একদিন আমার খুব কাছের সহজ সরল বন্ধু আমারে চাকরীর জন্য খুব পিড়াপীড়ি করায়, আমি এইচ আরের একজন মেয়েকে যিনি প্রচুর নখরামি করেন,এবং যিনি একজন পুলিশের বউ বলে প্রচুর গর্ববোধও করেন, উনি বাসার কোন কাজ করেন না, রাঁধতে বাড়তে পারেন না বলে আরও গর্ব করে থাকেন, তাকে মোটামুটি ঠাণ্ডা গলায় থ্রেট দিয়া সেই বন্ধুরে ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত পৌছাইয়া দেয়ার পর, ইন্টারভিউ জুরিবোর্ড তাকে সিলেক্ট করছেন এই আশ্বাস দিয়া শেষতক নাকচ করে দিলেন।
আমার বন্ধুর মতে সে খুবই ভালো ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন কিন্তু বাগড়া বসাইছেন সেই মেয়ে যিনি পুলিশের বউ বলে গর্ব করেন, যিনি এইচ আরের প্রধান না হলেও প্রধান হিসেবে ধাপট দেখাইয়া সেইখানে কাজ করেন।
পরবর্তীতে আমার বন্ধু এত কম জানে ক্যামনে! ক্যামনে সে আমার বন্ধু হয়!! এই নিয়া তাদের সমস্ত অফিস, অফিসের চেয়ার টেবিল ল্যাপটপ ডেস্কটপ পিওন পর্যন্ত ফিসফাস ও হাসাহাসি করতে লাগলেন। যার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই পুলিশের বউ।
ভুল আমার হইছে, কাউরে চাকরীর জন্য তদবির করতে হাত পা ধরতে হয়, ঠাণ্ডা গলায় শাসানী দিতে হয় না। শাসানী তারে ইচ্ছা করে যে সেই সময় দিছিলাম তা না, সে আমার বন্ধুর সিভি হাতে নিয়া ঠোঁট উলটাইয়া যে অবহেলার চেহারা করেছিলেন তার জবাবে হাল্কা একটা শাসানী ফরজ হয়ে গেছিল।এবং তাতেই সে মুলত বেশি ঘাবড়াইয়া গেছেন, যে এর বন্ধুরে যদি নেয়া হয় তাহলে হয়তো ক্রমাগত কৈফিয়ত কিংবা শাসানীর ভেতর থাকতে হতে পারে, কাজেই তাকে কিছুতেই চাকরী দেয়া যাবেনা।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমি প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে, কারো সাথে কিছু ডিসকাস করার ব্যাপারে নিষেধ করে, চুপ হয়ে যাওয়ার কয়দিন পর আমার বন্ধু ভয়ে ভয়ে আমারে ফোন দিতেই আমি ওরে আমি স্বাভাবিক আছি, এবং ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আড়াল করার জন্য বললাম আচ্ছা ধর হলি আর্টজানের মতন ঘটনায় আমরা পড়লাম তখন আমি কি করবো বলে তোর মনেহয়?? ও সাথে সাথে উত্তর দিলো তুই আমগো যেমনে হোক বাঁচাইয়া দিবি।
অদ্ভুত কথা এরকম ভাবার কারন কি রে! আমি ঐ সিচুয়েশনে ক্যামনে বাঁচাবো?? বন্ধু বলে তা জানিনা কিন্তু তুই ঠিকই পারবি তুই ক্যামনে যেন সব পারোস।
ও যেহেতু সহজ সরল ও এই রকম অন্ধ বিশ্বাস করতেই পারে, কিন্তু আমার অতি দুষ্ট এক ভাগ্নিকে একই প্রশ্ন করবার পর, সে দুষ্ট হাসি দিয়া একই উত্তর দিলো! তার দুষ্ট হাসিতে ছিল কি মজা, তুমি মরবা আর আমরা বেঁচে যাবো! কিন্তু আমি কনফিউস্ড হয়ে কিছুতেই ইমাজিন করতে পারলাম না, আসলেই আমি অতো ভালো কিনা!? এরপর আমার আরেক বান্ধবীকে একই প্রশ্ন করলাম, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি এবং আমার সম্পর্কে অনেক ধারণা রাখেন।
তবে সে একই ধরনের উত্তর দিলেন, কিন্তু কিছুটা ঘুরাইয়া উত্তর দিলেন, বললেন, সামিয়া তুমি নিজের জীবন তুচ্ছ করে ওদের বাঁচাইয়া ফেলবা সেইটা তুমি করবানা, তুমি বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকলে চেষ্টা করবা, চেষ্টায় কাজ হবেনা বুঝতে পারলে কিছুই করবানা, তবে এটা ঠিক তুমি জীবিত অবস্থায় কারো ক্ষতি হতে দিবানা।
ওয়েল!! এই ভ্রান্ত ধারণা ওদের কেন হইল আমি জানিনা। একজনের প্রতি আরেকজনের এই অন্ধবিশ্বাস কে কি বলা যেতে পারে? এই বিশ্বাস সাময়িক যেমন হতে পারে, তেমনি চিরদিনের জন্য ও হতে পারে, এবং মানব সম্প্রদায়ের ব্যাথা বেদনা কষ্ট হতাশার মুল কারন এবং দুনিয়ার তাবৎ সারভাইভার তৈরি হয় অন্যের প্রতি এই সাময়িক অন্ধ বিশ্বাস থেকে। আসলে বিশ্বাসটা সাময়িকই হয় অথবা বিশ্বাস জিনিষটাই অস্থায়ী।
একচুয়ালি সেই হিসেবে সারা দুনিয়ার মানুষই সারভাইভার কারন তারা কেউ না কেউ কারো না কারো উপড়ে ডিপেন্ডেট, যার ভিত্তি হল গিয়া অন্ধবিশ্বাস। যে কারো সাথে কথা বললে এই রকম কোন না কোন সাইড থেকে সে সারভাইভার জানা যাবে, কোন কোন ডিফ্যাক্ট তার জীবনে পাওয়া যাবেই। আসলে এইটা মনেহয় মানব চরিত্রেরই একটা চক্র যা মানুষ তার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চালাইতে থাকেন। একজন মৃত প্রায় মানুষও মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করেন কেউ এসে তাকে শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে ফেলবে।
হতে পারে এইটা একটা ভ্রান্তি ভ্রান্তি খেলা! অথবা এইটাই বেঁচে থাকবার মুল সূত্র! যে কোনটা হতে পারে।
কথায় আছেনা বিশ্বাসে মিলায় শান্তি তর্কে বহুদুর।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১৬