পূর্বকথাঃ দেশের সমস্যা নিয়ে আমি আগে ছোটোখাটো লেখা লিখলেও এটা ছিলো প্রথমবারের মতো অতিকায় কোনো লেখা।লিখতে লিখতে খেয়াল করলাম এই লেখা একটা পুস্তিকা হয়ে যাচ্ছে। আমার চেয়ে ভালো সাহিত্য বুঝে এমন এক বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম,সে যেমন লিখছি তেমন ই চালিয়ে যেতে বললো। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
আর এখানে পুলিশের একচেটিয়া গুণগান গাওয়ার কোনো চেষ্টা করা হয়নি।লেখার মূল উপপাদ্য সবসময় ই বাংলা চলচ্চিত্রের কিছু মৌলিক সমস্যাই ছিলো।
এদেশের প্রশাসন ব্যবস্থার,আইনশৃংখলা বাহিনীর গভীরে আমার প্রবেশ করার ইচ্ছা আছে এবং কয়েক পর্বের লেখা লিখার ইচ্ছা আছে।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ
১.ওসি,গৌরনদী থানা
২.দায়িত্বরত কর্মকর্তা,চুয়েট পুলিশ ক্যাম্প
৩.ভালো মন্দ সব সময়ে পাশে থাকা প্রিয় বন্ধু নাবিল আহমেদ
যথাযথ কারণে পুলিশ অফিসারদের নাম প্রকাশ করা হয়নি
কিছুদিন আগের কথা(ডিসেম্বর,২০১৮)।
সকাল বেলা দিনের একমাত্র ক্লাস শেষে কয়েক বন্ধু মিলে ফুরফুরে মেজাজে শেখ রাসেল হলে ফিরছি।
কোনো এক ঘটনাক্রমে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো বাংলা চলচ্চিত্রের অপ্রধান নায়কেরা(সাইড নায়ক)।
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা উঠলে আর সেখানে আমি থাকলে মাঠ গরম হবেই।
আমি শুরু করলাম এভাবেঃ
--- প্রায় প্রতি মুভিতে বাংলা সিনেমার সাইড নায়ক দের ভবিষ্যত কি জানোস?
--- কি?
--- মুভির মাঝামাঝি অংশে এরা মূল ভিলেনের চ্যালাদের হাতে মারা যায় এবং এদের নায়িকা ধর্ষিত হয়
--- (সবার একত্রে প্রবল হাসি)
--- সাইড নায়ক নায়িকার এই জুটি কোথাও ঘুরতে যায়, সেখানে আমার ছোটোবেলায় হারিয়ে যাওয়া খেলনা পিস্তল দিয়ে নায়কের বুকের বামদিকে গুলি করা হয় অথবা আম কাটা ছুরি দিয়ে গলা কেটে দেয় বা পেটে ঢুকিয়ে দেয়।তার শরীর থেকে বের হওয়া টকটকে লাল রঙের আলতা হাতে মেখে তার প্রেয়সীকে গুণ্ডাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে এবং সেদিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।হাতের আলতা গড়িয়ে মাটিতে পড়ে।
---- (আবারও সবার প্রবল হাসি)
---- এই নির্মম ঘটনার শুটিং হয় ঢাকার কোনো এক পার্কে,ভালোভাবে তাকালে দেখা যায় দূরে পার্কে নিয়োজিত কোনো কর্মচারী পার্কের আবর্জনায় ঝাঁট দিচ্ছে
--- (আরও হাসি)
--- নায়িকাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কর্মব্যস্ত মানুষ হাতে টিফিন বাটি নিয়ে হনহন করে কর্মক্ষেত্রে হেঁটে যায়,কে কাকে ধরে নিয়ে যায় তা দিয়ে তাদের কোনো প্রয়োজন নেই,মাথা ব্যথা নেই।
এরপরে ধারাবাহিক ধর্ষণের চিত্র।একটু পর পর একেক জন গুন্ডা নিজের মুখকে যথাসম্ভব বিকৃত করার চেষ্টা করছে,নিচে আছে ছটফট করতে থাকা তরুণী আর কয়েকবার গুণ্ডাদের প্যান্টের বেল্ট ঠিক করার চিত্র
---- (হাসি,হাসি,হাসি)
হাঁটতে হাঁটতে হতাশা চত্বর পার হবার আগেই আলোচনা অন্য দিকে মোড় নেয়।
কিন্তু আমার মন সে আলোচনায় মনঃসংযোগ করতে পারলো না,সে পড়ে রইলো ওই ধর্ষণ চিত্রেই।
এতোক্ষণের বর্ণনাকৃত এই দৃশ্যপটের সাথে তো বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দিনে দুপুরে জনমুখর জায়গায় এরকম খুন ও এক তরুণীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা কখনো দেখিনি,শুনিনি।
কিন্তু তবুও অহরহ তৈরি হচ্ছে এই কাল্পনিক দৃশ্য।
কিন্তু বাস্তবতার সাথে মিল আছে এমন খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদেশে কি ধরণের চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে?
কারা তৈরি করছে এসব কাল্পনিক চিত্র?কি জন্য?কাদের জন্য?
