আমি আমার নিউরো ডাক্তারের কাছে একটু আহ্ললাদি কণ্ঠে, অল্প কান্না ভাব এনে বললাম, আমি কিন্তু সহজে মরে যাবো মরে যাবো করতেছিনা, একটা ব্লগ সাইট আছে, সেইখানে আমার বোন মারা গেছেন বলে যেই পোস্ট দিয়েছিলাম,
সেইখানে এক ফেইক আইডি থেকে একজন বলে কি, আমি নাকি মরে যাব যখন তখন; আমি মরে গেলে সে হয়তো খুশি, বলে আমিও আপুর মতন রগ ছিঁড়ে মরে যাবো।
ডাক্তার আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার কথা একশো ভাগ সত্যি ধরে নিলো।
আমার চেহারার এই এক বিশেষত্ব, ভালো হোক, মন্দ হোক, যেমনই হোক, একটা নিষ্পাপ ভাব আছে, আর আমি চাইলে সেইটা আরও ইনোসেন্ট করতে পারি।
একবার বাস কিংবা সিএনজী না পাওয়ায়, মানুষের চিপা চাপার ভেতর দিয়া, একটা লোকাল বাসে উঠে বহু কষ্টে দাঁড়াবার জায়গা পেয়েছি, সেই জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে না করতেই, এক মোটা লুঙ্গি পরা ছেলে ভণ্ড এবং আমারে ডিস্টার্ব করবার মনোভাব নিয়া আমার পাশে দাঁড়াইছেন,
এবং অন্য পাশে ধরার জন্য রড থাকা সত্ত্বেও আমি যে কোনা দিয়ে রড ধরে রাখছি, সে সেইখানেই আমার হাতের সাথে হাত লাগাইয়া ধরলেন এবং ধরেই থাকলেন।
আমি তাকে বললাম হাত সরান, অন্যখানে ধরেন, সে জবাবে আমার দিকে তার ভারী শরীর এগিয়ে দাঁড়ালেন এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে হাতের উপর দিয়া রড ধরার চেষ্টা করছেন, এইভাবে আরও দুই বার আমার হাত ধরলেন।
ওয়েল আমার ভেতরে অনেক ভালোমানুষি আছে সেটা আমি জানি, এবং এই ভালোমানুষি হয় আমার অজান্তে, ইচ্ছাকৃত যে মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ি তা না, ওইটা আমার কন্ট্রোলের বাইরের স্বভাব, আম্মুর মতে এটা খুবই খারাপ স্বভাব।
কিন্তু কন্ট্রোলের ভেতর প্রতিশোধ পরায়ন স্বভাবও মাঝে মধ্যে উঁকি দেয়, কি করবো! আমি তো আর ফেরেশতা না যে গুনাহহীন জীবন হবে।
ছেলের শরীর নিয়া আমার কাছাকাছি ঝুঁকে থাকলেও, এবং তার হাত আমার হাতের সাথে লাগালাগি হলেও, তার পা আমার থেকে বেশ দূ্রে। আমি ধীরে আমার পা তার পায়ের কাছাকাছি নিলাম। তারপর রাগী গলায় বললাম এই যে, আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন, কয়বার পায়ে পাড়া দিছেন বলেন তো? পা সরান?
সে আকাশ থেকে পড়তে পড়তে বলে, কই আপনার পায়ে পাড়া দিছি! কি বলেন এইগুলা!
