগলেন। র্যাবের মহাপরিচালকের পাশেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম সাহেব ফরিদউদ্দিন মাসউদ। তাঁর সাথেই আরো অন্যান্য আলেম উলামার পাশে দাঁড়িয়ে ইসলামী আন্দোলনের চরমোনাই-এর পীর সাহেব ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব। প্রত্যেকের হাতেই হেন্ড মাইক। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুরোধে তাঁরা গুলশানে এসেছেন। উদ্দেশ্য জঙ্গীদের কোরআন ও সুন্নাহ-এর আলোকে বোঝানো যে তাঁরা যা করছেন তা ইসলামের দৃষ্টিতে মোটেই সমর্থনীয় নয়।
''বাবারা, তোমরা যা করছো, তা কি জেনে-বুঝে করছো? ইসলামের আলোকে বলতো দেখি, বাংলাদেশ দারুল হারব না দারুল ইসলাম? এই মাটিতে যারা বাস করে, তারা কি মুমিন না অবিশ্বাসী?''
হোটেল আরটিসানের ভিতর থেকে কোন উত্তর ভেসে আসে না।
''কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসেন (রাঃ) ও তাঁর বাহিনীর সবাই একে একে শহীদ হোন, তাঁর আগে কি ইরাকের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে তাদের নেতারা ইমাম হুসেন (রাঃ)-কে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্যে আমন্ত্রন জানায়নি? সেই আমন্ত্রন পেয়েই না উনি ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। তোমাদের এই বাংলার মানুষ আমন্ত্রন জানিয়েছেন কি? যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তোমরা লড়ছো, যাদের জন্যে লড়ছো, তাদের মতামত যাচাই করা প্রয়োজন নয় কি? তোমাদের এটা জানা নেই যে, ইসলামে নিজেকে নিজে নেতা দাবী করা জায়েয নয়? ''
আরো একঝাক প্রশ্নের তীর এবারে ধেয়ে গেলো জঙ্গীদের আস্তানার দিকে। কোন প্রতিউত্তর নেই এবারেও।
আলেমদের দলটি আরো কয়েক পা এগিয়ে গেলেন রেস্তোরার দিকে। তাঁরা ঘোষনা দিলেন, ''আমরা ভিতরে আসছি বন্দিদের ছুটিয়ে নিতে।''
আলেমরা এগিয়ে চললেন। এক পর্যায়ে ঢুকে পড়লেন রেস্তোরাঁয়। উদ্যোত রাইফেলের নলের সামনে থেকে একে একে বের করে নিয়ে আসলেন জিম্মিদের।
============================================================================
এরপর কি হলো? সেই জঙ্গীরা কি আত্মসমর্পণ করলো? নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আলেমদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সঠিক ইসলামের দিকনির্দেশনা চাইলো কি?
জানি না, সত্যিই জানি না। জানার সু্যোগ দেওয়া হলো না যে!
জানালা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শুধু একটি প্রশ্নের উত্তরই খুজতে থাকলাম- ''কেন, মাননীয় সরকার প্রধান, কেন আপনি আলেমদের জঙ্গী সমস্যা সমাধানে একটি বারের জন্যেও আহবান জানালেন না? কেন আপনাকে এই পরামর্শ দেওয়ার জন্যে কোন মানুষ আপনার পাশে ছিলো না? কেন?''
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই। আপনাদের কাছে আছে কি?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