সারাক্ষণ পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব স্মার্ট ফোন একটা অসাধারণ যন্ত্র।
কিছুদিন আগে মাত্র সাত হাজার টাকার একটা ফোন দিয়ে আমি একটা ওয়েবসাইট তৈরির এমন কিছু কাজ করলাম যা কখনো কম্পিউটার ছাড়া করার কথা ভাবি নাই। এতটুকু জিনিস সারা বিশ্বের এতো তথ্য মূহুর্তের মধ্যে হাতে এনে দিতে পারে তা ভেবেও অবাক হই।
সামান্য ওজন ও আয়তনের এই যন্ত্র সত্যিই হতে পারতো একটা অসাধারণ 'সহায়ক'।
কিন্তু গত ছয় বছরে নিজের ও অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখলাম এই জিনিস শুধু 'টানে'!
বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক জিনিসপত্র(গেম,সোস্যাল মিডিয়া,প্রাপ্ত বয়স্কদের উপযোগী বিষয়াদি...) দিয়ে ভরে ফেলা যায় এই ক্ষুদ্রায়তনের যন্ত্র। যখন খুশি সেসব চিত্তাকর্ষক জিনিসপত্র নিজের মতো ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহার করার পরেও টানে!
পড়তে বসলে টানে,ঘুরতে গেলে টানে,হাগতে গেলে টানে!
কাছে রাখলে টানে,দূরে রাখলে টানে,মায়ের কাছে রেখে আসলেও টানে!
ঘুম থেকে উঠে টানে,ঘুমাতে গেলে টানে!
কোনো বন্ধু কিছুক্ষণের জন্য ব্যবহার করতে নিলেও টানে!
অপরিচিত, জীবনে না দেখা মানুষজন ও টানে এর মাধ্যমে!
নোটিফিকেশন টানে,মেসেজ টানে,'টুয়িং' করে বেজে ওঠা শব্দ টানে!
এই টানাটানির মধ্যে থেকে থেকে ভুলেই গেছি যে আমি এক সময় বই পড়তাম,পত্রিকা পড়তাম।
মাঝে মধ্যে কিছু লেখালেখিও করতাম!
নিউরণে অনুরণন সমাধান করতাম।
ফোন দিয়েও অঙ্ক করার মতো বিরক্তিকর কাজ করতাম! সেসব অঙ্ক আবার কোনো পরীক্ষায় আসতো না!
আর এখন শুধু টানাটানি!
মাসখানেক আগে বাড়িতে যাওয়ার পথে কিছু অংশ বাসের ছাদে চড়ে গেলাম। সাথে আরও দুজন অপিরিচিত সঙ্গী ছিলো। বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই রাস্তায় দাঁড়ানো দুই বালক আমাদের দিকে তাকিয়ে ভেংকি কাটলো। বিনিময়ে আমার দুই সঙ্গীর মাধ্যমে তারা তাদের মায়ের যথাযথ সম্মান নিয়ে বাড়ি ফিরলো না।
আমার মনে হচ্ছে এই স্মার্টফোনের বিনিময়ে আমাদের মনোযোগের মায়ের সম্মান ওই দুই বালকের চেয়েও বাজে ভাবে নষ্ট হইছে,হচ্ছে.....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:২১