ধানমন্ডী ৩২ থেকে DOI মেসেজ ২৬ মার্চ রাতে বেরিয়ে না আসলেও DOI মেসেজ ২ টি ভিন্ন বক্তব্যে (Different statement) রাত ১২টার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় রিসিভড হওয়ার সত্যতা রয়েছে । এটি তাই একটি মিস্ট্রী।
এই মেসেজ গুলোর সোর্স কি ?
কে পাঠিয়েছে ?
কিভাবে সেটা সম্ভব ?
সেই শ্বাসরুদ্ধকর দিবাগত রাতে শেখ মুজিবের নামে (In the name of Sheikh Mujib) ৩ ধরনের DOI মেসেজ প্রচার করা হয়।
১ ) মেসেজ -১ :
যেটি শুরু হয়েছিলো "This may be my last message" এই ক্লস দিয়ে।
২) মেসেজ - ২:
যেটি শেষ হয়েছিলো "May Allah bless you , Joy Bangla" এই ক্লস দিয়ে।
৩) বলধা গার্ডেন থেকে Audible (শ্রবনযোগ্য) DOI মেসেজ যেটির স্টেটমেন্ট কি ছিলো জানা যায়নি সুস্পষ্ট ভাবে।
তাহলে সেদিন রাতে মেসেজ -১ এবং মেসেজ -২ কিভাবে সারাদেশে চালাচালি হয়েছিলো সেটা দেখা যাক।
অজয় রায়ের আর্টিকল :
চুয়াডাঙা EPR এ মেসেজ -১ রিসিভড হয় রাত ১:০০ টায় এবং দৈনিক আজাদিতে মেসেজ-১ এর টেলেক্স রিসিভড হয় রাত ১:১০- ১-১৫ এর ভেতরে।
চুয়াডাঙ্গা EPR মেসেজ এবং দৈনিক আজাদীর টেলেক্স বিষয়ে অজয় রায়ের আর্টিকল
অন্যদিকে মেসেজ-২ এর ব্যাপারে যেটা জানা যায় ভোর ৪-৫ টার ভেতরে অজ্ঞাত বার্তাবাহক এই মেসেজটি মগবাজার ওয়্যারলেস অফিসে পৌছে দেন সেখানকার সহকারী প্রকৌশলী আবদুল কাইয়ুম এবং মেজবাহউদ্দীনের কাছে।
কিন্তু মূল বিষয়টি হলো ঐ অজ্ঞাত বার্তাবাহক কেবল মেসেজ-২ নয় , মেসেজ -১ এবং ২ দুটোই পৌছে দিয়েছিলেন মগবাজার ওয়্যারলেস অফিসে । ব্যাখ্যাটা একটু পরই পাবেন।
এবিষয়ে অজয় রায়ের আর্টিকলে আবদুল কাইয়ুমের স্মৃতিচারন পাওয়া যায় সেই ঘটনার
একই বিষয়ে মেজবাহউদ্দীন জনকন্ঠে স্মৃতিচারনে বলেছেন অজ্ঞাত বার্তাবাহক সরাসরি আসেননি , রিকশাওয়ালাকে পাঠিয়েছিলেন এবং ঘটনাটি ঘটেছিলো ভোর ৫:৩০ মিনিটে
যাইহোক , মগবাজার ওয়্যারলেস অফিস থেকে খুব দ্রুত তারা মেসেজ ২ টি পাঠিয়ে দেন চট্টগ্রামে।
১.
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট স্টেশনে রিসিভড হয় মেসেজ-১ সেখানকার ইনচার্জ নুরুল আমিনের কাছে।
নুরুল আমিন সেটা সাথেসাথে তার ছোটভাই মাহতাবউদ্দীনের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন , মাহতাবউদ্দীনের কাছ থেকে এটি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকের কাছে পৌছে যায়।
অজয় রায়ের আর্টকলে ঘটনাটির বিবরন দেখুন মাহতাব উদ্দীনের ভাষ্যে
২.
চট্টগ্রামের সলিমপুর স্টেশনে TTR জালাল মেসেজ -২ রিসিভ করেন এবং TTR জালাল ও জুলহাসউদ্দীন সেটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম চ্যানেলে প্রেরণ করেন যা কলকাতার কোস্টাল রেডিও স্টেশনে ( সম্ভবত হুগলী নদীর উপর ফ্লোটিং) রিসিভড হয়।
বাকি অন্যসব স্টাফরা (সহকারী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম এবং তার অধীনস্থ স্টাফ শফিউল ইসলাম , আবুল কাসেম খান , আবুল ফজল প্রমুখ ) মেসেজ-২ VHF (Very High Frequency) চ্যানেলের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেন।
এবিষয়ে অজয় রায়ের আর্টিকলের জালালউদ্দীনের বক্তব্য
সামহয়্যারইন ব্লগের ব্লগার মুনিমের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরে , জুলাই ৭ এবং ৯ , ২০০৯ প্রকাশিত মেজবাহউদ্দীন এবং আবদুল কাদেরের সাক্ষাৎকারটি জানা যায়।
মেজবাহউদ্দীন এবং আবদুল কাদেরের বক্তব্য , দৈনিক যুগান্তর , জুলাই ৭ এবং ৯ , ২০০৯ , কৃতজ্ঞতাস্বীকার : মুনিম , আমারব্লগ.কম
সেখানে যেটা জানা যায় মেজবাহউদ্দিন সলিমপুরে আবদুল কাদেরের কাছে মেসেজ পাঠান এবং স্বাভাবিকভাবেই সেটি মেসেজ-২ ।
এবং আবদুল কাদের যেটি জানান তিনি মেসেজটি নন্দনকাননে পাঠান , কিন্তু সম্ভবত তার আগেই মগবাজার থেকে ভায়া ফৌজদারহাট নন্দনকাননে মেসেজ-১ পৌছে যায় সেটি আগেই জেনেছেন।
এখানে যেটি চমকপ্রদ সেটি হলো মেসেজগুলো মেজবাহউদ্দীন বাংলায় পেয়েছিলেন এবং ইংরেজীতে অনুবাদ করে নিয়েছিলেন।
অথচ ইংরেজীতে শেখ মুজিবের নিজের হাতে লেখা (!!) একটি ভৌতিক মেসেজ সারাদেশকে দেখিয়ে বেড়ানো হয়!
এবিষয়ে মঈনুল আলমের কাছ থেকে যেটা জানা যায় তা হলো তিনি ভোর ৬ টায় সলিমপুর স্টেশনে ফোন সেখানকার সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রাব্বানী ডাকুয়ার কাছ থেকে জানতে পারেন ঢাকাস্থ মগবাজার অফিস থেকে মেসেজ এসেছে এবং সেটি তিনি নোট করে নেন , তৎক্ষনাৎ এম আর সিদ্দীকিকে ফোন করেন সেটা জানানোর জন্য , এম আর সিদ্দীকির স্ত্রী কোহিনূর ফোন রিসিভ করেন এবং টার স্বামীকে জানান এবং এম আর সিদ্দীকি মঈনুল আলমকে কলব্যাক করেন।
মঈনুল আলমের কলাম , ইত্তেফাক
মঈনুল আলমের বক্তব্য বাকি সবার সাথে মিলছে।
কারন সলিমপুরের ইনচার্জ ছিলেন গোলাম রাব্বানী ডাকুয়া এই তথ্য অজয় রায়ের আর্টিকলেও পাওয়া যায়।
ঘটনা চিত্রটা এরকম দাড়াচ্ছে: টিটিআর জালাল আহমেদ তার বস গোলাম রাব্বানী কে জানায় মেসেজ-২ এর ব্যাপারে , সলিমপুর একমাত্র যেই মেসেজটি মগবাজার থেকে রিসিভ করেছে , গোলাম রাব্বানী সেটি মঈনুল আলমকে জানায়।
অন্যদিকে সিরাজউদ্দীন হোসেন দাবী করেছেন জহুর আহমেদ চৌধুরীর স্ট্রী ডাঃ নুরুন্নাহার ঘোষনাটি শেখ মুজিবের কাছ থেকে আগেই রিসিভ করেন , চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদে জানান এবং সলিমপুরে জানান যা টিটিআর জালাল রিসিভ করেন।
পুরোটাই ভুল তথ্য , টিটিআর জালাল নিজেই সেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন যেটি ইতোমধ্যে পড়েছেন।
সিরাজউদ্দীন হোসেনের কলাম , ইত্তেফাক
আশাকরি এখন পরিষ্কার বুঝতে পারছেন অজয় রায় , মঈনুল আলম এবং সিরাজউদ্দীনের ইন্টারসেক্টিং তথ্যগুলো থেকে যে ঐ অজ্ঞাত বার্তাবাহক মেসেজ-১ এবং ২ দুটোই মগবাজার ওয়্যারলেস অফিসে পৌছে দিয়েছিলেন , মেসেজ -১ সেখান থেকে সেন্ট হয় চট্টগ্রাম ফৌজদারহাট স্টেশনে , মেসেজ-২ সেন্ট হয় সলিমপুর স্টেশনে।
তারমানে ঐ অজ্ঞাত ব্যক্তি একই সোর্স থেকে এসেছিলেন মেসেজ ২ টি নিয়ে।
সেই সোর্সটি কে ?
এবিষয়ে আরো ব্যাখ্যা একটু পরই সামনে পাবেন।
যাইহোক , এখন পর্যন্ত ক্রনোলজী অব DOI মেসেজ সার্কুলেশন বিচার করে যেটি পাওয়া যায় মেসেজ-১ প্রচারিত হয়েছিলো ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই।
এবং মেসেজ -২ প্রচারিত হয়েছিলো ২৬ মার্চ ভোর ৬ টার পর এবং সারাদেশের নানা জায়গায় দিনের বেলা এটি পৌছাতে থাকে।
এবিষয়ে সিরাজউদ্দীন হোসেনের কলাম , ইত্তেফাক থেকে যেটি জানা যায়:
১.বরগুনা VHF অফিসে ২৬ মার্চ সকালে DOI মেসেজ পৌছায় (১ না ২ সেটি নিশ্চিত নয়)
২.বরিশাল পুলিশ ওয়্যারলেসে পৌছায় ২৬ মার্চ সকালে (১ না ২ সেটি নিশ্চিত নয়।
অন্যদিকে
৩.নোয়াখালী এবং কিশোরগন্জ্ঞ
৪.নির্মল সেন (গোপাল গন্জ্ঞ)
৫.সুরন্জ্ঞিত সেন গুপ্তের (সিলেট)
৬. আবু সাইয়িদ (পাবনা)
থেকে ২৬ মার্চ দিনের ভোরবেলা মেসেজ পাওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়
অজয় রায়ের আর্টিকল থেকে
মেসেজ-১ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ঢাকা EPR থেকে প্রচারিত হওয়ার ক্ষেত্রে যেটি বিরুদ্ধ লজিক হিসেবে বলা হয়ে : সিগন্যালস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন জায়গা। মিলিটারী ক্র্যাকডাউনের ষড়যন্ত্র করার পরও পাকিস্তানীরা সেখানে কোন বাঙালীকে চার্জে রাখবে এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়।
এই জায়গাটাতে সিরাজউদ্দীন হোসেন বলেছেন যে ঢাকা EPR এর সিগন্যাল উইংসের সুবেদার মেজর মোঃ শওকত আলী তার পোর্টেবল ট্রান্সমিটার দিয়ে বাসা থেকেই মেসেজ -১ ট্রান্সমিট করে ছিলেন।
ট্রান্সমিটরত অবস্থায়ই শওকত আলী , মোল্লা , জহর মুন্সী , হাই এদেরকে গ্রেফতার , নির্যাতন এবং মেরে ফেলা হয়।
সিরাজউদ্দীন হোসেনের কলাম ঢাকা ইপিআর বিষয়ে , ইত্তেফাক
যাইহোক , ঢাকা EPR থেকে DOI মেসেজ ট্রান্সমিট হওয়ার শক্তিশালী যুক্তিটি দেখিয়েছেন অজয় রায় যেটা ইতোমধ্যে পড়ে ফেলেছেন -
সেটি হলো চুয়াডাঙা EPR এ রাত ১:১৫ তে মেসেজ -১ রিসিভড হওয়া।
এবিষয়ে শহীদ সুবেদার মেজর শওকত আলীর মেয়ে , বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাপ্তাহিক ২০০০ এ সাক্ষাৎকারে তার বাবার মেসেজ ট্রান্সমিশনরত অবস্থায় গ্রেফতার হওয়ার টেস্টিমোনি দিয়েছেন।
এপর্যন্ত অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিলো মেসেজ - ১ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে এবং মেসেজ -২ ভোর ৫:৩০ বা তার পরবর্তী সময় থেকে সার্কুলেট হচ্ছিলো।
কিন্তু এখানেই ভিন্ন তথ্য দিলেন সেসময়কার শরীয়তপুরের মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত।
তার কাছ থেকে যেটা জানা যায় রাত ২ টার পর মানে আনুমানিক ২:১৫ তে তিনি মেসেজ - ২ রিসিভ করেন মাদারীপুরের ওসির কাছ থেকে!
সৈয়দ রেজাউল হায়াতের কলাম , ইত্তেফাক
অবস্থাটা অনেকটা চুয়াডাঙা আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস আলীর মতোই।
ইউনুস আলী রাত ২ :০০ টার পর মেসেজ-১ রিসিভ করেন যেটা চুয়াডাঙা EPR রাত ১:১৫ তে রিসিভড হয়।
সুতরাং যেটা বোঝা যায় মেসেজ-১ এবং ২ দুটোই মূলত ঢাকা EPR থেকে ট্রান্সমিট হয়েছিলো এবং রিপিটার স্টেশন গুলোর মাধ্যমে চুয়াডাঙা EPR , বিভিন্ন থানার ওসির ওয়্যারলেস সেটে রিসিভড হয়।
এটিই সেই সেকেন্ডারী এভিডেন্স যেটি ইন্ডিকেট করে
মেসেজ ২টির আসল সোর্স ও একই , বার্তাবাহক যেই হোক না কেন ?
এই সোর্সটি কে ?
আরো পড়তে থাকুন।
ঢাকা EPR থেকে ট্রান্সমিটেড এই মেসেজ গুলো আরো কিছু EPR সিগন্যাল রুমে রিসিভড হওয়া উচিৎ ছিলো , হয়তোবা সেইসব সিগন্যাল রুমের চার্জে ছিলো স্বাধীনতাবিরোধী বা সিদ্ধান্ত নিতে নার্ভাস কোন বাঙালী সদস্য যারা এটি রিপিট ট্রান্সমিট করেনি।
যারা করেছে সাহস নিয়ে তাদের কাছে জাতি কৃতজ্ঞ।
মেসেজ ১ এবং ২ এর সোর্স সেই মাস্টার মাইন্ড কে ছিলেন ?
এ বিষয়ে মঈদুল হাসানের বক্তব্য অবিকল জানা যাক ।
মঈদুল হাসানের বক্তব্য , বই : মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন , প্রথমা প্রকাশনী
ইমেজ হিসেবেও দেখুন :
আশাকরি ঘটনাটি জানতে পেরে চমকে গেলেও সামলে উঠেছেন।
তাও যদি কারো সন্দেহ তৈরী হয় তাহলে জেনে রাখুন এই মঈদুল হাসান কে ছিলেন ।
মঈদুল হাসান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অস্থায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী।
আর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অস্থায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্বয়ং তাজউদ্দীন আহমেদ!
আরো একটি বিষয় না জানালেই নয়।
এই মঈদুল হাসান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিখ্যাত বই "মূলধারা ৭১" 'র রচয়িতা।
এরপরও যদি ভ্রূ কূচকে থাকে তাহলে এটিও জেনে রাখুন তাজউদ্দীন এবং শেখ মুজিবের ভেতরে যে সেদিন রাতে একটা মনোমালিন্য হয়েছিলো সেটার উল্লেখ পাওয়া যায় হাজী গোলাম মোর্শেদের বক্তব্যেও।
" সেই রাতেই সেনা-হামলা হবে - এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি। তাই তিনি স্বাধীনতার কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। অথবা কোনো ঘোষণাও রেকর্ড করেও রাখেননি। সেদিন সন্ধ্যের পরেও বেতার-টেলিভিশনের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিলো। ইচ্ছে করলে, তিনি তা ব্যবহার করতে পারতেন। আগেই উল্লেখ করেছি, এ নিয়ে তাজউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর রীতিমতো মতানৈক্য হয় "
[সোর্সঃ হাজী গোলাম মোরশেদের বক্তব্য ,মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর - মোলাম মুরশিদ , প্রথমা প্রকাশন, ২০১০, পৃ ৮৬]
এখানেই সিদ্ধান্ত টেনে ফেলার সময় আসেনি।
আরেকটু এগোনো যাক।
ভাষার তারতম্য (Difference of Narration) বনাম তথ্যের তারতম্য (Difference of Information)
মেসেজ-২ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে এবং ভোর ৫:৩০ থেকে সার্কুলেট হওয়া শুরু হলেও মগবাজার ওয়্যারলেস অফিস থেকে ট্রান্সমিটেড মেসেজ-২ এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে সার্কুলেটেড হওয়া মেসেজ-২ এর ভেতরে সাবটল কিন্তু যথেষ্ট ধারালো পার্থক্য রয়েছে।
এই পার্থক্যটুকু বহুল প্রচারিত ভাষার তারতম্য নয়।
এখুন দেখুন অজয় রায়ের আর্টিকল থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিল , ৩য় খন্ড , পুরাতন সংস্করণ , হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত এ উল্লেখিত মেসেজ -২ এবং কোলকাতা কোস্টাল রেডিও স্টেশনে রিসিভড হওয়া মেসেজ- ২ এর পার্থক্য
আশাকরি আন্ডার লাইনড শব্দগুলো ফলো করেছেন।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত দলিলপত্রের মেসেজ-২ এর খোঁজ পাওয়া যায় বাংলা একাডেমী কর্তৃক ২০০৮ সালে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন ও রাজনীতি ১ম খন্ডে সম্পাদক : মোনায়েম সরকার (পৃ৪৪৯) এবং সম্ভবত সৈয়দ রেজাউল হায়াত ও একই মেসেজ -২ পেয়েছেন।
অন্যদিকে কোলকাতা কোস্টাল রেডিও স্টেশনে যেটি রিসিভড হয় সলিমপুর ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম চ্যানেলে ট্রান্সমিট করার পর সেটি দেখুন নীচে:
ঠিক একই মেসেজ-২ পেয়েছেন মঈনুল আলম গোলাম রাব্বানী ডাকুয়ার কাছ থেকে:
Massage to the people of Bangladesh and to the people of the world. Rajarbag police camp and Peelkhana EPR suddenly attacked by Pak Army at 24.00 hours. Thousands of people killed. Fierce fighting going on. Appeal to the world for help in freedom struggle. Resist by all means. May allah be with you. Joi Bangla
এবং কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী :
কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ-এর নিকট ২৬ মার্চ ১৯৭১ সাল ভোরবেলা যে টেলিগ্রামটি আসে তার ভাষ্যঃ
