somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরপেক্ষ জনতার রাজনীতি,রাজনৈতিক চেতনা ও জাগরণ

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনীতি!
বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এদেশের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস রাজনীতির সাথে তাদের কোনো সংস্রব নেই,রাজনীতি তাদের মুখে ভাত তুলে দেয় না। পেটে ভাত জোটে তাদের গায়ের ঘাম ঝরিয়ে।
আমিও একটা সময় পর্যন্ত বিশ্বাস করতাম এই আপাত দৃষ্টিতে সত্য কিংবা সঠিক মনে হওয়া ধারণাকে।
কিন্তু আমার ধারণায় ফাটল ধরতে বহু বছর সময় লাগেনি। কিছু অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়ে দিছে দিন শেষে আমরা সবাই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত,আমাদের চোখের আড়ালে আমাদের উপর আছে রাজনীতির প্রবল প্রভাব।
সপ্তম শ্রেণী থেকে পড়াশুনার জন্য আমি বাড়ির বাইরে থেকেছি।
যখন বাড়িতে যেতাম এবং আবার গন্তব্যের জন্য বাড়ি থেকে বেরোতাম প্রতিবার আমার মা আমাকে
বলে দিতো,"বাবা,রাজনীতি থেকে দূরে থাকবি,মিছিল মিটিংয়ে যাবি না,কেউ সাধলেও যাবি না"।
আমি মিছিল মিটিংয়ে যাইনি,বরং এমনভাবে পড়াশুনা শুরু করলাম যে এক বন্ধু আমার নাম দিলো "বই প্রতিবন্ধী"।
কিন্তু এই বই প্রতিবন্ধী সর্বত্র ভালো ফলাফল করা মানুষটা কিন্তু পড়ার জোরে সব জায়গায় পার পেয়ে গেলো না। তাকে নিতে হলো কিছু রাজনৈতিক সুবিধা,কয়েক জায়গায় ক্ষমতাশালী দাদার ফোন অনেক রকম জট ছাড়িয়ে দিলো,সব জটিলতা নিমিষেই দূর!
মায়ের কথা মতো মিটিং মিছিলে না গিয়েও রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছি এটা ভেবে আমার ভালো লাগেনি। আমি আঁচ করেছি কিছু একটা ঝামেলা আছে!
কয়েক বছর ঘুরতেই সে ঝামেলার জট খুললো। আমি নিশ্চিত হলাম রাজনীতি আমার সামান্য সুবিধার সাথে জড়িত না,এ বিষয় জড়িত আমাদের প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সাথে। খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু।
সাথে এটাও চোখে পড়লো,যেদেশের ইতিহাস রাজনীতির ইতিহাস,যেদেশের মানুষের প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সাথে রাজনীতি জড়িত তার অধিকাংশ মানুষই রাজনৈতিক ভাবে অন্ধ। একদম নিরক্ষর মানুষ থেকে শুরু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ পর্যন্ত।
অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া কিংবা রাজনৈতিকভাবে ভুক্তভোগী হওয়ার পরও টের পায় না তাদের উপর রাজনীতির প্রভাব কতটুকু।
অনেক বলে ফেলেছি,সম্ভবত আমার বিরতি নেয়ার সময় হয়েছে। আপনাদের প্রশ্নের পালা এসেছে।
"মি.সায়েম আপনি এসব কথার মাধ্যমে কি বলতে চাচ্ছেন? আমরা,আমাদের সন্তানেরা সবাই মিছিল মিটিংয়ে যাই,কাজ কর্ম,পড়াশুনা বাদ দিয়ে যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে লড়াই করি,যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করি?"
না,যাদের ইচ্ছা নেই তাদের কাউকেই আমি এসবের কোনোটাই করতে বলছি না শুধু একটা বাদে।
আমি রাজনৈতিক চেতনার জাগরণ,রাজনৈতিক সচেতনার কথা বলছি।
উপরে উল্লিখিত বিষয় সমূহের শুধু একটি হলো যা সবাইকে ই পালন করা উচিত। "যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা"। এটা রাজনৈতিক সচেতনতার একটি অন্যতম মৌলিক দিক। আপনি যা ই করুন,যা নিয়ে ই ব্যস্ত থাকুন, এটা আপনার দায়বদ্ধতা। এই দায় সঠিকভাবে বহন করা আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কিন্তু আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলছি আপনার দায় এখানেই শেষ না।ভোট দেয়ার কাজটি আপনি করবেন হাত দিয়ে কিন্তু অধিকাংশ দায় ই আপনার দৃষ্টিতে আবদ্ধ।
চোখ রাখতে হবে দিগন্তে। একবার দিগন্তে চোখ রেখে দেখুন,অনেক কিছু দৃষ্টিগোচর হবে। ভালো,মন্দ,কুৎসিত, সুন্দর অনেক কিছু।
"এসব দেখা কি খুবই জরুরি? "
----জরুরি,আপনার নিজের জন্য,পরিবারের জন্য,সমাজের জন্য,দেশের জন্য,সবকিছুর জন্য জরুরি।
.....
আমি আপনাকে একটা খুবই ক্ষুদ্র জটিলতায় জড়াচ্ছি। মনে করুন দুজন প্রার্থীর নির্বাচন হচ্ছে।
একজন ভালো,একজন মন্দ। সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা সাত জন। এদের মধ্যে পাঁচ জন সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত। দুইজন ভালো প্রার্থীর পক্ষে,তিনজন মন্দ প্রার্থীর পক্ষে।
বাকী দুই ভোটার নিরপেক্ষ,আপনি তাদের মধ্যে একজন। আপনি ভোট দিতে আগ্রহী, অন্যজন আগ্রহী না।
ভোটের দিন সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত পাঁচজন তাদের নেতাকে ভোট দিয়ে বসে আছে। আপনিও ভালো প্রার্থীকেই ভোট দিলেন, হিসেবে দাঁড়ালো তিন তিনে। আপনি বিষয়টা আঁচ করেছেন এবং বুঝতে পারছেন আর একজন ভোটারের ভোটে একজন যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হবে।যার কাছে আপনি সুবিচার,সুশাসন পাবেন। আপনি সপ্তম ভোটারকে ভোট দেয়ার জন্য বুঝিয়ে বললেন,তাকে যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ালেন। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে।
আপনি নিজে যোগ্য প্রার্থী কে ভোট দিয়েছেন,অন্য একজন কে ভোট দেওয়ানোর মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করেছেন,একজন নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে কিন্তু এর কোনোটাই আপনি করতে বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু আপনি দমন করেছেন বেশ কিছু কালো সম্ভাবনার হাতকে। আপনার এই সামান্য ভূমিকার অভাবে অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের কারণে আপনি কিংবা আপনার এলাকা অনেক বড় ক্ষতির শিকার হতে পারতো,তখন আপনার হাত বাঁধা থাকবে। সয়ে যেতে হবে দুঃশাসন,দুরাচার। সময় মতো আপনার দায়িত্ব পালনে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন যদিও আপনি একজন নিরপেক্ষ মানুষ ছিলেন!
কিন্তু আপনি শেষ পর্যন্ত যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন,নিজের এই নিরপেক্ষ জায়গা থেকে যে ভূমিকা পালন করলেন এটা আপনার "রাজনৈতিক সচেতনতা"।
এই সচেতনা থাকলে কিংবা থাকার জন্য সর্বদা মিছিল মিটিংয়ে যেতে হয় না,শুধু নিজের জায়গা থেকে নিজের দায়িত্ব ও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের বিষয়টা বুঝে নিতে হয়।
.........
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার স্বার্থে আমি কিছু কাল্পনিক কিন্তু অহরহ হচ্ছে এমন কিছু চিত্র তুলে ধরছি,বোঝার সুবিধার্থে সব চিত্রই খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে

চিত্র-১ঃ আপনি একজন নিরপেক্ষ মানুষ,রাজনীতি দিয়ে আপনার কোনো কাজ নেই। সারাটা জীবন আপনি পরিবারের জন্য কষ্ট করে গেছেন,মানুষ করেছেন একমাত্র পুত্রকে। আপনার সন্তান সর্বত্র অসাধারণ ফলাফল করে এসেছে,গর্বে আপনার বুক ভরে উঠে। পাশাপাশি ছেলে এখন চাকরি নিতে পারবে, আপনার কষ্টের জীবনও লাঘব হবে। আজ আপনার ছেলের একটা বড় কোম্পানিতে ইন্টারভিউ। উত্তেজনার বশে আপনিও গেলেন ছেলের সাথে তার ইন্টারভিউ স্থলে। জানতে পারলেন মাত্র দুজন প্রার্থী আছে ওই চাকরির জন্য। একজন আপনার ছেলে। অন্যজনকে এখনো দেখতে পাননি।
সকাল দশটায় ইন্টারভিউ শুরু হবে,প্রথম অন্য প্রার্থীর। কিন্তু তার খোঁজ নেই,আপনার ছেলের ইন্টারভিউ ও থেমে আছে তার জন্য। সোয়া দশটায় আসলো সেই অপর প্রার্থী, কিন্তু তাকে দেখে আপনি ফেললেন স্বস্তির নিশ্বাস। এ ছেলে তো দেখতে বকাটে,চুল দাঁড়ির এ কি অবস্থা!
মানুষের ঠোঁট এমন কালো হয়?!
সকালে মুখ ধুয়ে এসেছে তো?!
আপনি নিশ্চিত এবার আপনার ভাগ্য ফিরলো বুঝি।
ইন্টারভিউ শেষে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। আগামীকাল আপনার ছেলে চাকরি পেলো কিনা জানানো হবে....
আপনার ছেলের চাকরি হয় নাই! যার বকাটে চেহারা দেখে খুশি হয়েছিলেন তার চাকরি হয়েছে।
আপনি সহজে ছাড়ার পাত্র না,এতো সাক্ষাৎ অন্যায়!
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন ওই ছেলে ওমুক ক্ষমতাশালী লোকের আপন ভাগ্নে। আর সেই লোকের কথা কেউ ফেলে দেয় না,ফেলে দেয়ার সাহসও নাই কারো।
তবুও আপনি ছেড়ে দেয়ার পাত্র না। আপনি গেলেন সেই কোম্পানির অফিসে জবাবদিহিতার জন্য। আপনি চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে,ক্লান্ত,ভেঙে পড়া মন নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কারো সাথে কথা বলছেন না,একা একা মূর্তির মতল বসে আছেন এক সময় হাত নিশপিশ করতে শুরু করলো। চোখ গুলো জ্বলে উঠছে,হাতের মুঠি ক্রমাগত শক্ত হচ্ছে। কিন্তু তবুও কিছু করতে পারছেন না। উপলব্ধি করতে পারছেন যে আপনারও ক্ষমতা দরকার,ওই গুণ্ডা মামার চেয়েও বড় গুণ্ডা দরকার। শায়েস্তা করা দরকার মামা ভাগ্নে কে,উল্টো করে ঝুলিয়ে সিদ্ধ ডিম দেয়া দরকার........
কিন্তু আপনার তেমন কেউ নেই। বসে ই আছেন। স্ত্রী এসেছিলো খাবার খেয়ে নেওয়ার তাগিদ দেওয়ার জন্য,আপনার ক্ষুধা নেই। আরও কোনোদিন ক্ষুধা লাগবে বলেও মনে হয় না!
কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে বুঝতে পারলেন আপনার ক্ষুধা পেয়েছে,মাথাটাও আগের মতো অতোটা গরম নাই,হাতের মুঠিও নরম হয়ে এসেছে।
কিন্তু গুণ্ডা মামা আর তার ভাগ্নের কথা পুরোপুরি মাথা থেকে যাচ্ছে না। এখন কিছুটা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে বুঝতে পারলেন যে তাদের শায়েস্তা করার জন্য আরেক জন বড় গুণ্ডার সাহায্য নেয়া ও তো কোনো সমাধান না। সে গুণ্ডাও নিশ্চয়ই অন্য অযোগ্য লোককে চাকরি দেয়ার কাজে সাহায্য করে যাচ্ছে। চিন্তা করলেন তার এতো ক্ষমতার উৎস কোথায়? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো সে একজন জনপ্রতিনিধি,ভোটে তার এলাকার অনেক মানুষ অংশগ্রহণ না করলেও সে নির্বাচিত প্রতিনিধি,তার কথার দাম আছে।
সাথে সাথে বুঝে ফেললেন যারা নিজেদের নিরপেক্ষ দাবী করে ভোট দেয়নি তারা যদি সঠিক প্রার্থীকে নির্বাচন করতো তাহলে নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে আপনাকেও এমন অবিচারের শিকার হতে হতো না.......

