ধর্মীয় / আরবী কিছু শব্দ আছে যেগুলো নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়েন। যেমনঃ কাফের, মুশরিক, মুরতাদ, মালাউন ইত্যাদি শব্দ।
অনেক মুসলমানও জানে না এইসব শব্দের অর্থ কি। এগুলো আমাদের অবশ্যই জানা দরকার সকল ধর্মের মানুষেরই।
কাফের-
ইসলাম মতে সকল মুসলিম হচ্ছে মুমিন আর সকল অমুসলিম কাফের। মুমিন শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী বা অমুসলিম শব্দের আরবী হচ্ছে কাফের। অনেকে ভুল করে মনে করে কাফের একটা গালি। এটা কোনো গালি নয়। তবে এই শব্দ শুধু তখন গালি হিসেবে গন্য হবে যখন একজন মুসলমান আরেক মুসলমানের উপর এই শব্দ প্রয়োগ করবে। তাই যতক্ষন পর্যন্ত একজন মুমিন (বিশ্বাসী) আল্লাহ, রাসূলে বিশ্বাস রাখবে তাকে কোনো অবস্থাতেই কাফের বলা যাবে না।
আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে কাফেরদের উদ্দেশ্যে সূরা আল কাফেরুন নাজিল করেছেন।
এই সূরার শেষ আয়াতে বলা আছে لَکُمۡ دِیۡنُکُمۡ وَلِیَ دِیۡنِ (তোমার দ্বীন তোমার কাছে, আমার দ্বীন আমার কাছে)
যার অর্থ দাঁড়ায় কাফেরদের ধর্ম কাফেরদের কাছে আর মুমিনদের ধর্ম মুমিনদের কাছে।
সাধারন কাফের হচ্ছে যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে না ও ইসলাম ব্যাতীত অন্য ধর্ম পালন করে তারা আর বড় কাফের হচ্ছে যারা সৃষ্টিকর্তাতেই বিশ্বাস করে না তারা। নাস্তিকরা হচ্ছে বড় কাফের কারন তারা সৃষ্টিকর্তাতেই বিশ্বাস করে না।
মুশরিক-
ইসলামে মূর্তিপূজা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। তওবা না করলে এ পাপ থেকে পরিত্রানের উপায় নেই। যারা মূর্তিপূজা করে তাদের বাংলায় বলে পৌত্তলিক। আরবীতে বলা হয় মুশরিক। ইংরেজীতে বলা হয় প্যাগান। আরবে একসময় মুশরিক ছিলো প্রচুর। তারা হাজার হাজার দেব দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজা করতো। ইসলাম প্রচারের পর বহু মুশরিক ইসলাম গ্রহন করে। বর্তমানে মুশরিক কারা? বর্তমানে মুশরিক হচ্ছে হিন্দু,বৌদ্ধ,জৈন ও কিছু প্যাগান গোষ্ঠী। দেব-দেবীতে বিশ্বাস ও মূর্তি বানিয়ে পূজা করলেই সে মুশরিক।
ইসলামে মূর্তি বানানো পাপ হিসেবে ধরা হয় তবে ভাষ্কর্য বানানো জায়েজ আছে। মূর্তি হচ্ছে যেটা পূজার জন্য বানানো হয় আর ভাষ্কর্য হচ্ছে যেটা শিল্প নিদর্শন হিসেবে বানানো হয়।
এখন মুশরিক যারা তাদের মন্দিরে গিয়ে কি সব মূর্তি ভেঙ্গে দিতে হবে? না। কারন সূরা কাফেরুনে বলা আছে যার যার দ্বীন তার তার কাছে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই অন্য ধর্মের লোকদের মন্দিরে গিয়ে মূর্তি ভাঙ্গা যাবে না। শুধু নিজেকে কোনো অবস্থাতেই মূর্তিপূজায় জড়ানো যাবে না।
মুরতাদ-
মুরতাদ হচ্ছে সেই লোক যে প্রথমে ইসলাম গ্রহন করেছিলো কিন্তু পরে ইসলাম ত্যাগ করে। মুরতাদ শব্দ এসেছে আরবী ইরতিদাদ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে পিছনের দিকে ফিরে যাওয়া। আল কোরআনে মুরতাদের জন্য দুনিয়ায় কোনো শাস্তির কথা উল্লেখ নেই তবে হাদীস অনুসারে মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে তাকে হত্যা করা। তবে শুধু মুরতাদ হলেই তাকে হত্যার নির্দেশ নেই। যদি কোনো মুরতাদ সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করে তবে তখনই কেবল তাকে হত্যার নির্দেশ আছে। মুসলিম থেকে অমুসলিম হয়ে গেলেই তাকে হত্যার নির্দেশ নেই। যদি কেউ এমন নির্দেশ দেয় তবে সেটা স্পষ্টতই শরীয়ত বিরোধী।
মালাউন-