Pakistani arm forces suddenly attacked EPR at Peelkhana & Police forecs at Rajar Bagh from 00.00 hrs 26 March Killed lacs of unarmed people. A strong battle go on with EPR and police forces in the streets of Dacca, People are fighting galently with enemy forces for the freedom of Bangla Desh. Every section of the people of Bangl Desh are asked to resist enimy force at any cost in every corner of Bangla Desh. May Allah bless you & help you. Joy Bangla. Mujubur Rahman
[ প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী’র ১৭তম মৃত্যূবার্ষিকী স্মরণিকা-২০০৮। ]
যারা এখনো মেসেজ-২ এর ২ টি ভার্সন ধরতে পারেন নি তাদের উদ্দেশ্য বলছি:
ভাষার তারতম্য (Difference of Narration) এবং তথ্যের তারতম্য (Difference of Information)এক বিষয় নয় ।
প্রথমটি মামুলী , ২য় টি গুরুতর।
মেসেজ-২ এর ২ টি ভার্সনের ভেতরে তথ্যের তারতম্য(Difference of Information) রয়েছে।
সেটি হলো "Zero Hours , 00:00 hours , 24:00 hours " এই টাইম স্পেসিফায়িং তথ্যটুকু।
এবং এখান থেকে পরিষ্কার ভাবে যেটা বোঝা যায় ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর থেকে মেসেজ-২ সার্কুলেটেড হয় ইপিআর , রাজারবাগ পুলিশ ঠিক কখন আক্রান্ত হয় সেই তথ্যটুকু ছাড়া এবং মগবাজার ওয়্যারলেস অফিস থেকে মেসেজ-২ সার্কুলেটেড হয় ইপিআর , রাজারবাগ পুলিশ অ্যাট Zero Hours / 00:00 hours / 24:00 hours এই তথ্যটুকু সহ। সেখান থেকেই এটি সলিমপুরে পৌছায় , সলিমপুর থেকে মঈনুল আলম , কোলকাতা কোস্টাল রেডিও স্টেশনে পৌছায়।
এই গ্রাউন্ডেই যেটা কিছুটা অস্পষ্ট হলেও সার্টেনলী বোঝা যায় ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে কেউ একজন এই মেসেজ-২ মেসেজ-১ সহ তড়িঘড়ি করে ঢাকা EPR এ পাঠান এবং পরবর্তীতে যখন মেসেন্জ্ঞার মারফত মগবাজার ওয়্যারলেসে পাঠান তার আগে মেসেজ-২ তে Zero Hours , 00:00 hours , 24:00 hours " এই টাইম স্পেসিফায়িং তথ্যটুকু যোগ করে দেন।
তারমানে মেসেজ-২ এবং মেসেজ-১ এর সোর্স এমন কেউ একজন যিনি ২৬ মার্চের দিবাগত রাতে ঢাকাতেই আত্নগোপন করে ছিলেন এবং যার হাতের কাছে কিছু সাহসী দেশপ্রেমী সহকর্মী ছিলো যারা এই মেসেন্জ্ঞার হিসেবে কাজ করেছিলেন।
এই ১ টি বিষয় আবারো ধানমন্ডী ৩২ কে নাকচ করে মেসেজ গুলোর সোর্স তালিকা থেকে।
এবার দেখা যাক তাজউদ্দীন আহমেদ সেই রাতে কোথায় ছিলেন?
আবদুল আজিজ বাগমারার ডায়েরী থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাজউদ্দীন আহমেদের দিন গুলি , দৈনিক প্রথম আলো
ঘটনার আসল চরিত্রদের মুখেই আরেকবার যাচাই করা যাক বাগমারার তথ্যগুলো কতটুকু সঠিক :
পরিষ্কারভাবেই বুঝতে পারছেন:
১. তাজউদ্দীন আহমেদ ব্যারিস্টার আমীর এবং তার স্ত্রী কে "দোলনচাঁপা" সংকেতে লেখা চিঠিতে কতটুকু প্রগাড় বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীনতার কথা উচ্চারন করেছিলেন।
২. তিনি সারারাতই জেগে ছিলেন ২৬ মার্চের সেই উৎকন্ঠাময় সময়টাতে।
৩. ঠিক পাশের বাসাটিই ছিলো স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদের এবং তারা তাজউদ্দীনের প্রতি যথেষ্ট অনুগত ছিলো।
৪. তাজউদ্দীন সংগ্রাম পরিষদের স্থানীয় কর্মীদের কি বলেছিলেন সেটা আরেকবার ভালো করে লক্ষ্য করুন:
: " প্রতিরোধ করার মত শক্তি এখন আমাদের হাতে নেই , তার জন্য সময়ের প্রয়োজন। তারআগ পর্যন্ত আমাদের সাবধানে কাজ করতে হবে। "
সাবধানে কি কাজ করার কথা সেই মুহূর্তে তাজউদ্দীন সংগ্রাম পরিষদের কর্মীদের বলেছিলেন ?
