আজ বিকেলে এক মেয়েরে দেখলাম মুখ ভার করে খানিকটা বিরক্ত হয়ে মন তিতা করে বসে আছে, আমাকে দেখে সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জিজ্ঞেশ করলো আমি কেমন আছি শরীর আগের থেকে ঠিক হইছে কিনা! সিটি স্ক্যান করা হইছে কিনা। কথাগুলা বলে আবার তাকে মুখ ভার করে থাকতে দেখে আমি প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ উলটাইয়া দিয়া বললাম, ডিয়ার কি হইছে তোমার? আজকাল তোমারে দেখতে এমন সুন্দর দেখায় কেন? কি করছো তুমি? চুল কাটছো? চুলে কালার করছো? ড্রেসের স্টাইল পরিবর্তন করছো? ফেইস পাউডারের সেইট চেঞ্জ করছো? লিপ? শুকাইছো? কথা বলার স্টাইল পরিবর্তন করেছো? হাসির স্টাইল কি আগেরটাই? কি করছো বলতো ডার্লিং? মেয়েটি ফিক করে হেসে দিলো। তারপর বেশ কিছু সময় ধরে হাসতে থাকলো।
মানুষের মন খারাপ দেখলে আমি নিজ দায়িত্তে তাদের সাথে কমেডি করে হাসাইয়া ফেলাই, এই গুন আমার আছে আবার হয়তো এই গুন আমার নাই, এইটাকে কনফিডেন্স বলা যায় না নিজের প্রতি কিছুটা ফ্যাসিনেশন বলা যেতে পারে। দুনিয়ার ৯০ ভাগ মানুষই এই রকম হয় নিজের প্রতি মোহ মায়া ভালো ভালো গুন আছে এই রকম ধারনা পোষণ করে বসে থাকে, সেই ধারনা সত্যি হতে পারে আবার ভুল ও হতে পারে, তারপর ও পুরা জিন্দেগী সেই ভুল ভ্রান্তিতে কাটাইয়া দিতে পারে। জাপানি ভুতের গল্পের লেখিকা এই সকল ফ্যাসিনেশন কিংবা নিজের প্রতি আত্মঅহংকার কে কাটিয়ে উঠে অত্যন্ত সাবলীল ভাবে প্রতিটা গল্প সে লিখে গিয়েছেন।আসলে কি বলা যেতে পারে!এইটা যেমন ছোটদের গল্পের বই তেমনি কিশোর কিশোরীদের গল্পের বই তেমনি বড়দের গল্পের বই ও হতে পারে।
সব শ্রেণীর পাঠক এই বই পড়ে তৃপ্তি যেমন পাবেন, তেমনি জানতে পারবেন জাপানকে। বলা যেতে পারে সল্প পরিসরে বিশদ ধারনা। জানা যাবে জাপানের ঐতিহ্য জাপানের বিভিন্ন নিয়ম রীতি নীতি, সেখানকার মানুষ এক ঘরে নাকি মিশুক জাপানি যত অদ্ভুত অদ্ভুত নাম, আরেকটি ব্যাপার আমাকে চমৎকৃত করেছে, জাপানের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকৃতির বর্ণনা, ভৌতিক আবহের পাশাপাশি রহস্যময় প্রকৃতি এত সুন্দর ভাবে লেখিকা উপস্থাপন করেছেন যে,বইটি পড়ার সময় অনেক অজানাকে জানার পাশাপাশি এডভেঞ্চার ও অনুভুত হচ্ছিলো।