যে কারণেই হোক,যাদের জন্যই হোক আমার এ নিয়ে এতো চিন্তা কেনো?
একবার এক যুগ পিছনে ফিরে যেতে চাই।
হঠাৎ করে এতো দূরে যেতে কষ্ট বোধ হলে আমি হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি,গৌরনদী উপজেলার সবচেয়ে ভালো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফার্স্ট বয়।
কিন্তু আমার মধ্যে ভালো ছাত্রের ছিটেফোঁটাও নাই তখন। একজন ভালো ছাত্র হিসেবে নিয়মিত কাজ হিসেবে শুধু যথারীতি ক্লাসে যাওয়া,এছাড়া সবটাই বেমানান। পড়াশুনা বলে কিছু নেই,সারাদিন টো টো করে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো,কখনো একা,কখনো কিছু সঙ্গী সাথী।
এসব সঙ্গী সাথীদের অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।
ক্লাস সেভেন থেকে ভালো পড়াশুনার আশায় আমি বাড়ির বাইরে।
একবার বাড়ি ফেরার পরে একজন বললো তার বাসায় গিয়ে রসায়ন বুঝিয়ে দিয়ে আসতে,সামনে গত বছর ফেল করে আসা রসায়ন পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি। পড়াতে গিয়ে আমি তার বউ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কুশল জিজ্ঞেস করলাম এবং পাঠ প্রদান শুরু করলাম।
হঠাৎ ঘরের অন্য কামরা থেকে একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে এলো।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,'কান্দে কেডা?'
উত্তর ছিলো তার মেয়ে,এই সংবাদ তখনও আমার জানা ছিলো না,সেও নিজ থেকে বলেনি।
নিজেকে কেমন যেনো বিভ্রান্ত মনে হলো।
দুই ক্লাস নিচে পড়া এক কন্যার জনককে আমি রসায়ন পড়াতে আসছি!
হয়তো একটা সাধারণ ধারণা পেয়েছেন কাদের সাথে আমার উঠা বসা ছিলো।
সিক্সে পড়া টো টো করে ঘুরে বেড়ানো এই ছেলের কৌতূহলের কোনো শেষ নেই।
গৌরনদী উপজেলার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য কেন্দ্র টরকী বন্দর।প্রায় এক বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলের উপর দাঁড়ানো এই হাটে প্রায়ই আমার যাওয়া হতো,প্রয়োজনে, অপ্রোয়োজনে।
মূল বন্দরে প্রবেশের আগে বরিশাল থেকে ঢাকার দিকে মহাসড়কের উপর পার হতে হয় ছোট্ট একটা ব্রিজ।
যখনই যাই চোখে পড়ে ব্রিজের পাশে সম্পূর্ণটাই রঙিন কাপড় মোড়ানো এক চায়ের দোকান।
পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে প্রতিবারই বাংলা সিনেমার স্পষ্ট শব্দ শোনা যায়। নিজের কৌতূহলের কাছে হেরে একদিন ঢুকে পড়লাম ওই দোকানের অন্দর মহলে।
ঢুকে দেখি বয়সে সবাই ই আমার চেয়ে বড়।
যৌবনে পা দেই দেই করা কয়েকজন কিশোর ছাড়া সবাই ই যুবক।
হা করে তাকিয়ে আছে বড়সড় টেলিভিশন পর্দার দিকে। কে ঢুকলো বেরোলো তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নাই।
আমি এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। টিভিতে এক প্রবল মারামারির দৃশ্য। এক আলেকজান্ডার বোঁ মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলছে দশ, পনের কিংবা বিশ জন যুবককে। তার গতি বুলেটের বেগকে হার মানায়,ষণ্ডা মার্কা এক লোকের বন্দুক থেকে বেরোনো একের পর এক বুলেট সে বিভিন্ন ভাবে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।
মারামারি শেষে প্রায় বিনা কারণে পর্দায় প্রবেশ করলো মেদবহুল শরীর,বৃহৎ বক্ষা,উচ্চ ঘনফলের পশ্চাৎ দেশ বিশিষ্ট এক তরুণী এবং গানের সাথে নাচতে শুরু করলো মিস্টার বোঁ এর সাথে।এর নাম ময়ূরী।
ছায়াছবির এক পর্যায়ে ময়ূরীকে হতে হলো ধর্ষণের শিকার।
সে দৃশ্য প্রায় গা গুলিয়ে উঠার মতো,কিন্তু ওখানে বসা মানুষগুলোর মুখে এই দৃশ্যের ভয়াবহতার কোনো ছাপ নেই। সবাই ই কেমন উত্তেজিত মনে হাসি হাসি চেহারা নিয়ে দেখছে এ দৃশ্য,পারলে তাদের মুখে লালা ঝরে!
আজ এতো বছর পর সে দৃশ্যের কথা মনে করে কেবলই মনে হচ্ছে পূর্বোক্ত ওইসব ধর্ষণ চিত্র দিয়ে কি আমরা এক দল লালা ঝরা ধর্ষককে উস্কে দিচ্ছি?পাশাপাশি আমরা কি ইচ্ছে করেই জন্ম দিচ্ছি অক্ষরজ্ঞানহীন আরো একঝাঁক ধর্ষককে?
এবার একটু অন্যদিকে যাই।
প্রায় সব ঋতুতেই অনিদ্রা রোগ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই শরীর একদিন সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে রাত এগারোটায় জেগে উঠলো।
মুখে পানি দিয়ে গেলাম গম্ভীরমুখের রসিক মামার দোকানে।এই মামা ও তার নামের শানে নুযুল অন্য কোনো দিন বলা হবে।
রাত দশটার পরে রান্না করা এই বিশেষ দোকানের মুরগি তেহারি আমার কাছে মুখরোচক।
খেতে বসে দেখি বাইরে শীতের অনোপযোগী পোশাক পড়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে এক ঘর বাড়ি হীনা,ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার এক মহিলা।
আমি মামাকে বললাম,'মামা উনাকে একটু জিজ্ঞেস করেন তো উনি কিছু খাবেন কিনা'
মামার জিজ্ঞেসায় সে কোনো উত্তর দেয় না,নির্বাক মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,আমিও খাওয়া বন্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
মামা কোনো উত্তর না পাওয়ায় আমি আমার প্লেট দেখালাম। সে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।
এছাড়া আছে সদ্য ভাজা তেল চুপচুপে টিকিয়া।
তার হাতে একটা দিতে বললাম,সে খেতে শুরু করলো,সাথে আমিও আমার প্লেটে মনোযোগ দিলাম।
সে একটার বেশি টিকিয়া খেলো না,আমি কাপ দেখিয়ে চায়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম। সে হ্যা সায় দিলো। চা দেয়া হলো।
চা শেষে আমি বসে আছি গল্প শোনার অপেক্ষায়।
গভীর রাতে এখানে আসা মানুষজনের প্রায় সবাই ই বাঁচাল। মনে যা আসে খুবই সাবলীলভাবে বলে যায় একের পর এক। সেসব কথার ই কিছু অংশ আমাকে ভাবায়,কিছু অংশ হাসায়।
আজকে তেমন কেউ নেই। কিছুক্ষণ পরে আসলো চার সদস্য বিশিষ্ট একটা পুলিশের দল।
এসেই এরা নানা রকম হম্বিতম্বি শুরু করলো।
টিকিয়ায় এতো তেল কেনো?বিরানী কেমন হইছে?
দোকান মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে কেনো?তাঁরা এসে ফিরে যায়.....
একজন একটা টিকিয়া খেতে খেতে খেয়াল করলো বাইরে জড়সড় হয়ে বসে থাকা সেই মহিলাকে।
সে এগিয়ে গেলো হাতে একটা টিকিয়া নিয়ে,তার পাশাপাশি আরও একজন গেলো আর একটা নিয়ে।
কিন্তু সে অবলা তাঁদের কথায় কোনো সাড়া দিচ্ছে না,এতক্ষণে আমি লক্ষ্য করলাম সে পুরোটা সময় আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
আমি তার দিকে তাকাতে এক অদ্ভুত হাসি হাসলো। আমি চমকে গেলাম। অনভিজ্ঞ হলেও মেয়েদের ভরা পেটের ক্ষুধা মাখা এই হাসি আমি আঁচ করতে পারি। আমার মনে পড়ে গেলো বয়সে কয়েক বছরের বড় এই মহিলার মানসিক অবস্থা যাই হোক সে যৌবনের উর্ধ্বে না।
আমি তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী,কখনো আর তাকে মুখ দেখাবো না ঠিক করেছি। যদি কখনো কিছু খাওয়ানোর ইচ্ছা হয় কিনে পাঠাবো,তার সামনে না পড়ার চেষ্টা করবো।
সেদিন আমি সেখান থেকে উঠে পড়লাম। কিন্তু মনে পড়লো ওই মহিলার প্রতি পুলিশ দুজনের মমতার বিষয়টা। অধিকাংশ সাধারণ মানুষের তেমন কেউ ই পুলিশের এই আচরণের সাথে পরিচিত না।
পুলিশের কথা মনে আসলেই মনে আসে ঘুষের কথা এবং মানুষকে অত্যাচারের চিত্রের কথা।আমি বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে একটা কিছু লিখার কথা ভাবছি,তাই মনে পড়ে গেলো অধিকাংশ বাংলা ছায়াছবিতেই পুলিশের উপস্থিতি খুবই অপমান জনক ও অবাস্তব।
এখানে দেখানো হয় কোনো মেয়ে পুলিশের কাছে থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশের ভূমিকায় থাকা ডিপজল,কাবিলারা তাদের ধর্ষণ করে বের করে দেয়,ঘুষ ছাড়া পুলিশের মাধ্যমে কোনো প্রকার সহায়তা ই সম্ভব না,মারামারির শেষে যখন নায়ক ভিলেনকে খুন করে করে অবস্থা তখন পুলিশ এসে ভিলেনকে ধরে নিয়ে যায়..........
