আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে একই রাস্তা দিয়ে যাবার পথে একরকম দেখায় আবার সেই একই রাস্তা ফেরার পথে আরেক রকম দেখায়। এর কারন আমার চোখ কিংবা মনের দৃষ্টিভঙ্গি কিনা সেটা আমার কাছে পরিষ্কার না, কিন্তু একই রাস্তা যে সবসময় একইরকম দেখতে হয়না এইটা সিওর, রাস্তার রং পাল্টায় আকাশের রঙের সাথে, আবহাওয়ার সাথে, সন্ধার সাথে, সকালের সূর্যের সাথে, ব্যস্ত নগরীর সাথে।
মানুষের দৃষ্টি রহস্যময়, এই দৃষ্টি তৈরি হয় তার পরিবার, পরিজন, বেড়ে ওঠা পরিবেশ পরিস্থিতি ইত্যাদির উপর।
মানুষ এক জীবনে তার এই জন্মগত কিংবা জিনগত কিংবা পরিবেশগত পাওয়া দৃষ্টি দিয়া কত কিছু দেখেন। দেখে তার নিজের মতনই একটা ভালো মন্দ রেজাল্ট বের করেন, যা ভুল ও হতে পারে আবার সঠিক নাও হতে পারে, অর্থাৎ আমি সব মানুষের ভাবনা সঠিক সেইটা বলতে চাইছি না, এরমানে আমার মন ছোট, আর এই ছোট মনের কারনে চোখের দৃষ্টিভঙ্গি অটোমেটিক ছোট হয়ে গেছে। কথা বলতে গেলেই শুধু আমি আমি আমারটা, আমারটাই বেস্ট এই সকল দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় সবার কেন হয় কি করে হয় আমার জানা নেই! মন যা দেখে চক্ষু তো তাই দেখবে, আর চক্ষু বিচক্ষণ মহান উদার মন ব্যতিত অন্যরে পজিটিভ দেখতে নারাজ, এই ধরনের উদার মানুষ নিজের ভুল উপলব্ধি, ভুল কথা, ভুল কাজ স্বীকার করে নেয়া মানুষ আসলে তো কম এটা তো মানতেই হবে।
যেই সকল প্রবাসীগণ বিদেশ ভালো বিদেশ ভালো বলে বলে ব্লগে পোস্ট দিয়ে গলায় রক্ত তুলে ফেলতেছেন তারা কি করতেছেন! খালি নিজে আর নিজেদেরটাই ভালো ভালো করতেছেন, দেশ খারাপ দেশের মানুষ খারাপ, দেশের মানুষের মন ছোট, বিদেশের মানুষের মন বড়, কিন্তু আফসোসের ব্যাপার তাদের নিজেদের মন এত বছর বড় বড় দেশের বড় বড় মানুষের সাথে থেকেও নিজ দেশের যাদের ছোট মন ওয়ালা মানুষ বলে চেঁচাইতেছেন তারাও তাদের মতন এত কুটনামী করেন না। দেশের মঙ্গল চাইতেছেন এই ভাব ধরে ক্ষণে ক্ষণে নিজের পুরা স্বজাতি তুলে গালি দিচ্ছেন সেই হুশ ও বা তাদের কোথায়!!
একদিন অফিসের এক ভাইয়াকে দেখি মুখ ভার করে বসে আছেন, নিশ্চিত কোন পলিটিক্স এর মধ্যে পড়ে অসুবিধাজনক অবস্থায় আছেন।
জানতে চাইলাম, কি হয়েছে?
জবাবে সে মৃদু হেসে বললেন--
ম্যাডাম আপনারে একটা প্রবাদ বলি। এক লোক একদিন দেখে এক মৃত ব্যক্তিকে অযথা মারধোর করছে, লোকটি জিজ্ঞেস করলো কিরে মরারে মারস ক্যান?
জবাবে মৃত লোকটিকে পিটাইতে পিটাইতে বলে মরায় নড়ে ক্যান, অনেকক্ষণ ধইরা নইরা চইরা আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাইতেছেন।
যদি কেউ দেশের দশের আশেপাশের যে কারোর দোষ ধরতে চান দোষের অভাব হবেনা।
একদিন প্রখর রোদ্রে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভিসির জমিদার ধরনের সাদা দেয়াল ওয়ালা বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের জন্য শুটিং এ গেছি, তখন ব্যাপারটা কেমন হতে পারে এই ঝোঁকের বসে দুই চারটা টিভি প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করেছি। বৈশাখি টিভির মেকআপ আর্টিস্ট যুবক এক ছেলে আমার গালে হাত লাগিয়ে চোখে কাজল আঁকতে আঁকতে তার ঘন নিঃশ্বাস আমার মুখ মণ্ডলে পরতেছে এমন অবস্থায় আমায় বললেন আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে মনে হচ্ছে জনম জনমের চেনা, আমি মেকআপ রেখে লাফ দিয়া উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম, অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্য সব আর্টিস্ট অবাক হয়ে তাকাতে লাগলেন, পরিস্থিতি সামলাতে আমি বললাম পানি খাব পানির পিপাসা পেয়েছে, কেবল অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি, প্রতিবাদ বা কি করবো তাৎক্ষনিক মাথায় আসেনি,
সেই অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করবে এরকম এক আর্টিস্ট আমাকে হাত ধরে ডেকে নিয়ে একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে তার অপূর্ব গলায় সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন ,আমার মন কিছুটা শান্ত হল, হতে পারে মেকাপ ম্যানের কাছে আমার চেহারা আসলেই পরিচিত, আর মেকাপ করাতে গেলে মুখের দিকে তো ঝুকতেই হতে পারে।।
সে মেয়েটির কবিতাটা কি ছিল এতদিন পড়ে আর মনে করতে পারিনা, অনেকটা এরকম হয়ে থাকতে পারে---
জীবনকে তুমি যেভাবে দেখবে জীবন তেমনি,
তুমি যদি জীবনকে দেখো প্রখর রোদের মত তপ্ত তৃষ্ণার্ত, তবে তুমি আর তৃষ্ণা এড়াতে পারবেনা,
যদি দেখো এক আকাশ উড়ে চলা গাঙচিলের মতন স্নিগ্ধ তবে তোমার হৃদয় শান্ত হবে,
উত্থাল সাগরের চোখে জীবনকে দেখো না, জীবনকে জীবনের মত শান্তিতে থাকতে দাও।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