কোন এক মনিষী বলেছেন, ''হয় পড়ার যোগ্য কোন কিছু লেখো, নাহয় এমন কিছু করো যা লেখার যোগ্য।''
প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখতে হয়। কখনো মানুষের জন্যে, কখনওবা শুধু নিজেরই জন্যে। কিনতু, লিখেতে হলে ভুরি ভুরি আইডিয়ার প্রয়োজন যে! এতো আইডিয়া কোথায় পাই? মাঝেই মাঝেই খুব ভাবনায় পড়ে যাই। আইডিয়া তো আর মুদি দোকানের বয়ামে রাখা চকলেট নয় যে টাকা দিলেই কেনা যাবে! তাহলে উপায়?
গতকাল এ নিয়ে ভাবার সময়ই উপরের উক্তিটি পেয়ে গেলাম। পড়ে মনে হলো, পড়ার যোগ্য কোন কিছু লেখা যেহেতু কঠিন, এমন কিছু করেই দেখি না কেন যা নিয়ে লেখা যায়।
কি এমন করা যায় কোন লেখার বিষয়বস্তূ হয়ে যাবে!
এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কাল রাতে। সকালে উঠেই ছোটবেলায় বাবার বলা একটি উপদেশ মনে পড়ে গেলো। আমি যখন রাস্তায় হাঁটতাম তখন এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাঁটতাম। রাস্তায় রকমারি জিনিসপত্র দেখতে দেখতে হাঁটতে বেশ মজাই লাগতো। এমন অনেক দিন গেছে, উপরের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে প্রায়শই গোবরে পাড়া দিয়েছি।
এ নিয়ে বাবা প্রায়ই বকা দিতেন। বলতেন- নিচের দিকে তাকিয়ে হাটোস না কেন, উজবুক। অনেক কিছু শিখতে পারতি। আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকতো না, নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটলে কি এমন শেখা যায়!
অনেক দিন পর কথাটি আজ মনে পড়লো। তাই, অফিসে যাওয়ার সময় সিদ্ধান্ত নিলাম, আজ ঢাকার রাজপথ দেখতে দেখতে হাঁটবো। দেখিইনা কি শেখা যায়!
লালমাটিয়ার আড়ং পর্যন্ত আসতেই প্রথমেই চোখে পড়লো একটি ব্লেইড! আশে পাশে তাকালাম। কোন সেলুন চোখে পড়লো না। তাহলে এটা এখানে কি করে এলো! অনেক ভেবেও বুঝতে পারলাম না। মানুষ কেন যে এই জিনিসটা রাস্তায় ফেলে! নিজ জাতিকে গালি দিতে দিতে রাস্তা থেকে তা তুলে পাশের একটি গর্তে ফেলে দিলাম।
রাস্তা পার হয়ে বাসে করে ফার্মগেট এসে রিক্সায় উঠলাম। এতোক্ষণে আবার রাস্তার দিকে তাকাবার ফুরসৎ পেলাম। সিগারেটের প্যাকেট! এই জিনিসটা মনে হয় রাস্তায় ফেলতেই আনন্দ! পুরো রাস্তা জুড়েই এখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে।
থুথু! এটা আর এমন কি! বাঙালী তো রাস্তার আশে-পাশে প্রাকৃতিক কাজও করে ফেলে। তবুও, মনে হলো মনে রাখি। ঢাকার রাস্তায় দেখেছিলাম একবার, নাতিদের বলতে পারবো!
অফিসে যেতেই যেতেই দেখলাম রশি, রঙ, কাঠি, টিনের কৌটা আরো কত কি! মনে হলো...সমগ্র বাংলাদেশ যেন একটি ডাস্টবিন!
আনিসুল হক সাহেব করছেন কি! কিছু এওয়ারনেস কেম্পেইন করার কথা কি কেউ থাকে একটু মনে করিয়ে দিবে না!
''স্যার, ও স্যার, নামেন। আইসা পড়সি।'' রিক্সায় আসতে আসতে কখন যে ভাবনার রাজ্যে ডুব দিয়েছিলাম বুঝতেই পারিনি! টের-ই পাইনি অফিসের কাছে পৌঁছে গেছি। রিক্সাওয়ালার ডাকে সম্বিত ফিরলো।
একটি দীর্ঘশ্বাস চেপে রাস্তায় নামলাম।