বিষয়টা আমাকে ভাবালো। আমি আমাদের দেশের ও বাইরের যেসব ভালো চলচ্চিত্র দেখেছি তার কোনোটাতেই আইনশৃংখলা বাহিনীকে এভাবে উপস্থাপন করা হয় না। এসব ছায়াছবিতে কেনো এভাবে উপস্থাপন করা হয়?পুলিশ কি এগুলো কখনো দেখে?নিজেদের পেশা নিয়ে বানানো এই অপমান জনক দৃশ্যগুলিতে তাদের প্রতিক্রিয়া কি হয়?
পরের দিন ক্লাস শেষে আমি গেলাম চুয়েট পুলিশ ক্যাম্পে।
সেখানের অফিসার আমার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হলো। আমার ফোনে কোনো প্রকার রেকর্ডার চালু আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হলো।
না,কোনো রেকর্ডার চালু নেই।
অফিসারের সাথে অনেক কথা ই হলো,এখানে তাঁর আর আমার মধ্যকার আলোচনার সারাংশ ভাষার পরিমার্জন সহ দেয়া হলোঃ
আমিঃআমি আমাদের দেশের কিংবা বাইরের দেশের যেসব ভালো চলচ্চিত্র দেখেছি সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি খুবই স্ট্যান্ডার্ড কিন্তু আমাদের দেশের অনেক ছায়াছবিতে ই তাদের প্রায় অবাস্তব ও অপমানের পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন আমি কিছু খুবই সাধারণ চিত্রের কথা তুলে ধরছিঃ
এখানে দেখানো হয় কোনো মেয়ে পুলিশের কাছে থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশের ভূমিকায় থাকা উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ধর্ষণ করে বের করে দেয়,ঘুষ ছাড়া পুলিশের মাধ্যমে কোনো প্রকার সহায়তা ই সম্ভব না,মারামারির শেষে যখন নায়ক ভিলেনকে খুন করে করে অবস্থা তখন পুলিশ এসে ভিলেনকে ধরে নিয়ে যায়..........
কিন্তু আমরা সবাই জানি এসব উপস্থাপন বাস্তব না,তবুও কেনো তৈরি হয় এসব চিত্র?
অফিসারঃআমাদের দেশের মানুষের অন্যতম সমস্যা হলো আমরা একজন মানুষের শুধু খারাপ দিকটা ই দেখি,তার ভালো কোনো গুণ থাকলেও বলার সুযোগ আসলে আমরা চুপ করে থাকতে পছন্দ করি। মানুষের ভালো গল্প বলায় কোনো আনন্দ নাই কিন্তু তার ত্রুটি নিয়ে গল্প করায় আমাদের আমোদের শেষ নেই।এদেশের মানুষও পুলিশকে নিয়ে কৌতুক না করে থাকতে পারে না,অনেকেই সেই কৌতুক শোনার জন্য,দেখার জন্য অপেক্ষা করে।কোনোদিনও ভাবে না যদি একদিন পুলিশ বাহিনী কর্ম বিরতি দেয় তবে দেশের কি অবস্থা হবে।
আমিঃ আপনারা কি কখনো এসব সিনেমা দেখেন?দেখলে আপনাদের পেশার এমন উপস্থাপনকে কিভাবে দেখেন?আপনাদের প্রতিক্রিয়া কি হয়?
অফিসারঃবাবা,তুমি যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শোনো কেউ বলতেছে চুয়েটের পোলাপান বদমাশ তবে তোমার কেমন লাগবে?নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে।
আমাদেরও খারাপ লাগে।
আমিঃ যদি খারাপ লাগে তাহলে এরকম অবাস্তব দৃশ্য তৈরি বন্ধ করার জন্য কেনো পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না?
অফিসারঃ এইতো বাবা খটকা প্রশ্ন শুরু করলা।সাধারণ জনগণের অধিকাংশের ই কোনো ধারণা নেই যে আমাদের হাত কতোটা বাঁধা। তারা ভাবে পুলিশ পায়ের উপর পা তুলে নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমায়। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় মেললেও আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। একটা ফোনে আমাদের অনেক দিনের প্ল্যান করা অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়,চাকরি নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়। খারাপ লাগলেও অনেক কিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য তোমার যেতে হবে অনেক উপরের অফিসারের কাছে,এমপি,মিনিস্টারদের কাছে।তারাও সঠিক উত্তর দিবে না,এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবে.....
