লিবিয় নাগরিক কর্নেল সালেম বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিচক্রকে লিবিয়ায় সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেশটিতে রাজসিক জীবনযাপন করতেন খুনিরা। তবে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রাণ বাঁচাতে লিবিয়া ছাড়তে থাকেন তারা। কর্নেল সালেম ছিলেন লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার-আল-গাদ্দাফির অত্যন্ত কাছের মানুষ এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ ’৯৬ সালের আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোটি ডলারের সু-প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে লিবিয়া থেকে পালিয়ে যান। এ সময় কর্মরত দুই হাজার ৮০০ শ্রমিকের পাওনাও পরিশোধ করেননি তিনি। লিবিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময় রশীদ সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ও এক সুটকেস ভর্তি হাতে লেখা ডায়েরি।
লিবিয়া থেকে সূত্র জানায়, ’৯৬ সালের জুনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসার কিছুদিন পর লিবিয়ায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মেজর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। বিষয়টি কর্নেল রশীদ টের পেয়ে যান। এরপর কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলেই লিবিয়া ছেড়ে চলে যান তিনি। ব্যবসার কারণে কিছুদিনের জন্য থেকে যায় তার পরিবার। রশীদের ছেলেই ব্যবসা দেখতেন।
ত্রিপোলি শহরে ‘মেসার্স কনসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামে একটি জেনারেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিক ছিলেন রশীদ। প্রায় দুই হাজার ৮০০ বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শ্রমিক কোম্পানিটিতে কাজ করতেন। বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যাই ছিল ৭০০। আলোচিত কর্নেল সালেম ছিলেন রশীদের অন্যতম ব্যবসায়িক পার্টনার। লিবিয়ায় রশীদের চলাফেরা ছিল রাজকীয়। কালো রঙের মার্সিডিজ বেঞ্চ ছিল তার বাহন। বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করা হতো। তবে আরেক খুনি মেজর (অব.) ডালিম কোনো ব্যবসা করতেন না। লিবিয়া সরকারের ভাতা নিয়েই তার জীবন চলতো। রশীদের মতো ডালিমের উপস্থিতি লিবিয়ায় সরব ছিল না বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, লিবিয়ার ক্ষমতাধর ধনীদের অন্যতম কর্নেল সালেমের সঙ্গে ’৭৫-এ কর্নেল রশীদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। লিবিয়া সরকারের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ছিলেন ভুট্টো। ১৫ আগস্টের পর ব্যাংকক ছাড়ার আগ্রহ নিয়ে কর্নেল রশীদ পাকিস্তানে ভুট্টোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে লিবিয়াকে নিরাপদ মনে করে ভুট্টো কর্নেল সালেমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিচক্রদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেন।
এদিকে উত্তর ত্রিপোলিতে বর্তমানে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন জেল হত্যা মামলার আসামী রিসালদার (অব.) মারাফত আলী (৭৪)। হৃদ ও বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত তিনি। ’৭৫-এর পর থেকেই পরিবারসহ মারাফত লিবিয়ায় রয়েছেন।