সেটি অজানা।
কিন্তু বলেছিলেন এটি সত্য।
সুতরাং সামান্য ১টি টেলেক্স দৈনিক আজাদীতে পাঠানো তাজউদ্দীন আহমেদের একজন মেসেন্জ্ঞারের পক্ষে অনেক কম ঝুকিপূর্ন কাজ তা বলাই বাহুল্য।
মুজিব নগর সরকারে শেখ মুজিবের যে স্বাধীনতা ঘোষনার কথা বলা হয়েছে সেখানে কেবল একটি বিবৃতি মাত্র
ইতিহাস একটা অংকের মত।
যতবেশী ডাটা থাকে একটা অংকটা ততবেশী সহজে মেলানো যায়।
নতুবা অ্যাসাম্পশনের ভিত্তিতে মেলাতে হয়।
ইতিহাসের বিষয়টাও সেইরকম , যতবেশী ডাটা তত অ্যাকুরেটলী ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পিকচার পাজল টা মেলানো যায়।
স্বাধীনতার ঘোষনা বিষয়ক অনেক তথ্য (ডাটা) মিলিয়ে এখন পর্যন্ত
১ টি সিদ্ধান্ত এবং ১ টি অনুসিদ্ধান্তে আসা যায় ২ পর্ব মিলিয়ে:
সিদ্ধান্ত: শেখ মুজিব মোটেই স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি , হাত সাফাই এর মত কিছু ইতিহাসবিদ জোর করে মানুষকে অসংখ্য তথ্যের জটলা দেখিয়ে ফেব্রিকেটেড ইতিহাস কে দাড় করাতে চায়। আর লেস দ্যান ২০ % বোনাফাইড এডুকেটেড মানুষের দেশে কেউ ভয়ে সেই জটলায় ঢুকতে চাননা। তথাকথিত ইতিহাস মোড়লরা যা বলে মেনে নেয়।
কিন্তু সেই জটলাগুলোই এই ২ পর্বে খুলে দেখা হলো একে একে এবং যেটা পাওয়া গেলো পুরোটাই ভাওতা , বরন্চ্ঞ সেই ভাওতাবাজী গুলোকে একেবারে ন্যাংটো করে ফেলা কিছু সারপ্রাইজিং তথ্য জানা গেলো।
শেখ মুজিব মোটেই স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি। DOI : ২ টি টেলিফোন , রাত ১২-১.০০ টা , শেখ মুজিবের ট্রু লাইস : মার্চ ২৬
অনুসিদ্ধান্ত: স্বাধীনতা ঘোষনার যে ২ টি মেসেজ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে সার্কুলেটেড হয়েছিলো সেগুলোর মাস্টার মাইন্ড (বা রহস্যপুরুষও বলা চলে ) কে ছিলো এই প্রশ্নে অতিসম্ভাব্য উত্তর :
তাজউদ্দিন আহমেদ।
কিন্তু এটি কোন সিদ্ধান্ত নয়।
যুদ্ধের ৯ মাস দেশের মাটির স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভেতরের -বাইরের সব কুচক্রীর হাত থেকে আগলে রেখেও তাজউদ্দীন সারাজীবনই ছিলেন সম্মানে কৃতিত্বে কপর্দকশুন্য।
খোদ শেখ মুজিবও কোনদিন জানতে চাননি তাজউদ্দীন কিভাবে সব সামলে ছিলেন ৯ টি মাস।
এই বন্চ্ঞনার হতাশাটুকু তাজউদ্দিনের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমির লেখনীতেও উঠে এসেছে।
বন্দনার সবটুকুই গেছে " মুজিব ভাই " এর জন্য।
স্বাধীনতা ঘোষনার আলো আধারী দৃশ্যপটেও তাজউদ্দীন নিজেকে ছায়া করে রেখেছেন কিনা সে প্রশ্ন পাঠকরাই বিচার করে দেখতে পারেন।
চলবে : পরের পর্বে বলধা গার্ডেনের মেসেজের অমীমাংসিত রহস্য এবং জহুর হোসেন চৌধুরী প্রসংগ
_____________________________________________
ATTN : ১ম এপিসোড
DOI : ২ টি টেলিফোন , রাত ১২-১.০০ টা , শেখ মুজিবের ট্রু লাইস : মার্চ ২৬