রাহাত ক্লাশ ফাইবে পড়ে। ক্লাশের ভালো ছাত্র না হলেও রাহাতকে সবাই পছন্দ করে। তার কার, সে নিরব প্রকৃতির ছেলে। সব সময় প্রকৃতির মাঝেই তাকে মিশে থাকতে দেখা যায়। তার পছন্দের মধ্যে একটি কাজ হলো বাগান করা। তার বাড়ির আঙ্গীনায় খুব সমৃদ্ধ না হলেও খুব সুন্দর একটা ফুল বাগান গড়ে তুলেছে। তার বাগানের কয়েকটি প্রধান প্রধান ফুল হলো গোলাপ, টগর, হাসনাহেনা, ডালিয়া, জবা এবং শিউলি। তার বাগানে মালা গাথার মত শিউলি ফুলই আছে। ফুলের মালা রাহাতের পছন্দের বস্তু। সে প্রতিদিন সকালে ঘুমথেকে উঠেই শিউলি তলায় যায়। হতের মুঠো পুরে ফুলনিয়ে টেবিলে রেখে তার পর বাকি কাজ শেষ করে এর পর মালা গাথতে বসে। তার টেবিলে পুরনো মালাগুলো সাঝিয়ে রাখা। অনেক মালা। সে মালা ফেলেনা কখনো, সংরক্ষন করে। শিউলি মালার প্রতি তার একটা দূর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধুরাও জানে তার মালা প্রিতির কথা। শরৎ কাল আর হেমন্ত কালে শিউলি ফুটে। কেউ কেউ তাকে শিউলি মালা বলেও ডাকে। হঠাত কিছুদিন বন্ধুরা রাহাত কে ক্লাশে না দেখে বলা বলি করছে, আচ্ছা রাহাত আসছেনা অনেক দিন। কারন কি? কেউ উত্তর খুজে পেলোনা। একদিন সবাই চিন্তা করলো তার বাড়ি যাবে। আসছে শুক্র বার যাবে। শুক্র বার সকালে অলিক, তপু, নিলয় এবং শাওন গেলো রাহাতের বাড়ি।
গিয়ে দেখলো রাহাত অসুস্থ্য খুব। তার মায়ের কাছে জানতে পারলো, রাহাতের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে! সেটা অনেক আগথেকেই। কাল হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে অবস্থা ভালো না দেখে। তার মা জানালো, রাহাত খুব বেশি দিন বাচবে না। হয়তো কয়েক দিন.....! বন্ধুরা দুঃখ ভরা মন নিয়ে বাসায় ফিরলো। পরদিন স্কুল হয়ে গেলো রাহাত খুব বেশি দিন বাচবে না! দফায় দফায় বন্ধুরা গিয়ে দেখে আসছে রাহাত কে। সাথে প্রত্যেকের হাতে একটি করে শিউলি মালা। তপুরা সকাল বিকাল তার কাছে আসা যাওয়া করছে। তপুরা খুবই ভেঙ্গে পরছে বন্ধুর জন্য। চতুর্থ দিনের মাথায় খুব ভোর বেলা মসজিদের মাইকে ভেসে এলো, একটি শোক সংবাদ, একটি শোক সংবাদ.........!
তপু লাফিয়ে উঠলো। কোন রকম সার্ট হতে দৌড় দিয়েছে রাহাতদের বাড়ি। বাড়ির কাছে যেতেই শুনতে পেলো স্বজন হাড়ানো করুন আর্তনাদ! তপুর শরির দুর্বল হয়ে যাচ্ছে যতই বন্ধুর বাড়ির দিকে যাচ্ছে! এতক্ষনে অলিক, নিলয়, শাওন ও খবর পেয়ে গেছে। সবাই ছুটে এসেছে।
সব শেষ করে রাহাত কে দাফন সম্পর্ন করে বাড়ি ফিরে এলো। পর দিন। সবাই মিলে শিউলি মালা হাতে রাহতের কবর দেখে গেলো।
আজ এক যুগ হলো রাহাত নেই। কিন্তু অলিক, তপু, নিলয়, শাওন সহ বন্ধুরা সাবাই আজো হেমন্তের শিশির ভেজা শিউলি মালা নিয়ে বন্ধুর কবরের পাশে দাড়ায়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১৬