একাধিক লেখায় আমি উল্লেখ করেছি যে দেশে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। মাথাপিছু আয়,সড়ক ব্যবস্থা,সাক্ষরতার হার ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব উন্নয়নের কারণ হিসেবে আমি চিহ্নিত করেছি বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ,শ্রমের নিম্নমূল্য,অধিকাংশ প্রাথমিক চাহিদার বিষয়ে আমাদের স্বাবলম্বিতার মতো দিকগুলোকে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে উন্নয়নের সড়ককে সহজ করতে প্রয়োজন হয় মাঠপর্যায়ের ও কূটনৈতিকভাবে দক্ষ একটি সরকারেরও। বিগত দশ বছরে কতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিলো,কতটুকু হয়েছে সে প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে জনগণের একটা বিরাট অংশ খুশি।
এসব আলোচনার পাশাপাশি দেশের শিক্ষা কাঠামোর সাথে তুলনা করে আমি বলেছিলাম যে আমরা প্রবেশ করেছি উন্নয়নের মাধ্যমিক স্তরে। উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা তার চেয়ে উপরের স্তরে প্রবেশ করতে আমাদের অনেক দেরি। তখন উন্নয়নের বর্তমান জোয়ারকে আর জোয়ার নাও মনে হতে পারে। তবে বাস্তবায়নকৃত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে এখনও দেশের অনেক শ্রেণীর মানুষের হাততালি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি উৎসাহের অভাব লক্ষ্য করেছি। বস্তুত ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য উল্লেখিত শ্রেণীর মানুজন এই কুণ্ঠাবোধে ভোগে। দেশের উন্নয়ন বলতে সর্বসাধারণের উন্নয়নকেই বোঝায়। ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান প্রত্যেক মানুষের ই দায়িত্ব। যে ব্যক্তি স্বার্থ থেকে বেরিয়ে ভালো কাজের উৎসাহে কুণ্ঠাবোধ করে সে যেমন নীতিবান রাজনীতিবিদ না,তেমনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিকও না।
উন্নয়ন বিষয়ক এসব আলোচনার পাশাপাশি কিছুদিন আগে এটাও আমার দৃষ্টিগোচর হলো যে,দেশের সব ধরণের সংবাদ মাধ্যমেই একটা খবর প্রকাশিত হলো,"গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের"।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, নাগরিক অধিকার, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ - এসব মানদণ্ডে প্রতিবেদন তৈরি করে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি মানদণ্ডকে ০ থেকে ১০ স্কোরের মধ্যে হিসেব করে গড় করা হয়।
প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয় - স্বৈরতন্ত্র, হাইব্রিড রেজিম, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র এবং পূর্ণ গণতন্ত্র।
এই হিসেব অনুযায়ী, একটি দেশকে "পূর্ণ গণতান্ত্রিক" অবস্থায় যেতে হলে গণতান্ত্রিক সূচকে ৯ থেকে ১০ স্কোর করতে হয়।
যেসব দেশের স্কোর ৭ থেকে ৮ সেসব দেশকে "ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র" বলা হয়েছে।
তবে এর নিচের অবস্থান "হাইব্রিড রেজিম"-এ তালিকাভুক্ত দেশগুলোর স্কোর ৫ থেকে ৬ এবং "স্বৈরতান্ত্রিক" দেশগুলোর স্কোর ০ থেকে ৪ এর মধ্যে।
১৬৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ গণতন্ত্রের তালিকায়, ৫৫টি দেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়, ৩৯টি দেশ হাইব্রিড রেজিমের তালিকায় এবং ৫৩টি দেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় আছে।
৫.৫৭ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ আছে হাইব্রিড রেজিমের তালিকায়।
উন্নয়নের ছোঁয়া ও প্রচারের পাশাপাশি এই ধরণের সংবাদে কি আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া উচিত?
