নিতুর সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক আমি মনে করতাম স্পিরিচুয়াল। আত্মার সাথে আত্মার বন্ধন। যদিও শুরুতে নিতুকে তেমন পাত্তা দিতাম না। ওকে ভালো যে লাগতো না সেই কথাও অস্বীকার করিনা, উঠতি বয়স মেয়েদের দিকে তখন অসীম আগ্রহ আমার!যদিও আমি আমার ইগো নিয়া থাকতাম। ইগো খুব যে বেশি তা না, তবে মেয়েরা আশেপাশে থাকলেই স্বাভাবিক আচার আচরন ইগোতে রুপ নিতো এত ভাব এতই ভাব যে তখন কোন মেয়ে আমার সাথে কথা বলে এই সাধ্য কার!আমি বলতে চাইছিনা নিতু বেহায়া ক্যাটাগরির মেয়ে ছিল। সে যথেষ্ট সুন্দরী, ইউনিভারসিটিতে তখন প্রথম বর্ষ পড়ুয়া সে, চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে নতুন পৃথিবী আবিস্কারের নেশায় আক্রান্ত।
বলতে দ্বিধা নেই আমিই ছিলাম তার প্রথম পৃথিবী আমি তার ছোট ভাইকে পড়াতাম, সাধারনের জীবনযাপন যেমন হয় আর কি! এই নিয়ে আমার আক্ষেপও নেই, আমার বেঁচে থাকবার জন্য, সুখে থাকবার জন্য, নিজের মতন টিকে থাকতে পারলেই আমার চলে।
আমি কোন শৌখিন মানসিকতার যুবক নই; তুষার নাম আমার, বাবা মা কি জানি কি চিন্তা করে এই নাম রাখছেন তা নিয়েও কখনোই ভাবি নাই।
নিতু ভাবতো, সত্যিকারের বরফ কুচি তুষার কিংবা তুষারের দেশের প্রতি তার সে কি আগ্রহ! তুষার যে অতিরিক্ত আলাদা কিছু, তুষার যে মাঝে মাঝে ভয়াবহ হতে পারে, তুষারের জন্যও যে মানুষ আহত নিহত হয়! তুষারের সাদা বরফের দেয়ালের নিচেও যে চাপা পড়তে পারে! এইটা কিছুতেই নিতুর বিশ্বাস হয়না, এই ক্ষেত্রে ধরে নিলাম সে তুষার প্রেমী।
ধরলাম আমার নাম তুষার বলেই আমাকে সে এক সময় ভালবাসছিল। ধরলাম আবার সেই তুষার ভালবাসার জন্যই আমাকে ছেড়ে নতুন জীবন সঙ্গী বেছে নিয়েছে সে তুষারের দেশে পাড়ি জমাতে।
শুধুই তুষার নামের মানুষের থেকে; সত্যিকারের তুষার! নিশ্চয়ই বেশি ভালো কিছু?
প্রিয় নিতু আমার, আমি তোমার শ্রেষ্ঠ ভালোটাই চাই।
না, আমি এত ছোট খাটো ব্যাপারে কষ্ট পাবার ছেলে না, মানুষ কত রকম কত কষ্টে থাকে হাত পা কাঁটা জীবন, দরিদ্র জীবন, একাকিত্তের জীবন, বিকলাঙ্গ জীবন, হিজড়া জীবন, বেশ্যা জীবন, ঘুষখোর জীবন, বেকার জীবন, দাঙ্গা হাঙ্গামার জীবন, হতাশ জীবন, নকল সুখের জীবন, অনাহারি জীবন, যান্ত্রিক জীবন, অসহায় জীবন, কুৎসিত জীবন বিপদ্গ্রস্থ জীবন, এমন কত জীবনই তো আছে চারপাশে, আছে না??
আমার জীবন এসবের তেমন কোনটার ভেতর পড়ে না, আমি তো তাকে প্রথমেই ভালোবাসিনি, সেই আমাকে ভালবাসতে বাধ্য করেছিলো, তারপর থেকে তার আয়নার মতন ঝকঝকে সত্যিকারের তুষারের শখ হল! আমার আর কিই বা করার ছিল!আমি তো নামে মাত্র তুষার।
যাই হোক অনেকক্ষণ ধরে একা একা কথা বলেই যাচ্ছি! আপনারা আমায় পাগল ভাবছেন নাতো! দেখুন আমি কিন্তু পাগল নই, ভদ্র ছেলে, ভালো ছেলে, বাবা মায়ের মুখের দিকে চোখ তুলে কখনো কথা বলিনি, এই পঁচিশ বছরের জীবনে কোনোদিন কিছু আবদার করিনি, আমার সব কিছুতেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা! আর নিতু! তাকে কি করে আমি আঘাত করতে পারি! জোর করতে পারি! সে তো আমার পৃথিবীর রাজকন্যা ছিল!রাজকন্যাকে কি কভু আঘাত করা যায়।
আমি দাঁড়িয়ে আছি এয়ারপোর্টের পূর্বদিকের সড়কের মাঝখানে, সিগন্যাল পড়েছে টানা ছয় মিনিট ধরে, আর কয়েক মিনিট। ট্র্যাফিক পুলিশগুলো সিগন্যাল ছেড়ে দেয় দেয়, তারপরই ভালো ব্যাপারটা হবে।
কি ভালো ব্যাপার? বলছি বলছি! এখনো মিনিট দুয়েক হাতে আছে কথা বলার, আমি কিন্তু কথা বলতে তেমন ভালবাসিনা! আজ কি হল আজ নিতুকে নিজে চোখে দেখলাম ব্যাগ লাগেজ নিয়ে তার স্বামীর হাত ধরে এয়ারপোর্ট এর ভেতরে ঢুকে যেতে, তুষারের দেশে যাচ্ছে সে, সত্যিকারের তুষার, আয়নার মত ঝকঝকে তুষার, সাদা সাদা তুষার।
আচ্ছা নিতু, তুষার মানেই কি স্বর্গ ভেবে বসে আছো তুমি! এ তোমার ভ্রান্তি কিন্তু বলে দিলাম, পড়ে কাঁদলে কিন্তু আমি দায়ী নই।
আর এক মিনিট তিরিশ সেকেন্ড আছে, সিগন্যাল একবার ছেড়ে দিলে গাড়ীর ড্রাইভারগুলোর একদম মাথা খারাপ হয়ে যায়। কার আগে কে যাবে, ওদেরই বা দোষ দিয়ে লাভ কি! অনেকক্ষণ ট্র্যাফিক আটকে রাখে যে।
আর মাত্র পঞ্চাশ সেকেন্ড! আমাকে ঠিক কটা গাড়ি পিসে যাবে আমি অনুমান করতে পারি! মিনিমাম তিনটা। তবে রাস্তা চওড়া আছে,যাত্রীদের ভোগান্তি হবে না আশা করি।
সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড।।
নিতু! প্রিয়া আমার! এ জীবনে না হয় ঠাঁই দিলেইনা, তাড়িয়েই দিলে তোমার জীবন থেকে? ঠিক আছে, ঠিক আছে, তবে; আমাকে তুমি বাকী জীবন দুঃস্বপ্ন থেকে কি করে তাড়াবে শুনি!?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫৩