সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে বহুল ব্যবহৃত ও অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো ফেসবুক। ২০০৪ সালে ফেসবুকে পথচলা শুরু। প্রথমদিকে এটা একটি নিদিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী এই মাধ্যমটি জনপ্রিয়তা পায়। অনেকের মতে মার্ক জুকারবার্গ ফেইসবুকটা আবিষ্কার করে ভুল করেছেন আবার অনেকের মতে একটা শেষ কয়েক দশকের সেরা আবিষ্কার। প্রত্যেকটা সফল আবিষ্কার হয় ভালো দিক দেখে খারাপ দিক দেখে না সেটা বুঝতে হবে। এর প্রমাণ পাওয়ার জন্য মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রোফাইল পিকচারের কমেন্ট বক্স চেক করলেই পাওয়া যায়। অনেকে তার বংশ পরিচয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছে দেশের নাম সবার মাঝে তুলে ধরছে। এর মধ্যে বাংলাদেশীও আছে অনেক।
যাইহোক কথা ওইটা না কথা হলো কেউ এই ফেসবুকটাকে ভালো কাজে ব্যবহার করে আবার কেউ সময় নষ্ট, খারাপ কাজ ও অপহরণের কাজে সহ নানা কাজে ব্যবহার করে। ভালো খারাপ নিজের কাছে। কেউ সারাদিন মেয়ে পটাতে ব্যস্ত আর কেউ বা ফেসবুক / ভার্চুয়াল সেলিব্রিটি হওয়ার স্বপ্নে মগ্ন হয়ে আছে। ফেসবুকে মাত্রা অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কারণে সামাজিক জীবগুলো ( মানুষ) অসামাজিক জীব হয়ে যাচ্ছে। অনেক মায়ের সন্তান আছে যারা নিজের মাকে সময় কম দেয় আর ফেসবুকে মেয়েদের পটাতে সময় বেশি দেয় অতঃপর পোটে গেলে সেই মায়ের কাছে এসেই টাকা চায় সেই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে।
মানসিকতা অনেক নিচে নেমে গেছে। একটা সময় গল্প, কবিতা ও কন্সেপ্টোলজিস্টদের অনেক কদর ছিলো। তাদের একটা লেখার ধরন ছিলো অন্য রকম, যুক্তিযুক্ত। আমিও একটা সময় বাংলাদেশের অনেক বড় বড় পেজে ও গ্রুপে গল্প লিখতাম। কোন গল্প প্রতিযোগিতা হলে গল্প প্রতিযোগিতায় গল্প দিতাম। তখন লেখকের পরিমাণ ছিলো কম। আমরা যারা ছিলাম তাদের কদর ছিলো অনেক আর ছিলো সুপ্ত ট্যালেন্টও। কিন্তু আজকাল ফেসবুকে গল্প লেখকের অভাব নেই। যাকেই দেখেন সেই লেখক। সবার গল্পই পড়তে ভালো লাগে কিন্তু ভালো মতো পড়ে একটু অনুসন্ধান করলে দেখতে পাবেন এই গল্প ২০১৫-২০১৬ সালে কোন লেখক লিখেছে আর আজ সেটা অন্য কারো নামে চলছে। আমার গল্পগুলোও এইরকম কপিবাজদের হাতে অনেকবার পরেছে কিন্তু জনবল থাকায় কপিবাজের আইডি নষ্ট করে দিতে পেরেছিলাম। এখন ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করছে হাজার হাজার কপিবাজ লেখক যারা লেখক শব্দটাকে অপমান করছে।