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। কার্যকর গণতন্ত্রের স্বপ্ন যদি আমরা দেখি তাহলে দুশ্চিন্তা আমাদের করতেই হবে। দৃষ্টিগোচর হওয়া ও প্রচারকৃত উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি,দলীয়করণ,স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা,মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় আমাদের এ দুশ্চিন্তাকে আরও প্রবল করে তোলে।
উল্লেখিত গুরুতর ও জাতীয় সমস্যাগুলোর সাথে গণতন্ত্রের অকার্যকারিতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে,যখন কোনো কিছু হারানোর ভয় থাকে কেবল তখনই আমরা তা ধরে রাখার জন্য তৎপর হই। সে জিনিসকে যথেচ্ছা ব্যবহারের বিষয়েও সাবধান হই। ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। ক্ষমতার যথেচ্ছা ব্যবহার রোধে,স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এদেশে আরো অনেক বছর কার্যকর গণতন্ত্রের বিকল্প নেই।
কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য কি প্রয়োজন?
সরকারের সদিচ্ছা,সংসদে কার্যকরী বিরোধীদল,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা,জনসাধারণের রাজনৈতিক সচেতনতার মতো কতগুলো সামগ্রিক বিষয়ের ভিত্তিতে গড়ে উঠে কার্যকর গণতন্ত্র।
উল্লেখিত প্রয়োজনগুলোর প্রত্যেকটাতেই যে আমরা ত্রুটিপূর্ণ অবস্থানে আছি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে আমি শুধুমাত্র কার্যকরী বিরোধী দল নিয়ে আলোচনা করবো।
কার্যকর বিরোধী দল কারা হবে?
স্বভাবতই যাদের জনসমর্থন বেশি। বাম গণতান্ত্রিক জোট সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জনসমর্থনের দিকে তাকালে আমরা সন্দেহপ্রকাশ করতে বাধ্য হই। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে গণতন্ত্রের চাকা সচল রাখতে এসব দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত গঠনমূলক সমালোচনা ও সরকারের বিরোধিতা,খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু যেভাবেই হোক মানুষ শেষ পর্যন্ত এসব দলে ঠিক ভিড়তে চায় না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব দলের জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাংগঠনিক ভাবেও দলগুলো নিজেদের অবস্থান শক্ত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটা আশার কথা।
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ একাধিকবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের জায়গা দখল করে। দলের প্রধান থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশেরই বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অনিয়ময়ের মামলা।
কিন্তু আমরা জানি এদেশে জনসমর্থনের দিক থেকে বিএনপি বহুলাংশে এগিয়ে আছে,দেশের প্রতিটি উপজেলায়ও যথেষ্ঠ সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছে যাদের দ্বারা আমরা কার্যকরী বিরোধী দলের ভূমিকা আশা করতে পারি।
সাংগঠনিকভাবে ভাবে বিএনপি আজ যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্দশায় রয়েছে। দলের চেয়ারম্যান কারাগারে,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশে পলাতক।
তিনি লণ্ডনে সংবাদ সম্মেলনের মতো কিছু সভা-সমাবেশ করেন। বহুদিন হলো পত্রিকায় তাঁর ছবিও দেখা যায় না। জিয়া পরিবার থেকে রাজনীতির হাল ধরার মতো অন্য কোনো নেতার নাম দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিএনপির সমার্থকেরাও জানেনা।