ইসলামী শরীয়তে কোথাও এই শব্দের প্রয়োগ নেই কিন্তু কিছু গোঁড়া মানুষ আছে যারা অন্যকে মালাউন বলে গালি দেয়। মালাউন শব্দের অর্থ লানত প্রাপ্ত বা অভিশাপ প্রাপ্ত। কোন অবস্থাতেই কোন মুসলমান মালাউন শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। কারন এটা স্পষ্টতই একটা গালি। আপনাকে যদি বলা হয় আপনি লানত প্রাপ্ত তাহলে নিশ্চয়ই আপনি সেটা গালি হিসেবেই ধরে নিবেন। মালাউন শব্দ ব্যবহার করে কাউকে গালি দেয়া নাজায়েজ কারন কাউকে গালি দেয়া ইসলামে হারাম। গালি দেয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।
একমাত্র মালাউন ছাড়া অন্য শব্দগুলো কোনো গালি না। তবে কাফের শব্দ যদি কোনো মুসলমানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয় তবে শুধু সেক্ষেত্রে এটাকে গালি হিসেবে ধরে নিতে হবে। ইহুদীরা ইহুদী ছাড়া বাকি সবাইকে জেন্টাইল বলে। ঠিক তেমনি মুসলমানরা অমুসলিমদের অবিশ্বাসী বা কাফের বলে।
তবে পবিত্র কোরআনের নিন্মোক্ত আয়াত গুলো মুসলমানদের জানা দরকার-
মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদী অতঃপর মুশরিকদেরকে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা : পবিত্র আয়াত ৮২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “আহলে কিতাব তথা ইহুদী-নাছারাদের অধিকাংশই তাদের হিংসাবশত এই কামনা (ষড়যন্ত্র) করে যে, ঈমান আনার পর তোমাদেরকে কাফির বানানোর জন্য।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা : পবিত্র আয়াত ১০৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহুদী-নাছারারা তথা কাফির-মুশরিকরা কখনো তোমাদের (মুসলমানদের) প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের ধর্ম গ্রহণ না করবে বা অনুগত না হবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা : পবিত্র আয়াত ১২০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (পবিত্র সূরা মায়িদা : পবিত্র আয়াত ৫১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদাররা! তোমরা ঈমানদার ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা তোমাদের ক্ষতি সাধনে কোনো ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই প্রকাশ হয়ে পড়ে আর যা কিছু তাদের অন্তরে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য। আমি তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দিলাম। যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। দেখ! তোমরাই তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের গোস্বায় মরে যাও। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি মনের কথা ভালোই জানেন। তোমাদের যদি কোনো ভাল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি ক্ষতি হয় তাহলে আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর অর্থাৎ ইস্তিকামত থাকো। এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনোই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই মহান আল্লাহ পাক উনার আয়ত্তে রয়েছে।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান : পবিত্র আয়াত ১১৮-১২০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রাণীকুলের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে তারাই, যারা কাফির-মুশরিক। তারা এমন যে, যারা ঈমানদার নয়।” (পবিত্র সূরা আনফাল : পবিত্র আয়াত ৫৫)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফগুলো দ্বারা স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মজুসী, মুশরিক, নাস্তিক সহ সকল বিধর্মীই মুসলমানদের প্রধান শত্রু। তাদের ধর্মের মুল ভিত্তিই হচ্ছে সম্মানিত ইসলাম উনার বিরোধিতা করা, মুসলমানদের নির্যাতন করা, ক্ষতিসাধন করা ইত্যাদি।
তাই মুসলমানদেরকে তাদের শত্রু চিনতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫০