"প্রয়াতজনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ'র রাজনৈতিক উপন্যাস 'দেয়াল' থেকে নেওয়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তৎকালীন সময়
সম্পর্কে কয়েকটা উদ্ধৃতি"
* শুক্রবার ভোরে প্রেসিডেন্ট জিয়া নাস্তা খাচ্ছিলেন। আয়োজন সামান্য।
চারটা লাল আটার রুটি। দুই পিস বেগুন ভাজি। একটা ডিম সিদ্ধ ।
জিয়ার সঙ্গে নাশতার টেবিলে বসেছেন তার বন্ধু ও সহযোদ্ধা জেনারেল মঞ্জুর ।
জেনারেল মঞ্জুর বিস্মিত হয়ে বললেন, এই আপনার নাশতা ?
প্রেসিডেন্ট বললেন, হতদরিদ্র একটি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই নাশতা কি যথেষ্ট না ? (দেয়াল, হুমায়ুন আহমেদ, ১৮৯-পৃষ্ঠা)
** জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে প্রতি মাঘের শেষে বর্ষন হয়েছিল কিনা তা কেউ হিসাব রাখেনি ,তবে এই পাঁচ বছরে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি । অতি বর্ষনের বন্যা না , খরা না , জলোচ্ছাস না । দেশে কাপড়ের অভাব কিছুটা দূর হলো । দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হলো না । বাংলাদেশের নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়তে লাগলো ।
বাংলাদেশের মানুষ মনে করতে লাগলো অনেক দিন পর তারা এমন এক রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে যিনি সত্ । নিজের জন্য বা নিজের আত্নীয়স্বজনের জন্য টাকা পয়সা লুটপাটের চিন্তা তার মাথায় নেই । বরং তার মাথায় আছে দেশের জন্য চিন্তা । তিনি খাল কেটে দেশ বদলাতে চান । জিয়া মানুষটা সত্ ছিলেন , এতে কোনো সন্দেহ নেই । লোক দেখানো সত্ না , আসলেই সত্ । তার মৃত্যুর পর দেখা গেল জিয়া পরিবারের কোনো সঞ্চয় নেই । (দেয়াল, পৃষ্ঠা-১৯৩)
*** তারিখ ৩০ মে রাত এগারোটা । জিয়া প্রান হারান তার একসময়ের সাথী জেনারেল মঞ্জুরের পাঠানো ঘাতক বাহিনীর হাতে । বলা হয়ে থাকে , জেনারেল মঞ্জুর তার রুপবতী স্ত্রী দ্বারা পরিচালিত ছিলেন । এই স্ত্রী মঞ্জুরের শেষ দিন পর্যন্ত তার সঙ্গী ছিলেন । সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো এবং জিয়া হত্যার পেছনে প্রলয়ংকারী স্ত্রীবুদ্ধি কাজ করতে পারে । সে সময় জিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদেশে মনে হল, এই যেন পুরো দেশ কাঁদছে। (দেয়াল, পৃষ্ঠা-১৯৬)
**** বঙ্গবন্ধুর অতি কাছের মানুষ তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বসে আছেন রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তর সাভারে । আতঙ্কে তিনি অস্থির । বঙ্গবন্ধু নিহত হলেন ।
বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রক্ষীবাহিনী ঝিম ধরে বসে আছে । একসময়ের সাহসী তেজি ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদও ঝিম ধরে বসে আছেন । শুরু হয়েছে ঝিম ধরার সময় । রাস্তায় মিছিল বের হয়েছে । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি , সেই মিছিল আনন্দ মিছিল । শফিক বাংলামোটরে গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখল । সেখানে রাখা ট্যাংকের কামানে ফুলের মালা পরানো । কিছু অতি উত্সাহী ট্যাংকের উপর ওঠে নাচের ভঙ্গি করছে । আমার বাবর রোডের বাসার কথা বলি । বেতারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে একতলার রক্ষীবাহিনীর সুবেদার পালিয়ে গেলেন । তার দুই মেয়ে ছুটে এল মা'র কাছে । তাদের আশ্রয় দিতে হবে । মা বললেন তোমাদের আশ্রয় দিতে হবে কেন ? তোমরা কি করেছ ? তারা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল , খালাম্মা , এখন পাবলিক আমাদের মেরে ফেলবে । এই ছোট্ট ঘটনা থেকে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার এবং তাদের প্রতি সাধারন মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃনাও টের পাওয়া যায় ।
(দেয়াল, পৃষ্ঠা-১০৭)।
একজন জিয়া আর একজন মুজিব,
পার্থক্যটা এখানেই। ………লাল সবুজের বাংলাদেশ পেজ থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৫