somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁচা আমের শরবৎ ও কেওড়া জলের বিভীষিকা...! (সৃতি কথা)

১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন রাজশাহী উপশহরে থাকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বা ২য় বর্ষে পড়ি, একদিন এক জাতীয় দৈনিকের “রেসিপি রঙ্গে” কাঁচা আমের শরবতের রঙ-ঢং আর বিভিন্ন উপকারিতা দেখলাম। সাথে জিভে জল আনা কিছু দৃষ্টি নন্দন ছবি।

তো তখন হাতে অফুরন্ত অবসর, সাথে আছে কিছু অতি উৎসাহী আর আমার মতই ফাজিল, ভণ্ড, প্রতারক আর সর্বোপরি সবরকম “ভ্যাজাল সৃষ্টি কারী!” খালাতো ভাই-বোন, সবাই সাগ্রহে সম্মত হলাম, আমরাও এই রেসিপি অনুসারে কাঁচা আমের শরবৎ তৈরি করবো!

এবং সবাই মিলে জোশ করে উপভোগ করবো। দিনক্ষণ ঠিক হল পরবর্তী শুক্রবার সকাল সকাল আমরা সকল সরঞ্জাম জোগাড় করে, যে যার কাজ ভাগ করে শরবৎ বানাবো। সেই সময়, সেটা আমাদের মত কিছু উৎকট প্রকৃতির ছেলে-মেয়ের কাছে ভীষণ উত্তেজনাকর ছিল।
টাকা পয়সা তেমন লাগবেনা বললেই চলে, কারণ যে বাসায় থাকি সেই বাসার ভিতরেই বেশ ভালো “আমদায়ক!” (ফলদায়ক) একটি হৃষ্টপুষ্ট আম গাছ আছে। গাছ ভরা আম আর আম। আর আপাত দৃষ্টিতে যেহেতু ভদ্র! ও বাধ্য স্বভাবের! স্বভাবতই “বাড়িয়ালি” নানি আমাদের আম পাড়াতে নিষেধ বা কোন বাঁধ সাধেননি! আর বাকি সরঞ্জাম তো বাসাতেই আছে, সুতরাং নো চিন্তা, দুই দিনের অপেক্ষা মাত্র।

এলো কাঙ্ক্ষিত সেই শুক্রবার। সবাই দুইদিন আগেই যে যার কাজ ভাগ করে নিয়েছি, প্রয়োজনীয় বাসন জোগাড়, পরিষ্কার করা ও আম পাড়া (দুইটাই আমার কাজ ছিল, যেহেতু কষ্ট বেশী তাই!) আম কাটা, বিভিন্ন উপাদান প্রস্তুত করা, ব্লেনড করা, মিশ্রণ তৈরি, ফ্রিজে রাখা, সামান্ন স্বাদ চেখে দ্যাখা! ইত্যাদি, ইত্যাদি অন্য তিনজন ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

তো শুরু হল কাঁচা আমের শরবৎ তৈরির যজ্ঞ! সব-ই মোটামুটি শেষ, সবাই-ই একটু করে চেখে দেখলাম! দারুণ... অসাধারণ... দুর্দান্ত স্বাদ হয়েছে...! আসলেই তাই, সত্যি-ই দুর্দান্ত ছিল সেই শরবতের স্বাদ!

তো ঠিক হল যেহেতু শুক্রবার, নামাজের তাড়া আছে, সেহেতু এখনই রসিয়ে-রসিয়ে খাওয়া যাবেনা! নামাজ পরে এসে, দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই মিলে জম্পেস আড্ডা দিব আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিজেদের হাতের তৈরি কাঁচা আমের অমৃত সুধা পান করবো ছাদে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে! এবং সবাই এতে সম্মত।

সুতরাং যে ভাবা, সেই কাজ... খুবই সুরক্ষিত উপায়ে আর অত্যন্ত সংগোপনে নানার চোখ ফাঁকি দিয়ে (নানা দেখলে তক্ষুনি খেতে চাইবে তাই!) সেই অমৃত সুধা রাখা হল ফ্রিজে। নামাজ পড়তে চলে গেলাম যে যার মত করে, চোখে-মুখে নিজেদের হাতে তৈরি করা কাঁচা আমের শরবতের তৃপ্তির আঁকিবুঁকি!

ফিরে এলাম নামাজ শেষে। ভাত আর খেতে মন যাচ্ছেনা! মন-ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর আকাঙ্খা তো তখন কাঁচা আমের শরবতের কাছে! তো যাইহোক, বড়দের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সামান্য খেয়ে দেয়ে সবাই সেই শরবতের পাত্র নিয়ে একছুটে ছাঁদে! গোলহয়ে বসলাম যে যার গ্লাস নিয়ে, এর মধ্যে আমাদের এক “খুঁতখুঁতে” খালাতো ভাই বলল, আর একবার রেসিপিটা দেখে নিতে সব ঠিক আছে কিনা? যদি কোনকিছু বাদ থেকে যায় তো পুরো স্বাদ পাওয়া যাবেনা! সেটা ঠিক!

সেই ভেবে আবার পুরো রেসিপিটা পড়তে বসলাম, সবাই মিলে এবং দেখাগেল অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ণ একটা উপাদান বাদ রয়ে গেছে! যেটা একদম শেষে দিতে হবে! কি সেটা? হ্যাঁ সেটা হল কেওড়া জল! কিন্তু কেওড়া জলতো বাসায় নেই! খোঁজ-খোঁজ, কোথাও না পেয়ে সব কিছু আবার পূর্বের জায়গায় রেখে, তিন ভাই মিলে বাজারে গেলাম এবং যেহেতু শুক্রবার জুম্মার পরে সব দোকান-ই প্রায় বন্ধ! তবুও অনেক চেষ্টা ও কষ্ট করে কেওড়া জল কেনা হল! এবং মনের মাঝে আরও একবার পূর্ণ রেসিপি তৈরির পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে ফিরে এলাম!

সবকিছু নিয়ে আবার ছাঁদে, কেওড়া জল দেবার আগে আরও একবার সবাই একটু-একটু করে চেখে নিলাম, দুইটার পার্থক্য উপলব্ধির জন্য! ভাগ্যিস আর একবার চেখে নিয়েছিলাম! এরপর মেশালাম সেই কেওড়া জল! এবং আরও একবার ভালো ভাবে চামচ দিয়ে নেড়ে চেড়ে যে যার গ্লাসে ঢেলে নিলাম......!

এবার সবাই একই সাথে গ্লাসে চুমুক দিলাম... এবং কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে যে যার মুখ থেকে সব ফেলে দিলাম! এমনকি পেটের ভিতরেও আগের যেসব খাদ্য উপাদান ছিল সেসবও উদগরিত হতে চাইলো...! কারণ কি, কেন? সেটা তখন আর জানার ইচ্ছা বা মানসিকতা ছিলনা কারোই...!

চোখ ভরা জল আর মন ভরা বেদনা নিয়ে সবাই ফিরে এলাম ছাঁদ থেকে নিচে টিভি রুমে, কিন্তু টিভি বা কোন কিছুই আমাদের আর স্পর্শ করছেনা... মানসিক ব্যাথা-বেদনা-ক্ষত আর পেয়ে না পাওয়ার ধাক্কা এতটাই বেশী ছিল যে আজও আমরা সবাই কেওড়া জল শুনলেই আঁতকে উঠি! কষ্টে বুক ভেঙে যেতে চায়...!

যেখানে বা যে খাবারে কেওড়া জল মেশানো থাকে বা গন্ধ পাই, তা থেকে কয়েক হাত দূরে সরে থাকি সবসময়...!

আর কাঁচা আমের শরবৎ? সে এখনো স্বপ্নে আর কল্পনায় খাই, রেসিপি রঙ্গে দেখে দেখে পুরনো সৃতি হাতড়াই.........।

পত্রিকার রেসিপি রঙ্গে কাঁচা আমের শরবতের ছবি দেখে পুরনো কথা মনে পরে গেল তাই.........!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ

লিখেছেন মুনতাসির, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×