বেশ কিছু গল্পের শেষে একটি সুন্দর শিক্ষামুলক উক্তি, যেমন হিনামাতসুরি গল্পের শেষে তিনি বলেছেন ''জীবনের জন্য অনেক ভালবাসার রহস্যের সাথে দৃষ্টির বিচক্ষনতা জরুরী।'' অদ্ভুত সুগন্ধি গল্পের শেষে লিখেছেন, ''রহস্যময় পৃথিবীর সব রহস্য নিয়ে ভাবতে নেই। কিছু রহস্য কেবল রহস্য হয়েই থাকে।'' সাপ্পরো স্টেশনে লিখেছেন, ''সময় কোন এক অদ্ভুত রহস্যে মিটিয়ে নেয় তার সব দাবি ঠিক সময় মত।'' এই কথাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে।
এবারে বই সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশনঃ-
বইঃ জাপানি ভূতের গল্প
বইয়ের ধরনঃ গল্পগ্রন্থ
লিখেছেনঃ নুরুন নাহার লিলিয়ান
পাবলিশারঃ একরঙ্গা এক ঘুড়ি
পাবলিকেশনঃ অমর একুশে বইমেলা ২০১৮
ফরম্যাটঃ পেপার ব্যাক সিরিজের বই
পাতাঃ ৪৮
পাওয়া যাবে রকমারি ডট কম এ।
বিঃদ্র এটা আমার জীবনের প্রথম বুক রিভিউ। রিভিউ করেছি অবশ্যই লেখিকা আমার আপন মানুষ এই রকম ফিলিং থেকে। আপন মানুষ বলতে লেখিকা আমার ব্যক্তিগত পরিচিত তা নয়, এখানে আপন মানুষ ব্যাপারটা হচ্ছে সামহোয়্যারইন ব্লগের সহব্লগার মানেই কেমন যেন আপন আপন।
মনেহয় উই পিপল আর টুগেদার ফরএভার। মেলায় ভীরের কারনে অনেকের বই খুঁজে সংগ্রহ করতে পারিনি, কেউ কেউ হয়তো বললে বিলিভ করবেন না, ঘুড়ির স্টলে ঢুকে প্রথমেই আমি আমার নিজের বই না ধরে আগেই সহ ব্লগারদের বই হাতে নিচ্ছিলাম। আরেহ এটা তো ফাহমিদা আপুর বই! আর এটা লিলিয়ান আপুর! ঋদ্ধঃ ২ বইটাতে দেখি সবাই আছে ওয়াও শায়মা আপু সম্পাদনা করেছে! লিটন ভাইয়ার লেখা আছে! চাঁদগাজি ভাইয়ার লেখা আছে! সুমন কর, এম আলী ভাই, শুভ্র, জেসন ভাই, জাহিদ অনিক সহ অনেকেই লিখেছেন! দারুন তো! আরে ঋদ্ধ এক এর প্রচ্ছদ জাদিদ ভাই করেছেন! তিনি ছবি আঁকতে ও পারেন! এইরকম নানা কমেন্ট করতে করতে খেয়াল করলাম আমার সঙ্গে যাওয়া বন্ধু বিরস চোখে তাকিয়ে আছেন, কারন আমার কাছে যারা অতি আপন তাদের কে তো ও আর চেনে না।
যাই হোক ঋদ্ধঃ ২ বইটায় আমিও থাকতে পারতাম এই কথা শায়মা আপুকে বলতেই তিনি বললেন, বেবি তুমি বুদ্ধিতে যেমন বাচ্চা লেখালিখিতে আরো বাচ্চা, তাছাড়া একটি বই করা কোটি কোটি টাকার ব্যাপার!! তুমি ঐসব বুঝবে না, তাছাড়া তোমার লাইন হয়ে যায় আঁকাবাকা ভালোনা হাতের লেখা, তুমি পনেরো বছর পড়ে এসো তখন ভেবে দেখবো। আপুর কথা শুনে মনে মনে আল্লাহ্র কাছে সেই থেকে প্রার্থনা করছি আল্লাহ্ তুমি আমারে ঋদ্ধে লিখবার জন্য পনেরোটা বছর বাঁচায়ে রাখো গো আল্লাহ্।।
সবশেষে,
ভালবাসি সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:০৪