চিত্র-২ঃ আপনি একজন নিরপেক্ষ,সুশীল মনা,ন্যায় বিচার প্রার্থী মানুষ। রাজনীতির সাথে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নাই। ভোটের সময় যে প্রার্থী ই আসুক আপনার আচরণ থেকে বোঝার উপায় নাই তারা আপনাকে প্রণোদিত(convinced) করতে পারলো কিনা। নির্বাচনের দিন মন মতো যাকে খুশি ভোট দিয়ে আসেন। এ নিয়ে আর চিন্তাও করেন না,নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন।
ঘরে রয়েছে আপনার রূপবতী মেধাবী সামনে এসএসসি পরীক্ষার্থী কন্যা। ইদানিং একটা সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে আপনাকে। আপনার কন্যাকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিরক্ত করছে এক বকাটে,সে এলাকার চেয়ারম্যানের ভাইপো গোছের কেউ হবে। সে কে সে বিষয়েও আপনি সঠিক জানেন না। বিচারের আশায় আপনি গেলেন থানায়। সেখানে অভিযোগ করা মাত্র একটু পরে আসলো চেয়ারম্যান,এসে অফিসারের সাথে ফিসফিসিয়ে কি একটু কথা বললো। এরপর আপনার সামনে এসে বলতে লাগলো আপনার মেয়ের বিষয়ে নানা নোংরা কথা,"তোমার মাইয়ার চালচলন আমরা জানিনা?
বেলেল্লাপনা কইরা বেড়ায়,জামা কাপড়ের ঠিক নাই......."
থানা থেকে বেরিয়ে আপনার মনে হচ্ছে সুবিচারের দরকার নাই আপনার। আপনার আত্মহত্যা করা দরকার,পুরো পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করা দরকার,তবে যদি কারো বিচার হয়......
চিত্র-৩ঃ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে এসেছেন আপনি,দীর্ঘ লাইনে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে পা ব্যথা হয়ে গেছে। আরও কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে ঠিক নেই। এরই মধ্যে বিকট শব্দে সাঁই করে ব্যাংকের গেটে মোটর বাইক থামিয়ে প্রবেশ করলো এক ছোকরা। সবাইকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো একেবারে সামনে। আপনি প্রতিবাদ করলেন,পিছনে এসে দাঁড়াতে বললেন। অন্য কেউ তেমন কিছু ই বলছে না। ছেলের বয়সী ছোকরা আপনার পিছনে এসে দাঁড়ানোর প্রশ্নের উত্তরে বললো,"চাচা,কয় টাকা জোমা দিতে আইছেন?"
তার এ উত্তরের পক্ষে যুক্তি কি আপনি কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না,এ ছোকরা যে ভারী বেয়াদব তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই এটা বুঝতে পেরেছেন। আপনি তাকালেন টাকা গ্রহণকারী কর্মকর্তার দিকে,সে আপনার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো,জিভ কাটলো। এ ছোকরা যে এমপির ভাইপো!
..….........
উপরোক্ত চিত্র গুলো অহরহ ঘটছে কিন্তু এর অর্থ এই না দেশের সব চেয়ারম্যান,এমপি,জনপ্রতিনিধি ও তাদের ভাইপো,ভাগ্নেরা খরাপ। যারা খরাপ তাদের বিষয়েই বলা হয়েছে।
.......
কি কারণে জানিনা,কিন্তু মাত্র ছয় সাত বছর বয়স থেকে এদেশের রাজনীতির উপর আমি নজর রেখেছি।
নার্সারী,প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়ও আমার ভিতরে এ বিষয়ে আকর্ষণ ছিলো।
আমার মনে আছে, হয়তো আমি হাফ প্যান্ট পড়ে হাতে ক্রিকেট বল নিয়ে খেলতে যাচ্ছি কিন্তু কোথাও রাজনৈতিক আলোচনা হলে কোনো অজানা কারণে আমার কান খাড়া হয়ে যেতো,আমি তৃষ্ণার্তের মতো শুনতে চেষ্টা করতাম সেসব আলোচনা।
রাজনীতির উপর প্রায় দেড় যুগের মতো সময় ধরে রাখা নজর থেকে আমি উপরোক্ত চিত্র তিনটির মতো শ'খানেক কিংবা তারও বেশি চিত্র ফেঁদে যেতে পারবো। আর একটা বিষয় হলো খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন এখানের সব চিত্রই ব্যক্তিগত জীবনে রাজনৈতিক প্রভাব কে তুলে ধরে। কিন্তু যদি একটু চোখ খুলেন তাহলে বুঝতে পারবেন রাজনীতির প্রভাব কতোটা সুদূরপ্রসারী। দেশপ্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজ আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছি যেখানে ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত না লাগলে আমরা কিছুই অনুভব করি না। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের চামড়া এতোটাই পুরু যে ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত লাগলেও তার মর্ম বুঝি না,এটাই সিস্টেম বলে মেনে নিই সবকিছু। আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন সুখী মানুষ,এসব লেখালেখি না করলেও চলে আমার। তবুও এসব লিখছি,হয়তো দিনশেষে কিছু শত্রু তৈরি করে নিচ্ছি,রীতিমতো খাল কেটে কুমির আনার মতো। আমি চিত্র ফাঁদতে আসিনি। যখন প্রথমবার ভেবেছি কিছু লিখবো তখনই কাল্পনিক চিত্র ফাঁদা থেকে নিজেকে বিরত রাখবো পণ করেছি,সে দায়িত্ব আমার চেয়ে সৃজনশীল মানুষেরা পালন করবে,করতেছে।
আমি বলতে এসেছি আপনাকে এসব চিত্র নিজে খুঁজে বেরার জন্য,দেখার জন্য,বোঝার জন্য।
নিজের উপর,সমাজের উপর,রাষ্ট্রের উপর এসব চিত্রের সাময়িক বা সুদূরপ্রসারী প্রভাব কি হতে পারে সে চিন্তা জাগানোর জন্য।
যদি উপরোক্ত চিত্র সমূহ ও তার প্রভাব আপনি বুঝতে পারেন তাহলে পত্রিকা পড়া শেষে আপনি তা স্রীর হাতে তুলে দিবেন না চুলো ধরানোর কাজে ব্যবহারের জন্য অথবা জমিয়ে রেখে অপেক্ষা করবেন না কখন হকার এসে আপনার কিছু বাড়তি আয় করে দিয়ে যাবে।