এরকম অবস্থায় সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জনসমর্থনের কারণে বিএনপির আবার সংগঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সংসদের বাইরে থেকেও তারা পালন করতে পারবে কার্যকরী বিরোধীদলের ভূমিকা,আদায় করতে পারবে অধিকতর জনসমর্থন। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর নির্মম মৃত্যুর পরে দীর্ঘ সময় আওয়ামীলীগেও শেখ পরিবার থেকে কোনো নেতা গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। পরবর্তীতে দল প্রধানের আসন গ্রহণ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
একইরকম পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সংগঠিত হতে হলে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি নজর দিতে হবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও মতামতের দিকে।
বিগত এক যুগে হয়তো তারা বুঝতে পেরেছে যে দুর্নীতি কিংবা জ্বালাও পোড়াও এর রাজনীতির অবসান চায় এদেশের সাধারণ মানুষ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর সাথে বিএনপির সম্পৃক্ততাকে মেনে নেয়নি তরুণ ভোটাররা। এ নির্বাচনে তরুণ ভোটার ছিলো ১ কোটি ২৩ লাখের মতো। যা মোট ভোটারের ১০ শতাংশেরও বেশি। পরবর্তীতে এদের সাথে যুক্ত হবে আরো সমমনা তরুণ ভোটার।
জামায়াত প্রশ্নের উত্তরে নেতারা বলেছিলো,"জামায়াত ইসলামী নামে কোনো নিবন্ধিত দল নেই,যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা ঐক্যফ্রন্টের সদস্য"।
তাঁদের এই উত্তর জনগণ ও তরুণরা কতটুকু যৌক্তিক ভেবেছে তা নিয়ে তাঁদের চিন্তা করতে হবে,এ বিষয়ে তাঁদের অবস্থানও পরিষ্কার করতে
হবে। উল্লেখ্য বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ,বিএনপি উভয় দলই জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে রাজনীতির মঞ্চে উঠেছে।
নিজেদের শান্তিপূর্ণ সভা মবাবেশের অধিকারের জন্য তাঁদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। যেতে হবে মানুষের দোরে দোরে। মানবাধিকার ও মানুষের আকাঙ্ক্ষা,অধিকারকে সামনে রেখে এবং দুর্নীতিসহ সব ধরণের অনিয়মের বিরুদ্ধে তাঁরা শান্তিপূর্ণ,গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে তুলুক।
দেশে আবারও বহুদলীয় ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক,ক্ষমতা হারানোর ভয় সৃষ্টি হোক দল মত নির্বিশেষে সবার মাঝে,রাজনীতিবিদেরা নিজেদের জনগণের সেবক হিসেবে চিনতে পারুক,দেশে প্রতিষ্ঠিত হোক সুশাসন,ভেঙে দেওয়া হোক দুর্নীতির আখড়া,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথার্থ বহিঃপ্রকাশ হোক,মানুষের পাশাপাশি সত্যিকার স্বাধীনতা পাক সংবাদ মাধ্যম গুলো,মানুষের যথার্থ মতামতগুলো.... একাধিক লেখায় আমি উল্লেখ করেছি যে দেশে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। মাথাপিছু আয়,সড়ক ব্যবস্থা,সাক্ষরতার হার ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব উন্নয়নের কারণ হিসেবে আমি চিহ্নিত করেছি বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ,শ্রমের নিম্নমূল্য,অধিকাংশ প্রাথমিক চাহিদার বিষয়ে আমাদের স্বাবলম্বিতার মতো দিকগুলোকে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে উন্নয়নের সড়ককে সহজ করতে প্রয়োজন হয় মাঠপর্যায়ের ও কূটনৈতিকভাবে দক্ষ একটি সরকারেরও। বিগত দশ বছরে কতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিলো,কতটুকু হয়েছে সে প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে জনগণের একটা বিরাট অংশ খুশি।
এসব আলোচনার পাশাপাশি দেশের শিক্ষা কাঠামোর সাথে তুলনা করে আমি বলেছিলাম যে আমরা প্রবেশ করেছি উন্নয়নের মাধ্যমিক স্তরে। উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা তার চেয়ে উপরের স্তরে প্রবেশ করতে আমাদের অনেক দেরি। তখন উন্নয়নের বর্তমান জোয়ারকে আর জোয়ার নাও মনে হতে পারে। তবে বাস্তবায়নকৃত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে এখনও দেশের অনেক শ্রেণীর মানুষের হাততালি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি উৎসাহের অভাব লক্ষ্য করেছি। বস্তুত ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য উল্লেখিত শ্রেণীর মানুজন এই কুণ্ঠাবোধে ভোগে। দেশের উন্নয়ন বলতে সর্বসাধারণের উন্নয়নকেই বোঝায়। ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান প্রত্যেক মানুষের ই দায়িত্ব। যে ব্যক্তি স্বার্থ থেকে বেরিয়ে ভালো কাজের উৎসাহে কুণ্ঠাবোধ করে সে যেমন নীতিবান রাজনীতিবিদ না,তেমনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিকও না।