আলোচনা শেষে আমি আবার ল্যাবের দিকে পা বাড়ালাম।
এবার দেড় যুগ পিছনে ফিরতে হচ্ছে।
ঘরের দুয়ারে বিনা বেতনের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রেখে আমাকে সদ্য একশ টাকা বেতনের দামী কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে ভালো সময় যাচ্ছে। এরই মাঝে একদিন ছুটিতে প্রবাস ফেরত বাবার ঢাকা যাওয়া প্রয়োজন। আমি অপেক্ষাকৃত ভালো সময়ের আশায় বায়না ধরলাম আমাকেও ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। আমার প্রস্তাব সরাসরি নাকোচ করা হলো। আমার ঢাকা যেয়ে কাজ নেই।সেখানে বাবা অনেক উঁচু উঁচু দালানে উঠবে,সেসব দালানের সিঁড়ি বাওয়া আমার মতো বাচ্চার জন্য অসম্ভব। বাবার ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে,মা তাঁর শার্ট প্যান্ট ধুয়ে যত্ন করে ইস্ত্রি করে রেখেছে।
পাশাপাশি বাবার সাথে যাওয়ার জন্য আমার গোপন ষড়যন্ত্র ও এগিয়ে চলছে।
রাত দশটায় টরকী বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস ছেড়ে যাবে। আমি সন্ধ্যা বেলায় ই বাবার শার্ট লুকিয়ে ফেললাম এবং মাকে আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলাম,আমাকে নিয়ে যেতে হবে।
বাবা,বড় মামা,নানু তিন সদস্যের শার্ট উদ্ধার কমিটি আমাকে ভালোভাবে বোঝানোর পর আমার গালে কষিয়ে চড় বসালো,আমি কাঁদলাম,ফোঁপাতে ফোঁপাতে চোখ মুছলাম এবং যখন আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে তখন যেনো গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি আদায়ের কেন্দ্র ঘর থেকে আমাকে নিয়ে আসা হয় এই কথা জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।
আমার ষড়যন্ত্রের জয় হলো। আমি শার্ট বের করে দিলাম। সেই শার্ট আবারও ইস্ত্রি করতে হলো।
ভোর রাতে ঢাকা পৌছে ফুপির বাসায় গেলাম।
সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে বাবা তাঁর কাজের উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে বের হলো।
এই শহর বড়ই ব্যস্ত শহর। যানবাহন,যানজট আর বড় বড় দালান কোঠার শহর। অধিকাংশ মানুষের মাঝেই বন্ধুত্বসুলভ মুখভঙ্গি নাই,যে যার কাজে ব্যস্ত। এখানে আসলে কাজের অভাব নেই কিন্তু আরাম করে বাস করা অনেক সহজ না তা বোঝা যায়।
আমরা উঠেছি একটা সিএনজিতে।আগারগাঁওয়ে কোনো একটা অফিসে বাবার কাজ। সিএনজি কখনো যানজটে থেমে আছে,কখনো ছন্দময় শব্দ তুলে শো শো বাতাস সৃষ্টি করে এগিয়ে চলছে।
আমি এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে নানা জিনিস দেখার চেষ্টা করছি,মাঝে মাঝে বাবা চিনিয়ে দিচ্ছে কোনটা কি।
এক পর্যায়ে সিএনজি কোনো একটা জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলো যেখানে দীর্ঘ দেয়াল ছিলো। সেই দেয়ালে কয়েক হাত পর পর ই লাগানো বহুসংখ্যক সিনেমার পোস্টার। আমার দেখতে ভালো লাগছে সেগুলো। অনেক পরিচিত মুখ মান্না,ডিপজল,জসিম,আলমগীর,শাবানা,আর কিছু পোস্টারে প্রায় সবাই ই অপরিচিত মুখ,এসব পোস্টারে নায়কের ছবি বড় করে নাই,আছে সাধারণ মেয়েরা যেসব পোশাক পরে তার থেকে ভিন্ন ধরণের পোশাক পড়া দুই তিনটে মেয়ের বড় বড় ছবি।
হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে বাবা আমার মুখ সামনের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললো,"আব্বু,এসব ছবি দেখতে নেই"
আমি কিছুই বুঝলাম না,বাড়িতে আমার পাশের বাসার এক ফুপি তো যত্ন করে তার ঘুমানোর ঘরে এই পোস্টার লাগিয়ে রাখে(শেষোক্ত শ্রেণীর পোস্টার না)। আমি দেখলে কি সমস্যা?!
আমি অবশ্য বাবার সাথে তর্কে জড়ালাম না,এমনিতেই ঢাকা এসে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি,কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো যে কল্পনা নিয়ে এসেছি বাস্তবে ঠিক সেরকম না,তবে উত্তেজক কিছু একটা আছে।
সেদিন বাবাকে না করা প্রশ্নের উত্তর পেতে আমার অপেক্ষা করতে হয়েছিলো তৃতীয় শ্রেণীতে উঠা পর্যন্ত। যেভাবেই হোক আমি বুঝতে পারছিলাম এসব পোস্টারে সমস্যা আছে,আমি এই পোস্টার দেখতেছি তা বাবা মা বা অন্য বড় কেউ দেখলেও সমস্যা আছে,আমাকে লজ্জা পেতে হবে।
আর ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে বাবা মাকে সাথে নিয়ে এই পোস্টারের সামনে পড়তেও ভয় লাগতে শুরু করলো,এখনও লাগছে। বোন বড় হচ্ছে,ভয়ের মাত্রাও বেড়ে চলছে,জীবনের জন্য নিরাপদ সড়ক খোঁজার পাশাপাশি এখন সম্মান রক্ষার জন্য মন পালানোর রাস্তাও খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ।
চুয়েট পুলিশ ক্যাম্পে কথা বলার কয়েকদিন পরই আমি বাড়িতে ফিরলাম মাত্র একদিনের জন্য।
আজ রাতে এসেছি কাল সন্ধ্যায় আবার চুয়েটে ফেরার জন্য দূর পাল্লার বাস ভ্রমণ।
আমি রাতেই ঠিক করে রাখলাম পরের দিন গৌরনদী থানায় যাবো,আমার নিজের এলাকার থানা, এখানের ওসি সাহেব নিশ্চয়ই কথা বলবে আমার সাথে।
সকাল দশটার দিকে আমি থানার সামনের প্রাঙ্গনে হাজির হলাম। সেখানে পিটি প্যারেড চলছে।
এক কমান্ডার এর পিছনে জন বিশেক বিশ থেকে বাইশ বছর বয়সী তরুণ পুলিশ সদস্যরা আরামে দাঁড়াচ্ছে,সোজা হচ্ছে,নিজের বন্দুক নিয়ে নানা কসরৎ করছে।
থানার সামনে কিছু স্থায়ী বসার জায়গা রয়েছে,আমি সেগুলোর একটাতে বসে পিটি প্যারেড দেখতে লাগলাম।
ওসি সাহেব পর্যবেক্ষণ করছেন,ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। কমান্ডার সাহেব বজ্র কণ্ঠে কমান্ডের সাথে বার বার ভুল করে যাচ্ছেন। একবার তীব্র হাসির পরিবেশ সৃষ্টি করলেন,ভুল জায়গায় স্যালুট দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন,তাঁর পিছনের কেউ স্যালুটে অংশগ্রহণ করলো না।সবাই হেসে পড়লো,আমিও হাসলাম।
আমি বসে আছি কখন প্যারেড শেষ হবে,কখন ওসি সাহেব অফিসে বসবেন।
বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলেও আমি পুলিশের কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলাম না।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম থানার পাশে বিউটি পার্লারে কাজ করা সেজেগুজে বসে থাকা এক মেয়ের।
সে প্রায় লজ্জাহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি দশ মিনিটে প্রতি দুই মিনিট পরপর সেদিকে তাকালাম। হা,সে তার স্বজাতির ভূষণকে উৎসর্গ করে একদৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে।
এরই মধ্যে ওসি সাহেব হঠাৎ প্রাঙ্গণের আমার দিকের অংশে চলে আসলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্যারেড দেখতে লাগলেন।
আমি উঠে পড়লাম,কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে হাতে নিজের আইডি কার্ড তুলে দিয়ে নিজের পরিচয় বলতে শুরু করলাম। পরিচয় বলার মূল অংশে ছিলো আমি গৌরনদীর ছেলে এটা বোঝানোর চেষ্টা।
যাই হোক বাংলা চলচ্চিত্রের সমস্যা নিয়ে তাঁর মধ্যে তেমন আগ্রহ প্রকাশ পেলো না বুঝতে পেরে আমি মূল প্রশ্ন গুলোই করে গেলাম। প্রায় আগের প্রশ্ন গুলো ই তাঁকেও করলাম। নতুন তেমন কিছু পাওয়া গেলো না,চুয়েটের অফিসারের মতোই উত্তর।
তবে এখানে একটা নতুন প্রশ্ন যোগ করলাম।
"অনেক ছায়াছবির ই পোস্টার গুলো নগ্নতা ও অশ্লীলতার স্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে। বাবা মা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এসব পোস্টারের সামনে পড়া খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে,যে কারো জন্য,পুলিশের জন্যও।
এবিষয়ে যদি কিছু বলতেন, স্যার"
অফিসারঃ বাবা,আমাদের দেশের যা অবস্থা তাতে এসব বিষয় থেকে দেশের কোরে কাজ করা অনেক বেশি প্রয়োজন। মনে করো তোমার শরীরে বিভিন্ন রোগ আছে,তার মধ্যে একটা হার্টের রোগ এবং একটা হাতে সামান্য ঘামাচি।তোমার সব রোগ সারাবার সাধ্য নাই,তুমি কোন রোগের দিকে নজর দিবা?
আবার মনে করো, তুমি তিন বেলা খেতে পারছো না কিন্তু সারাক্ষণ ই একটা টিভি কেনার কথা ভাবতেছো। তোমার উল্লেখ করা বিষয় অবশ্যই সমস্যা,কিন্তু সব কিছুতে চাইলেই পুলিশ হাত দিতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও শিক্ষা ই মূল সমাধান।
দেশের মানুষ খেতে পারলে,নিরাপদ থাকলে এসব বিষয়ও পুলিশের চোখে আসবে,ব্যবস্থা নেয়া হবে.....
আমাকে বিদায় দিয়ে ওসি সাহেব আবার প্যারেডে মন দিলেন।
পার্লারের তরুণী এখনো আমাকে দেখছে কিনা তা দেখার লোভ সামলিয়ে আমিও বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।
এবার ভাবতে শুরু করলাম কারা তৈরি করছে এসব চলচ্চিত্র?কোনো পরিচালকের নাম কি আমি জানি?