বরং আপনি পত্রিকা পড়তে বসবেন লাল,নীল,হলুদ রঙের কলম নিয়ে, সারা পত্রিকা রঙিন হয়ে যাবে আপনার কলমের আচঁড়ে। কিছু জিনিস আপনাকে খুশি করবে,কিছু জিনিস ব্যথিত করবে,কিছু জিনিস জন্ম দিবে ক্ষোভের। ক্ষোভ জমতে জমতে একদিন নিজের অজান্তে আবিষ্কার করবেন আপনি একজন সংগ্রামী,ধমনীতে টগবগ করা রক্ত দুঃশাসন, দুরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে,লিখতে,সংগ্রাম করতে প্রস্তুত।দারিদ্র্য,অশিক্ষা,কুসংস্কার দূরীকরণের তাগিদ অনুভব করবেন নিজের অন্তরে।
আপনি বসে বসে দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়া মানুষদের মেনে নিবেন না,যোগ্যদের বঞ্চিত করার দৃশ্য হবে আপনার কাছে অসম্ভব দৃষ্টিকটু,অন্যের কন্যার ধর্ষণের ঘটনায় আপনার নিজের কন্যারও এমনটা হতে পারতো এমন চিন্তার জাগরণ হবে,আপনি অন্যের কন্যার জন্যও বিচার চাইবেন,আপনি উপলব্ধি করবেন এদেশের খেটে খাওয়া মানুষেরা ই দেশ চালনায় মুখ্য অস্ত্র, তাঁদের অধিকার সংরক্ষণের চিন্তা আপনার মাথায় আসবে,তাঁদেরকে নিজের আপন পেটের ভাই মনে হবে।
আবার প্রশংসার দাবীদার কাজে নিজের উৎসাহ প্রদানের জায়গাটাও আবিষ্কার করবেন,সরাসরি আপনার পকেটে দিচ্ছে না কিন্তু দেশের মুখ উজ্জ্বল করে এমন বিষয়ে আপনার গর্ব হবে,আপনি বিস্তৃত আকাশের দিকে তাকাবেন,বুক ভরে বিশুদ্ধ বায়ুর নিশ্বাস নিবেন, মনে মনে আওড়াবেন, "আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি... "
.......
লেখার এ পর্যায়ে এসে কেমন যেনো খাপছাড়া লাগছে। আমি নিশ্চিত না একজন নিরপেক্ষ নাগরিকের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়া মানে কি,তার প্রয়োজনীয়তা কি তা বোঝতে পারছি কিনা। হয়তো,হয়তো না। বোঝাতে ব্যর্থ হলে নিজে অন্যত্র পড়ুন,জানুন,বুঝুন। তবুও বুঝে নিন,অন্যকে বুঝিয়ে দিন। আমি অন্যদিকে যাচ্ছি।
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক জীবন ও চিন্তা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি।
আমি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ। বহু বছর যাবত রাজনীতির সাথে সরাসরি কোনো সংস্রব নেই আমার। কিন্তু রাজনীতির সাথে জড়িত কিছু গঠনমূলক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছি। এক হাতে লাঠি,অন্য হাতে ইটের টুকরোও নিয়েছি।
ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত নানা ভাবে প্রভাবিত হয়ে,কোনো কারণ না বুঝেই আমি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ও ভক্ত ছিলাম।
২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথাক্রমে ৫ বছর ৬ মাস ও ১২ বছর বয়সে সক্রিয় ভাবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিছি।
'০১ সালে রাতের বেলার প্রচারণায় অংশগ্রহণ ছিলো না বললেই চলে,২০০৮ সালে দিন রাত দু বেলাতেই মিছিল,মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছি। নির্বাচনী মহাবেশে অংশগ্রহণ করেছি। কখনো কখনো আওয়ামী সমর্থকদের পাকড়াও এর চিন্তা ও করেছি।
সপ্তম শ্রেণী থেকে আমি পড়াশুনায় মন দেই। সাহিত্যের সাথে জড়িয়ে পড়ি।প্রচুর বই পড়ি,পত্রিকা পড়ি,নিজেও কিছু লেখালেখির চেষ্টা করি। পঠিত এসব বইয়ের মধ্যে এদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিছু বইও ছিলো। এসব পড়া শেষে দশম শ্রেণীতে উঠা মাত্র আমি রাজনৈতিক মনমানসিকতা থেকে সম্পূর্ণ সরে দাঁড়াই কিন্তু সব সময়ে ই নজর রেখেছি,কি থেকে কি হচ্ছে দেখার চেষ্টা করেছি। তবে ক্রিকেটে পাকিস্তানকে সমর্থনের ইতি ঘটে দ্বাদশ শ্রেণীতে ওঠার পরে। হঠাৎ করে ক্রিকেট কোথা থেকে আসলো ভেবে অবাক হলে আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি এদেশের রাজাকার,আলবদর ও তাদের উত্তরসূরীরা ক্রিকেটে পাকিস্তানকে ই একচ্ছত্রভাবে সমর্থন করে।
দশ বছর এদেশের রাজনীতির উপর নজর রাখার পরে আমি একটা ভিন্ন ধারার চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত করি। অত্যন্ত কাছের কিছু বন্ধুকে আমি সে বিষয়ে বলি। তারা আমার চিন্তাকে ইতিবাচক সায় দিলেও কেউ ই সরাসরি সে চিন্তায় অংশগ্রহণ ও বাস্তবায়নে অংশ নেয়নি। আমি নিজেও চিন্তা করে দেখেছি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সে চিন্তা অসামঞ্জস্য। বহু দূরের চিন্তা। তার ইতিও আমি হয়তো একজীবনে দেখে যেতে পারবো না সার্বিক পরিস্থিতি সাপেক্ষে।
আমি সে চিন্তার মাটি দিয়ে দিয়েছি।
চিন্তাটি কি সে বিষয়ে আমি বলবো না,শুধু বলতে পারি পরিশেষে অত্যন্ত ইতিবাচক হলেও সে চিন্তা যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কানে পৌছাতো হয়তো আমাকে এখন জেলে থাকতে হতো কিংবা ছুরিকাঘাত অথবা ফাঁসি!
রাষ্ট্র কতৃক আমাকে কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসি দেওয়া হলে সেটা আমার প্রতি রাষ্ট্রের অন্যায় করা হতো। সে হিসেবে চাপাতির কোপ কিংবা ছুরিকাঘাত ছিলো সহজ সমাধান!
