somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল বাড়ির প্রাণিগুলো

২৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাসার দক্ষিণ দিকে একটা খোলা জায়গা ছিল। ছোট্ট একটা মাঠ। গত একবছর হলো সেই মাঠটি বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। তোলা হয়েছে ছোট্ট একটা টিনশেড বাড়ি।
আমার বেডরুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নাক বরাবর তাকালেই চোখ পরবে সেই বাড়ির লাল রঙের টিনের ওপর।
তবে, সমস্যা হলো সেই লাল‌ বাড়ির লোকেদের নিয়ে। চারটি মাত্র প্রাণি (মনুষ্য অর্থে)। বাবা-মা-সন্তান আর এক বুড়ো। সম্ভবত, আমি যেই বাবা-র কথা আগের লাইনে বলেছি তারই বৃদ্ধ পিতা।
সমস্যাটা একটু অদ্ভুত। সমস্যার কথায় যাবার আগে তাদের জীবনধারণ সম্পর্কে একটু বলি।
'বাবা' নামের প্রাণিটি সারাদিন কিছু না কিছু করছে‌। মাঠের একপাশে দেয়াল ঘেষে সে সবজির চাষ করেছে।‌ সেখানে কাজ‌ করছে। নয়তো খড়ি কাটছে। মাঝে মাঝে মাঠের ঘাস কাটছে, এটাও দেখেছি।
"মা" নামক প্রাণিটি চোখে পরেছে হয়তো বার তিনেক। পাঁচতলার ওপর থেকে ক্ষণিকের চোখের দেখা। বুড়ো লোকটি সারাদিন বসে থাকছে ঘাসের ওপর। নয়তো বাউন্ডারির বাইরে রাস্তায় অলস দাঁড়িয়ে আছে। তাপপ্রবাহের সময়টায় ঘাসের ওপর বালিশ‌ পেতে ঘুমুতেও দেখেছি তাকে। আর সেই সন্তান?
খুব সম্ভবত বছর তিনেক বয়স। দিনমান সে শুধু "বাবা"র পায়ে পায়ে ঘুরছে। মাঝে মাঝে তার দাদুর (বুড়ো লোকটি) সাথে খুনসুটি। তার আবার দুটো খেলনাও আছে। তিনচাকার ভাঙ্গাচোরা খেলনা রিকশা আর একটা প্লাস্টিকের ঘোড়া। যার ওপর বসে সে টগবগিয়ে টগবগিয়ে কোথায় যেন যেতে চায়।
ওহহ্! "বাবা"টি আবার মাঝে মধ্যে সেই ভাঙ্গাচোরা রিকশা সারাতে সারাদিন পার করে দেয়। তার দিয়ে রিকশার হ্যান্ডেল বেঁধে দেবার পর ছোট্ট প্রাণিটির মুখের যে দিগ্বিজয়ী হাসি সেটা আমি পাঁচতলা থেকে স্পষ্ট দেখেছি। বাবা-সন্তানের তুমুল খেলার দর্শক আমি আর সেই বুড়ো।
রমজান মাস আর ঈদের ছুটি নিজের সন্তানের সাথে কাটিয়ে আমি যখন‌ ফিরে এলাম; তখন থেকে সেই বাবা-মা আর সন্তানের কোন খবর নেই। ব্যালকনিতে দাঁড়ালে শুধু অলস বুড়োকেই দেখি। আর দেখি অলস পরে থাকা সেই ভাঙ্গাচোরা রিকশা আর ঘোড়া। সমস্যাটা এখানেই। আমার সমস্যাসংকুল বেঁচে থাকায় এই নতুন সমস্যাটি তরতরিয়ে উঠে পরেছিল 'সমস্যা তালিকা'র একদম শিখরে। মাঝরাত্তিরে ঘুমভাঙ্গা চোখেও আমি ভাবছি সেই প্রাণি তিনটির কথা।
গত ক'দিন‌ ধরেই শরীরের বেগড়বাই চলছে। আজ একটু বাড়াবাড়ি হওয়াতে অফিস ছুটি। বিছানায় শুয়েই বারান্দায় এসে পরা বৃষ্টির ছাঁটে পা ভেজাচ্ছি। বৃষ্টির বেগ বাড়তেই বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনির থাই লাগানোর সময় হঠাৎ চোখে এলো বাবা আর সন্তান মাথায় ছাতা এঁটে মাঠ থেকে দৌড়ে ঘরে ফিরছে। তাদের ছোট্ট লাল টিনের ঘরে। আমি যেন বৃষ্টি আর হাওয়ার তোড়ের শব্দ ভেদ করে শুনছি তাদের খিলখিল হাসি।
পানির ঝাপটা, ঠান্ডা শিরশিরে বাতাস আর সন্তান কোলে পিতার হাসি!

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি জাতির কান্না......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫২

একটি জাতির কান্না......

স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্রের ভারত ভুক্তির নেপথ্য!
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ওই সময় উপমহাদেশে ৫৬৫ টি "Princely States" বা "সতন্ত্র দেশিয় রাজ্য" ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসব কিসের ইঙ্গিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৯


ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার দাবিতে হঠাৎ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ নেতাদের বিক্ষোভ মিছিল! সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্দেশ আছে তোকে ক্রস ফায়ারে মেরে ফেলার’ - হুমায়ুন কবির

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:১৪

(মানব জমিনে হুমায়ুন কবির ভাইয়ের গুম নির্যাতনের কথা পড়ে মনোকষ্ট নিয়ে বসে আছি। আপনার জন্য দোয়া করি, আপনাদের আত্মত্যাগেই এই জাতি স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে, এখন কাজ হচ্ছে তাদের বিচার করা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার জন্য কোটার দরকার আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৬



**** চাকুরী সৃষ্টি করতে জানে না বাংগালী জাতি, কিন্তু চাকুরী থেকে তাড়াতে জানে; কিছু কিছু ব্লগার মানুষকে তাদের কাজের যায়গা থেকে বিতাড়িত করার জন্য ব্লগে চীৎকার করছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ফিরে যেতে ইচ্ছে করে কৈশোরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৫


এখানে কী আছে বলো তো, এখানে কী আছে আর
কেন যে সময়ের পিঠে হলাম সওয়ার;
সময় আমায় নিয়ে এ কোথায় এলো
স্বপ্ন সব হয়ে গেল এলোমেলো।

সেই প্রাথমিকের গন্ডি, পা রাখি ইচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×