আমি খুঁজে খুঁজে কয়েকটা পোস্টার বের করলাম যার মূল উপপাদ্য হিসেবে রয়েছে প্রায় উন্মুক্ত বৃহৎ বক্ষা এবং উরু পর্যন্ত টাইট শর্টস পড়া তরুণীরা।
দুজন পরিচালকের তিনটি চলচ্চিত্রের পোস্টার পাওয়া গেলো,পরিচালকদ্বয়ের নাম
১.সেলিম খান
২. জিল্লুর রহমান
আমি গুগলে সার্চ করলাম এদের নাম লিখে,বাংলায়, ইংরেজিতে,বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করে। সেখানে এদের বিষয়ে কিছুই নেই।
সেলিম খানের সার্চের ফলাফল হিসেবে বারবার আসতে লাগলো ভারতের একজন পরিচালের তথ্য আর জিল্লুর রহমানের ফলাফল হিসেবে আসলো প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছবি ও তথ্য।
শুধু একটা সার্চ রেজাল্ট ছিলো "Selim Khan bangla movie hot songs"
খুবই দুঃখ হলো আমার,একজন পরিচালকের বানানো ছায়াছবি একটা দেশের সব জায়গার মানুষ দেখবে কিন্তু বহির্জগতে তার একমাত্র পরিচয় একজন নিম্নমানের নগ্নতা ও অশ্লীতার সংক্রামক হিসেবে।
এই সেলিম খানেরা কারা?তাদের শিক্ষা কি?
চলচ্চিত্র বিষয়ে তারা কি জানে?
কি প্রশিক্ষণ নিছে?
সম্ভবত এদের সাথে আমার দেখা করা সম্ভব না আর কোনোভাবে দেখা করলেও আমার প্রশ্নের ধরণ পর্যন্ত যেতে হবে না,আমার চেহারা দেখেই বুঝে ফেলবে আমি কি চাই,নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এতটুকু বুদ্ধি এরা মাথায় রাখে।কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিবে না। কোথাও শুটিং আছে নাম করে চলে গিয়ে মসলা গান বানানোর স্ক্রিপ্ট লিখবে।
আমার পরিচিত একজন ছোটোখাটো পরিচালকের কথা ই বলা যাক। অতি সামান্য কিছু দিক থেকে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু বেশ কিছুটা বিরক্তি ও এই লেখার পূর্ণতার জন্য তাকে মঞ্চে তুললাম।
এই মানুষটা আমার দেখা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার এসএসসি(/মেট্রিক) পরীক্ষা দেয়া মানুষ।
আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি, সেখান থেকে তার ফেল করার পুনরাবৃত্তি চক্র দেখতে শুরু করেছি।
ফলাফল প্রকাশের দিন সে মাথায় জেল দিয়ে আমার মা,নানু সহ গ্রামের অন্যান্য মানুষের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে স্কুলে ফলাফল দেখতে যেতো।
সেদিন রাতের আগে সে আর বাড়ি ফিরতো না, পরের দিন সবাই জানতে পারতো সে আবারও অংকে ফেল করেছে!
বছর খানেক আগে তার সাথে একবার দেখা হলো। কি করছেন জিজ্ঞেস করাতে জানালো সে পরিচালনা করছেন,মিউজিক ভিডিও এবং শর্ট ফিল্ম। সাথে নাটকের স্ক্রিপ্ট ও লিখেন,আরও অনেক কিছু।
আমি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাথার বিভিন্ন দিক থেকে চলে যাওয়া কথাগুলোতে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে সায় দিয়ে গেলাম।
কিছুদিন আগে সে নির্বাচন বিষয়ক একটা পোস্ট শেয়ার করলো। পোস্টের মূল বিষয় ছিলো সর্বসাধারণের কাছে অনুপ্রেরণা পৌছানো।
সেই অনুপ্রেরণা পৌছাতে সে শুধু চারটি শব্দের একটা বাক্য ব্যবহার করলো যার একটি হলো 'অধম্য'। সে 'অদম্য' লিখতে চেয়েছিলো।
এদিকে খুবই সাম্প্রতিক বিষয় হলো তার নিজের টাইমলাইনে প্রকাশ করা একটা ছবি,যেখানে সে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে শুটিং পরিচালনা করছেন।
আমি বোকা মানুষ,আরও বোকা হয়ে থ হয়ে বসে থাকি।
আমার নিজস্ব মতামত হলো এদেশের মানুষের,অভিভাবকদের অন্যতম সমস্যা হলো নিজেদের, সন্তানের প্রতিভাকে তারা বুঝে উঠতে পারে না,বুঝতে চায় না। কিছু একটা করতে শুরু করলে সে বিষয়ক ভালো জিনিসগুলোর সাথে তুলনা করে বুঝতেও চায় না কাজ ভালো হচ্ছে কি মন্দ হচ্ছে।
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ(২০১৪)।
আমি তখন নটরডেম কলেজে পড়ি,সুশৃঙ্খল ছাত্রাবাসে রাতের বেলা থাকি। দিনের বেলা কোথায় থাকি সে গল্প অন্য কোনো দিন করা হবে।