জীবনের এ পর্যায়ে এসে আমি এদেশের রাজনীতির উপর বিরক্ত। আমার নিজস্ব মতামত হলো এদেশের রাজনীতি কলুষতা পূর্ণ, নৈতিকতা বর্জিত।
ক্ষমতার লোভ এখানে একচ্ছত্র আধিপত্য গেড়ে বসেছে,গণতন্ত্রের মূল উৎপাটিত হচ্ছে,স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বালাই হারিয়ে যাচ্ছে,শাসনযন্ত্রের অপব্যবহারের রীতি গড়ে উঠছে,জনগণের মতামত ও চাহিদা রাজনীতিবিদদের কাছে মুখ্য না,ক্ষমতা ধরে রাখা কিংবা দখল করা ই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমার এসব অভিযোগের দায় সম্ভবত আমার এড়ানোর সুযোগ নেই। যারা আমার যুক্তি ব্যতীত এসব অভিযোগকে স্বীকার করে নিচ্ছেন আমার বিশ্বাস তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও দেশের খোঁজ খবর রাখা মানুষ।
যারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন তারা হয় রাজনৈতিক ভাবে অন্ধ অথবা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ঘা লেগেছে।
অভিযোগ স্বীকার করে নেয়া ও অস্বীকার করা মানুষের মাঝামাঝি যারা আছেন তাদের জন্য আমি কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবো।
এদেশের প্রধান দুইটি দলই মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ও নায়কের ভূমিকা রাখা দুজন মানুষের আদর্শের উপর ভিত্তি করে দল পরিচালনার কথা বলে।
জিয়াউর রহমান কে একটা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে।
সার্বিকভাবে এই উত্তর হওয়া উচিত না,কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে এই মানুষের ভূমিকার দিকে তাকালে উত্তর হলো 'হ্যা'। সে মুক্তিযুদ্ধে নয়টি সেক্টরের একটি সেক্টরের কমান্ডার ছিলো,বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা সর্বসাধারণের কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর এ ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও একটি আদর্শ বিবেচনা করার মতো ভূমিকা।
কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর যখন এই মানুষটি ক্ষমতায় আসে তখন ঘটতে শুরু করলো কিছু বিচিত্র ঘটনা। এসব ঘটনার মূল্য আমরা আজও দিচ্ছি, আরও কত বছর দিতে হবে তার কোনো হিসেব আমার জানা নাই।
জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশে ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চার চূড়ান্ত সূচনা ঘটে। এটা বুঝতে কারো সমস্যা হওয়ার কথা না,যে দেশে ৯০% মানুষ একটা ধর্মের,সে ধর্মকে ব্যবহার করে নিশ্চয়ই বিপুল রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া সম্ভব। ধর্ম আমাদের সংবেদনশীল জায়গা,অনেক ক্ষেত্রে আস্থারও জায়গা। সে জায়গা কে ব্যবহার করে নিশ্চয়ই আস্থাতেও পৌছানো যাবে। যারা কখনো চায়নি বাংলাদেশ নামের কোনো দেশ হোক তারা দলে দলে জেল হাজত থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো। শুধু বেরিয়ে ই আসলো তা না। তারা রাজনীতিতে যোগ দিলো,অনেকে রাতারাতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো। এক পর্যায়ে এসে তাদের অনেকে দেশের মন্ত্রী পর্যন্তও হয়েছে। সারা গায়ে আমার ভাইয়ের পবিত্র রক্ত মাখা ও আমার মা বোনকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া এসব অপবিত্র মানুষদের সব সাজা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের রাজাকার ডাকার উপরও নিষেধাজ্ঞা পড়লো।
স্বাধীনতার তেতাল্লিশ,চুয়াল্লিশ বছর পর এই সব যথেচ্ছা সাজা মওকুফ পাওয়া অমানুষদের নিয়ে কত ধরপাকড়!
ব্লগার হত্যা,হেফাজত কাণ্ড,তেঁতুল তত্ত্ব,কোরআান পোড়ানো,আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল, কোটি কোটি টাকার মামলা মোকদ্দমা,একজনকে চাঁদে দেখতে পাওয়া আরও কত কি!
তবে এই পুনঃবিচারের ধরপাকড়ে তারুণ্য যে চেতনা দেখিয়েছিলো তা উল্লেখযোগ্য।
এদিকে আমার দেশের খেঁটে খাওয়া মানুষ বিচার পায় না,আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে তারা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিচার তো কিছু হলো কিন্তু এদের উত্তরসূরিদের আমাদের আরও কত বছর লালন করতে হবে,কত রকম ছোবল দিবে কে জানে!
যুদ্ধাপরাধীদের সাজা মওকুফ ও তাদের সামজিক,রাজনৈতিক জীবনের উন্নয়ন চেষ্টার পাশাপাশি চললো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা। বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত মুক্তিযোদ্ধা বাদে বাকি মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুছে ফেলার একটা গোপন চেষ্টা চলতে লাগলো। বাদ গেলো না জাতির জনক ও। একটা সময় গেছে বহু দিন ধরে রেডিও,টেলিভিশনে কেউ জাতির জনকের নামটাও শুনেনি। পরবর্তী ১৫ বছরও এই চর্চা থেমে থাকেনি।
একবার ভাবুন তো বিষয়টা।
আপনার পরিবারের একজন আপনার বাবাকে অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে,আরেকজন পরিবারের দায়িত্ব নিছে কিন্তু আপনার বাবার গড়া সংসার থেকে বাবার নাম টাই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে!