মানুষ্কে ফেসবুকে এক অন্যরকম ভাবে পাবেন। একেক জন যেনো বিনয়ের মূর্তি। অত সুন্দর ব্যবহার করবে যাতে মনে হবে সে আসলেই অনেক ভালো। অত ভালো ব্যবহার করবে যে মনে হয় ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না। কিন্তু বাস্তবে তার ডেইলি ৫ টা বেনসন সিগারেট ও মেয়েদের উত্তপ্ত না করলে পেটের ভাত হজম হয় না। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ফেসবুকে একটা মেয়ের নাম্বার নেওয়ার পর ১০০ টাকা রিচার্জ করে দেন অনায়াসে কিন্তু যখন ঘরের মা ২০ টাকার পান আনতে বলে তখন পকেটে টাকা থাকে না। ফেসবুকের পরিচয় দিয়ে একটা মানুষকে কখনোই বিচার ও অনুমান করা সম্ভব নয়। কারণ সবাই ফেসবুকে / ভার্চুয়ালে নিজেকে সবার মাঝে ভালোভাবে উপস্থাপন করার জন্য সার্বক্ষণিক তৈরি। চ্যাটিং স্টাইল দেখে মনেই হবে না ছেলেটা কতটা খারাপ।
১. সিফাত উল্লাহ ( সেফুদা)
২. পং পং আসাদ
এখন আসি আমাদের নিজেদের কিছু বদ অভ্যাস নিয়ে আলোচনায়। আমরা নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করলেও খারাপের পিছনেই ছুঁটি। সেফুদা ও পং পং আসাদের পিছনে আমাদের সময় ব্যয় করে থাকি। পড়ালেখা মনে না থাকলেও ' মদ খা মানুষ হ ' এইসব বাজে কথা ঠিকই মনে থাকে। এটার জন্য তারাও যেরকম দোষী ঠিক সেইরকম দোষী হলো তাদের বক্তরা। এইসব ব্যাপারগুলো প্রথমে তো সবার আগে তারাই পায় যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোটামুটি ভালো একটিভ। তারা জানলো ভালো কথা সেটা অন্যদের জানানোর দরকার কী? ( যারা ভার্চুয়ালে নাই)। এদের মাধ্যমেই আস্তে আস্তে পুরো ভাইরাল হয়ে যায় সেই ব্যক্তি পরে নোবেলের মতো ছেলেদের ট্যালেন্ট পড়ে মাটি চাপা আর উপরে বিরাজমান থাকে সেই সেফুদা আর পং পং আসাদ। এসব শিক্ষা ছেলেমেয়েদের শৈশবকাল থেকেই দেওয়া দরকার নাহলে পরে যতই বলুন ওরা কিছুই কানে নিবে না। পং পং আসাদও সেফুদার দ্বিতীয় বংশধর।
সবাই দেখাতে চায় তার প্রতিবাদী আচরণ। তাই নারী-পুরুষ সমান অধিকার সেই আন্দোলন করে। কিন্তু ভার্চুয়ালে কোন ছেলে কোন আকাম করলে সেক্ষেত্রে, ' আরে ওতো ছেলে ভুলে করে ফেলছে ' কিন্তু কোন মেয়ে একটা রাগান্বিত অবস্থায় কোন স্টাটাস দিলেও সেটা নিয়ে সবার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। ভাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীও কিন্তু মেয়ে ভুললে চলবে না।
মানুষ উচিত তার ভালো খারাপ উভয় দিকই অন্যের সামনে তুলে ধরা। যেখানে মাত্রারিক্ত ভদ্রতা সেখানে কোন না কোন গ্যাঞ্জাম অবশ্যই আছে মনে রাখবেন। একটা মানুষ বাস্তব জীবনেও যেরকম ভার্চুয়ালেও সেইরকম থাকাটা অতি ভালো। এতে মানুষ তার নিজের আসল পরিচয় তুলে ধরছে নাহলে সেও মুনাফিকদের কাতারে পরে যায় কারণ " মুনাফিকরা নিজ ধর্মাবলম্বীদের সাথে যখন থাকে তখন বলে আমি তো তোমাদেরই সহধর্মিণী আর যখন কাফিরদের সাথে থাকে তখন বলে আমি তো তোমাদের সাথেই আছি তোমাদের সাহায্যের জন্য। "
একজন ভালো মানুষ তার আসল পরিচয় ও আচরণের কখনোই বিকৃতি ঘটায় না। তার নিতান্তই স্বাভাবিক আচরণ করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৬