একদিন রাতে আমার এক প্রিয় বন্ধুর রুমে গিয়ে দেখি সে রাতের বেলা চোখে সান গ্লাস পড়ে "Inglorious Bastards"দেখতেছে।
চমৎকার সিনেমা,আমার খুবই পছন্দ।
কালো চশমা পড়া মেধাবী বন্ধুর পাশে বসে আমি বললাম," দোস্ত,চল আমরা বাংলায় Brad Pitt লেভেলের মুভি বানাই"।
বন্ধু আমার সায় দিলো,আগ্রহ প্রকাশ করলো।
কিন্তু এতটুকু বুঝতে আমার অনেক দেরি হলো না যে এই কাজে আমার প্রতিভা নেই। কোনো একটা দৃশ্যপট বাস্তব করে তুলার মতো কল্পনা শক্তি আমার নেই। এ চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে নিজে যা পারি,পারবো সেদিকে মন দিতে চেষ্টা করলাম।
আমার প্রতিভা নেই,কিন্তু অন্য কারো নিশ্চয়ই আছে।
হুমায়ূন আহমেদ,চাষী নজরুল ইসলাম,তারেক মাসুদ,আমজাদ হোসেন,সুবাস দত্তরা সেই প্রতিভার ছাঁপ রেখে গেছে।
আমার সোনার বাংলার বিশ কোটি মানুষের মাঝে আরও একজন হুমায়ূন, একজন Martin Scorsese,একজন Christopher Nolan এবং
আরও একজন চ্যালেঞ্জার, একজন Tom Hanks,একজন Brad Pitt নাই এ কথা আমি কোনো দিনও বিশ্বাস করবো না। আপনি অনেক বড় যুক্তি তর্ক নিয়ে আসুন,আমি অবুঝ ছেলের মতো অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকবো।
তাহলে কোথায় এসব নোলান,মার্টিন,হ্যাংকস,পিট রা?
আমি বলবো,হয় তারা ঘুমিয়ে আছে নতুবা তাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে অথবা তাদের শুরুর দিকের কাজের যথাযথ মূল্য দেয়া হয় না।আগে থেকে বিরাজমান হ্যাংকস,পিটদের ছবি দেখে এদেশীয় উদীয়মান পিট দের বিষয়ে বড্ড সন্দেহ হয়তো!
হয়তো আমাদের মার্টিন তার মেডিকেল সায়েন্স তৃতীয় প্রফেশনাল এবারের মতো চার চার বার দিচ্ছে কিন্তু কখনো টেরও পায় নাই যে তার কাজ Boardwalk Empire বানানো,বহু বছর চেষ্টা করে একজন যেনোতেনো ডাক্তার হওয়া না,টের পেলেও হয়তো Empire এর উপরে আসন গেড়ে বসে আছে বাবা মা,তাদের ডিঙিয়ে Empire এর আসন নেয়া দুষ্কর।
এখানে ডাক্তারি পেশা বা পড়াশুনাকে কোনো ভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয় নি। ভালো ডাক্তার ছাড়া আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা হবে কোত্থেকে!
একই বিষয় অন্য যেকোনো ধরণের পড়াশুনা, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা তাত্ত্বিক সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
প্রতিটি সেক্টরেই প্রথম বর্ষে হাসি মুখে প্রবেশ করা কিছু ফুটফুটে মুখ বছর ঘুরার আগেই বুঝতে পারে তার আত্মার অর্ধেক কিংবা সম্পূর্ণ মৃত্যু ঘটেছে। একটা প্রাণশূন্য দেহ বয়ে বেড়াচ্ছে সে।
এদেশে আর কোনো আত্মার অপমৃত্যু না হোক,আগ্রহী, কৌতূহলী আত্মা গুলোর নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার মন্ত্রটা আবিষ্কার করুক।
জেগে উঠুক হুমায়ূন,নোলান,মার্টিন,চ্যালেঞ্জার,হ্যাংকস, পিট রা।
তাদের জাগিয়ে তোলা হোক,যথাযথ সুযোগ দেয়া হোক,তাদের অতি সামান্য হলেও ভালো কাজের যথাযথ মূল্য দেয়া হোক, নিজেদের প্রতিভাকে বুঝতে চেষ্টা করুক,বোঝার পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।
এদেশেও তৈরি হোক Inglorious Bastards কিংবা Forrest Gump.
সেগুলো দেখে আমাদের আত্মার শান্তি হোক,সারা বিশ্বে এদেশের নোলান,হ্যাংকসদের নাম ছড়িয়ে পড়ুক,সম্মান জনক পুরস্কার আসুক, গর্বে আমাদের বুক ভরে উঠুক।
আরো একবার আমরা সবাই একযোগে বুকে হাত রেখে গেয়ে উঠবো
"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি"।
স্বত্বঃএই লেখার সম্পূর্ণ কপিরাইট লেখকের। এই পোস্ট কিংবা পোস্টের লিংক শেয়ার ব্যতীত লেখকের সাথে আলোচনা ব্যতিরেকে অন্য যেকোনো ধরণের ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৫