আমরা যে কত বড় নিমোক হারাম জাতি এটাই শুধু তার একমাত্র দৃষ্টান্ত না,এরপরেও নিমোক হারামির বহু দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

যেখানে ছিলাম, আদর্শ।

আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান এক আদেশবলে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্তির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে তাঁকে আদর্শ বিবেচনার বিষয়ে আমি সন্দেহ প্রকাশ করি না।

এই 'বাকশাল' নিয়ে কি আমার আরও কথা বলা উচিত? হ্যা বা না যেটাই হোক আমি বলছি না। আমি দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে এসেছি,এই বাকশাল দেশে নাই।

রাজাকার রা এখনও দেশের রাজনীতিতে আছে বলে অনেক কথা বলা হয়েছে।

যাই হোক আসল কথায় ফিরি। যদি বিএনপি জিয়াউর রহমানের কোনো পবিত্র আদর্শকে এবং আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কে ধারণ করে রাজনীতির কথা বলে সেটা মিথ্যা!

আদর্শ আছে কিনা জানিনা কিন্তু বিএনপির একটা যুদ্ধাপরাধী দলের সাথে আতাত থাকবে কেনো?

যাদের কে এদেশ থেকে তাড়ানো দরকার তাদের প্রতিষ্ঠিত করার এই চেষ্টায় কি ধরণের আদর্শ রয়েছে? আদর্শ টাদর্শ ছাপিয়ে সব যে ক্ষমতার খেলা তা বোঝার জন্য কি আমাদের চশমা লাগানোর দরকার আছে?

আর আওয়ামী লীগ। অতি উচ্চ দরের নেতা ও মন্ত্রী মঞ্চে বসে মাউথপিসের একদম কাছে মুখ লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ঘোষণা করে খুবই ঠাণ্ডা মাথায়,ঠাণ্ডা ভাষ্যে। এই আদর্শ প্রচারের পরপরই কালো টাকার বস্তা নিয়ে পাবলিক ট্রেনে বাসায় ফেরে। কেউ ধরা খায়,কেউ খায় না।

ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য,দখলের জন্য এরা কখনো লগি বৈঠার দ্বারা রাজপথ রক্ত রঙিন করে ফেলে,আবার পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আমার দেশের নিতান্ত নিরহ মানুষদের।

দিনের পর দিন রাস্তা আটকিয়ে আমার দেশের গরিবের পেটে লাথি মারা হয়।

পরবর্তীতে পেট্রোল বোমার হাহাকার উল্লেখ করা হয় রাজনৈতিক স্বার্থে কিন্তু গরিবের পেটে লাথি মারার এই কথা কিন্তু উঠে আসে না।

অবরোধের নামে কয়েকশ হাজার কোটি টাকার লোকসানে পড়ি আমরা। আমার মাথায় রাজনীতির অভ্যন্তরীণ প্যাচ ভালো প্রবেশ করে না কিন্তু এতটুকু বুঝি যে আমাকে এই কয়েকশ হাজার কোটি টাকা দিলে আমার চিরদিনের স্বপ্ন দেশে কোনো পথ শিশু থাকতো না,হয়তো ভাসমান মানুষেরও একটা গতি করা যেতো। পদ্মাসেতুর জন্য অতিরিক্ত কর সহ সাধারণ জনগণের মাথায় অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়ার দরকার হতো না।

এই বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে পুলিশের উপর হামলার ৯০ টি মামলা হয়েছে,বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে ১৯৬ টি। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মামলা এটা এই বিষয়ে। পেট্রোল বোমা বাজির সময়ও এতো মামলা হয়নি। এই সব মামলার আসামি বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীরা।

কিন্তু দেশের একটা কাক পক্ষীও টের পায় নাই এতো সব হামলার কথা!

এতো বিস্ফোরক দ্রব্যের কথা!

শুধুমাত্র বিরোধী দলকে নির্বাচনে মাঠে নামতে না দেয়ার জন্য এই সব মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।

প্রতিদিনই পত্রিকায় দেখি আদালতের সামনে কান্না করছে ভুক্তভোগী এই সব মিথ্যা মামলার আসামি দের স্ত্রী সন্তানেরা। মমতাময়ী প্রধান মন্ত্রীর কিংবা দেশের জন্য কাজ করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাদের কি এসব কান্না চোখে পড়ে?নাকি চোখে পড়লেও কিছু যায় আসে না?

হয়তো,এসব কান্নার দিকে এখন তাকানোর সময় নাই,এগুলো আগে থেকে ঠিক করা ছিলো,বিভিন্ন মাজারে গিয়ে এসবের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়ে গেছে। সামনে ইম্পরট্যান্ট ইলেকশন!

আমি প্রায় নিশ্চিত বিএনপি যদি সংবিধান পরিবর্তন করে আজকের আওয়ামীলীগের জায়গায় থাকতো এমন সব ঘটনা অবশ্যই চোখে পড়তো। বিএনপির ১৯৯১-১৯৯৬ ক্ষমতা মেয়াদে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে বার বার উঠে আসে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব অংসাবিধানিক বলে ঘোষণা করে। কিন্তু প্রবল আন্দোলন ও সহিংসতার মুখে বিএনপির নিজস্ব বাসনা পূর্ণ হয় নাই।

যদি বাসনা পূর্ণ হতো এবং সেটা যদি ২০১৪ হতো তবে যে বিএনপি জামায়াতের মতো আওয়ামীলীগও কতগুলো জীবিত মানুষ পোড়ানোর দৃশ্য তৈরি করতো না এই গ্যারান্টি কে দিতে পারে? দৃশ্য তৈরি করার ছোট বড় প্রতিভার পরিচয় তারাও দিয়েছে,দিচ্ছে।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পোড়ানো কে এদেশে দেখা হয় আমলে সুন্নত হিসেবে! প্রতিবার নির্বাচনের সময় কখনো একই দিনে অনেকগুলো, কখনো ধারাবাহিকভাবে ঘরবাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। সাথে যে কিছু মানুষ ও পশুপাখিও পোড়ে না তা কিন্তু না। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও এমন ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটতে শুরু করছে। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হলো কোনো ঘরবাড়ি পোড়ানোর আগেই এদেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় প্রায় ২০ টি সংখ্যালঘু পরিবার! তারা নির্বাচনের পরে দেশে ফিরবে। তারা জানে এ দেশে কারা রাজনীতি করে। যখন আপনি মনে মনে গুনগুন করেন,"কি আনন্দ ঘরে ঘরে,দেশে আবার এলেকশন আসছে" তখন এসব মানুষ প্রস্তুতি নেয় যেনো ঘরবাড়িতে আগুন লাগলে তারা সহজে জীবন বাঁচিয়ে বের হয়ে আসতে পারে। আমার জানা নাই কোন ধর্মে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অন্য ধর্মের নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি পোড়ানোর অনুমতি আছে! উদ্দেশ্য হাসিল হোক বা না হোক সব দলের থেকে বেছে নেয়া একটা দল সবসময় ই এসব কাজে হাত তালি দেয়,নিজের ইবাদতের ঠিক নাই কিন্তু এই উপরি ইবাদতের ফসলের কথা চিন্তা করে তাদের উল্লাসের শেষ নেই! সব স্বার্থান্বেষী,ক্ষমতা লোভী,নির্লজ্জ, বেহায়ার দল।

