“ সাধ্যের সবটুকু সচেতনতা তারপর আল্লাহ ভরসা ”
.
প্রত্যেক এলাকা, গ্রাম আর বাড়িতে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের সচেতনতার জন্য ১০০ হাদিস শুনানোর পরও বলবে “ আরে কিছু করা লাগবে না আল্লাহ-য় সুস্থ রাখবে ”। হে আল্লাহ, তুমি তাদের বোঝার ক্ষমতা দেও।
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি সিংহ থেকে দূরে থাক। ” -(সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭০৭)
স্বভাবধর্ম ইসলামে সবকিছুতেই মধ্যপন্থাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য দেখুন― “ মধ্যপন্থা মেনে যে কর্ম করা হয় সেটাই শ্রেষ্ঠ। ” - (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৩৬০৪)
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘদিনের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, “ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব? আমার উটনীটি ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথমে তোমার উটনীটি বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর। ” - (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৭)
আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা একজন মুমিনের ঈমানের অপরিহার্য অংশ। তাই বলে স্বেচ্ছায় ‘আল্লাহ ভরসা’ বলে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়া তো আর ইসলামের শিক্ষা হতে পারে না। আমাদের স্থির বিশ্বাস, আল্লাহর হুকুমেই আগুন পোড়ায়, আগুনের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। তবে সঙ্গে এও বিশ্বাস করতে হবে, আল্লাহ তাআলাই আগুনকে পোড়ানোর শক্তি দিয়েছেন। সেই শক্তি দিয়েই আগুন পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সবকিছু। এটি আগুনের শক্তি নয়, আল্লাহর দেয়া শক্তি। মহান আল্লাহ কখনো সেই শক্তি হরণ করে কুদরতের কারিশমা দেখান। মানুষ অবাক হয়ে দেখে―নমরুদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিরাপদ।
তবে এটা তাঁর সাধারণ ধারা নয়। স্বাভাবিকতা এটিই―আল্লাহ আগুনকে পোড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছেন আর আগুন সেই ক্ষমতাবলে পোড়ায়। উপরোক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন, উটনী ছেড়ে দিলে তা চলে যাবে কোথাও, হারিয়ে যাবে, তখন তুমি অর্থহীন পেরেশানিতে আক্রান্ত হবে―এটাই স্বাভাবিক। তাই উটনীটি ছেড়ে না দিয়ে বেঁধে রাখ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর এভাবে―একমাত্র আল্লাহই পারেন উটনীটি রক্ষা করতে। বাঁধার পরও তো উটনীটি আক্রান্ত হতে পারে কোনো বিপদে। তাই তোমার সাধ্যের সচেতনতাটুকু অবলম্বনের পর তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা কর, যেন তিনি তোমার সাধ্যের বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়াদি থেকে তোমাকে ও তাকে নিরাপদ রাখেন।
সচেতনতাকে যারা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী মনে করেন সামনের উদাহরণটি তাদের জন্যে। ইয়েমেনের কিছু লোক হজ্ব করতে আসত খালি হাতে। হাজ্বীগণ আল্লাহর মেহমান―এই ভরসায় তারা কোনো ধরনের খাবার-পানি সঙ্গে না নিয়েই হজ্বে চলে আসত। তারা বলত, আমরা আল্লাহর ওপর ভরসাকারী। পরে তারা অন্যদের বোঝা হয়ে থাকত।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তাদের এ থেকে বারণ করেছেন এভাবে- (তরজমা) “ আর (হজ্বের সফরে) পথ খরচা সাথে নিয়ে নিও...” -সূরা বাকারা (পারা ২) : ১৯৭
সচেতনতার জন্য চাই দ্বীনের সহীহ ইলম( জ্ঞান ) ও সহীহ সমঝ( বোঝার ক্ষমতা )। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সহীহ ইলাম সহীহ সমঝ ও সচেতনতা দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