গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের কেউ হাসিমুখে বিদায় নিতে পারেননি। ঘাতকের বুলেটে নিহত, সংবিধান লংঘন করে বন্দুকের নলের মুখে কাউকে বিদায় করে দেয়া, ছাত্র-শ্রমিক ও জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা, রাজনৈতিক প্রসাদ ষড়যন্ত্রে কাউকে বিদায় করাসহ নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে কাউকে বিদায় নিতে হয়েছে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বপরিবারে শহীদ হয়েছেন ঘাতকের নির্মম বুলেটে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর প্রধান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম শহীদ হয়েছেন ঘাতকের বুলেটে। একাধিক রাষ্ট্রপতি বিদায় বেলায় বেঈমান ও বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। দেশের সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ বিদায় নিতে যাচ্ছেন সংবিধান লংঘনকারী, শপথ ভঙ্গকারী ও ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা পেয়ে। রাজনীতিবিদ, আইনবিদ, সেনাপ্রধান, চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদদের থেকে আসা রাষ্ট্রপতিরা কেউ হাসিমূখে বিদায় পাননি।
স্বাধীনতার স্থপতি ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ঘাতকরা হত্যা করেছিল ধানমণ্ডি তার নিজ বাসভবনে। ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যকাণ্ডে শহীদ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও ঘনিষ্ঠ আত্বীয়রা। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ১৯৮১ সালের ৩০ মে। বঙ্গবন্ধুর পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ৭৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রয়াত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনিও হাসিমূখে বিদায় নিতে পারেননি। আবু সাঈদকে সরিয়ে সে সময় মোহাম্মদ উল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৩ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে এবং মোহাম্মদউল্লাহকে সরিয়ে ফের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি থেকে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোসতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করেন। ১৫ আগস্ট থেকে ৭৫ এর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন খন্দকার মোসতাক। ৭৫ এর ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি করা হয় বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে। মাত্র এক বছরের মাথায় সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ৭৭ এর ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি পদে আসেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে বন্দুকের নলের মুখে জোর করে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন বর্তমানে জাপা প্রধান এইচএম এরশাদ। মাত্র তিনদিন রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন তিনি। ৮২ সালের ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতি পদে বসেছিলেন বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দীন চৌধুরী। ৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পুনরায় রাষ্ট্রপতি পদে বসেছিলেন এইচএম এরশাদ। গণআন্দোলণের মূখে ৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচএম এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। এরশাদের পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ৯১ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। ৯১ এর ৯ অক্টোবর থেকে ৯৬ এর ৯ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ৯৬ এর ৯ অক্টোবর থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত পরবর্তী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন। ৯১ এর পরবর্তী নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিরা নিজ নিজ দল থেকে নানা অপবাদ নিয়েই বিদায় নিয়েছেন। মেয়াদের আগেই হঠাৎ করে বিদায় নিতে হয়েছে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। পরবর্তীতে মাত্র তিন মাসের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতির পদে রয়েছেন প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন। বিদায়ের আগে তার বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘনের অভিযোগ এনেছে নিজ দল বিএনপি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। এখন শুধু অপেক্ষার পালা তার ভাগ্যে কি ঘটে ?
তথ্যসূত্র: আমাদের সময়
কৃতজ্ঞতায়: আবুল বাশার নূরু