উল্লেখ্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু সরকারের আমলেই দু দলের কর্মীদের দ্বারাই সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি আমলে বেশি। স্বাভাবিক, তাদের দোসররা তো এসব চর্চা সেই একাত্তরের আগে থেকেই করে আসতেছে।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হয় এদেশের একজন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ স ম কিবরিয়া। তাঁর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যাদের মদদ বলে সন্দেহ করা হয় তাদের পক্ষ নিয়ে,তাদের প্রতীক নিয়ে বাবার দলের বিপরীতে লড়ছে সাবেক এই মন্ত্রীর ছেলে রেজা কিবরিয়া।

কোন ধরণের আদর্শবলে আর কোন ধরণের ক্ষমতার লোভে কোনো সন্তান এই কাজ করে?

আমার জানা নেই,আমি চিন্তাও করতে পারি না।

ক্ষমতার লোভে আমাদের মূল্যবোধ যে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা সত্যি শঙ্কার বিষয়,আপনি বুঝুন আর না বুঝুন।

এবার আমাকে বলুন যেখানে এই সব কাজ চলে সেখানে আদর্শ শব্দটা ব্যবহারেও কি এই শব্দটার অপমান করা হয় না?

.............

মজার বিষয় কি জানেন? এতসব নোংরামির মধ্য দিয়েও বিগত এক যুগে এদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে তিনগুণ,১৭৫২ ডলার!

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি সহ প্রায় সবক্ষেত্রেই উন্নতি সাধন হয়েছে।

একদম মুর্খরা ব্যতীত যে দলই ক্ষমতায় থাকুক আরও উন্নতি হবে,দেশে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা স্বাবলম্বী,শ্রমের নিম্ন মূল্য,কিছু গবেষণার ফলাফল এই উন্নয়নের জোয়ার। কিন্তু দেশের সর্বত্র তাকিয়ে কিন্তু এ জোয়ার সবসময় চোখে পড়ে না,দেশে রয়েছে বিপুল সংখ্যক ভাসমান মানুষ,পথশিশু,কুসংস্কার ও অশিক্ষা। এর কারণ হলো আমরা উন্নয়নের প্রাথমিক অবস্থা পার করেছি,প্রবেশ করেছি মাধ্যমিক স্তরে। উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা আরও উচ্চ স্তরে যেতে আমাদের অনেক দেরি।

শিক্ষা কাঠামোর সাথে উন্নয়নের এ তুলনা এজন্য যে আমরা সবাই জানি উপরের স্তরে যাওয়ার সাথে সাথে এদেশের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও বাড়ে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে অনেক বছরই তা ৫০% এর ও নিচে নেমে যায়,নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা ভয়াবহভাবে হ্রাস পায়।

দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তাই ই হবে। একটা উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বিশাল অংশ সবসময়ই চলে যাবে নেতা ও তাদের অনুসারীদের পকেটে। পাশাপাশি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সহ বেশ কিছু কাঠামোর উন্নতি না করতে পারলে আমাদের উপরের স্তরের স্বাবলম্বিতা বলতে তেমন কিছু ই থাকবে না। শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার,পরিকল্পনাকারী, গবেষকদের নিয়ে আসতে হবে। যা আমরা এখনও করছি কিন্তু উন্নয়নের জোয়ারের আড়ালে তার ক্ষতিটা টের পাচ্ছি না।

উল্লেখ্য এতো কম বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে পৃথিবীর অন্য দেশে এতো বিপুলসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করানো হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর হলের খাবারের দিকে একটু দৃষ্টি রাখলেই এ বিষয়ে আঁচ করা যায়। আমাদের দেশের আইনস্টাইন,এডিসন,কুরি রা শুধু শুধু ই নিজের প্রতিভার বিকাশ ও প্রকাশ করতে পারে না তা না। আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি যে আমাদের মেধা আছে,মেধার বিকাশ নাই,বিকাশের সুযোগ নাই। যে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করার কথা এবং গবেষণাগারে অনেক গুলো থাকার কথা তার থাকবে শুধু একটা। সেটা আবার শিক্ষার্থীদের ধরা নিষেধ,এতো দামী জিনিসে অপরিপক্বদের হাত দেওয়ানো যাবে না,বিকল হলে সারানো বহু ঝামেলা,আর নতুন একটা বিদেশ থেকে কিনে আনা?"ওরে বাবা!"
এতক্ষণ যে উন্নয়নের জোয়ার ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সীমাবদ্ধতার কথা বললাম সেটা সংখ্যা ও টাকা দিয়ে হিসেব করা যায়। কিন্তু গত এক যুগে আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা কি হয়েছে জানেন?
এদেশের গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার উপর আঘাত। জবাবদিহিতার বালাই উঠে যাচ্ছে।
গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা দুটো বিষয় নিয়েই আমি আলাদাভাবে লিখবো। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকালেই এ আঘাতের প্রমাণ পাওয়া যায়,বিরোধীদলগুলোর প্রচারণা চিত্র বলে দেয় অনেক কিছু।অনেক আসনে তাদের কোনো পোস্টারও নেই।অনেক জায়গায় বিরোধীদল মাঠে নামলেই সৃষ্টি হচ্ছে সংঘর্ষ ও সহিংসতা,এই চর্চা আগে ছিলো না।বিরোধীদলের মহাসমাবেশ স্থলে এলাকার(নারায়ণগঞ্জ) সামান্য চেয়ারম্যান আয়োজন করে শিশু কিশোরদের ফুটবল খেলা,শেষ পর্যন্ত সে খেলা হয়ও না।
পরবর্তী আঘাত মত প্রকাশের স্বাধীনতা,সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর।
সর্বত্র ছেয়ে গেছে দলীয়করণে,যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছে।
আর আমাদের মনুষ্যত্ব ও মননশীলতার উন্নয়ন থেকে আমরা বহুদূরে,অনেক ক্ষেত্রে বিগত বছর গুলোতে অবনতি ঘটেছে। অনেকক্ষেত্রে মূল্যবোধের অবক্ষয় রীতিমতো বিভীষিকাময়। মেধার যথাযথ মূল্য দেওয়া নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নাই,নখেরও সমান না এমন অপদার্থ মানুষ একজন মেধাবীকে ক্ষমতাবলে অপমান করে চলে যায়।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়ন বা অবনতির চেয়ে অনেক বেশি চিন্তার বিষয়। দিন এনে দিন খেয়ে কেউ আত্মহনন করে না,আত্মহনন করে অপমানিত হয়ে। এর উদাহরণ আমরা কিছুদিন আগেও দেখেছি দেশের একটি খ্যাতিমান বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে। একজন অযোগ্য প্রধান শিক্ষিকা ও কিছু অযোগ্য শিক্ষকের তত্তাবধানে আমরা ঘটিয়েছি একটি হত্যাকাণ্ড,সে হত্যাকাণ্ড এতোটাই নির্মম যে তা করানো হয়েছে মৃতার নিজের হাতে।
আমার এই বোনের নিশ্চয়ই খাওয়া,পরার অভাব ছিলো না। কিন্তু অপমানের সাথে খাওয়া-পরার কোনো সম্পর্ক নেই। অপমানিত হলে আপনার বহু ধনসম্পদ আপনাকে সান্ত্বনা দিতে পারবে না সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন.....
…...….......