আমার পাশেই নায়কের মতন সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা লম্বা অতি সুদর্শন এক ছেলে সাথে সাথে আমার পায়ের দিকে তাকালেন, আমার পা পোলার পায়ের তলায় পড়ছে এই রকম কাছাকাছি তো আগেই করে রাখছি। বাসের সব্বাই এক মুহূর্তের মধ্যে আমারে বিশ্বাস করে, হতবিহব্বল লুঙ্গি পরা নায়করে রাস্তার মাঝখানে বকাঝকা করে নামিয়ে দিলেন। এরপর সবার আমার জন্য এক্সটা মায়া হল, এক ভাইয়া উঠে আমাকে তার জায়গায় বসতে দিলেন। তিনিও মনেহয় অফিস থেকে ফিরছিলেন, তার হাতে ইয়া মোটা মোটা ফাইলপত্র, আমি আপন বোন আপন বোন কণ্ঠ করে বললাম, ভাইয়া ফাইল নিয়ে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে না ? আমাকে দিন না ধরি! ভাইয়া বলল না বোন আপনি আরাম করে বসেন, রাস্তা ঘাঁটে এইসব বেয়াদব ছেলেদের জন্য মেয়েদের যে কত কষ্ট করতে হয়।
ডাক্তারের কথায় আসি, সে আমার কথায় অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহারা করে বলল কি বলেন আপনাকে এই কথা বলছে! এত রুড! এখন তো আমারি আপনার জন্য ভয় করছে, আপনি কালকেই টেস্টগুলা করেন তো। (এইগুলা আসলেই কিন্তু ব্লগে আমাকে একজন বলেছেন)
কথা হচ্ছে ভার্চুয়ালে আমি এই রকম অভিনয় করে, যারা আমাকে দেখতে পারেন না তাদের শায়েস্তা করতে পারিনা। ফলে মাঝে মাঝেই গায়ে পড়া আক্রমণকারীদের স্বীকার হতে হয়, সেই কবে সেই লুঙ্গি পরা ছেলেরে পায়ে পারা দিয়েছে বলে ব্লেইম দিয়েছিলাম সেই শাস্তি আমাকে এখনো ভোগ করতে হচ্ছে (আফসোস)।
যাই হোক সোশ্যাল সাইটগুলো এখন তো আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে, জীবনের আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, সমস্তটাই মিশে আছে সোশ্যাল সাইটে, কারন সেইখানে আছে বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, পরিবারের লোকজন, কলিগ, প্রিয় সেলিব্রেটি সবাই।
বলা যায় বেশির ভাগ ভার্চুয়াল লাইফই সব কিছু, রিয়েল জীবন তাদের কাছে লোকাল বাসের মতন জঘন্য, যেই গুলার সীটের কভার হাতে লাগলে সেই হাত ডেটল সাবান দিয়ে ধুলেও জীবানু মুক্ত হয়না, এমনি কষ্ট তাদের বাস্তবতা।আমি ব্লগের যার সাথেই চাট করেছি দেখেছি ব্লগের বাইরে তারা কিছু ভাবতেই পারেন না, সব টপিকে তাদের মুখে ব্লগ চলে আসে, যে ফেইসবুকের সে ফেইসবুক নিয়ে কথা বল্বেই, যে ইউটিউবের সে ইউটিউব ছাড়া কথাই বলতে পারেন না, তাদের ভার্চুয়াল লাইফই জীবন, মরন, শান্তি, সুখ সব।
আচ্ছা আচ্ছা এটা হতেই পারে, কিন্তু আমরা অপর একজন পরিচিত অপরিচিত কিংবা যে কারো সাথে কথা বলার সময় ওহ আমিতো ভার্চুয়ালে কথা বলছি, এই লোকের সাথে তো আমার ইহ জিন্দেগীতে দেখা হবার সম্ভাবনা নাই। কাজেই এরে যা খুশি বলতে পারি, চাইলে গালি ও দিতে পারি , অপমান করতে পারি, ছোট করতে পারি, এই মনোভাব নিয়ে কথা না বলে, ভার্চুয়ালে কথা বলা, পোস্ট করা, ব্লগিং করা, কমেন্ট করা, রিপ্লে করার সময়, অপর মানুষটিও যে একজন মানুষ এবং সে আর সব মানুষের মতন, হাত, পা, মাথা এবং হৃদয় সম্বলিত ব্যথা বেদনা পেয়ে থাকেন, সেই ব্যাপার মাথায় রেখে কি কথা বললে খুব গুনাহ হবে?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