এলাকার এক রোগিকে দেখে যখন হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছি তখন ঘড়ির কাটায় রাত্রি ১০ টা পেরিয়েছে। মনে পড়লো হাসপাতালে আসার সময় আরিবাকে কথা দিয়েছি ওকে বেড়াতে নিয়ে যাবো। বাচ্চার কাছে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইনা বলে, এক রিক্সাওয়ালাকে (চার্জার রিক্সা) বাসার ঠিকানা দিয়ে বললাম, ওখানে যাবো, আমার মেয়েটাকে নিয়ে শহরটা ঘুরবো কত নিবেন। ভাড়া নিয়ে ঝামেলা না হওয়ায় রওয়ানা দিলাম।
গেটের কাছে দাঁড়িয়েছি, আরিবা আসছে এমন সময় রিক্সা থেকে সুললিত কন্ঠের কুরআন তেলাওয়াত শুনে থমকে গেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম অডিও বাজছে পরে বুঝলাম আমার ধারণা ভুল, রিক্সাওয়ালা তেলাওয়াত করছে। সূরা ইনশিকাক থেকে তেলাওয়াত করা দেখে
জিজ্ঞেস করলাম, " কতটি সূরা মুখস্থ?"
আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, "১১৪ টি।"
"তার মানে আপনি হাফেজ?"
"জ্বি"
"ইয়াদ আছে?"
"আছে, এবারও তারাবি পড়িয়েছি।"
এরপর সে একেকটা সূরার বিভিন্ন অংশ থেকে অর্থসহ বলতে লাগলো, আমি অবাক হতে লাগলাম।
তাওহীদ, রেসালাত নিয়ে এত চমৎকার আলোচনা আমি কখনো শুনিনি।
সূরা আসরের ব্যাখ্যা, ইসলামী আইনের প্রয়োগ, সাহাবাদের জীবনী চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করে চললো।
আমি কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম রিক্সা চালান কেন, না শোনার ভান করে এড়িয়ে গেলেন।
একসময় বললেন, লূত(আঃ) এর কওমকে ধ্বংস করার সময় একজন আবেদকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লূত(আঃ) অাল্লাহর কাছে বলেন সে তো বেগুনাহ, সৎকর্মপরায়ণশীল তাকে কেন ধ্বংস করেছেন? আল্লাহ বলেন, সে একা একা আমল করে কিন্তু অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করেনা তাই তাকেই আগে ধ্বংস করবো।
রিক্সাচালক বললেন, ভাই আজ আমরা কি অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করি?
সবশেষে শক্ত করে ধরলে বললেন, "আমি একটি মসজিদে জুম্মা পড়াই। মসজিদ কমিটি খুৎবার আগে বলে অমুক কথা বলা যাবে, অমুকটা বলা যাবেনা। রাজনৈতিক আলাপ করা যাবেনা। ইত্যাদি। আমি বলেছি কুরআনের সব কথা আমি বলবোই। ইচ্ছা হলে আমাকে রাখবেন না হলে তাড়িয়ে দিবেন। কুরআনের কোন কথা আমি গোপণ রাখতে পারবোনা। যেকোন দিন চাকুরী চলে যাবে তাই আগাম প্রস্তুতিস্বরুপ বিকল্প ইনকামের পথ ঠিক করে রাখছি।"
তার মতে কুরআনের কথা আংশিক বলে ভাল থাকার চেয়ে রিক্সা চালিয়ে হক পথে থাকা অনেক ভাল।
আমাদের দেশের আলেমদের কি এই রিক্সাচালকের থেকে কিছু শেখার আছে(?)--আসাদুজ্জামান জুয়েল
তথ্যটি শেয়ারিং হলে ও এখানে বাস্তবতা আছে। এই হাফেজের অবস্থা থেকে আমাদের বাংলাদেশের মুসলমানদের অবস্থা অনেকটা ভিন্ন রকম। বিশেষ করে ' মসজিদ কমিটি খুৎবার আগে বলে অমুক কথা বলা যাবে, অমুকটা বলা যাবেনা। রাজনৈতিক আলাপ করা যাবেনা। ইত্যাদি।' এটা বর্তমান সময়ের বাস্তবতা। তবে হ্যাঁ ব্যতিক্রম আছে, তবে সে সংখ্যা খুবই নগন্য। আর এ দায় শুধুমাত্র মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন আর হফেজ সাহেবদের উপর চাঁপালে চলবেনা। এদায় সকল মুসলমানের যারা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করেন ও সত্যিই ইসলামকে ভালবাসেন।
তাই সত্য বলার সাহস আমাদেরকে অবশ্যই অর্জন করতে হবে। আর এজন্য চাই দৃঢ় মানষিক শক্তি ও ইমানি মনোবল। তাই সকলেরই উচিত সত্যকে আকড়ে ধরা ও সমাজকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবেই সমাজ থেকে সকল ধরনের উশৃঙ্খলতা, বিশৃঙ্খলতা, সন্ত্রাস, অপরাজনীতি, হিংসা দুর হয়ে যাবে।
আসুন আমরা সবাই সত্যের পথ ধরে ইহকাল ও পরকালকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৩৮