এতোক্ষণের আলোচনা যদি আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয় তবে আপনি নিশ্চয়ই দেশের রাজনীতির এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজবেন। আমার বয়স ও পেশা সাপেক্ষে এই উত্তরণের পথ দেখানোর বিষয়ে আমি সংশয়ী। তবে একটা উপায় সম্পর্কে আমি নিশ্চিত এবং সে বিষয়ে সামান্য বলবো পরবর্তী অনুচ্ছেদে।
কিন্তু এবিষয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতি বিশ্লেষকদের ভূমিকা হবে অগ্রগণ্য। তাতেও নানা জটিলতা। তাঁদের বিশ্লেষণ মানুষের কাছে পৌছায় না। প্রযুক্তি সহ বেশ কিছু বিষয়ের প্রভাব থেকে আমাদের দেশের সব বয়সী মানুষ আবদ্ধ হয়ে পড়েছে ফানি ভিডিও ও ছবি দেখা এবং মজার পোস্ট পড়ার রীতিতে।
বই,সাহিত্য,সংবাদ মাধ্যমের সাথে আমাদের সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ব্যবধান। এ থেকে বের হতেও আমাদের কত সময় লাগে কিংবা আদৌ বের হতে পারবো কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

উত্তরণের যে পথ বিষয়ে আমি নিশ্চিত তা হলো রাজনীতিতে মেধাবীদের প্রবেশ। এক সময় এবং এখনও প্রবীণ রাজনীতিবিদদের অনেকেই মেধাবী এবং ভালো বিচারবুদ্ধির অধিকারী, অন্তত বিবেকবান।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মেধাবীদের রাজনীতিতে প্রবেশের দৃশ্য আমার চোখে খুব একটা পড়ে না।
ছাত্রজনতার যারা রাজনীতিতে প্রবেশ করছে তাদের সিংহভাগই ঝরে পড়া,অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী। রাষ্ট্র ও নাগরিকত্ব বিষয়ক কিছু মৌলিক প্রশ্ন করলে তাদের মুখ থেকে কোনো উত্তর বেরোবে না।
ছাত্র নেতাদের অধিকাংশের ই একটা কিছু গুছিয়ে লেখার ক্ষমতা নেই। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো এদের একটা বিরাট অংশ মাদকাসক্ত। একবার আমার পরিচিত এক ছাত্রনেতা ফোন করে ক্যাম্পাসের একজন নেতার বিষয়ে জানতে চাইলো কিন্তু সে তখন এমনই নেশাগ্রস্ত যে যার বিষয়ে জানতে চায় তার নামটাও ঠিকভাবে বলতে পারছে না।
ছাত্রনেতারা এক,দুই কিংবা তিন ব্যাচ অনুজদের নিয়েও বসাচ্ছে গাঁজার আসর!
হতাশা,ব্যক্তিগত জীবনে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে জীবনের প্রতি তিক্ততা এবং বন্ধুদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমি নিজেও কিছু কালের জন্য জড়িয়ে পড়েছিলাম এই নোংরা জগতে। সাথে এ জগতের এপিঠ ওপিঠ এবং গভীরেও দেখে নিছি।

এসব ছাত্রনেতাদের দ্বারা আমরা ভবিষ্যতে দেশের ভালো নেতৃত্ব আশা করতে পারি না। রাজনীতি ই যেহেতু এদেশের প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে,তাই এখানে মেধাবীদের প্রবেশ বাধ্যতামূলক।
বাধ্যতামূলক শব্দটা সম্ভবত এখানে সঠিক শব্দ না। রাজনীতি তো কোনো খারাপ পেশা না,আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত মহৎ ও সম্মানের পেশা। রাজনীতির মাধ্যমে অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ অনেক বেশি এবং সে সেবা প্রত্যক্ষ।
আপনার যদি নেতৃত্বের গুণাবলি থাকে,মানুষকে আলোড়িত করার মতো বজ্র কণ্ঠ থাকে,যদি প্রত্যক্ষভাবে দেশের সেবায় নিজেকে,নিজের মেধাকে ব্যবহার করতে চান,আপনি অবশ্যই রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন। ধীরে ধীরে রাজনীতির কলুষতা পূর্ণ পরিবেশ থেকে একটি একটি করে নোংরামি গুলো দূর করতে ভূমিকা রাখুন,অন্যদের সঠিক পথে আসার আহ্বান জানান,সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করার চেয়ে সেবা দিয়ে তাদের ভালোবাসা অর্জনের মধ্যে কতটা আনন্দ তা নিজে বুঝতে চেষ্টা করুন,নিজের উপলব্ধি অন্যের কাছে পৌছে দিন। বহির্বিশ্বের কাছে এদেশের মুখ উজ্জ্বল করুন। আমার সুজলা,সুফলা,শস্য শ্যামলা সোনার বাংলাকে সত্যিই সোনার বাংলায় রূপান্তর করুন,তার জন্য গর্ব করুন.....

স্বত্বঃএই লেখার সম্পূর্ণ কপিরাইট লেখকের।
লেখকের সাথে আলোচনা ব্যতিরেকে অন্যত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হচ্ছে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×