উন্নয়ন বিষয়ক এসব আলোচনার পাশাপাশি কিছুদিন আগে এটাও আমার দৃষ্টিগোচর হলো যে,দেশের সব ধরণের সংবাদ মাধ্যমেই একটা খবর প্রকাশিত হলো,"গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের"।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, নাগরিক অধিকার, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ - এসব মানদণ্ডে প্রতিবেদন তৈরি করে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি মানদণ্ডকে ০ থেকে ১০ স্কোরের মধ্যে হিসেব করে গড় করা হয়।
প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয় - স্বৈরতন্ত্র, হাইব্রিড রেজিম, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র এবং পূর্ণ গণতন্ত্র।
এই হিসেব অনুযায়ী, একটি দেশকে "পূর্ণ গণতান্ত্রিক" অবস্থায় যেতে হলে গণতান্ত্রিক সূচকে ৯ থেকে ১০ স্কোর করতে হয়।
যেসব দেশের স্কোর ৭ থেকে ৮ সেসব দেশকে "ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র" বলা হয়েছে।
তবে এর নিচের অবস্থান "হাইব্রিড রেজিম"-এ তালিকাভুক্ত দেশগুলোর স্কোর ৫ থেকে ৬ এবং "স্বৈরতান্ত্রিক" দেশগুলোর স্কোর ০ থেকে ৪ এর মধ্যে।
১৬৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ গণতন্ত্রের তালিকায়, ৫৫টি দেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়, ৩৯টি দেশ হাইব্রিড রেজিমের তালিকায় এবং ৫৩টি দেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় আছে।
৫.৫৭ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ আছে হাইব্রিড রেজিমের তালিকায়।
উন্নয়নের ছোঁয়া ও প্রচারের পাশাপাশি এই ধরণের সংবাদে কি আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া উচিত?
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। কার্যকর গণতন্ত্রের স্বপ্ন যদি আমরা দেখি তাহলে দুশ্চিন্তা আমাদের করতেই হবে। দৃষ্টিগোচর হওয়া ও প্রচারকৃত উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি,দলীয়করণ,স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা,মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় আমাদের এ দুশ্চিন্তাকে আরও প্রবল করে তোলে।
উল্লেখিত গুরুতর ও জাতীয় সমস্যাগুলোর সাথে গণতন্ত্রের অকার্যকারিতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে,যখন কোনো কিছু হারানোর ভয় থাকে কেবল তখনই আমরা তা ধরে রাখার জন্য তৎপর হই। সে জিনিসকে যথেচ্ছা ব্যবহারের বিষয়েও সাবধান হই। ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। ক্ষমতার যথেচ্ছা ব্যবহার রোধে,স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এদেশে আরো অনেক বছর কার্যকর গণতন্ত্রের বিকল্প নেই।
কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য কি প্রয়োজন?
সরকারের সদিচ্ছা,সংসদে কার্যকরী বিরোধীদল,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা,জনসাধারণের রাজনৈতিক সচেতনতার মতো কতগুলো সামগ্রিক বিষয়ের ভিত্তিতে গড়ে উঠে কার্যকর গণতন্ত্র।
উল্লেখিত প্রয়োজনগুলোর প্রত্যেকটাতেই যে আমরা ত্রুটিপূর্ণ অবস্থানে আছি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে আমি শুধুমাত্র কার্যকরী বিরোধী দল নিয়ে আলোচনা করবো।
কার্যকর বিরোধী দল কারা হবে?
স্বভাবতই যাদের জনসমর্থন বেশি। বাম গণতান্ত্রিক জোট সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জনসমর্থনের দিকে তাকালে আমরা সন্দেহপ্রকাশ করতে বাধ্য হই। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে গণতন্ত্রের চাকা সচল রাখতে এসব দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত গঠনমূলক সমালোচনা ও সরকারের বিরোধিতা,খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু যেভাবেই হোক মানুষ শেষ পর্যন্ত এসব দলে ঠিক ভিড়তে চায় না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব দলের জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাংগঠনিক ভাবেও দলগুলো নিজেদের অবস্থান শক্ত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটা আশার কথা।
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ একাধিকবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের জায়গা দখল করে। দলের প্রধান থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশেরই বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অনিয়ময়ের মামলা।
কিন্তু আমরা জানি এদেশে জনসমর্থনের দিক থেকে বিএনপি বহুলাংশে এগিয়ে আছে,দেশের প্রতিটি উপজেলায়ও যথেষ্ঠ সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছে যাদের দ্বারা আমরা কার্যকরী বিরোধী দলের ভূমিকা আশা করতে পারি।
সাংগঠনিকভাবে ভাবে বিএনপি আজ যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্দশায় রয়েছে। দলের চেয়ারম্যান কারাগারে,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশে পলাতক।
তিনি লণ্ডনে সংবাদ সম্মেলনের মতো কিছু সভা-সমাবেশ করেন। বহুদিন হলো পত্রিকায় তাঁর ছবিও দেখা যায় না। জিয়া পরিবার থেকে রাজনীতির হাল ধরার মতো অন্য কোনো নেতার নাম দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিএনপির সমার্থকেরাও জানেনা।
এরকম অবস্থায় সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জনসমর্থনের কারণে বিএনপির আবার সংগঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সংসদের বাইরে থেকেও তারা পালন করতে পারবে কার্যকরী বিরোধীদলের ভূমিকা,আদায় করতে পারবে অধিকতর জনসমর্থন। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর নির্মম মৃত্যুর পরে দীর্ঘ সময় আওয়ামীলীগেও শেখ পরিবার থেকে কোনো নেতা গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। পরবর্তীতে দল প্রধানের আসন গ্রহণ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
একইরকম পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সংগঠিত হতে হলে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি নজর দিতে হবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও মতামতের দিকে।
বিগত এক যুগে হয়তো তারা বুঝতে পেরেছে যে দুর্নীতি কিংবা জ্বালাও পোড়াও এর রাজনীতির অবসান চায় এদেশের সাধারণ মানুষ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর সাথে বিএনপির সম্পৃক্ততাকে মেনে নেয়নি তরুণ ভোটাররা। এ নির্বাচনে তরুণ ভোটার ছিলো ১ কোটি ২৩ লাখের মতো। যা মোট ভোটারের ১০ শতাংশেরও বেশি। পরবর্তীতে এদের সাথে যুক্ত হবে আরো সমমনা তরুণ ভোটার।
জামায়াত প্রশ্নের উত্তরে নেতারা বলেছিলো,"জামায়াত ইসলামী নামে কোনো নিবন্ধিত দল নেই,যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা ঐক্যফ্রন্টের সদস্য"।
তাঁদের এই উত্তর জনগণ ও তরুণরা কতটুকু যৌক্তিক ভেবেছে তা নিয়ে তাঁদের চিন্তা করতে হবে,এ বিষয়ে তাঁদের অবস্থানও পরিষ্কার করতে
হবে। উল্লেখ্য বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ,বিএনপি উভয় দলই জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে রাজনীতির মঞ্চে উঠেছে।
নিজেদের শান্তিপূর্ণ সভা মবাবেশের অধিকারের জন্য তাঁদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। যেতে হবে মানুষের দোরে দোরে। মানবাধিকার ও মানুষের আকাঙ্ক্ষা,অধিকারকে সামনে রেখে এবং দুর্নীতিসহ সব ধরণের অনিয়মের বিরুদ্ধে তাঁরা শান্তিপূর্ণ,গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে তুলুক।
দেশে আবারও বহুদলীয় ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক,ক্ষমতা হারানোর ভয় সৃষ্টি হোক দল মত নির্বিশেষে সবার মাঝে,রাজনীতিবিদেরা নিজেদের জনগণের সেবক হিসেবে চিনতে পারুক,দেশে প্রতিষ্ঠিত হোক সুশাসন,ভেঙে দেওয়া হোক দুর্নীতির আখড়া,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথার্থ বহিঃপ্রকাশ হোক,মানুষের পাশাপাশি সত্যিকার স্বাধীনতা পাক সংবাদ মাধ্যম গুলো,মানুষের যথার্থ মতামতগুলো....
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৪