সারাদিন কেটে গেলো একটা ফুল ও বিক্রি হলনা ওরা হতাশায় পাশ ফিরে এদিক ওদিক দেখতে থাকে।
দেখতে থাকে দেখতে থাকে, দেখতে থাকে দামী গাড়ী, গাড়ীর জানালার গ্লাস, গ্লাসের ভেতরের মানুষ, ভেতরের মানুষের ভেতর দেখতে চায় ওরা! অসম্ভব চাওয়া!
ওরা দেখতে চায় কোমল হৃদয়! ভালবাসাময় পৃথিবী, এক চিলতে হাসি আর দশ টাকা।
একটি গোলাপের দাম দশ টাকা। একটি গোলাপের তোরা কিনলে সব মিলে পঞ্চাস টাকা, তখন কিন্তু সাথে দুইটা ফুল ফ্রি থাকবে! কেউ তো নেবে! সকাল থেকে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি!!
কেউ নেবেনা??
সুমন যেখানটায় দাঁড়িয়ে সেখান থেকে রাস্তার এপার ওপাড় সবটা দেখা যায়, কটকটে রোদ, ব্যস্ত মানুষ, পাবলিক বাস, লাফঝাপ করে মধ্যবিত্তের ওঠানামা! পত্রিকা কিংবা রুমালের ফেরিওয়ালা,
সব দেখা যায়।
মাথা ঝিম ঝিম করে, খানিকটা গা গুলিয়ে ওঠে, কিছু একটা খাওয়া দরকার! অন্তত পানি!
চারদিকে খা খা মরুভুমি! কোথাও পানি নেই! যখন যা দরকার হয় তখন তা কিছুতেই পাওয়া যাবেনা, পানি তো না-ই-না। পানিকে এত্ত সস্তা মনেহয়!! আশেপাশে পানির ফেরিওয়ালা আছে, সেই পানি মহা মূল্যবান! সেই পানি সুমনের সাধ্যের বাইরে, লেকের পাড়ে ওয়াসার একটা ট্যাপের কল বসানো আছে! কিন্তু দূর!
সবকিছু দূর, চাইলেই পায়ের তলায় মাটি পাওয়া যাবেনা!! পাওয়া যাবে পাথর, পাওয়া যাবে ছাইপাঁশ ময়লা, পাওয়া যাবে কণ্টক! কঠিন কণ্টক সরাসরি পায়ে ঢুকে এফোঁড় ও ফোড় করে দেয়া কণ্টক।
এসবই তো হয়।
এগুলো খুব সিম্পল ব্যাপার!!
খোকন হাসে; দূর থেকে দুজন দুজন কে দেখে, দেখে বিরক্ত হয়, দুজনের হাতেই ফুল, ফুলের গন্ধ নেই, বর্ণ নেই, কোন সৌন্দর্য নেই, কিচ্ছু নেই, কিছু টাকা দরকার, কিছু একটা খাওয়া চাই।
প্রচণ্ড তাপে রাস্তার পিচ গলে গলে যাচ্ছে অতিষ্ঠ শকুনের চোখের মত ওরা পূর্ণ দৃষ্টি মেলে গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে! দুটা ফুল বিক্রি করতেই হবে, এখন! এক্ষুনি!
পানি!
সুমন তাকায় সবখানে গাঁ গুলানো ভাব, মাথা ঝিম ঝিম! তৃষ্ণার্ত কংক্রিট।
ফুলগুলো আর বিক্রি হয়না, ওগুলো রোদের তাপে স্নিগ্ধতা হারিয়ে ঢলে পড়েছে সেই কখন!!
মেয়েটি ফুলগুলো ফিরিয়ে দিয়ে চলে যায়!
ওরা চারপাশে তাকায় এখন আর আশা নেই, রাগ নেই, ক্ষুধা নেই তৃষ্ণা নেই, দেয়ালে দেয়ালে অন্ধকার, ওরা অন্ধকার দেখে, অন্ধকারের নিয়ম দেখে, নিয়মের শেষ পরিনতি দেখে।দেখতে দেখতে কংক্রিটের সাথে মিশে যায়, মিশে যায় জীবনের সকল অক্ষমতা গুলোও।।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২